সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকার্জে নিষেধেরহাদীসে বণিত ফজীলত


         হাদীসে নবুবী (দঃ)ঃ হযরত আবুবকর (রাঃ) একবার খুৎবাহ প্রদানকালে বলেছিলেন, হে মুসলিমগণ! তোমরা কুরআনে পাকের (নিম্নোক্ত) এ আয়াতটি পাঠ করছ, আর তার সঠিক মর্ম গ্রহণের বিপরীত করছ। (আয়াতটি এইঃ "ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু আলাইকুম আনফুসিকুম লাইয়াদুররু কুম মান দ্বাল্লা ইযাহতাওদ্বাইতুম"। অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা নিজের নিজের চিন্ত। কর। তোমরা হেদায়েত পেলে অন্য কেউ পথভ্রষ্ট হলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই।) অথচ আমি হুযুরে পাক (দঃ) কে বলতে শুনেছি, যে সম্প্রদায় গুনাহর কাজ করে এবং তাদের মধ্যে তাদেরকে সে কাজ থেকে বিরত করতে সক্ষম লোক থাকা সত্ত্বেও যদি তা' না করে, তবে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহতায়ালা তাদের সবার প্রতি আযাব নাযিল করবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)কে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা। জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আয়াতের লক্ষিত সময়কাল এখন নয়। কেননা এখন একের উপদেশ অন্যে মান্য করে। তবে অচিরেই এমন যমানা উপস্থিত হবে, যখন সৎকাজের জন্য উপদেশ দেয়া হলে তজ্জন্য নির্যাতন পোহাতে হবে এবং তুমি যা বলবে, তোমার কথা কেউ শুনবে না। ঐ যমানায় এই আয়াত অনুযায়ী শুধু নিজ নিজ চিন্তা করতে হবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে সৎকাজে উপদেশ দিতে হবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করতে হবে। নতুবা অসৎ লোকেরা তোমাদের উপর জয়যুক্ত হবে। তারপর তোমাদের সর্বোত্তম লোকগণ দোয়া করলেও আর দোয়া কবুল হবে না। অর্থাৎ অসৎ লোকদের মন থেকে তাদের প্রতি ভয় চলে যাবে।

        অন্য হাদীসে হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, হে মানবকুল! আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা সেইদিনটি আসার পূর্বে সৎকাজে আদেশ দান কর ও অসৎকাজে নিষেধ কর, সেদিন তোমরা দোয়া করলে তা' কবুল হবে না। অন্য হাদীসে আছে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালা বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, কিসে তোমাকে অসৎকাজে নিষেধ করা থেকে বিরত রাখল। তখন আল্লাহতায়ালা যদি তাঁর বান্দাকে জবাব শিখিয়ে দেন, তবে সে বলবে, হে মাবুদ! আমি তোমার উপর ভরসা করেছিলাম এবং মানুষকে ভয় করেছিলাম। আর এক হাদীসে আছে, মানুষের সব কথাবার্তাই ক্ষতিকর হয়ে থাকে, উপকারী হয় না। কিন্তু সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধের ব্যাপার তা' নয়। আরও বর্ণিত আছে যে, আল্লাহতায়ালা সদা প্রভাবশালী লোকদেরকে সাধারণ লোকদের গুনাহর জন্য শাস্তিদান করেন না। কিন্তু সাধারণ লোকদের গুনাহর ব্যাপারে প্রভাবশালী লোকগণ শক্তি থাকা সত্ত্বেও তা' থেকে বারণ না করলে তাদের উপরও আযাব নাযিল করেন। হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, তোমাদের কি অবস্থা হবে যখন তোমাদের স্ত্রীলোকগণ অবাধ্য হয়ে যাবে। তোমাদের যুবকবৃন্দ অপকর্ম শুরু করবে এবং তোমরা জিহাদ বর্জন করবে? ছাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! এরূপ কি অবশ্যই হবে? তিনি বললেন, যে আল্লাহর হস্তে আমার প্রাণ তাঁর কসম, এর চেয়েও গুরুতর ব্যাপার হবে। আরজ করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। এর চেয়েও গুরুতর ব্যাপার কি হতে পারে? তিনি বললেন, তোমাদের অবস্থা কি হবে যখন তোমরা সৎকাজে আদেশ করবে না এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে না? আরজ করা হল, এরূপও কি হবে ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)? তিনি