মুসনাদে আহমাদে কাতাদাহ ইবনে নু'মান থেকে মরফুভাবে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (স:) বলেন, তোমরা কুরবানী ও হাঙ্গর গো বেচোনা, তা দান কর এবং খাও। আর ওর চামড়া দ্বারা উপকৃত হও এবং তা বেচোনা (ফাতহুল বারী, ৩য় খণ্ড, ৫৫৭ পৃষ্ঠা)। এই হাদীসের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, কুরবানীদাতা কুরবানীর চামড়াটা নিজের ব্যবহারে লাগাতে পারে। যেমন হযরত আয়িশা (রাযিঃ) কুরবানীর চামড়া দিয়ে মশক বানাতেন। যাতে তিনি আঙুর ভিজিয়ে 'নবীয' তৈরী করতেন এবং হযরত মসরূক তাঁর কুরবানীর খাল দিয়ে মুসাল্লা (নামাযপাটি) বানাতেন (আলমুহাল্লা, ৭ম খণ্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠা)। এই হাদীসে কুরবানীর চামড়া বেচতে মানা করা হয়েছে। এইরূপ মুস্তাদরকে হা-কিম ও বাইহাকীর দুর্বল বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি কুরবানীর চামড়া বেচে তার কুরবানীই হয়না (নাসবুর রা-যাহ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৮ পৃষ্ঠা)। তাই ইমাম আহমাদ এবং ইমাম শাফিয়ী বলেন, চামড়া না বেচে তদ্বারা নিজে উপকৃত হওয়া উচিত।
একটি বর্ণনায় আছে যে, ইবনে উমার (রাযিঃ) কুরবানীর চামড়া বেচে দিয়ে তার দামটা খয়রাত কোরে দিতেন। এইজন্য ইমাম আবু হানীফা (রহ:) বলেন, ঐ চামড়া বেচে তার দাম খয়রাত করা চলবে। (মিরআত, ২য় খণ্ড, ৩৬৯ পৃষ্ঠা)। তবে ঐ খাল বেচার পয়সা কুরবানীদাতা নিজে ব্যবহার করতে পারবেনা। বরং ঐ পয়সা মিসকীনদের দান করতে হবে। যেমন হযরত আলী (রাযিঃ) বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (স:) নির্দেশ দেন যে, আমি যেন নিজের উটের কাছে দাঁড়াই এবং ওর গোস্ত, চামড়া ও দড়ি মিসকীনদের বেঁটে দিই। আর ওর মজুরী যেন ওথেকে না দিই (বুখারী, মুসলিম, বুলুগুল মারাম, ১০২ পৃষ্ঠা)। অন্য বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেন, ওর জিন ও দড়ি খয়রাত কোরে দাও এবং কসাইয়ের মজুরী ওথেকে দিওনা (নাসবুর রায়াহ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৯ পৃষ্ঠা)।
ইমাম ইবনে রুশদ বলেন, সমস্ত আলিমেরই ঐক্যমতে কুরবানীর গোশত বেচা নাজায়েয। কিন্তু ওর চামড়া এবং পশমের ব্যাপারে মতভেদ আছে। অধিকাংশ আলিমের মতে বেচা অবৈধ এবং ইমাম আবু হানীফার মতে টাকাপয়সার বিনিময়ে না বেচে ঘরোয়া কোন আসবাবের (যেমন চালনী, বালতি প্রভৃতির) বিনিময়ে বেচা জায়েয (বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ১ম খণ্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা)।
এ ব্যাপারে আহলে হাদীস আলিমগণ বলেন, কুরবানীদাতা কুরবানীর খালটা নিজের ঘরোয়া কাজে ব্যবহার করতে পারে। যদি তা না করে তাহলে চামড়াটাই মিসকীনদের দান কোরে দেবে। আর যদি সে খালটা বেচে দেয় তাহলে তার দামটা নিজের কাজে খরচ না কোরে তাকে মিসকীনদের খয়রাত করতে হবে
হাড় ও পশম প্রভৃতির হুকুম
ইমাম ইবনে হাযম বলেন, কুরবানী করার পর কুরবানীদাতার জন্য হালাল নয় ঐ কুরবানীর কোন জিনিষ বেচা। তা চামড়া, পশম, পলক, চর্বি, গোল্ড, হাড়, নাড়ীভুড়ি, কল্লা প্রভৃতি যাই হোক না কেন (আলমুহাল্লা, ৭ম খণ্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা)।
আজকাল কোন কোন জায়গায় দেখা যায় ও কল্লার চামড়া প্রভৃতি বেচে ঐ পয়সা দিয়ে নিজেরা ফুর্তি করে। ঐ যুবকরা যদি কুরবানীদাতার ছেলেপুলে হয় তাহলে তাদের জন্য ঐ পয়সা নিজেদের কাজে খরচ করা হারাম। আর যদি ঐ তরুণগণ এতীম-মিসকীন হয় তাহলে ওদের পক্ষে তা বৈধ, কিন্তু ফুর্তিবাজিতে নয়। সুতরাং কুরবানীদাতাদের এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা উচিত।
রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর তরফ থেকে কুরবানী
তিরমিযী ও আবু দাউদে হযরত আলী বর্ণিত একটি যয়ীফ হাদীসে আছে যে, তিনি রসূলুল্লার তরফ থেকে কুরবানী করতেন। তাঁকে এর কারণ নিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, তাঁকে রসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ কুরবানী দেবার জন্য অসিয়্যত কোরে গেছেন (মিশকাত ১২৮ পৃষ্ঠা)।
রসূলুল্লাহ (স:)-এর অসিয়্যত সংক্রান্ত এই যয়ীফ হাদীসটি ছাড়া দুনিয়ার আর কোন হাদীস কিংবা একলাখেরও বেশি সাহাবীর জীবনী দ্বারা এটা জানা যায়না যে, কোন সাহাবী কিংবা কোন তাবিয়ী ও কোন মুসলিম মনীষী নবী (স:)-এর তরফ থেকে কুরবানী দিয়েছেন। উপরোক্ত যয়ীফ হাদীসটির ভিত্তিতে যদি কেউ নবীজীর তরফ থেকে কুরবানী দিতে চায় দিতে পারে। কিন্তু নবী (স:) যেহেতু তাঁর উম্মতের নেকীর ভুখো নন, তাই উলামায়ে কিরাম বলেন, যারা রসূলুল্লাহর জন্য কুরবানী দিতে চান তারা রসূলের নামে তা না দিয়ে বরং তাদের মৃত মা-বাপ বা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের রূহের মাগফিরাতের জন্য তাদের নামে কুরবানী দিক। কারণ, রসূলুল্লাহ (স:) বলেন, কবরে মৃত ব্যক্তি ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায় (বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, মিশকাত, ২০৬ পৃষ্ঠা)। তাই সে কবরে বা বারযাখের জগতে তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের পাঠানো নেকীর প্রতি উন্মুখ হোয়ে থাকে।
0 Comments