হযরত উম্মে সালমা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল বলেন, যে ব্যক্তি যুলহিজ্জার চাঁদ দেখে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা রাখে সে যেন কুরবানী করা পর্যন্ত তার নখ ও চুল মোটেই না কাটে। অন্য বর্ণনায় আছে, যুলহিজ্জার ১০ দিন যখন এসে পড়ে এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে সে যেন তার নখ ও চুলে স্পর্শ না করে (মুসলিম, মিশকাত, ১২৭ পৃষ্ঠা, তিরমিযী, নাসায়ী, আবু দাউদ, মুস্তাদরকে হাকিম, কানযুল উমমাল, ৫ম খণ্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা)। আবু দাউদ, মুসলিম ও নাসায়ীর বর্ণনায় আছে; যার কাছে কুরবানীর জানোয়ার আছে, অতঃপর সে যখন যুলহিজ্জার চাঁদ দেখে তখন কুরবানী না করা পর্যন্ত সে যেন তার নখ ও চুল না কাটে (নায়লুল আওতার, ৪র্থ খণ্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আম্রকে রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কুরবানীর দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করার জন্য আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে, যা এই উম্মতের জন্য আল্লাহ তাআলা ঈদ বানিয়ে দিয়েছেন। একজন লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে আপনার কি রায় যে, আমি যদি দুধওয়ালী উটনী ছাড়া আর কোন জানোয়ার না পাই তাহলে ঐ জানোয়ারটি কুরবানী করব কি? তিনি বললেন, না। তবে তুমি (কুরবানীর দিনে) তোমার নখ ও চুল কাটবে, গোঁপ ছাঁটবে এবং নাভীর নীচের চুল চেঁচে ফেলবে। তাহলে ঐসব কাজগুলোই তোমার পূর্ণ কুরবানী (সমতুল্য) হবে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মিশকাত, ১২৯ পৃষ্ঠা)।
উক্ত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, কোন মুসলমান কুরবানী করতে পারুক বা না পারুক সে যেন যুলহিজ্জার প্রথম দশদিন কুরবানীর আগে পর্যন্ত নখ ও চুল না কাটে। যারা কুরবানী দেবার সামর্থ রাখেনা তারা যদি ঐ দশদিন নখ ও চুল না কাটে তাহলে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা কুরবানীর সওয়াব দান করবেন।
ঐ হুকুম অবশ্য পালনীয় কি না?
যারা ঐ দশদিনের ভেতরে নখ ও চুল কাটবে তারা গোনাহগার হবে কিনা-এ ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। যেমন, ইমাম আবু হানীফা বলেন, নখ ও চুল কাটা মোবাহ (আপত্তিকর নয়) এবং মোস্তাহাবও (পছন্দনীয়ও) নয়। উপরোক্ত হাদীসগুলো তাঁর' মতের প্রতিবাদ করে। ইমাম মালিক থেকে দুটি মত বর্ণিত। এক। মতে মকরূহ, অন্য মতে মকরূহ নয়। ইমাম শাফিয়ী বলেন, কাজটা মকরূহে তানযীহী বা পারতপক্ষে আপত্তিজনক, তবে হারাম নয়। ইমাম আহমাদ, ইসহাক, দাউদ যাহিরী সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব ও কিছু শাফিয়ীদের মতে কাজটা হারাম ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি কুরবানী দেবার ইচ্ছা রাখে (নবভী শারহে মুসলিম, ২য় খণ্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা)।
এ সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীসের সনদের দোষত্রুটি আলোচনার পর আল্লামা উবায়দুল্লাহ রহমানী বলেন, উম্মে সালমা বর্ণিত মুসলিম শরীফের রিওয়ায়াতকৃত হাদীসটি মরফু সহীহ ও বাচনিক (কওলী) হাদীস এবং এর বিরুদ্ধে অন্য কোন হাদীস নেই। সুতরাং হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। যার তাগীদ হল ঐ নিষেধ হারাম। অতএব আমার নিকট প্রাধান্যযোগ্য মত হল ইমাম আহমাদ ও তাঁর সমর্থকদের মতটি (মিরআত, ২য় খণ্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ কুরবানী করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য যুলহিজ্জার চাঁদ দেখা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত নখ চুল কাটা হারাম। আর হারাম কাজ করা পাপ।
সউদী আরবের রাজধানী রিয়াযের মা'হাদু ইমা-মিদ দা'অহ এব অধ্যাপক আব্দুল আযীয মুহাম্মাদ সালমান 'শারহুল ইকতিবাসের' বরাত দিয়ে লিখেছেন, যদি কেউ বিনা ওযরে নখ ও চুল কাটে তাহলে সে হারাম কাজ করবে। অন্যথায় গোনাহ হবেনা এবং এ ব্যাপারে তাকে কোন কাফফারাও দিতে হবেনা। যদি কারো কাছে কয়েকটি কুরবানী থাকে তাহলে সে একটা কুরবানী করার পর নখ ও চুল কাটাতে পারবে (আলআম্মিলাহ অল-আজভিবাতুল ফিকহিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, ৩১ পৃষ্ঠা)। এই হাদীসগুলোর ভাব প্রমাণ করে যে, যারা কুরবানীর সামর্থ রাখেনা তারা যদি উক্ত দশ দিনের মধ্যে নখ চুল কাটে তাহলে তারা হারাম কাজের কাজী হবেনা। তবে কুরবানীর নেকী থেকে তারা বঞ্চিত হবে।
এ ব্যাপারে ইমাম হাযম লিখেছেন, তাবিয়ী মনীষী ইমাম ইবনে গীরীণ যুলহিজ্জার প্রথম দশক শুরু হলে কোন ব্যক্তির চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি ঐ দশকে কচি বাচ্চাদের ন্যাড়া হওয়াতেও তিনি আপত্তি করতেন (আল-মুহাল্লা, ৭ম খণ্ড, ৩৬৯ পৃষ্ঠা)।
0 Comments