(১) মাসয়ালাঃ যদি অত্যাচারী শাসনকর্তা থেকে কোন মাল কারও হস্তগত হয়, তার কি বাবস্থা হবে? এ সম্পর্কে একদল আলিম বলেন, সে তা' শাসনকর্তাকে ফেরত দেবে এবং তা' কাকে দিতে হবে তা' শাসনকর্তার জানা আছে। দান করা থেকে তাকে তা' ফেরত দেয়াই উত্তম। হারেছ মুহাসাবী (রহঃ) আলিমদের এই মতই সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, কিরূপে তা' দান করা যায়। হয়ত তার কোন নির্দিষ্ট মালিক আছে। যদি দান করা জায়েয হত, তাহলে শাসনকর্তা থেকে কোন মাল চুরি করে তা' দান করা জায়েয হত। আর একদল আলিম বলেন, হারাম মাল দান করে দেয়াই উচিত। কেননা সে জানে যে, শাসনকর্তা প্রকৃত মালিকের নিকট তা' ফিরিয়ে দেবে না এবং তদ্বারা অত্যাচারীকে সাহায্য করা হবে এবং অত্যাচারের বিস্তার বৃদ্ধি পাবে; সুতরাং তাকে তা' ফেরত দেয়া মালিকের শর্তের পক্ষে অনিষ্টকর। আমাদের মতে উত্তম ব্যবস্থা হল, যখন শাসনকর্তার স্বভাব জানা থাকে যে, সে তা' মালিকের নিকট ফেরত দেবে না, সে তখন মালিকের পক্ষে দান করে দেবে। তা' মালিকের পক্ষে উত্তম, যদি তার নিদিষ্ট কোন মালিক থাকে। নির্দিষ্ট মালিক না থাকলে, তখন তা' সমস্ত মুসলমানের স্বত্ব হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তা' শাসনকর্তার নিকট ফিরিয়ে দিলে সে স্বত্ব নষ্ট হয়ে যায়। তদ্দ্বারা অত্যাচারী শাসনকর্তার সাহায্য করা হয় এবং মালিকের জন্য দরিদ্রের দোয়ার বরকত চলে যায়। যদি তার হাতে কোন মীরাসী দ্রব্য এসে পড়ে এবং যদি সীমাতিক্রম করে, শাসনকর্তা থেকে তা' গ্রহণ করা না হয়ে থাকে, তাহলে তা' পথে পাওয়া দ্রব্যের হুকুমের ন্যায় হয়। মালিকের সন্ধান না পাওয়া গেলে, মালিকের তরফ থেকে তা' দান করা যায়।
(২) মাসয়ালাঃ যদি এমন কোন মাল হাতে আসে, যার মালিক নেই, আমি প্রাপকের অভাবের দরুন আবশ্যকীয় পরিমাণ পর্যন্ত গ্রহণ করা তার জন্য জায়েয রেখেছি। কিন্তু আবশ্যকীয় পরিমাণ সম্বন্ধে মতভেদ আছে। তা' যাকাতের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি। একদল আলিম বলেন, নিজের ও পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ গ্রহণ করাই আবশ্যকীয় পরিমাণের সীমা। হযরত হারেছ মুহাসাবী (রহঃ) বলেছেন, একখণ্ড যমিন খরিদ করা বা পরিবারের প্রতিপালনের জন্য কোন ব্যবসার মূলধনস্বরূপ গ্রহণ করা আবশ্যকীয় পরিমাণের সীমার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু পূর্ববর্তী বুযর্গগণ আল্লাহর উপর তা' তাওয়াক্কুলের শক্তির সাহায্যে হালালের মধ্যে রহমত পাওয়ার জন্য সবই দান করে দেয়ার কথা বলেছেন। যদি তা' না পায় তা'হলে একখণ্ড যমিন খরিদ করবে। অথবা ন্যায়সঙ্গতভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য মূলধন গ্রহণ করবে। যেদিন হালাল রুজী অর্জিত হয়, সেদিন তা' থেকে কিছু গ্রহণ করবে না। যখন সেদিনের রুজী শেষ হয়ে যায়, তখন তা' থেকে কিছু গ্রহণ করা যায়। যখন কোন নির্দিষ্ট হালাল মাল পাবে, তখন পূর্বে যে মাল ব্যয় করা হয়েছে সে পরিমাণ মাল তা' থেকে দান করে দেবে। দান না করলে তা' ঋণস্বরূপ থেকে যাবে। যদি উপরোক্ত মাল কারও হাতে আসে, তবে সে রুটি ভক্ষণ করবে, কিন্তু গোশত থেকে বিরত থাকবে। যদি তা' সম্ভব না হয়, গোশত ভক্ষণ করতেই হয়, তবে অল্প ভক্ষণ করবে। অতিরিক্ত পরিমাণে বা খুব সুস্বাদু এবং উপাদেয় করে পাকিয়ে ভক্ষণ করবে না। হযরত মুহাসাবী (রহঃ) এর এ বর্ণনার পর আর কিছু বলার দরকার করে না।
