কী কী কারণে মালিকের সম্পদের সন্দেহ আছে

 


তিনটি অবস্থার পরিচয়ের সাথে মালিকের অবস্থার সম্পর্ক থাকে। অবস্থা তিনটি এইঃ

        (১) প্রথম অবস্থাঃ মালিকের অজ্ঞাত থাকা,

        (২) দ্বিতীয় অবস্থাঃ মালিক সম্বন্ধে সন্দেহ হওয়া;

        (৩) তৃতীয় অবস্থাঃ কোনপ্রকার প্রমাণের মাধ্যমে মালিকের অবস্থা অবগত হওয়া।

    প্রথম অবস্থাঃ মালিকের অজ্ঞাত থাকা অর্থাৎ মালিকের অবস্থ্য জানা না থাকা। মালিকের সাথে এরূপ কোন আনুষঙ্গিক চিহ্ন না থাকা, যা তার অপকীর্তি বা অত্যাহারের বিষয় প্রকাশ করে বা এমনও কোন আনুষঙ্গিক বিষয়াদি না থাকা, যা তার কোন সৎ কার্য বা সদাচরণের বিষয় প্রমাণ করে। যখন তুমি কোন অজানা গ্রামে প্রবেশ কর ও তার কোন অধিবাসীর অবস্থা সম্বন্ধে কোন কিছু না জান এবং সে সৎ কি অসৎ তারও কোন চিহ্ন না দেখ, তখন সে তোমার নিকট অজ্ঞাত ব্যক্তিরূপেই গণ্য হবে। যখন তুমি কোন অপরিচিত শহরে গমন করে তার বাজারে প্রবেশ করে কোন রুটিওয়ালা বা কসাই বা অন্য কাউকে দেখ এবং তার কোন বিশ্বাসঘাতকতা বা অন্য কোন আচরণ দেখতে না পাও, তখন বলা যাবে যে, তার অবস্থা তোমার অজানা। সে তখন তোমার নিকট সন্দেহজনক ব্যক্তি। কেননা সন্দেহ একই সঙ্গে দুটো পরস্পর বিরোধী বিশ্বাসকে বলে। এর দুটো কারণও থাকে। অধিকাংশ ফকীহ কোন বস্তু অজ্ঞাত ও কোন জিনিস অজ্ঞাত ও কোন জিনিস সন্দেহযুক্ত তার পার্থক্য জানে না। তবে তুমি এটুকু জেনেছ যে, যা জানা নেই, তা থেকে বিরত থাকাই পরহেজগারী। হযরত ইউসুফ বিন আছবাত (রহঃ) বলেন যে, বিগত ত্রিশ বছর যাবত আমি আমার মনে কোন সন্দেহজনক বিষয় উপস্থিত হলেই তা' ত্যাগ করে এসেছি। হযরত হাসান বিন আবি হান্নান (রহঃ) বলেন, পরিত্যাগ করার ন্যায় আমার নিকট এত সহজ বিষয় আর নেই। যখন কোন বিষয় আমার মনে সন্দেহ উপস্থিত হত, আমি তা' বর্জন করতাম। এটাই সতর্কতা বা পরহেজগারী অবলম্বনের শর্ত।

