হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর উট কুরবানী ঠিক, না কাল্পনিক?

        হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম স্বপ্নে যখন কুরবানীর নির্দেশ পান তখন তাঁকে স্বপ্নে কি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? এ ব্যাপারে ওয়ায়িযীন ও বক্তাদের মুখে এবং কবি-লেখক ও জনগণের মধ্যে রটে আছে যে, হযরত ইব্রাহীমকে নাকি বলা হয়েছিল যে, তুমি তোমার প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাহে কুরবানী কর। ফলে তিনি তিনদিনে তিনশো উট কুরবানী করেন। তারপরেও তিনি আবার তাঁর প্রিয় বস্তু কুরবানী করার নির্দেশ পাওয়ায় তিনি বুঝতে পারলেন যে, প্রিয় বস্তু বলতে তাঁর একমাত্র পুত্র ইসমাইলকেই কুরবানী করতে বলা হয়েছে। তাই তিনি সবশেষে স্বীয় পুত্রকে কুরবানী করতে সচেষ্ট হন।

        এ ব্যাপারে মজার কথা এই যে, 'তুমি তোমার প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাহে কুরবানী কর'-এই কথাটি আমাদের সমাজে কোথা থেকে রটলো। কারণ, কুরআনের কোথাও ঐ বাক্যটির সন্ধান মেলেনা। এবং কুরআনের নির্ভরযোগ্য কোন তফসীরেও ঐ বাক্যটির পাত্তা পাওয়া যায় না। তেমনি তিনশো উট কুরবানীর কথাও কোন মুস্তানাদ ও অথেনটিক তফসীরে আমি খুঁজে পেলাম না। উক্ত দুটি বিষয় অর্থাৎ 'প্রিয় বস্তুকে কুরবানী করার নির্দেশ' এবং ঐ নির্দেশ পালনার্থে 'তিনশো উট কুরবানীর' কথা আমি তফসীরে ইবনে কাসীর, তফসীরে ফাতহুল কাদীর, তফসীরে কাবীর, তফসীরে আবুস্সউদ, তফসীরে মাযহারী, তফসীরে নাসাফী, কাশশাফ, বায়যাভী, ফাতহুল বায়ান, রূহুল মাআ-নী, বাগাভী ও তফসীরে খাযিন প্রভৃতি তফসীরগুলো তন্নতন্ন কোরে ঘাঁটলাম। কিন্তু কোথাও উক্ত দুটি বিষয়ের সন্ধান পেলাম না। অতঃপর উর্দু তফসীরগুলোর মধ্যে তফসীরে হুসাইনী, হাক্কানী ও উসমানী, মাআ-রিফুল কুরআন ও বায়া-নুল কুরআন, মাজিদী ও মওদূদী, সানায়ী ও বিযায়ী প্রভৃতি তফসীর মন্থন করলাম। আমার সাধ্যমত হাদীস ও শারহে হাদীসের বহু গ্রন্থও কনসাল্ট করলাম। বহু আলেমকেও জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু কোথাও বিষয় দুটির বরাত পেলাম না। যারা ঐ কথাগুলো বলে বেড়ান তারা কোন্ নির্ভরযোগ্য হাওয়ালার ভিত্তিতে বলেন জানিনা। কুরআন স্পষ্ট বলছে যে, হযরত ইব্রাহীম তাঁর প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাহে কুরবানী করুক এ স্বপ্ন দেখেননি, বরং তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, 'স্বীয় পুত্রকেই যবহ করছেন'। আয়াতটির তফসীরকার সমস্ত মুফাসসিরগণও তাই বলেছেন যে, তিনি উঠোউঠি তিনটি রাতেই স্বপ্ন দেখেন যে, স্বীয় পুত্রকে যবহ করছেন। তাহলে প্রিয় বস্তু কুরবানীর কথা এল কোথা থেকে?

        কাসাসুল আম্বিয়ার উর্দু অনুবাদ গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠায় আছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পরপর তিনরাত স্বপ্ন দেখেন এবং প্রতিদিন দুশো কোরে মোট ৬শো উট কুরবানী করেন। তারপর ৪র্থ রাতে স্বপ্ন দেখে ৪র্থ দিনে তিনি নিজ পুত্রকে কুরবানী দিতে উদ্যত হন। উক্ত কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থে বহু উদ্ভট ও গাঁজাখুরী কথা লেখা আছে যার প্রতিবাদ মাওলানা হিফযুর রহমান (রহ:) কাসাসুল কুরআন নামক গ্রন্থে প্রায়ই করেছেন। সমস্ত তফসীর ওয়ালারা বলছেন, হযরত ইব্রাহীম (আ:) স্বপ্ন দেখেন তিনরাত, কিন্তু কাসাসুল আম্বিয়া বলছে, চার রাত। বাজারে রটে আছে, তিনশো উট কুরবানীর কথা। কিন্তু কাসাসুল আম্বিয়া বলছে, ছয়শো উট। আমার মনে হয় যে, এগুলো ইহুদী ও খৃষ্টানদের বিকৃত বর্ণনা।

        তাই সত্যিকার আলেমদের কাছে জানতে চাইছি যে, 'প্রিয়বস্তু কুরবানী করার নির্দেশ' এবং ঐ নির্দেশ পালনার্থে 'হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর তিনশো বা ৬শো উট কুরবানীর' কথা কোন নির্ভরযোগ্য তফসীরে কিংবা সহী হাদীসে আছে কি যদি থাকে তাহলে ঐ তফসীর বা হাদীস গ্রন্থের খণ্ড ও পৃষ্ঠার হাওয়ালা সহ বিষয়টি আমাকে জানিয়ে বাধিত করুন। অন্যথায় ব্যাপারটি যদি ভিত্তিহীন হয় তাহলে প্রকৃত ব্যাপারটি জনগণকে জানিয়ে ভ্রান্তিমুক্ত করুন। আত্মত্ব আমাদেরকে প্রকৃত বিষয় জানার এবং তা প্রচারের তাওফীক দিন-আমীন!

Post a Comment

0 Comments