বললেন, হাঁ আল্লাহর কসম, এর চেয়েও মারাত্মক কাজ হবে। সমবেত লোকগণ আরজ করল, এর চেয়েও গুরুতর কাজ কি হতে পারে ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)? তিনি বললেন, তোমাদের দশা কি হবে যখন তোমরা সৎকাজকে অসৎ এবং অসৎকাজকে সৎ মনে করবে। তারা আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। এটা কি করে হবে? তিনি বললেন, তোমাদের অবস্থা কি হবে যখন তোমরা অসৎকাজের আদেশ করবে এবং সৎকাজ করতে নিষেধ করবে? শ্রোতাগণ আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! এরূপ হবারও সম্ভাবনা আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এর চেয়েও গুরুতর ব্যাপার হবে। আল্লাহতায়ালা নিজের কদর বেচে বলেতেন, আমি তাদের উপর এমন ফেত্না চাপিয়ে দেব যে, জ্ঞানী ও বুঝিলাদ লোকগণও বিপাকে পড়ে যাবে। হযরত ইকরামা (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সাব্বাস(রঃ) থেকে কর্ণনা করছেন যে, অনুতে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে জল্যান্তভাবে হত্যা করা হয় তার নিকাট পাঁড়িও না। কেননা যে সেখানে উপস্থিত থাকে এবং এ বিপদ প্রতিরোধের চেষ্টা করে না তার প্রতি আল্লাহর তরফ থেকে অভিসম্পাত আসে। যাকে অন্যাজাভাবে সাতবর করা হত তার নিকটও দাঁড়িও না। কেননা যে সেখানে থাকে এবং জুলুম প্রতিরোদের চেষ্টা না করে তার উপরও অভিসম্পাত বর্ষিত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাব্বাস (রাঃ) বলেন, অনুতে পাক (সঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাকে তারজন্য সত্য বলা থেকে বিরত থাকা অনুচিত। কেননা, কারুরই মৃত্যু সুনির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে হবে না এবং যে রিফিক তার নজীবে রয়েছে তা' থেকেও সে বঞ্চিত হবে না। (এমতাবস্থায় সত্য কথা বলতে ভয় করবার কোন প্রশ্নই আসে না)

        এ হাদীসটির মর্মে বুঝা যাচ্ছে যে, জালিম ও ফাসিকদের গৃহে যাওয়া দুরস্ত নয় এবং এমন স্থানেও যাওয়া জায়েয নয় যেখানে মন্দ কাজের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু তা' প্রতিরোধের সাধ্য থাকবে না। হাসীসে উপস্থিত ব্যাক্তির উপর অভিসম্পাত বর্ষিত হবার কথা আছে। এজন্যই কোন কোন পূর্ববর্তী সুবর্ণ জনপদ ছেড়ে নির্জনবাস অবলম্বন করেছিলেন। কেননা তারা দেখেছে যে, হাটে-খাটে, বাজারে, ঈদের মাঠে ও জনসমাবেশে সর্বত্রই অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে অথচ তারা তা' প্রতিরোধ করতে অক্ষম। সুতরাং এমতাবস্থায় মানুষের কাছ থেকে হিজরত করা অর্থাৎ দূরে সরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। আর এজন্যই হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রহঃ) বলেছেন, ভবঘুরেগণ নিজ নিজ ঘর-বাড়ি ও সন্তান-সন্ততি থেকে যে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে এর কারণ সেটাই যার মধ্যে আমরা লিপ্ত। মোটকথা তারা দেখেছে যে, অনাচারে দেশ ছেয়ে লেছে এবং সৎকর্ম দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। উপদেশদাতার কথা কেউই মান্য করে না এবং শুধু ফেতনা-ফাসাদেই সবাই লিপ্ত। তাদের মনে এই আশঙ্কা জেগেছিল যে, না জানি আল্লাহর গজব তাদের উপরে এসে পড়ে। তাই তারা এমন লোকদের সংস্রবে বসবাস করবার চেয়ে বন্য পশু এবং হিংস্র প্রাণীর সাথে বসবাস করাকে এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন যাপন করাকে তুচ্ছ মনে করে লতা-পাতা খেয়ে জীবন যাপন করাকেই উত্তম মনে করেছেন। এ পর্যন্ত বলে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রহঃ) এ আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলেন, "ফাফিরর ইলাল্লাহি ইন্না পাকুম সাধীরুম মুবীন।" অর্থাৎ অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়ন