(৩) মাসয়ালাঃ যদি কারও হস্তে হালাল, হারাম ও সন্দেহজনক দ্রব্য আবশ্যকীয় পরিমাণ থাকে এবং তার যদি পরিবারবর্গ থাকে, তখন সে নিজের জন্যই শুধু হালাল মাল ব্যবহার করবে। কেননা পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির তুলনায় নিজের হকই অধিক। সন্তান- সন্ততিদেরকেও হারাম মাল থেকে বাঁচাতে হবে। তবে যদি হালাল মালে তাদের আবশ্যকতা পূর্ণ না হয়, তখন সেই হারাম মাল আবশ্যক পরিমাণ তাদেরকে দিতে পারা যায়। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তা' যেন তাদেরকে বিপথে না নিয়ে যায়। খুব বেশী প্রয়োজনের সময় হারাম মালও হালাল হয়ে যায়। এককথায়, যা অন্যের বেলায় নিষিদ্ধ, তা' নিজের জন্যও নিষিদ্ধ। যখন পরিবারবর্গকে হারাম মাল খাওয়াবে, তখন তোমার ওজর থাকবে। কেননা তাতে তাদের অভাবের জন্য স্বাধীনতা থাকে না। এজন্যই নিজের জন্য প্রথমে হালাল মাল ব্যবহার করবে, তারপর পরিবারবর্ণের জন্য। যখন হারাম মাল বের করতে ইতস্ততঃ হয় এবং যখন খাদ্য ভক্ষণ ও পোশাক-পরিচ্ছদ একদিকে হয় এবং অন্যদিকে শিঙ্গা, ধোপা, রাজমিস্ত্রি এবং কুলি-মজুরের মজুরী, তেলের ঘানি, গৃহ নির্মাণ, পশু-প্রাণীকে ঘাস দেয়ার মুজুরী, চুলা গরম করা, কাঠ ফারা, বাতি জ্বালান ইত্যাদির মজুরী গ্রহণের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। তখন খাদ্যদ্রব্য ও পোশাক- পরিচ্ছদকে হালাল রুজীর জন্য প্রথম প্রাধান্য দেবে। এর মধ্যে যে বস্তু শরীরের সাথে সম্পৃক্ত তাকেই প্রথম এই বিষয়ে গুরুত্ব দেবে। তবে এর মধ্যে খাদ্য ভক্ষণই অগ্রগণ্য। কেননা তা-ই মাংস ও রক্তবৃদ্ধি করে। যে গোশত হারামখাদ্য দ্বারা বর্ধিত হয়, তা' হাদীস অনুযায়ী দোযখের অগ্নির অধিক উপযোগী। পোশাক গুপ্ত অঙ্গকে আবৃত করে এবং শীত ও তাপ নিবারণ করে। তা' প্রকাশ্যভাবেই দেখা যায়। হযরত হারেছ মুহাসাবী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, শুধু পোশাক হালাল হওয়া অধিক সঙ্গত। কেননা তা' শরীরের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু খাদ্য তদ্রূপ নয়। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি দশ দেরহাম মূল্যে কোন বস্তু ক্রয় করে, তা' পরিধান করে, তন্মধ্যে এক দেরহাম হারাম হলে ঐ বস্ত্র তার শরীরে থাকা পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না। এটাই এক সন্দেহের বিষয়। এই সতর্কবাণী ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যার উদরে হারাম খাদ্য থাকে এবং যার মাংস হারাম দ্রব্য দ্বারা বর্ধিত। মাংস ও হাড় হালাল খাদ্য দ্বারা বর্ধিত হওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্যই হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) দুগ্ধ পান করে তা' বমি করে ফেলেছিলেন। যেন তদ্দ্বারা তার মাংস বৃদ্ধি না হয়, মাংস দৃঢ় না হয় এবং