    এখন আমি অজ্ঞাত অপরিচিত ব্যক্তি সম্পর্কিত বাহ্যিক বিধান বর্ণনা করব। এ বিধান এই যে, যখন তোমাকে তোমার কোন অপরিচিত ব্যক্তি খাদ্য দান করে বা কোন উপহার- উপঢৌকন প্রেরণ করে অথবা তার দোকান থেকে তুমি কিছু কিনতে ইচ্ছে কর তখন তোমার মনে যেন কোন অনাহৃত প্রশ্ন উদিত না হয় বরং তার অধিকার ও তার মুসলমান হওয়াই তা গ্রহণের উপযুক্ত এবং যথেষ্ট প্রমাণ। লোকের উপর অশান্তি ও অত্যাচার প্রবল হওয়ার ধারণা করা তোমার পক্ষে ঠিক নয়। এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং অবাঞ্ছিত ধারণা। জেনে রেখ, কোন কোন মন্দ ধারণা গুনাহর কাজ। তোমার কোন মুসলমান ভ্রাতার নিশ্চয়ই তোমার উপর এতটুকু হক রয়েছে যে তার ইসলাম গ্রহণের পর তার সম্বন্ধে তুমি কোন মন্দ ধারণা রাখবে না। তুমি অন্যের অন্যায় কার্য দেখে যদি তার সম্বন্ধেও অন্যায় পোষণ কর তবে তার ব্যাপারে এটা তোমার গুনাহর কার্যরূপে গণ্য হবে এবং তোমার মনে সন্দেহ উদিত হলে তুমি তখনই একটি গুনাহর কাজ করে ফেলবে। দৃঢ় সন্দেহ হলে তার মাল গ্রহণ করা তোমার জন্য হারাম।
হুযুরে পাক (দঃ)এর ছাহাবীগণ তাঁদের যুদ্ধে ও সফরে যদি কোন স্থানে অবতরণ করতেন তাঁরা কারো অতিথি হতে অস্বীকার করতেন এবং তাঁরা বাজারে চলে যেতেন। তাঁদের সময় হারাম বিদ্যমান ছিল। শুধু সান্দহের সময় ব্যতীত তারা কারও কাছে কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। কেননা খোদ হুযুরে পাক (দঃ) তা' কখনও করেন নি। মদীনায় প্রথম পদার্পণ করেই তার কাঁছে কোন বস্তু হাজির হলেই তিনি জিজ্ঞেস করতেন এটা কি হাদিয়া না উপহার? কেননা মুহাজিরদের তৎকালীন অবস্থা বিপর্যয় তাঁকে এতটুকু কথা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য করেছিল। বলা বাহুল্য যে যতক্ষণ মুহাজিরগণ অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন তাকে কোন জিয়াফতে আমন্ত্রণ করা হলে নির্দ্বিধায় তা' কবুল করতেন। তখন তিনি জিয়াফতকারীকে জিজ্ঞেস করতেন না যে একি ছদকাহ না অন্য কিছু। কারণ জিয়াফত দ্বারাই তা' প্রমাণ হয়ে যায়।

        একদা হযরত উম্মে সোলাইম (রাঃ) হুযুর (দঃ) কে দাওয়াত করেছিলেন। একজন দর্জিও একদা তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিল। আর একদিন এক ব্যক্তির তরফ হতে তাঁর নিকট লাউ-এর তরকারীসহ খাদ্য নিয়ে আসা হয়েছিল। অন্য একদিন জনৈক পার্সী তাঁকে দাওয়াত দিলে তিনি বললেন, আমি ও আয়েশা দুজনই? সে বলল, শুধু আপনার দাওয়াত, আয়েশার নয়। তখন তিনি সে দাওয়াত কবুল করলেন না। তারপর সে লোকটি হযরত আয়েশা (রাঃ) কেও দাওয়াত করলে তিনি তা' কবুল করলেন। অতঃপর তিনি ও হযরত আয়েশা লোকটির গৃহে উপস্থিত হলেন। কিন্তু তাকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না।

        হযরত আবুবকর (রাঃ) সন্দেহবশতঃ তাঁরে গোলামের উপার্জন সম্বন্ধে কিছু কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) কে যাকাতের উটের দুগ্ধ পান করো না হলে এবং সেই সম্বন্ধে তাঁর মনে সন্দেহ দেখা দিলে তিনি সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করেছিলেন। এগুলো সন্দেহস্থলের ব্যাপার। তবে যদি কেউ কোন অজ্ঞাত লোকের আতিথ্য গ্রহণ করে অনুসন্ধান না করে তা' কবুল করা কোন গুনাহর কাজ নয়। যখন মেজবানের গৃহে বহু সাজসজ্জা ও বিলাসিতার সামগ্রী, ধন-সম্পদের নিদর্শন দেখতে পাবে এবং হালাল মাল অল্প এবং হারাম মালের পরিমাণ বেশী দেখবে। তখন অনুসন্ধান করবে যে কোথা হতে কিভাবে এসব এল। হয়ত সে মীরাস হিসেবে ওগুলো পেয়ে থাকবে। অথবা অন্য কোন হালাল উপায়ে উপার্জন করে থাকবে। মোটকথা তার সম্বন্ধে উত্তম ধারণা পোষণ করাই উচিত।