কর। আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী। অতঃপর তিনি বললেন, কিছু লোক সত্যিই পলায়ন করেছে। যদি আল্লাহতায়ালা নবুয়তের মধ্যে কোন নিগূঢ় রহস্য না রাখতেন তাহলে আমরা কলায়াম যে, নবী তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কেননা আমরা জানি যে, ফিরেশতাগণ তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত এবং মুসাফাহা করে এবং হিংস্র প্রাণীরা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বিদায় হয়ে যায়। তাদের কেউ হিংস্র প্রাণীদেরকে ডাক দিলে তারা সে ডাকে সাড়া দেয়, যদি তারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাবার মনস্থ করেছ? তারা তাদের গন্তব্যস্থানের কথা তাদের নিকট প্রকাশ করে। অথচ তারা কেউই নবী নয়। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন গুনাহর কাজের নিকট উপস্থিত থাকে এবং সে তা' খারাপ মনে করতে থাকে তবে সে এমন যেন সে গুনাহর স্থানে উপস্থিত নেই। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহর কাজের নিকট উপস্থিত থাকে না কিন্তু দূরে থেকেও তা' ভাল মনে করে, সে এমন যেন সে সেখানে উপস্থিত রয়েছে। এ হাদীসের তাৎপর্য হল, কোন প্রয়োজনে গুনাহর কাজের স্থানে উপস্থিত থাকা অথবা ঘটনাক্রমে তার সম্মুখে গুনাহর কাজ হতে থাকা। নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন গুনাহর কাজের স্থানে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ প্রেরিত প্রত্যেক নবীরই সহচর রয়েছে। তাঁরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ে অবস্থান করে আল্লাহতায়ালার যতদিন ইচ্ছা ততদিন তাঁর কিতাব ও আদেশ অনুসারে চলতে থাকবে। তারপর যখন আল্লাহ তাঁর নবীকে তুলে নিবেন তখন সহচরগণ আল্লাহর কিতাব ও আদেশ অনুসারে এবং আল্লাহর নবীর সুন্নত অনুসারে চলতে থাকবে। তারপর যখন তারাও দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করবে তখন এমন এক সম্প্রদায় হবে যারা মিম্বরে আরোহণ করে এমন সব কথা বলবে যা' তারা জানে এবং কাজ এমন করবে যা' তারা জানে না। এরূপ সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাত হলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য ওয়াজিব হবে। যদি হস্তে জিহাদ করতে সক্ষম না হয় তবে মুখে জিহাদ করবে। এরপর আর ইসলাম নেই বলা যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, কোন এক বস্তির প্রায় সব লোকই পাপাচারী ছিল। কেবলমাত্র চারটি লোক তাদের কার্যকলাপগুলো খারাপ মনে করত। এদের মধ্যে একব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ তৎপর হল। সে বস্তির লোকজনকে বলল, তোমরা তোমাদের এ অপকর্মগুলো পরিত্যাগ কর। কিন্তু তারা তার এ উপদেশ প্রত্যাখ্যান করে তাদের অপকর্মেই লিপ্ত থাকল। ঐ লোকটি তাদেরকে ভাল-মন্দ কথা শুনাল। জবাবে তারাও তাকে গালি-গালাজ করল। শেষ পর্যন্ত লোকটির সাথে তাদের ঝগড়া বিবাদ শুরু হল। ফলে বস্তিবাসীরাই তার উপর জয়যুক্ত হল। এরপর সে তাদের থেকে পৃথক হয়ে আল্লাহর দরবারে আরজ করল। হে মাবুদ! আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করে নি। তারপর আমি তাদেরকে গাল- মন্দ করেছি। জবাবে তারাও আমাকে গাল-মন্দ করেছে। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি কিন্তু সেই যুদ্ধে তারাই বিজয়ী হয়েছে। অতঃপর সে লোকটি ঐ রস্তি থেকে বহু দূরে চলে গেল। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বস্তিবাসীদেরকে নিষেধ করতে উদ্যোগ নিল। কিন্তু সে প্রথম ব্যক্তির ন্যায় সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে অন্যত্র চলে গেল। একইভাবে তৃতীয় এবং চতুর্থ ব্যক্তিও চেষ্টা চালাল। