কুরবানীর দোয়াঃ

 জানোয়ারকে শোয়ানো ও বাঁধার ধরণকরণ

        মুসলিম শরীফে হযরত আয়িশা বর্ণিত হাদীসে আছে যে, নবী (স:) দুম্বাকে শুইয়ে যবহ করেছিলেন (বুলুগুল মারাম, ১০১ পৃষ্ঠা) এই হাদীসটির ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আমীরে সানআনী বলেন, উক্ত হাদীসে দলীল রয়েছে যে, বকরী-দুম্বা প্রভৃতিকে শোয়ানো উত্তম এবং দাঁড় করিয়ে বা বসিয়ে যবহ করা অনুচিত। কারণ, এটাই < সহজ উপায়। আর ওদের শোয়ানোর ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানই একমত যে, ঐ ওদেরকে বামকাতে শোয়াতে হবে। যাতে কোরে যবহকারী ডানহাতে ছুরি এবং বামহাতে জানোয়ারের মাথাটা সহজেই ধরতে পারে (সুবুলুস সালাম, ২য় খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা ও ফাতহুল আল্লাম, ২য় খণ্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা)।

        জানোয়ারকে বামকাতে শোয়ালে তার মাথাটা দক্ষিণে, লেজটা উত্তরে এবং পা-গুলো পশ্চিম দিকে থাকবে। আর যবহকারী পূর্বদিকে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হোয়ে জানোয়ারের ডান ঘাড়ে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে একটু ঝুকে পড়ে গলায় ছুরি চালাবে

        এই হাদীস এবং অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উট ছাড়া গরু বকরী ও দুম্বা-ভেড়া-খাসী প্রভৃতি জন্তুকে শুইয়ে ফেলে যবহ করতে হবে। শোয়াবার পর যদি ওদের হাত পা বাঁধা না হয় তাহলে ওরা হাত-পা ছুঁড়লে যবহ কার্যে জড়িত লোকেরা চোট খেয়ে যেতে পারে। তাই ওদের পা বাঁধা সম্পর্কে ইমাম নবভী বলেন, গরু ও বকরীকে শুইয়ে ওর ডান পা ছেড়ে দিয়ে বাকি তিনটি পা বাঁধতে হবে (রওযাতুত ত-লিবীন, ৩য় খণ্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা)।

জানোয়ারের ঘাড়ে পা রাখার বিবরণঃ

বুখারী ও মুসলিমে হযরত আনাস বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শোয়ানো জানোয়ারের ঘাড়ে পা রেখে যবহ করা রসূলুল্লাহর সুন্নত (মিশকাত, ১২৭ পৃষ্ঠা)। অতএব প্রত্যেক যবহকারীর উচিত নবী (স:) এর এই সুন্নতটা পালনের চেষ্টা করা। আমার কিছু ভায়েরা হাদীস না জানার কারণে এবং তাদের অঞ্চলে জানোয়ারের ঘাড়ে পা রেখে যবহ করার রীতি চালু না থাকার দরুণে তারা নবীজীর এই সুন্নতটিকে বিবেকবিরোধী মনে করে এবং কুরবানীর জানোয়ারকে তারা অমুসলিম ভায়েদের পুজনীয় বস্তুর মত জ্ঞান করে। আল্লাহ তাঁদের ভুল দূর করুন এবং তাঁর রসূলের সুন্নত পালনের তওফীক। দিন-আমিন!

উট নহরের বিশেষ প্রক্রিয়াঃ

        হযরত জাবির বলেন, নবী (স:) এবং তাঁর সাহাবীগণ উটকে বাম পা বেঁধে এবং বাকি তিনটি পায়ে দাঁড় করিয়ে নহর করতেন (আবু দাউদ, ১ম খণ্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা)। একদা হযরত ইবনে উমার একজন লোককে তার উটটি বসিয়ে নহর করতে দেখে বলেন, ওকে দাঁড় করিয়ে বেঁধে নহর করা মুহাম্মাদ (স:) এর সুন্নত (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ২৩২ পৃষ্ঠা)।