         কিন্তু আমি এর সঙ্গে বাড়িয়ে বলব যে, তার পক্ষে এসব বিষয় জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। তবে যদি সন্দেহবশতঃ পরহেজ করতে হয় তাহলে কোথা থেকে সে খাদ্য এসেছে তা' জানা না থাকলে ঐ খাদ্য আহার না করাই উত্তম। আর যদি ঐ খাদ্য ভক্ষণ না করে গত্যন্তর না থাকে তখন কোন প্রশ্ন না করে তা' ভক্ষণ করবে। কেননা প্রশ্ন করলে অভদ্রতা প্রকাশ পাবে এবং গোপনে কোন কিছু প্রকাশ করলেও মেজবান মনে কষ্ট পাবে। এটা নিঃসন্দেহে হারাম। যদি বলা হয়, তার মনে কষ্ট পাবে না। তার উত্তরে আমি বলব, নিশ্চয়ই সে মনে কষ্ট পাবে। কেননা তাকে এমন বিষয় সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে যা নিঃসন্দেহে হালাল। যাতে গুনাহর লেশমাত্র নেই। কোন মুসলমানকে কষ্ট প্রদান করার গুনাহ সন্দেহজনক জিনিস বা হারাম মাল ভক্ষণ করার গুনাহর চেয়ে কোন অংশে নগণ্য নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে অনুসন্ধান না করা চাই। কোথা হতে তোমার মাল এল এরূপ জিজ্ঞেস করা নাজায়েয। কেননা এরূপ প্রশ্ন আরা মুসলমানের মনে নারুণ আঘাত লাগার কথ্য। মানের মূল্য সম্বন্ধে যদি প্রশ্ন কর তাতে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে এবং গোপন কথ্য প্রকাশ করা হবে। বিশেষতঃ তাতে গোয়েন্দাগিরি ও বীবতের অবকাশ থাকে। আল্লাহতায়ালার নিম্নোক্ত আয়াতে তা' নিষিদ্ধ হয়েছে। যথাঃ "ইজতানির্ কাছীরাম মিনাজ জানিন ইন্না বা'দাজ জান্নি ইছমুন আল্য তাজাসসাসু অলা ইয়াগতার বা মুকুম বা'দ্বান" অর্থাৎ অধিকাংশ ধারণাই ত্যাগ কর। কেননা কতক ধারণা গুনাহর অন্তর্গত। ছিদ্রান্বেষণ করতে যেওনা। তোমাদের মধ্যে পরস্পরকে নিন্দা করো না।

        কতক মূর্খ সংসার বিরাগী লোক আছে, যারা অনুসন্ধানে অভ্যস্ত হয়ে হৃদয়কে কঠিন করে ফেলে এবং এমন রুক্ষ ও কর্কশ বাক্য উচ্চারণ করে যার ফলে লোক মনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। শয়তান তখন তার নাম প্রচার করার জন্য তাকে উৎসাহ যোগায়। যদি তার দ্বীনই তাকে উৎসাহ দেয় তাহলে তার উদরের ভয়ের চেয়ে তার মুসলমান ভ্রাতাকে কষ্ট দেয়ার ভয় অধিক হওয়া উচিত। সুতরাং প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, পরহেজগারীর পন্থা ছিদ্রান্বেষণ ব্যতিরেকে সন্দেহজনক বিষয় ত্যাগ করা। যখন তোমার ভক্ষণ না করে অব্যাহতি থাকে না; তখন ভক্ষণ এবং সুন্দর ধারণা পোষণই পরহেজগারী। ছাহাবায়ে কিরাম এ রীতিই অবলম্বন করতেন। তাঁদের চেয়েও যারা অধিক পরহেজগারী করতে যায়-তারা ভ্রষ্ট বেদআত সৃষ্টিকারী অথচ তারা ছাহাবীদের পরহেজগারীর ধারে-কাছেও নয়। একদা হুযুরে পাক (দঃ) বারিরাহর খাদ্য ভক্ষণ করেছিলেন। তাঁকে বলা হল, এটা যাকাতের খাদ্য তখন তিনি বললেন, এটা যাকাতের মাল কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন। যাকাত দাতাকে তিনি তা' জিজ্ঞেস করেন নি এবং নিষেধও করেন নি।