তা' শরীরে স্থায়ী হয়ে না থাকে। যদি বল যে, সব রকম ব্যয়ই যখন এই উদ্দেশ্যেই হয়, তখন নিজের জন্য ব্যয় করা ও অন্যের জন্য ব্যয় করার মধ্যে পার্থক্য কি? আর খাদ্যের জন্য ব্যয় এবং অন্যান্য কাজে ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য কিরূপে করা যায়? এর উত্তর হল, এই পার্থক্য হাদীস দ্বারা জানা যায়। হযরত রাফে' বিন খাদীজের মৃত্যুকালে তিনি শিঙ্গাদাতা, একটি গোলাম এবং পানি বহনকারী একটি উটনী রেখে গেলেন। হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এ বিষয়টি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শিঙ্গার উপার্জন উপভোগ করতে নিষেধ করলেন। বার বার তাঁকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করা হলে প্রত্যেকবারই শিঙ্গার মূল্য গ্রহণ করতে বারণ করলেন। তখন ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, মৃত ব্যক্তির সন্তানগণ কি তার উপার্জন উপভোগ করতে পারে? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, তার উপার্জন পানি বহনকারী উটনীকে খাওয়াও। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, নিজে হারাম খাদ্য খাওয়া ও নিজের প্রাণীকে হারাম খাদ্য খাওয়ার মধ্যে প্রভেদ আছে।
(৪) মাসয়ালাঃ যে ব্যক্তির কাছে হারাম মাল থাকে, তা' যদি গরীবের মধ্যে দান করে দাও, তখন দানে কৃপণতা করবে না; বরং নিজের ব্যাপারে ব্যয় করার কালে সাধ্যমত কৃপণতা করবে আর পরিজনের জন্য ব্যয় করবার কালে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে; সুতরাং তা' ব্যয়ের ব্যাপারে তিনটি স্তর হল, যদি কোন দরিদ্র মেহমান আসে, তার জন্য যথেষ্ট ব্যয় করবে। কিন্তু কোন ধনী মেহমান আসলে তাকে কোন খাদ্য ভক্ষণ করাবে না। তবে যদি তাকে কোন জনমানবহীন স্থানে যেতে হয় এবং রাত্রি হওয়ার কারণে তার খাদ্যপ্রাপ্তিতে সঙ্কটের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে খাদ্য ভক্ষণ করাতে দোষের কিছু নেই। কারণ ঐ সময় সে দরিদ্রের অনুরূপ। যদি কোন দরিদ্র মেহমান আসে এবং সে এমন পরহেজগার যে, তার প্রাণ গেলেও খাদ্যের কথা বলবে না। তাহলে তার সামনে খাদ্য হাজির করে ঐ খাদ্যের প্রকৃত তত্ত্ব বলে দেবে। তাতে তোমার মেহমানীর স্বত্বও আদায় হবে ও প্রবঞ্চনাও করা হবে না। কেন না তুমি যাকে মাকরূহ জান তদ্বারা কোন মুসলমান ভাইকে হেয় করা উচিত নয়, সে এ মালের বিষয় অবগত নয় বলে এ খাদ্যে তার কোন অপকার হবে না, এরূপ ধারণা করবে না। কেননা কোন হারাম দ্রব্য পাকস্থলিতে পৌঁছলে হৃদয় কঠিন হয়ে যায়। তজ্জন্যই হযরত আবুবকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) খাদ্য বমি করে ফেলেছিলেন। তাঁরা না জেনে দুধ পান করেছিলেন। ঐরূপ খাদ্য দরিদ্রদের জন্য হালাল বলে আমরা ফতোয়া দিয়েছি। তাদের আবশ্যকতার বিচার করে আমরা ঐ হুকুম দিয়েছি। কেননা মূলতঃ হারাম ভক্ষণ শূকরের মাংস ভক্ষণ এবং মাদকদ্রব্য পানাহারের ন্যায়। তবে যখন কুরআনের আয়াত অনুসারে আমরা অতি আবশ্যকতার কারণে ঐ দু' বস্তুকে হালাল বলতে পারি, তখন আবশ্যকতার ক্ষেত্রে উত্তম দ্রব্যকে কেন হালাল বলতে পারব না?
