কুরবানীর বদলে সদাকাহ্ করা যায় কি না
কোন যয়ীফ হাদীসেও একথার প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, রসূলুল্লাহ (স:) অথবা খুলাফায়ে রাশিদীন কুরবানী না করে তার দামটা সদাকাহ কোরে দিয়েছেন। কারণ, কুরবানী না কোরে তার দাম সদাকাহ করলে ইসলামের একটি মহান নিদর্শন ত্যাগ করা হয়। তাই কুরবানীর জানোয়ার যবহ করাটাই সামর্থবানের জন্য অপরিহার্য (মিরআত, ২য় খণ্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠা)।
দেওবন্দের সাবেক মুফতী মওলানা মুহাম্মাদ শাফী (রহ:) বলেন, কুরবানীর তিনদিনে জানোয়ারের দাম সদাকাহ করলে কুরবানী আদায় হবেনা। বরং সে সর্বদা গোনাহগার হবে। কারণ, কুরবানী স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। যেমন নামায পড়লে রোযা এবং রোযা রাখলে নামায আদায় হয়না, যাকাত দিলে হজ্জ আদায় হয়না। তেমনি দান খয়রাত করলে কুরবানী আদায় হয়না। রসূলুল্লাহ (সঃ) এর উক্তি ও আমল এবং সাহাবীদের আমল ওর অকাট্য প্রমাণ (জওয়া-হিরুল ফিক্হ্ন ১ম খণ্ড, ৪৪৭ পৃষ্ঠা)।
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স:) বলেন, ঈদের দিনে কুরবানী করার চেয়ে কোন (দান-খয়রাতের) বিষয়ে রূপো-চাঁদি খরচ করা আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় নয় (তাবারানী কাবীর, বাইহাকী, কানযুল উমমাল, ৫ম খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)। উক্ত হাদীসও প্রমাণ করে যে, কুরবানীর দিনে দানধ্যানের চেয়ে কুরবানী করাটাই উত্তম এবং শ্রেয়।
একটি গরু বা উট একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট
ইমাম হাকিমের মুস্তাদরক ৪র্থ খণ্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় কিতাবুল আযাহীতে আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (স:) একটি বকরী তাঁর সমগ্র পরিবারবর্গের তরফ থেকে কুরবানী দিতেন। (নাসবুর রায়াহ, ৪র্থ খণ্ড, ২১০ পৃষ্ঠা)। হযরত আয়িশা বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর বিবিদের তরফ থেকে একটি গরু কুরবানী দিয়েছিলেন (বুখারী শরীফ ৮৩২ পৃষ্ঠা)। এটা তাঁর জীবনের শেষ কুরবানী ছিল, যা তিনি বিদায় হজ্জের সময় ১০ হিজরীতে দিয়েছিলেন (আল মুহাল্লা, ৭ম খণ্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা)। তখন তাঁর বিবিদের সংখ্যা নয় ছিল (নাইলুল আওতার, ৪র্থ খণ্ড, ৩৩৭ পৃষ্ঠা)।
হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একটি কুরবানী তাঁর পরিবারের পুরো দলের তরফ থেকে দিতেন (ইবনে আবিদ দুনয়্যার কিতাবুল আযা-হী, কানযুল উমমাল, ৫ম খণ্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)। হযরত নাফি বলেন, ইবনে উমার (রাযিঃ) তাঁর ছোট ছোট সন্তানদের তরফ থেকে কুরবানী দিতেন (ঐ, ১১৮ পৃষ্ঠা)। মুঅত্তা ইমাম মালিক, ইবনে মাজা ও তিরমিযীতে বর্ণিত আছে, একদা হযরত আবু আইউব
আনসারী (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, রসূলুল্লাহ (স:) এর যুগে কুরবানী কেমন হোত? জওয়াবে তিনি বলেন, তখন এক ব্যক্তি তার নিজের এবং তার পরিবারের তরফ থেকে একটি কোরে বকরী কুরবানী দিত। অতঃপর তারা তা নিজেরা খেতো এবং অন্যান্যকেও খাওয়াতো। পরিশেষে লোকেরা একে অপরের উপরে ফ ও গর্ব করতে থাকে।
আল্লামা কুরতুবী বলেন, নবী (স:) থেকে একথা বর্ণিত নেই যে, তিনি তাঁর প্রত্যেক বিবিকে হুকুম দিয়েছেন কুরবানী করার। যদিও তাঁরা কয়েক বছর কুরবানী পেয়েছেন এবং তাঁদের সংখ্যাও অনেক ছিল (ফতহুলবারী, ১০ম খণ্ড, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা)। ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নিজের এবং স্বীয় পরিবারের তরফ থেকে কেবলমাত্র একটি উট অথবা একটি গরু নহর করতেন (মুঅত্তা ইমাম মালিক, ১৮৮ পৃষ্ঠা)।
0 Comments