সমস্ত প্রশংসা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য, যিনি মানুষকে সুন্দর সৌষ্ঠবে সৃষ্টি করেছেন এবং সুসামঞ্জস্যস্করভাবে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে স্ব স্ব স্থানে স্থাপন করেছেন। যিনি মানুষের হৃদয়ে ঈমানের নূরকে ফুঁকে দিয়ে তাকে সুশোভিত ও উজ্জ্বল করেছেন। যিনি মানুষকে মনের ভাব ব্যক্ত করবার জন্য জ্ঞান দান করেছেন। যে জ্ঞানের মাধ্যমে সে মাহাত্ম্য ও কল্যাণের অধিকারী হয়। যিনি মানুষের আত্মার মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস সৃষ্টি করে তা' কামিল অর্থাৎ সম্পূর্ণ করেছেন। যিনি মানুষের প্রতি করুণা বর্ষণ করে তার হৃদয়ের কথা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়াবলী ব্যক্ত করবার জন্য রসনারূপ একটি যন্ত্র দিয়েছেন। যদ্বারা সে হৃদয়ের ভাব ও জ্ঞান- বুদ্ধির কথা প্রকাশ করে। হৃদয়ের গুপ্ত পর্দা অপসারণ করে দেয় এবং হৃদয়ের সত্য কথা প্রকাশ করে এবং তার উপর প্রদত্ত দানের জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর প্রেরিত বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁকে সম্মানিত করেছেন এবং নবীরূপে প্রেরণ করে তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সে নবীর উপর সালাম ও দরূদ পেশ করছি এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সহচরদের প্রতিও সালাম প্রেরণ করছি।
পাঠক-পাঠিকা! জেনে রাখ, রসনা মানুষের একটি অমূল্য সম্পদ এবং আল্লাহতায়ালার অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি কৌশলসমূহের অন্যতম। এ বস্তুটি ক্ষুদ্র হলেও তার ক্ষমতা অপরিসীম। তার পাপ জঘন্য এবং তার পুণ্য মহৎ। কুফরী বা ঈমান রসনার সাক্ষ্য ব্যতীত প্রকাশ পায় না এবং রসনার সাক্ষ্যই পাপ ও পুণ্যের শেষ সীমা। যা' কিছু সৃষ্টি হয়েছে বা হয় নি সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্ট পদার্থ জানা ও অজানা, ধারণাকৃত ও অধারণাকৃত সব কিছুই রসনা বর্ণনা করতে পারে, তা' স্বীকার বা অস্বীকার করতে পারে। জ্ঞান যে বিষয়ই বুঝের মধ্যে নিয়ে আসে রসনা তা' ব্যাখ্যা করে দেয়। চাই তা' সত্য হোক বা অসত্য হোক। রসনাকে বুদ্ধির নায়েব বা প্রতিনিধি বলা যায়। এর কারণ এই যে, যা' বুদ্ধির আওতার মধ্যে আসে তা' সমস্তই রসনা বর্ণনা করতে সক্ষম হয়। এরূপ ক্ষমতা অন্য কোন ইন্দ্রিয়ের নেই। চক্ষুর অধিকার বর্ণ ও আকৃতি ব্যতীত অন্য কোন বস্তুর উপর নেই। কর্ণের অধিকার শব্দ ব্যতীত অন্য কোন বস্তুর উপর নেই। হস্তের অধিকার দেহের উপর ব্যতীত অন্য কোন পদার্থের উপর নেই। এইরূপ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা বৈ কি! কিন্তু রসনার অধিকার অসীম। তার অধিকার সীমাবদ্ধ নয়। মঙ্গলের ক্ষেত্রে এর অধিকার যেমন অসীম, অমঙ্গলের ক্ষেত্রেও তার অধিকার অবিকল তদ্রূপ।
যে ব্যক্তি রসনার লাগাম ছেড়ে দেয় এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে না, শয়তান তাকে নিয়ে মাঠে- ঘাটে ভ্রমণ করে এবং প্রত্যেক ধ্বংসের সীমার মধ্যে চালিয়ে নেয় যে পর্যন্ত সে ধ্বংস না হয়। মানুষকে তার শুধু রসনার বিপদ ব্যতীত দোযখের মধ্যে তার নাসিকার উপর অন্য কোন দোষের জন্য উল্টিয়ে ফেলা হবে না। যে ব্যক্তি শরীয়তের লাগামের সাহায্যে তাকে আবদ্ধ করে রাখে, সে ব্যতীত তাকে কেউই রসনার বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে না। ইহা-
পারলৌকিক উপকার ও কল্যাণ ব্যতীত আর কোন কার্যে সে তাকে ছেড়ে দেয় না। বর্তমান ও ভবিষ্যতে রসনা থেকে যে বিপদের আশঙ্কা করা হয় তা' থেকে সে তাকে বারণ করে। কোন কথা বলা উত্তম এবং কোন কথা বলা অনুত্তম বা নিন্দনীয় তা' জানা খুবই সূক্ষ্ম ব্যাপার এবং কষ্টকর। তার উপর আমল করা আরও অধিক কষ্টকর। জেনে রাখবে, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে রসনাই সর্বাধিক অবাধ্য। কেননা তার লাগাম ছেড়ে দেয়ায় কোন কষ্ট নেই। তা' নাড়া- চাড়া করায় কোন পরিশ্রম নেই। তাই মানুষকে পথভ্রষ্ট করবার জন্য রসনাই শয়তানের প্রধান অস্ত্র।
এখন আমরা আল্লাহতায়ালার সাহায্যে রসনার সমস্ত আপদ-বিপদ একে একে বর্ণনা করব। যথাঃ বাহুল্য বাক্য, অনাবশ্যক কথা, বিবাদ-বিসম্বাদ, তিরস্কার-ভর্ৎসনা, অশ্লীল বাক্য, কর্কশ বাক্য, অভিসম্পাত প্রদান, মিথ্যা ভাষণ, পরনিন্দাকরণ এবং অন্যের প্রশংসা জ্ঞাপন ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা যথাযথভাবে তুলে ধরব।
0 Comments