(৫) মাসয়ালাঃ যদি কারও পিতামাতার কাছে হারাম ও সন্দেহজনক দ্রব্য থাকে, তবে তাদের সঙ্গে একত্রে আহার পরিত্যাগ করবে। যদি তাতে তারা অসন্তষ্ট হয়, তা' হতে দাও। কেননা অকাট্য হারামের ক্ষেত্রে তাদের মনু রক্ষা করা যায় না; বরং তাদেরকেও তা' ভক্ষণ করতে নিষেধ করবে। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে আল্লাহর সৃষ্টিকে মান্য করা যায় না। সন্দেহজনক দ্রব্য হলে তা' থেকে বিরত থাকা পরহেজগারীর অন্তর্গত। অবশ্য পিতামাতাকে মান্য করাও পরহেজগারী; বরং তা' ওয়াজিব। অতএব এ অবস্থায় তাদের খাদ্য থেকে বিরত হওয়া অত্যন্ত নম্রতার সাথে অবলম্বন করা চাই। আর যদি তাতে সক্ষম না হও তবে তাদের মতানুযায়ী চলবে। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে একত্রেই আহার করবে। তবে তখন খুব সামান্য আহার করবে। খুব ছোট লোকমা মুখে দেবে এবং বেশীক্ষণ ধরে চিবাবে। কোনক্রমেই অধিক ভক্ষণ করবে না। কেননা তাতে উদরের সাথে শত্রুতা করা হয়।
ভাই ও ভগ্নির হক অধিক নিকটবর্তী এবং তাদেরও তোমাদের উপর হক আছে। তাদের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করবে। তদ্রূপ তোমার মাতা যখন তোমাকে বস্ত্র পরিধান করায় এবং তা' পরিধান না করলে সে অসন্তুষ্ট হয়, তখন তা' তার সামনে পরিধান করবে এবং তার নিকট থেকে চলে যাওয়ার পর খুলে ফেলবে, তার মানে ঐ বস্ত্র পরে নামায পড়বে যদি পরহেজগারীর অবস্থাসমূহ পরস্পর বিরোধী রূপ নিয়ে এভাবে উপস্থিত হয়, তবে তখন উল্লিখিত শর্তসমূহ অন্বেষণ করে কাজ করা অত্যাবশ্যক। বর্ণিত আছে যে, বাশার হাফী (রহঃ) এর মাতা তাঁকে একটি খুরমা ভক্ষণ করতে দিলেন এবং বললেন, তোমার উপর আমার যে হক আছে, তা' পালনপূর্বক তুমি এটা ভক্ষণ কর। তখন তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও খুরমাটি ভক্ষণ করলেন। তারপর একটি উচ্চস্থানে আরোহণ করলেন। তাঁর মাতাও তাঁর পিছনে পিছনে উঠলেন এবং দেখলেন যে, তার পুত্র ভক্ষিত খুরমা বমি করে ফেলছেন। তিনি একাধারে তার মাতাকে সন্তুষ্ট এবং উদরকে সন্দেহজনক খাদ্য থেকে হেফাজত করার জন্য এ পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)কে বলা হল যে, হযরত বাশার হাফী (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সন্দেহজনক দ্রব্যের ক্ষেত্রে পিতামাতার নির্দেশ মান্য করতে হবে কি না? তিনি বললেন, না। শুনে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)কে বললেন, এটা তাঁর কঠোর উত্তর। প্রশ্নকারী বলল, কিন্তু এ বিষয়ে মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল (রহঃ)কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন যে, মাতাপিতার নির্দেশ মান্য করবে। আপনি এ সম্বন্ধে কি বলেন। তখন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বললেন, তুমি যখন দুজন মহারথীর ফতোয়া শুনেছ, আমাকে ক্ষমা কর। তারপর তিনি বললেন, উক্ত দুজন বুষর্গের মন্তব্যের বিষয় চিন্তা করবে, সন্দেহ থেকে সতর্ক থাকবে আবার পিতামাতাকেও মান্য করবে।