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থমনোরথ হয়ে তারাও সেখান থেকে দূরবর্তী এলাকায় চলে গেল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, উল্লিখিত ব্যক্তি চতুষ্টয়ের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তির মর্তব্য সবচেয়ে কম ছিল। কিন্তু তোমাদের মধ্যে তার সমতুল্য লোক পাওয়াও অসম্ভব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একব্যক্তি • হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! এমন জনপদও কি কখনও ধ্বংস হবে, যেখানে নেককার ব্যক্তিগণও আবস্থান করেন। তিনি বললেন, হাঁ। আরজকারী এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এর কারণ হল, নেককার লোকগণ অলসতা করে এবং আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতার ব্যাপারে নীরব থাকে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা একজন ফিরেশতাকে আদেশ করলেন, অমুক শহরকে শহরবাসীদের উপর উল্টিয়ে দাও। তখন সে ফিরেশতা আরজ করল, হে প্রভু। সে শহরে তোমার অমুক বান্দা রয়েছে, যে এক মুহূর্তও তোমার নাফরমানী করে নি। আল্লাহ বললেন, তার উপর এবং সমস্ত শহরবাসীদের উপর শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কেননা শহরবাসীদের নাফরমানী দেখে এক মুহূর্তের জন্যও তার চেহারা বিবর্ণ হয় নি। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করলেন যে, কোন এক জনপদের অধিবাসীদেরকে আযাব দেয়া হল। তাদের মধ্যে আঠার হাজার লোক এই ধরনের ছিল যে, তাদের আমল প্রায় নবীদের আমলের মত ছিল। উপস্থিত লোকগণ জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! এটা কিভাবে হল? তিনি জবাবে বললেন, তারা আল্লাহতায়ালার জন্য ক্রুদ্ধ হাত না এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করত না। হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) বলেছেন, একদা হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) হুযুরে পাক (দঃ) এর খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা ব্যতীত আরও জিহাদ আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ দুনিয়ায় আল্লাহর পথে যারা জিহাদ করে তারা শহীদদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তারা জীবিত রিযিকপ্রাপ্ত এবং দুনিয়ায় চলাফেরা করে। আল্লাহতায়ালা তারেদকে নিয়ে ফিরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। আর বেহেশতকে তাদের জন্য এমনভাবে সজ্জিত করেন যে, যেন তা' হযরত উম্মে সালমার জন্য সজ্জিত হয়েছে। হযরত আবুবকর (রাঃ) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। তারা কারা? তিনি বললেন, যারা সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে এবং একে অন্যের সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শত্রুতা রাখে। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তারা শহীদদের কক্ষের উপরে থাকবে। প্রত্যেক কক্ষে তিন লক্ষ দরজা হবে এবং সেগুলো ইয়াকুত ও সবুজ বর্ণের পান্না নির্মিত হবে। আর তার প্রত্যেক দরজায় নূর চমকিতে থাকবে। তাদের একেক ব্যক্তির বিবাহ তিন লক্ষ আয়তলোচনা হুরীদের সাথে হবে। যখন সে ব্যক্তি তাদের কোন একজনের দিকে দুষ্টিপাত করবে তখন সে তাকে বলবে, তোমার স্মরণ আছে কি যে অমুকদিন তুমি মানুষকে সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করেছিলে? হযরত আবু ওবায়দা জাররাহ (রাঃ) বলেন, আমি একদা হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! শহীদগণের মধ্যে আল্লাহতায়ালার নিকট সর্বাধিক মর্যাদাশালী কে? তিনি বললেন, সেইব্যক্তি, যে কোন অত্যাচারী শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করে এবং একারণে তাকে শাহাদাত বরণ করতে হয়। এরূপ ঘটনার পর অত্যাচারী শাসক যদি তাকে হত্যা না করে তবে সে যতদিন জীবিত থাকবে তার আমলনামায় কোন গুনাহ লিখা হবে না।

Post a Comment

0 Comments