কুরবানীর উত্তম জানোয়ার কোনটা

 মহিষ কুরবানী বৈধ কি

      আল্লামা মানাভী হানাফী কুনুযুল হাকায়িক গ্রন্থে ইমাম দাইলামীর মুসনাদে ফিরদাওস থেকে একটি বর্ণনা এনে বলেছেন, কুরবানীতে মহিষ সাতজনের তরফ থেকে বৈধ। ইবনে আবী শায়বা হাসান থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহিষ গরুর স্থলাভিসিক্ত। সেজন্য কিছু ফোকাহা মহিষের যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে মহিষকে গরুর পর্যায়ে ফেলেছেন। এই ভিত্তিতে হানাফীদের ফাওয়া হল- মহিষ কুরবানী দেওয়া জায়েয এবং তা গরুর মত ৭ জনের তরফ থেকে হবে (হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৪৯ পৃষ্ঠা)।

         এ ব্যাপারে ভারতের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা উবায়দুল্লাহ রহমানী বলেন, মহিষ সংক্রান্ত হাদীসটির রাবীদের অবস্থা অজ্ঞাত। সেজন্য হাদীসটি নির্ভরযোগ্য নয়। তাই আমার নিকট সতর্কতামূলক পন্থা এই যে, রসূলুল্লাহ (স:), সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়ীন থেকে যার কোন প্রমাণ নেই তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করাই শ্রেয়। তবে হাঁ, যদি কারো মন নিশ্চিত হয় ঐ ফতওয়ায় যারা মহিষ কুরবানী জায়েয বলেছেন তাহলে সে তাদের মযহাবে চলতে পারে। ঐ ব্যাপারে তাকে লানতান করা ঠিক নয় (মিরআতুল মাফাতীহ, ২য় খণ্ড, ৩৫৪ পৃষ্ঠা)।

        বাদায়িঅ গ্রন্থে আছে, যদি কোন হরিণ বকরীর সাথে সঙ্গম করে, অতঃপর ঐ বকরীর বাচ্চা যদি বকরীর মত হয় তাহলে তা কুরবানী করা জায়েয। আর যদি তা হরিণরূপী হয় তাহলে তার কুরবানী জায়েয নয় (ফাতাওয়া আলমগীরী, ৪র্থ খণ্ড, ৮০ পৃষ্ঠা)।

কুরবানীর উত্তম জানোয়ার কোনটা

        রসূলুল্লাহ (স:) বলেন, উত্তম কুরবানী মোটাতাজা ভেড়া (তিরমিযী, মিশকাত ১২৮ পৃষ্ঠা)। এই হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানীর উত্তম জানোয়ার ভেড়া। ইমাম মালিক (রহ:) এই মত পোষণ করেন এবং এর কারণ সম্পর্কে বলেন যে, ওর গোস্ত খুব সুস্বাদু। ভেড়ার পর কোন্ জানোয়ার, উত্তম, সে সম্পর্কে মালিকীদের মধ্যে মতভেদ আছে। কারো মতে উট কারো মতে গরু। প্রসিদ্ধ মতে গরু (নায়লুল আওতার, ৪র্থ খণ্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)। প্রকাশ থাকে যে, হযরত আদম (আ:) এর পুত্র হাবীল যে কুরবানী করেছিলেন তা ভেড়া ছিল এবং হযরত ইসমাইলের পরিবর্তে যে জানোয়ারটি জান্নাত থেকে এনে হযরত ইবরাহীম (আ:) দ্বারা আল্লাহ কুরবানী করিয়ে নিয়েছিলেন সে জানোয়ারটিও ভেড়া বা দুম্বা ছিল।

        আবদুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (স:) উট কুরবানী দিতেন এবং উট না পেলে ভেড়া কুরবানী করতেন (তাহাবী, ২য় খণ্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা)। এই হাদীসের ভিত্তিতে এবং অন্যান্য হাদীসের আলোকে (জমহুর) অধিকাংশ আলেম বলেন, কুরবানীর উত্তম জানোয়ার উট, তারপরে গরু, তারপরে ভেড়া, তারপরে বকরী (নবডী শারহে মুসলিম, ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃষ্ঠা)। আরবদেশে অধিক প্রচলিত জন্তু হল উট ও গরু এবং তারপরে ভেড়া ও বকরী। সেজন্য রসূলুল্লাহ (স:) ও সাহাবায়ে কিরাম প্রায়ই উট কুরবানী করতেন এবং কখনো উটের আমদানী কম হলে তখন তারা গরু কুরবানী করতেন। যেমন ইবনে আব্বাস বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (স:) এর যুগে উটের আমদানী কম হওয়ায় তিনি (স:) সাহাবীদেরকে গরু কুরবানী করতে আদেশ দেন (ইবনে মাজা, ২৩৩ পৃষ্ঠা)।

        ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উপমহাদেশে উটের প্রচলন খুবই কম এবং সে তুলনায় গরু ও বকরীর আমদানী খুব বেশী, তারপরে ভেড়া ও ভেড়ী। সেজন্য ইবনে আব্বাস বর্ণিত, ইবনে মাজার রিওয়ায়াতকৃত উক্ত হাদীসটির আলোকে জমহুর ওলামার ফাওয়ার ভিত্তিতে বোঝা যায় যে, এই উপমহাদেশের উৎকৃষ্ট জানোয়ার গরু-ষাঁড় ও বকরী-খাসী-পঠা এবং তারপরে ভেড়া-ভেড়ী, দুম্বা ও  উট-উটনী।
 
        একটি হাদীসে আছে, রসূলুল্লাহ (স:) বলেন, উত্তম কুরবানী শিংওলা দুম্বা (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা, মিশকাত ১৪৪ পৃষ্ঠা)। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জন্মগত শিং বিহীন পশুর চেয়ে শিংওলা জন্তু উত্তম। আমাদের দেশে কিছু গরু এমনও পাওয়া যায় যার শিং জন্মগতভাবে নড়নড়ে, যাকে ম্যানা শিং বলা হয়। উক্ত হাদীস ও অন্যান্য হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, ম্যানা শিংওলা গরুর তুলনায় শক্ত ও খাড়া শিংওলা পশু শ্রেয়।

        হযরত আবু সায়ীদ খুদরী বলেন, রসূলুল্লাহ (স:) শিংওলা নর দুম্বা কুরবানী করতেন (আবু দাউদ, ২য় খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা, তিরমিযী ১ম খণ্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা)। এই হাদীসে বর্ণিত 'নর' শব্দটি দ্বারা ইমাম ইবনুল আরাবী বলেন, মাদি জন্তুর তুলনায় নর জন্তু কুরবানী করা উত্তম। ইমাম আহমাদ ও ইমাম শাফিয়ীর একটি মতও তাই (ফাল্গুল বারী ১০ম খণ্ড, ৭-৮ পৃষ্ঠা)। অন্যান্য হাদীস দ্বারা বোঝা যায় নরের মধ্যে খাসী জন্তু রসূলুল্লাহ্র নিকট অধিক পছন্দনীয় ছিল। খাসীর বিবরণ পরে আসছে।

Post a Comment

0 Comments