(৬) মাসয়ালাঃ যে ব্যক্তির নিকট অকাট্য হারাম মাল থাকে, হালাল মাল না থাকে, তার উপর হজ্জ ফরজ নয় এবং তার উপর যাকাতও ফরজ নয়। কেননা সে নিঃস্ব। অর্থের চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত দিতে হয় কিন্তু এক্ষেত্রে তার নিকট যে অর্থ আছে, তা' সবই তার বের করে। ফেলা ওয়াজিব হয়। যদি তার মালের মালিকের সন্ধান থাকে, তবে মাল তাকে ফেরত দিতে হয়। আর তার সন্ধান না থাকলে দরিদ্রদেরকে তা' দান করে দিতে হয়। যদি তা' সন্দেহজনক মাল হয়, আবার তা' হালাল হওয়ারও কিছু ধারণা জন্মে, তাহলে সেই মাল নিজের নিকট রাখলে উক্ত ধারণার জন্য তোমার উপর হজ্জ ফরজ হয়। আল্লাহ বলেন, আল্লাহর গৃহের হজ্জ্ব ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ, যার তথায় যাওয়ার সঙ্গতি আছে। যখন আবশ্যকীয় পরিমাণের অতিরিক্ত ধন দান করা ওয়াজিব। কেননা প্রবল ধারণা যে, তা' হারাম। তখন তোমার পক্ষে হজ্ব করা ওয়াজিব। যদি তোমার উপর কোন কাফফারাহ আবশ্যক হয়, তখন গোলাম আজাদ করবে এবং রোযা রাখবে, যাতে কাফ্ফারাহ আদায় হয়। কোন কোন আলিম বলেন যে, এরপক্ষেত্রে খাদ্য দান ব্যতীত রোযা রাখা আবশ্যক হয়। হযরত মুহাসাবী (রহঃ) বলেন, খাদ্য দানেই যথেষ্ট হয়। তবে আমাদের নিকট উত্তম ব্যবস্থা হল, সন্দেহ বর্জন করার যে নির্দেশ দিয়েছি, তা' পালন করা ওয়াজিব। কেননা তাতে হারামের সন্দেহ-ই প্রবল থাকে। তখন তার কাফ্ফারাহ হিসেবে রোযা এবং খাদ্যদান উভয়-ই একত্র করবে। রোযা রাখবে তুমি দরিদ্র বলে। আর অভাব না থাকলে তোমার খাদ্য দান ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
(৭) মাসয়ালাঃ যে ব্যক্তির নিকট হারাম অর্থ থাকে, সে যদি তা' তার প্রয়োজনের সময়ের জন্য তা' রেখে দেয়, সে নফল হজ্ব করতে ইচ্ছে করলে এবং পদব্রজে রওয়ানা হলে তজ্জন্য তা' ব্যয় করায় তার কোন গুনাহ হবে না। কেনন। ইবাদাতের কার্য ব্যতীত যখন তা' অন্য কাজে ব্যয় করা হয়, তখন ইবাদাতের জন্য তা' ব্যয় করা উত্তম। যদি সে পদব্রজে যেতে সক্ষম নাহয় এবং তার যানবাহনের দরকার করে, তবে এই আবশ্যকতার জন্য ঐরূপ অর্থ গ্রহণ করা জায়েয নেই।
(৮) মাসয়ালাঃ যে ব্যক্তি সন্দেহজনক অর্থ নিয়ে ফরজ হচ্ছে বের হয়, তার হালাল খাদ্য ভক্ষণের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সক্ষম না হলে, অন্তত এহরামের সময় হালাল ভক্ষণের চেষ্টা করবে। যদি তাতেও সক্ষম না হয়, তাহলে অন্ততঃ আরফার দিন হালাল ভক্ষণের চেষ্টা করবে। যেন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার সময় ও প্রার্থনা করার সময় তার খাদ্য ও বস্ত্র হারাম না থাকে। আমরা অতি প্রয়োজনের সময় এটা জায়েয রেখেছি। এটা তাকে হালাল প্রমাণ করবার জন্য নয় বরং এটা অভাবের জন্য। যদি আরফার দিনেও হালাল খাদ্য ও হালাল বস্ত্র সংগ্রহ করতে না পারে, তবে সে তার হৃদয়ে ভয়-ভীতি এবং ভাবনা উপস্থিত করবে। যেন আল্লাহতায়ালার সুদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত না হতে হয়।
(৯) মাসয়ালাঃ এক ব্যক্তি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) কে একটি মাসয়ালা জিজ্ঞেস করল, আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে এবং সে ধন-দৌলত রেখে গেছে। কিন্তু সে এমন লোকের সঙ্গে কারবার করত, যাদের সঙ্গে কারবার করা মাকরূহ। এ অবস্থায় আমি কি করব? তিনি বললেন, ঐ ধন-দৌলত থেকে যে পরিমাণ তার লাভ হয়েছে তা' ত্যাগ করবে এবং বাকীটা গ্রহণ করবে। সে বলল, তার ঋণ আছে এবং সে কারও জামিন ছিল। তিনি বললেন, তার জামানত আদায় করবে এবং ঋণ পরিশোধ করবে। লোকটি তখন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি তা' জায়েয মনে করেন? তিনি বললেন, তুমি এটা চাও যে, সে তার ঋণের মধ্যে নিমজ্জিত থাকুক? ইমাম সাহেবের এটা বিশুদ্ধ মত। এ থেকে জানা যায় যে, হারাম মালের পরিমাণ, হালাল মাল থেকে বের করে ফেলে দেয়া জায়েয। কেননা তিনি বলেছেন, লাভের পরিমাণ বের করে ফেল কিন্তু মূল মালের মালিক ঠিকই থাকবে।
0 Comments