
হেরম শরিফে দাখিল হওয়া কালে স্থির ভাবে আদবের সহিত নিজের দীন দুইনয়ার মতলব পূর্ণ হওয়ার দোয়া করিতে করিতে এবং বহুবার তওবা এস্তেগফার করিতে করিতে পদব্রজে খালিপায়ে, খালি মাথায় বন্দীর তুল্য মার্জনাশীল খোদাতায়ালার দরবারে হাজির হইবে। তৎপরে লাব্বায়কা পড়িবে।
اللَّهُمَّ اجْعَلْ لَي بِهَا قَرَارًا وَارْزُقْنِي بِهَا حَلَالًا
সুবহানাল্লাহি অলহামদু লিল্লাহ অলা এলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর পড়িবে, তৎপরে দরুদ শরিফ পড়িবে, নিজের জন্য, পিতা, মাতা, পীর, মোর্শেদ ওস্তাদ, আত্মীয় স্বজন, সঙ্গীয় বন্ধু ও যাবতীয় মদিনার পথে মোসলমানের জন্য দোয়া করিবে।
তৎপরে জুতোওয়া নামক স্থানে পৌঁছিয়া গোসল করিবে, আর যদি অন্য পথ দিয়া গমন করিতে চাহে, তবে মক্কাশরিফের নিকটবর্তী স্থানে গোসল করিবে, এই গোসল করা মোস্তাহাব। যে স্ত্রীলোকের হায়েজ কিম্বা নেফাস হইয়াছে, সেই স্ত্রীলোকটিও তথায় গোসল করিবে। রাত্রি বা দিবার কোন এক সময় মক্কা শরিফে দাখিল হইতে পারে, কিন্তু দিবাভাগে দাখিল হওয়াই উত্তম। মক্কা শরিফের উচ্চ ঘাটি দিয়া দাখিল হওয়া মোস্তাহাব। মক্কা শরিফের শহর দেখিয়া নিম্নোক্ত দোয়া পড়িবে,-
للَّهُمَّ اجْعَلُ لِي بِهَا قَرَارًا وَارْزُقْنِي بِهَا حَلَالٌ
"আল্লাহুম্মাজয়াল লি বিহা কারারাও অরজুকনি বিয়া হালালা।"
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ্ তুমি আমাকে উক্ত শহরে শাস্তি দাও এবং আমাকে তথায় হালাল রুজি দাও।"
মক্কা শরিফে দাখিল হইয়া নিম্নোক্ত দোওয়া পড়িবে,-
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ্, নিশ্চয় এই সম্মানিত স্থান (হেরম) তোমার সম্মানিত স্থান, এই শহর তোমার শহর এই শাস্তি তোমারশান্তি, এই বান্দা তোমার বহু দূরদেশ অতিক্রম করিয়া বহু গোনাহ্ ও বদ আমল সহ (তোমার দরবারে হাজির হইয়াছি)। যাহারা বিপন্ন অবস্থায় তোমার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং যাহারা তোমার আজাবের ভয় করে, তাহাদের ন্যায় আমি তোমার নিকট ছওয়াল করি যে, তুমি নিজের পূর্ণ মাফি সহ আমাকে গ্রহণ কর এবং তোমার প্রস্থ বিশিষ্ট বেহেশতের মধ্যে জান্নাতে নইমে আমাকে দাখিল কর। ইয়া আল্লাহ তোমার হেরম শরিফ এবং তোমার রসুলের হেরম শরিফ, তুমি আমার মাংস রক্ত হাড়কে দোজখের উপর হারাম কর। ইয়া আল্লাহ যে দিবস তুমি তোমার বান্দাগণকে পূর্নর্জীবিত করিবেন, সেই দিবস আমাকে তোমার আজাব হইতে রক্ষা করিও। তুমি আল্লাহ্ তোমার ব্যতীত মা'বুদ (বন্দিগির যোগ্য আর কেহ নাই) তুমি মহা দয়াশীল মেহেরবান, আমি তোমার নিকট ছাওয়াল করি যে, তুমি আমাদের সৈয়দ মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁহার আওলাদ ও সাহাবাগণের উপর দরুদ ও ছালাম নাজিল কর এবং সর্ব্বদা বহু ছালান নাজিল কর।
শহরের মধ্যে দাখিল হইয়া আসবাব পত্রকে হেফাজতে রাখিয়া বাবোচ্ছালাম দিয়া মছজিদে দখিল হইবে, দাখিল হওয়ার সময় নিম্মোক্ত দোওয়া পড়িবে,-
اللهم أنتَ السَّلَامُ وَ مِنْكَ السَّلَامُ وَالَيْكَ يَرْجِعُ
السَّلَامَ فَحَيْنَا رَبَّنَا بِالسَلَامِ وَأَدْخِلْنَا الجَنَّةَ دَارَكَ دَارُ
السَّلَامِ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ يَا ذَالْجَلَالِ وَإِلَّا كُرَامِ اللَّهُمُ