        দ্বিতীয় অবস্থাঃ মালিকের অবস্থা সম্পর্কিত সন্দেহ। প্রমাণের কারণের জন্য মালিকের ব্যাপারে সন্দেহ হওয়া। এই সন্দেহের রূপ এবং হুকুম সম্পর্কে আমি এখন আলোচনা করব। সন্দেহের রূপ এই, মালিকের অধিকারে যা আছে তা' হারাম হওয়ার কারণ মালিকের স্বভাব-চরিত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, কার্যাবলী এবং তার কথাবার্তার মধ্যে পাওয়া যায়। কেউ কুখ্যাত অত্যাচারী, দস্যু, ডাকাত, দীর্ঘ মোচধারী অথবা এদের সমশ্রেণী বা সমপ্রকৃতির লোক হলে তার স্বভাব- চরিত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। নকশাকরা কারুকার্যখচিত টুপীধারী অত্যাচারীদের বস্ত্র পরিধানকারী বা এই অবস্থার সহিত সামঞ্জস্যের পোশাকধারী ব্যক্তি হলেই তার পোশাক- পরিচ্ছদের প্রমাণ পাওয়া যায়। যা হালাল নয় অগ্রবর্তী হয়ে তার সাক্ষ্য দিলেই কথা ও কাজে প্রমাণ পাওয়া যায়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ধন-দৌলতের ক্ষেত্রেও এরূপ ব্যক্তি, এরূপ হারামকার্য করে এবং যা হালাল নয় তা' গ্রহণ করে। এরূপ অবস্থায়-ই সন্দেহ উপস্থিত হয়। যখন কোন লোক থেকে কোন বস্ত ক্রয় করার ইচ্ছে করা হয় অথবা তার নিকট থেকে উপহার গ্রহণ করার মনোভাব প্রকাশ করা হয় অথবা তার দাওয়াতে যোগদান করার নিয়ত করা হয় অথবা সে ব্যক্তি অজ্ঞাত-অপরিচিত এবং তার চরিত্র সম্বন্ধে উল্লিখিত চিহ্নসমূহ ব্যতীত আর কিছুই দেখা যায় না, তখন দুটি সন্দেহ উপস্থিত হয়। প্রথম এই যে, উক্ত জিনিসের দখল বা অধিকার দেখে এরূপ ধারণা হয় যে, সে সেই বস্তুর প্রকৃত মালিক। এ সকল প্রমাণ দুর্বল হলেও সেই দ্রব্যের তাকে তখন মালিক বলে স্বীকারপূর্বক সে জিনিস গ্রহণ করা জায়েয। যদিও তা' ত্যাগ করাই পরহেজগারী। দ্বিতীয় সন্দেহ এই যে, যখন দখল একটি দুর্বল প্রমাণ, তখন তার সামনে সেই বস্তুর যে চিহ্নসমূহ থাকে তাতে সন্দেহ হলে, তখন তা' গ্রহণ করা ওয়াজিব নয়। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যা তোমার সন্দেহের সৃষ্টি করে তা' ত্যাগ করতঃ যা সন্দেহ সৃষ্টি করেনা তা' গ্রহণ কর। এই নির্দেশ বাহ্যতঃ ওয়াজিব হলেও মূলতঃ মুস্তাহাব বা উত্তম। তিনি আরও বলেছেন, অন্তরের দ্বন্দুই গুনাহ। দিলের মধ্যে যে দ্বন্দু হয় তা' অস্বীকার করা যায় না। অন্য কারণ হল, স্বয়ং হুযুরে পাক (দঃ)ও যাকাত এবং উপঢৌকন সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতেন। হযরত আবুবকর (রাঃ) তাঁর গোলামকে উপার্জনের অবস্থা সম্বন্ধে এবং হযরত ওমর (রাঃ) দুদ্ধের অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন। এসব অনুসন্ধান সন্দেহের কারণে হয়েছিল এবং এদের প্রত্যেককে পরহেজগারীর দিকে টেনে নিয়েছিল। নির্দেশমূলক অনুমানই তাদেরকে পরহেজগারীর দিকে আকৃষ্ট করেছিল। প্রবল ধারণাও উক্ত সন্দেহের বিষয়কে হালাল হওয়ার সাক্ষ্য দেয় না। যখন এই জিনিস দুটো পরস্পর বিরোধী হয়, তখন সন্দেহ উপস্থিত হয় এবং হালাল হওয়ার কোন কারণ থাকে না। এরূপ ক্ষেত্রে দখল এবং সাবেক আসলের হুকুম এই সন্দেহের মধ্যে ত্যাগ করা যায় না। যার সাথে ঐ চিহ্নগুলোর কোন সম্পর্ক থাকে না, যেমন, পানি পরিবর্তিত অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন দীর্ঘদিন একইস্থানে থাকার কারণে তার রং পরিবর্তিত হওয়ার সন্দেহ হয় অথবা যখন কোন হরিণকে তার মধ্যে পেশাব করতে দেখা যায় এবং তারপর এই সন্দেহ হয় যে, ঐ পেশাবের কারণেই পানির রং পরিবর্তিত হয়েছে অথবা যদি অন্য কোন কারণবশতঃ সন্দেহ হয়, তখন মূল বিধান ত্যাগ করতে হয়। সন্দেহ না হলে, ত্যাগ করা হয় না। তবে এই প্রমাণ দুটোর মধ্যে কিছু ব্যবধান রয়েছে। মোচের দীর্ঘতা, জুব্বা পরিধান এবং সৈনিকের পোশাক পরিধান, এ বিষয়গুলো মাল অত্যাচারপূর্বক গ্রহণ করা হয় বলে প্রমাণ করে। যদি কথা ও কাজের সাথে অত্যাচারের সম্পর্ক থাকে, তা' শরীয়তের বিপরীত কার্য এবং তা' হারামের প্রকাশ্য প্রমাণ। যেরূপ, অত্যাচার এবং আত্মসাতের নির্দেশ দিতে শুনলে অথবা সুদের চুক্তি করতে দেখলে, তা' হারাম হয়। যখন দেখতে পাও যে, ক্রোধবশতঃ একব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে তিরস্কার করছে অথবা কেউ কোন স্ত্রীলোকের দিকে দৃষ্টিপাত করছে, তখন এগুলো হারামের দুর্বল চিহ্ন মনে করবে। তাতে তার দ্রব্য মাকরূহ হয় না। 