         উক্ত হাদীসগুলো সামনে রেখে ইমাম নবভী বলেন, উটকে নহর করাই উত্তম। নহর হল গর্দানের নীচের লব্বাটা কেটে দেওয়া। আর গরু ও বকরীর ব্যাপারে যবহ উত্তম। যব হল গলাটা কেটে দেওয়া। তবে উটকে যবহ করা এবং গরু ও বকরীকে নহর করাও বৈধ। কিন্তু এতে উত্তম কাজটা ত্যাগ করা হয়। সেজন্য অপছন্দনীয়। উট নহরের সময় তাকে তিন পায়ে দাঁড় করিয়ে বাম পা বেঁধে নহর করা উত্তম। অন্যথায় বসিয়েও চলতে পারে (রওযাতুত তা-লিবীন, ৩য় খণ্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা)। ছুরি শান দিয়ে এবং জানোয়ারকে যবহ বা নহরের জন্য বাঁধাছাঁদা শেষ করার পর কুরবানীর দুআ পড়া সুন্নত। তাই নিম্নে ঐ দুআ লিখে দেওয়া হল।

কুরবানীর দোয়াঃ

        হযরত জাবির বলেন, নবী (সঃ) যবহের দিনে শিংওলা দুটি ছিটফুট খাসী-দুম্বা যবহ করেন। ঐসময় যখন, তিনি, ওদের দুজনকে কিবলামুখী শোয়লেন তখন বললেন:-

إِلى وَجْهُتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ عَلَى مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُلِى وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ، لَا شَرْيَكَ لَهُ - وَ بِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ بِسْمِ اللهِ وَاللَّهُ الْبَرُه


বাংলা উচ্চারণ: ইন্নী অজ্‌জাহতু অজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামা-ওয়া-তি অল্ আরযা আলা-মিল্লাতি ইবরাহীমা হানিফাঁও অমা-আনা মিনাল মুশরিকীন ইন্না সলা-তী অনুসুকী অমাহ্ইয়া অমামাতি-লিল্লা-হি রব্বিল আ-লা মীন লা-শারীকা লাহ্ অবিযা-লিকা উমিরতু অআনা মিনাল মুসলিমীন আল্লা-হুমা মিনকা অলাকা আম মুহম্মাদিও অউম্মাতিহী বিসমিল্লা-ই অল্লাহু আকবার   তারপর তিনি যবহ করলেন। (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, দা-রিমী, মেশকাত, ১২৮ পৃষ্ঠা)।

         হযরত আনাসের বর্ণনায় আছে যে, রসূলুল্লাহ (স:) একবার ছিটফুট শিংওলা দুম্বা যন্ত্রের সময় বলেন:- بسم الله والله اكبر বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ১২৭ পৃষ্ঠা)। 

        মুস্তাদরকে হাকিমে আছে যে, একদা ইবনে আব্বাসকে রসূলুল্লাহ (স:) বলেন, যখন তুমি উট নহরের ইচ্ছা করবে তখন তাকে দাঁড় করিয়ে বলবে:- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার (কোন বর্ণনায়
তিনবারও আছে) মিনকা অলাকা, তারপরে বিসমিল্লাহ বলে নহর করবে। ইবনে আব্বাসের অন্য বর্ণনায় আছে-

بِسْمِ اللهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمْ مِنْكَ وَإِلَيْكَ

        বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়া ইলাইকা। (নাসবুর রায়াহ, ৪র্থ খণ্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)। উক্ত হাদীসগুলোতে বর্ণিত যেকোন একটি দুআ পড়ে গরু-বকরী ও ভেড়া-খাসী যবহ করা সুন্নত। সুতরাং প্রত্যেক কুরবানী-দাতার উচিত উক্ত দুআগুলো শিখে নেওয়া। উক্ত হাদীসগলোর শব্দ প্রমাণ করে যে, প্রথম দুআটির 'মিনাল মুসলিমীন' পর্যন্ত শব্দগুলো যহের আগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে এবং বাকি দুআগুলোর মধ্যে যেকোন একটি দুআ যবহের সময় হেঁট হোয়ে পড়ে ছুরি চালাতে হবে। প্রথম দুআটি যখন পড়া হবে তখন-আল্লা-হুমা মিনকা অলাকা-বলার পর-আম মুহাম্মাদিও অউম্মাতিহী-না বলে বলতে হবে আন্নী অআহলি বায়তী। আর কুরবানীটি ভাগে হলে 'আন' শব্দের পর ভাগীদারদের নামগুলো উচ্চারণ কোরে 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলে ছুরি চালাতে হবে।

Post a Comment

0 Comments