কুরবানীর গোশ্ কি করতে হবে

        কুরবানীর গোশ্ত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ওথেকে তোমরা কিছু খাও এবং দূরাবস্থা-অভাবীদের খাওয়াও (সূরা হজ্জ, ২৮ আয়াত)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ওথেকে তোমরা কিছু খাও এবং না-চেয়ে তুষ্ট আর চেয়ে চেয়ে সবাইকে কোরে ব্যতিব্যস্ত তাদেরকে খাওয়াও (ঐ, ৩৬ আয়াত)।

        উক্ত দুটি আয়াতের ভিত্তিতে কুরবানীর গোশত বণ্টন সম্পর্কে আজি এদের মধ্যে দুটি মত প্রচলিত হয়েছে: ১. তা দু ভাগ করতে *ব: এক ভাগ কুরবানীদাতারা খাবে এবং এক ভাগ অভাবীদের দান করবে। ২. তা তিনভাগ করতে হবে- একভাগ কুরবানীদাতার। একভাগ বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশিদের যারা চেয়ে বেড়ায় না এবং একভাগ ঐ সব অভাবীদের, যারা মেঙেপেতে বেড়ায়। যেমন হাদীসে আছে, তোমরা খাও, জমা কোরে রাখ এবং সদাকাহ কর। (তফসীর ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা)। ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বলেন, তিরমিযী শরীফের উক্ত হাদীসটির ভিত্তিতে অধিকাংশ আলিমের ফাতওয়া তিনভাগ করা। একভাগ খাওয়া, একভাগ সদাকাহ করা এবং একভাগ জমা রাখা। (ফাতহুল আল্লাম, ২য় খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা)।

        হানাফী ফিক্‌ বাদা-যিঅতে আছে, উত্তম হল তিনভাগের একভাগ দান করা, একভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মেহমানদারীর জন্য জমা রাখা এবং একভাগ নিজেরা খাওয়া। ফাতা-ওয়া গিয়াসিয়্যাতে আছে, ঐ দান ধনী ও গরীব, মুসলিম ও অমুসলিম সবাইকে দেওয়া যাবে। যদি কেউ সবই সদাকাহ কোরে দেয় তা জায়েয। তেমনি সে সবই যদি আটকে রাখে তাও জায়েয। তবে লোককে খাওয়ানো এবং দান করাটাই উত্তম। (ফাতা-ওয়া আলমগীরী, ৪র্থ খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা)।

        ইমাম হাসান ও আবূ সত্তর এবং আসহা-বুর রায়ের মতে কাফেরদের কুরবানীর গোস্ত খাওয়ানো জায়েয (আলমুগনী, ৮ম খণ্ড, ৬৩৮, পৃষ্ঠা)।

        মাবসূত গ্রন্থে ইমাম শাফিয়ী (রহ:) বলেন, আমার নিকট পছন্দনীয় মত এই যে, নিজে খাওয়া ও জমা কোরে রাখাটা যেন এক তৃতীয়াংশের বেশী না হয় এবং বড়লোকদের তুহফাটা একের তিনভাগ, আর গরীবদের দানটাও যেন একের তিনভাগ হয়। জমা রাখা সম্পর্কে ইমাম নবভী বলেন, তা যেন নিজের খাবার ভাগ থেকে রাখা হয় এবং তুহফা ও দান করা ভাগ থেকে যেন না রাখা হয় (রওযাতুত ত-লিবীন, ৩য় খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা)।

        আবু মুসা ইসপাহানীর অযা-য়িফ গ্রন্থে বর্ণিত ইবনে মসউদ, ইবনে উমার ও ইবনে আব্বাস রিওয়ায়াতকৃত তিনটি হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম আহমাদ বলেন, তিনভাগ করাটাই উচিত (মিরআত, ২য় খণ্ড, ৩৬৯ পৃষ্ঠা)।

কুরবানীতে ভাগীদারদের গোস্তের ভাগ কিভাবে হবে

        হানাফী ফিক্‌হ হিদায়াতে বলা হয়েছে যে, একটি কুরবানীতে ভাগীদারগণ তাদের ভাগের গোল্ডগুলো ওজন কোরে নেবে। যদি তারা আন্দাজ কোরে নেয় তাহলে তা জায়েয হবেনা। এটাকে একটু বাড়িয়ে মওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ:) বলেন, কোন অংশ কমবেশী হলে তা সুদ হবে (হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা, বেহেস্তী যেওর, ৩য় খণ্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা)।