        কতক লোক আছে ধন-সম্পদ অন্বেষণের ক্ষেত্রে খুবই কষ্ট করে; এবং রুজী ব্যতীত উপার্জন করে না। তা' সত্ত্বেও তারা ক্রোধ ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে নিজেকে সংযত রাখতে পারে না। তজ্জন্য তাদের নিকট থেকে খাদ্যান্বেষণ করা মাকরূহ হয় না। মানুষের মধ্যে এই তারতম্যের জন্য সতর্ক হতে হয়। এই তারতম্যের সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বান্দাকে তার নিজের বিবেক থেকে ফতোয়া গ্রহণ করতে হয়। আর একটি বিষয় স্মরণ রাখা চাই, যদি এ ব্যাপার কোন অজ্ঞাত লোকের মধ্যে দেখ, মনে করবে যে, তার জন্য বিধান রয়েছে। আর যদি এ ব্যাপার এমন কোন পরিচিত লোকের ভিতর দেখ, যিনি পবিত্র নামাযে এবং কুরআন পাঠে সুপরিচিত, তার জন্য অন্য বিধান আছে। ধন-সম্পদ সম্পর্কে যদি দুটো প্রমাণ পরস্পর বিরোধী হয়, তাহলে দুটোই দূর হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তির অবস্থা অজ্ঞাত ব্যক্তির অবস্থার ন্যায় হয়। কতক লোক আছে, যাদের ধনসম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও অন্যকে দান করে না এবং কতক লোক আছে যারা অজু, নামায এবং কুরআন তিলাওয়াতে উত্তম হওয়া সত্ত্বেও যেখানেই পায় সেখানেই ভক্ষণ করে। এ অবস্থায় মনের বিচার অনুযায়ী-ই কাজ করা দ্বীনের বিধান। কেননা এ বিষয় বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। এমন অনেক ব্যাপার রয়েছে, যা বান্দা এবং তার প্রভু ব্যতীত কেউ বুঝতে পারে না, সেটা তার অন্তরেরই সন্দেহের নির্দেশ। অন্যান্য সূক্ষ্ম তত্ত্বের জন্যও সতর্ক হওয়া চাই।

তৃতীয় অবস্থা: অভিজ্ঞতা অথবা কোন প্রকার সংবাদের মাধ্যমে মাল হালাল বা হারাম হওয়ার অনুমান করা যায়, তার অবস্থা এর বিপরীতও হতে পারে। এই অবস্থায়ও তার মালের অনুসন্ধান করা উচিত নয় বরং নাজায়েয। প্রথম অবস্থার ন্যায় এই অবস্থা হয় এবং এরূপ লোকের নিকট থেকে মাল গ্রহণ করা জায়েয বরং সৎলোকদের খাদ্য ভক্ষণ করা নবী, রাসূল এবং অলিআল্লাহদের রীতি। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, খোদাভীরুদের খাদ্য ব্যতীত অন্যখাদ্য ভক্ষণ করো না এবং তোমার খাদ্যও খোদাভীরু ব্যতীত আর কাউকে ভক্ষণ করতে দিও না। যদি অভিজ্ঞতার দ্বারা জানা যায় যে, কেউ গায়ক, সুদখোর, তখন এই অভিজ্ঞতার মোকাবেলায় পোশাক-পরিচ্ছদ, আকৃতি ইত্যাদি চিহ্ন কোনই কাজে আসে না; বরং এক্ষেত্রে অনুসন্ধান করা ওয়াজিব।

Post a Comment

0 Comments