কুরবানীর জানোয়ার বদল করা যায় কি না

        কোন জন্তুকে কুরবানীর উদ্দেশ্যে কেনার পর তাকে যে কোন কারণে হোক বেচা ও বদল করা যাবে কি না-এ ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। তাবারানী আওসাতে ইবনে আব্বাস বর্ণিত আছে যে, একব্যাক্তি কুরবানীর জন্তু কেনাবেচা করছিল। অর্থাৎ সে একটি জন্তু কিনে তাকে বেচে আবার তার চেয়ে একটি মোটা জানোয়ার কিনছিল। অতঃপর তিনি ঐ কাজের অনুমতির কথা উল্লেখ করলেন। (মিরআত, ২য় খণ্ড, ৩৬৮ পৃষ্ঠা)। এই হাদীস এবং তিরমিযী ও আবু দাউদে হাকীম ইবনে হিযাম বর্ণিত একটি যয়ীফ হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ ও ইমাম আবু হানীফা (রহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, কুরবানীর জন্তু বেচা ও বদলানো জায়েয।

       হানাফী ফকীহরা বলেন, কোন জানোয়ার কুরবানীর জন্য নিখুঁত দেখে কেনার পরও যদি কোন খুঁত হোয়ে যায় তাহলে কুরবানীদাতা ধনী হলে তাকে তার বদলে অন্য জানোয়ার কুরবানী করতে হবে এবং সে ফকীর হলে ঐটাই যথেষ্ট হবে। (হিদায়া ৪র্থ খণ্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা)। মালিকী এবং হাম্বালীরা গরীব ও বড় লোকের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি। হানাফী ফকীহদের ঐ পার্থক্য করা তাদের বিবেকপ্রসূত ফতওয়া; হাদীসের ফতওয়া নয়।

        ইমাম শাফিয়ী ও ইমাম আবু ইউসুফ হানাফী বলেন, কুরবানীর জানোয়ার কোন উপায়েই বেচা ও বদল করা চলবেনা। কারণ জানোয়ারটিকে আল্লাহর জন্য 'খাস' করার পর তাতে আর কোনরূপ হস্তক্ষেপ চলে না। তাঁদের দলীল এই হাদীসগুলো:- হারবুল কিরমানি সালমাহ ইবনে কুহাইলের মামু থেকে বর্ণিত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে যে, ঐ মামু সাহেব হযরত আলীকে একটি জানোয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যাকে তিনি কুরবানীর জন্য কিনেছিলেন। জওয়াবে হযরত আলী তাকে বলেন, এটা কি তুমি কুরবানীর জন্য খাস কোরে নিয়েছো? তিনি বললেন, হাঁ। ফলে হযরত আলী আপত্তি করলেন। (তালম্বীসুল হাবীর, ৩৮৬ পৃষ্ঠা)।

     মুসনাদে আহমাদ ও আবু দাউদে ইবনে উমার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত উমার একটা জানোয়ার 'হাঙ্গ'র (হজ্জব্রত পালনরত হাজীদের কুরবানীর জানোয়ারকে হাদঈ বলা হয়) জন্য কিনে তাকে বেচে আবার তার বদলে ঐ দামে অন্য একটা জানোয়ার কেনার কথা রসূলুল্লাহ (স:) কে জিজ্ঞেস করায় তিনি (স:) বললেন, না, (বদল হবে না)। তুমি ঐটাই নহর কর। (নাইলুল আওতার ৪র্থ খণ্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা)।

    দারাকুতনীতে হযরত আয়িশা থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি দুটি হাদ্‌ঙ্গ পাঠান। অতঃপর তা হারিয়ে যায়। ফলে ইবনে যুবাইর দুটি হাদ্‌ঙ্গ তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। হযরত আয়েশা ঐ দুটোকে নহর করেন। অতঃপর হারানো জানোয়ার দুটি পাওয়া যায়। তখন তিনি ঐ দুটোকেও নহর করেন এবং বলেন, এটাই হল কুরবানীর তরীকা। ইবনে আবী শাইবার বর্ণনায় আছে, হযরত আয়িশা একবার একটি উট কেনেন। পরে তা হারিয়ে যাওয়ায় তিনি তার জায়গায় আর একটি উট কেনেন। অতঃপর হারানোটি খুঁজে পান। ফলে দুটোকেই তিনি নহর করেন। (তালখীস ৩৮৬ পৃষ্ঠা)।

        উক্ত হাদীসগুলোর ভিত্তিতে আহলে হাদীসদের এক বিখ্যাত আলিম আল্লামা মুহাম্মাদ দাউদ গযনভী বলেন, কুরবানীর জানোয়ার কোন উপায়েই বেচা ও বদল করা যাবেনা। (উর্দু আহলে হাদীস দিল্লী, ৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১, সংখ্যা, ৮পৃষ্ঠা)। কিন্তু আল্লামা উবায়দুল্লাহ রহমানী বলেন, কমদাম ও সমান দামে বদল করা সবার মতে নাজায়েয। কিন্তু যদি কোন জানোয়ার কুরবানীর জন্য কেনার পর তা নষ্ট হোয়ে যায়, কিংবা হারিয়ে যায় অথবা চুরি হোয়ে যায় তাহলে ইবনে কুদামাহ বলেন, তার বদলে অন্য জানোয়ার খেসারত দিতে হবেনা। (মিরআত ২য় খণ্ড, ৩৬৯ পৃষ্ঠা)। কিন্তু হানাফী ফিক্‌ বলে, এসব অবস্থায়ও ঐরূপ হবে যেমন একটু আগে গরিব ও বড়লোকের ব্যাপারে বলা হয়েছে। (হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা)।

Post a Comment

0 Comments