
اللَّهُمَّ تَقَبَّلُهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيبِكَ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ عَلَوَخَلِيْلَكَ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامِ.
বাংলা উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলিলাকা ইব্রহিম আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানি হয় তাহলে ও মিন্নী বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানি হয় তাহলে (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানি, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয় তাহলে ملی মিন্নীও বলবে অতঃপর মিন বলে অন্যেদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে তাহলে জবেহ করার সময় শুধু বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর বলে কুরবানি করলেও শুদ্ধ হবে। তবে উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে কুরবানি করা সুন্নত। (তিরমিযী, মেরকাত, মেশকাত, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার।
যবহের সময় কোন্ অঙ্গ কাটতে হবেঃ দারাকুতনী ৫৪৪ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরাইরা থেকে একটি যয়ীফ হাদীসে আছে, একদা রসূলুল্লাহ (স:) বুদায়ল ইবনে অরাকা-কে মক্কার পথেঘাটে একথা ঘোষণা করতে পাঠান যে, যবহ হবে 'হালাক ও লাব্বাহ অর্থাৎ গলা ও সাঁকীর মাঝখানে। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাকে এই হাদীসটিই রসূলুল্লাহ (স:) থেকে মরফুভাবে নয়, বরং ইবনে আব্বাস, আলী ও উমার থেকে মওকুফভাবে বর্ণিত হয়েছে (নাসবুর রায়াহ, ৪র্থ খণ্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)।
উক্ত 'হালাক ও লাব্বার ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী বলেন, গলায় ৪টি নালী আছে। তা হল:-(১) হুলকুম বা শ্বাসপ্রশ্বাস নালী (২) মারী বা পানাহার নালী, যা হুলকুমের নীচে থাকে (৩) গর্দানের পাতের মধ্যে দুটি শিরা, যা হুলকুমকে ঘিরে থাকে। এদেরকে আরাবীতে অদজা-ন বলে। এরা হল রক্ত চলাচল নালী। শাফিয়ীদের মতে উক্ত ৪টি নালীর মধ্যে হুলকুম ও মারী অবশ্যই কাটা চাই (রওযাতুত তা-লিবীন, ৩য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)। হানাফী মতে যেকোন তিনটি কাটলে জানোয়ার হালাল হবে। মালিকী মতে ৪টি কাটা শর্ত (হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৩৭ পৃষ্ঠা)।
একটি হাদীসে রসূলুল্লাহ (স:) 'শয়তানী-যবহ' করতে মানা করেছেন। আর তা হল যবহের সময় এমনভাবে গগলার চামড়া কাটা যাতে শিরাগুলো না কাটে, তারপর তাকে ছেড়ে দেওয়া, পরিশেষে সে দন্ধে দন্ধে মারা যায় (আবু দাউদ, ২য় খণ্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠা, মিশকাত, ৩৫৮ পৃষ্ঠা)। আগে মুসলিম শরীফের হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, জানোয়ারকে যেন আরাম পৌঁছানো হয় (মিশকাত, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)।
উক্ত হাদীস দুটি প্রমাণ করে যে, জানোয়ারের ৪টি নালীই কাটা উত্তম। ৪টি কাটলে তার রক্তগুলো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাবে। ফলে পারতপক্ষে তাকে আরাম পৌঁছানো হবে। তাই আহলে হাদীসদের মতে শুধু চামড়া কাটা হারাম, একটি শিরা কাটা আপত্তিকর, ২টি কাটা কোনরূপে চলনসই, ৩টি কাটা উচিত এবং ৪টি কাটা উত্তম। কিছু লোকের মধ্যে একথা রটে আছে যে, আড়াই বা তিন প্যাঁচে যবহ করতে হয়। এটা বাজে কথা। বরং উপরোক্ত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, দুই প্যাঁচে যদি কাটা হয় তাহলে তিন প্যাঁচের প্রয়োজন নেই। তিন প্যাঁচে যদি য হোয়ে যায় তাহলে চার প্যাঁচ দেওয়া অনুচিত। জানোয়ারটি যদি আয়ত্তের মধ্যে থাকে তাহলে তখন উক্ত নিয়মে যবহ হবে।
কিন্তু জানোয়ার যদি যন্ত্রের সময় দড়ি ছিঁড়ে পালায় এবং যবহকারীর আয়ত্বের বাইরে চলে যায় তাহলে তখন তো জানোয়ারটির গলায় ছুরি চালানো সম্ভব নয়। তাই ঐ পরিস্থিতি সম্পর্কে আল্লাহর রসূল বলেন, এমতাবস্থায় তুমি যদি তার রানে বর্শা মেরে দাও তাহলে তাইই যথেষ্ট হবে (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজা, দারিমী, মিশকাত, ৩৫৮ পৃষ্ঠা)। এই হাদীসের ভিত্তিতে সমস্ত আলিমই বলেন, নাগালের বাইরে জম্বর রান কেন যেকোন জায়গায় চোট কোরে তাকে ঘায়েল করলে চলবে।
জন্তুর চামড়া কখন ছাড়াতে হবেঃ আগে হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে যে, যবহের ছুরিটা খুব ভাল কোরে শান দিয়ে যত সহজে ও জলদি সম্ভব জানোয়ারকে যবহ করা উচিত। তাই ইমাম নবভী বলেন, যবহের পরক্ষণেই জানোয়ারের খাল ছাড়াতে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। তার কোন অঙ্গ তখনই কাটা যাবেনা। তাকে নাড়াচাড়া করা কিংবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানোও চলবেনা। বরং তাকে ঐভাবে ছেড়ে দিতে হবে যতক্ষণ না তার রূহ বেরিয়ে যায়। এ ব্যাপারে হানাফী ফিক্ বাদায়িত্ বলে, যবহের পর যবহকারীকে তার চামড়া ছাড়াবার জন্য ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ তার দেহ নিঃসাড় না হোয়ে যায় এবং সর্বাঙ্গ থেকে তার প্রাণ বেরিয়ে না যায় (রওযাতুত তা-লিবীন, ৩য় খণ্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা ও ফাতা-ওয়া আলমগীরী, ৪র্থ খণ্ড, ৮১ পৃষ্ঠা)।
কসাইয়ের মজুরী নিজের কাছ থেকে দিতে হবে ঃ হযরত আলী (রাযিঃ) বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (স:) নির্দেশ দিয়েছেন যে, কুরবানীর কোন কিছু থেকেই যেন আমি কসাইকে মজুরী না দিই। তিনি আরো বলেন, তাই আমরা নিজেদের কাছ থেকে তা দিতাম)। বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ২৩২ পৃষ্ঠা ও বুলুগুল মারাম, ১০২ পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ কুরবানীর গোস্ত চামড়া বা অন্য কিছুই দ্বারা কসাইয়ের মজুরী না দিয়ে আলাদাভাবে তার দাম দিতে হবে। তবে হাঁ, তাকে যদি তুহফা হিসেবে কিছু গোস্ত খেতে দেওয়া হয় তাহলে তাতে আপত্তি নেই।
0 Comments