        এই ফাতওয়ার প্রমাণে কোন হাদীস নেই। বরং এটা ওঁদের কিয়াসী ও বিবেকী ফাতওয়া। তাই আহলে হাদীসরাও বিবেকী ফতওয়া দিয়ে বলেন, ভাগীদাররা যদি খুশীমনে আন্দাজে ভাগ কোরে নেয় এবং একটু কমবেশী হলে কেউ যদি মনে কিন্তুভাব না রাখে তাহলে কোন আপত্তি নেই এবং ঐ কমবেশী সুদও হবেনা।

কুরবানীদাতার কিছু গোস্ত খাওয়া উচিত

        সূরা হজ্জের ২৮ এবং ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরবানীদাতাদের বলেন, তোমরা তাথেকে কিছু খাও। হাদীসে আল্লাহ্র রসূল বলেন, তোমাদের কেউ যখন কুরবানী করবে তখন সে যেন তার কুরবানী থেকে কিছু খায় (মুসনাদে আহমাদ)। অন্য হাদীসে আছে, তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার কুরবানীর কিছু অবশ্য অবশ্য খায় (তাবারানী, হিলয়্যাহ লি-আবীনুআয়ীম, কানযুল উমমাল, ৫ম খণ্ড, ৪৬-৪৭ পৃষ্ঠা)।

        উক্ত আয়াত ও হাদীসের বিধান অনুসারে ইমাম ইবনে হাম (রহ:) বলেন, প্রত্যেক কুরবানীদাতার ফরয নিজ কুরবানী থেকে কমপক্ষে এক বটি কিংবা তার চেয়ে বেশী খাওয়া এবং তার ইচ্ছামত কমবেশী খয়রাত করা আর ধনী ও কাফেরকেও খাওয়ানো তার পক্ষে বৈধ (আলমুহাল্লা, ৭ম খণ্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা)।

        তাহলে যাঁরা সবটাই সদকা করা জায়েয বলেন কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী তাঁদের ফাতওয়া ঠিক হয় কি? এই জন্যই রসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর কুরবানীর কলিজাটা প্রথমে খেতেন (তালখীসুল হাবীর, ৩৮৬ পৃষ্ঠা)।

কুরবানীর দিন কখন খাওয়া সুন্নত

        হযরত বুরাইদাহ (রাযিঃ) বলেন, নবী (সঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু না খেয়ে বের হতেন না এবং ঈদুল আযহার দিনে ঈদের নামায না পড়া পর্যন্ত কিছু খেতেন না (তিরমিযী, ইবনে মাজা, দারিমী, মিশকাত, ১২৬ পৃষ্ঠা)।

         ইবনে মাজা ও বাইহাকীর রিওয়ায়াতে আছে, না ফেরা পর্যন্ত খেতেন না। আসরমের বর্ণনায় আছে, কুরবানী না করা পর্যন্ত খেতেন না। মুসনাদে আহমাদ, দারাকুতনী ও বাইহাকীর বর্ণনায় আছে, অতঃপর তিনি কুরবানীর কিছু খেতেন। বাইহাকীর অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি (স:) কুরবানীর কলিজা খেতেন।

        এইসব হাদীসগুলো সামনে রেখে ইমাম আহমাদ বলেন, যার কাছে কুরবানীর জানোয়ার থাকে ঈদের নামাযের পর তার খাওয়াটা উত্তম। এই উক্তিটিরই আর একটু ব্যাখ্যা কোরে হাফিয ইবনে কুদামাহ (রহ:) বলেন, যার কাছে কুরবানীর জন্তু নেই তার খাওয়াতে আপত্তি নেই (মিরআত, ২য় খণ্ড, ৩৩৮ পৃষ্ঠা)।

        উপরোক্ত হাদীস অনুসারে আহলে হাদীসদের ফতওয়া এই যে, কুরবানীর জানোয়ার থাক বা না থাক ঈদুল আযহার নামাযের পর খাওয়াটাই উচিত এবং সাধ্যমত নবীজীর (স:) সুন্নত পালন করাই কর্তব্য।
ঈদুল আযহার দিনে রসূলুল্লাহর সুন্নত অনুযায়ী ঈদের নামায বা কুরবানী করা পর্যন্ত কিছু না খাওয়াকে অনেকে আধখানা রোযা বলে। এই বলাটা ঠিক নয়। কারণ তাদের এই রোযার সাহারী কই?

Post a Comment

0 Comments