الصح لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَ مَغْفِرَتِكَ وَ أَدْخِلْنِي فِيهَا بِسْمِ يه و سلم اللهم ره نگ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَ الصلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى مَهَانَهُ وَرِفْعَةً و بُرا وردي اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
অর্থঃ- "ইয়া আল্লহ তুমিই শান্তিদায়ক, তোমা হইতে শান্তি, তোমার দিকে শান্তি রুজু করো। হে আমাদের পরওয়ারদেগার তুমি আমাদিগকে শান্তিসহ জীবিত রাখ এবং তোমার ঘর শান্তির ঘর, বেহেশতখানায় আমাদিগকে দাখিল কর, হে আমাদের পরওয়ারদেগার তুমিই বোজর্গ হে বোজর্গ দানশীল, তুমিই বড়। ইয়া আল্লাহ্ তুমি আমার জন্য রহমত ও মাফির দরওয়াজা খুলিয়া দাও এবং আমাকে উহাতে দাখিল কর। আল্লাহতায়ালার নামে (শুরু করিতেছি)। আল্লাহতায়ালারই সমস্ত প্রশংসা (তা'রিফ) রসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে অছাল্লামের উপর দরুদ এবং ছালাম হউক।
যখন তথায় দাখিল হইবে, তখন বিনীত ও ভীত ভাবে কা'বা শরিফের বোজগীর প্রতি লক্ষ্য করিয়া দাখিল হইবে।
যখন কা'বা শরিফের ঘর দেখিবে, তখন তিনবার আল্লাহো আকবর ও তিনবার কলেমা পড়িবে, পরে দরুদ শরিফ পড়িবে, অবশেষে নিম্নোক্ত দোয়া পড়িবে,-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُالْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْى قَدِيرٌ أَعُوذُ بِرَبِّ الْبَيْتِ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَوَ عَظْمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ وَ اعْتَمَرَةَ تَشْرِيفًاوَتَكْرِيمًا وَ تَعْظِيمًا وَ مَهَابَةً وَ رِفْعَةً وَ بِرًا ضِيقِسَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَ عَلَى إِلَهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ زِدْ بَيْنَكَ هَذَا تَشْرِيفًا وَ تَكْرِيمًا وَتَعْظِيمًا وَ مَهَابَةٍ وَ رِفْعَةً وَ بَرًا وَزِدْيَا رَبِّ مِنْ شَرِّفَهُ وَ كَرَّمَهُ الصَّدْرِ وَ صَلَّى اللَّهُ عَلَى
অর্থ:- "আল্লাহ্ ব্যতীত বন্দিগীর যোগ্য কেহ নাই, তিনি লাছানি (অদ্বিতীয়), তাঁহার কোন শরিক নাই তাঁহারই বাদশাহি, তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর সক্ষম। আমি খানায় কা'বার মালেকের নিকট কাফেরী দরিদ্রতা গোরের আজাব ও বক্ষঃস্থলের সঙ্কীর্ণতা হইতে নিস্কৃতি চাহিতেছি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সৈয়দ মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহো আলায়হে আছল্লামের প্রতি, তাহার আওলাদ ও সাহাবাগণের প্রতি দরুদ ও ছালাম নাজিল করুন।
ইয়া আল্লাহ, তুমি তোমার ঘরের দরজা, বোজর্গী সম্মান, দবদবা, শান শওকত ও নেকি বৃদ্ধি কর।
ইয়া পরওয়ারদেগার, যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে হজ্জ এবং ওমরা করিয়া উহার সম্মান, বোজর্গী ও সমাদার রক্ষা করিয়াছে, তুমি সে ব্যক্তির সম্মান, বোজর্গী, দরজা দবদবা, শান সওকত ও নেকি বৃদ্ধি কর।
নিম্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করা সকল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ,-
اللَّهُمَّ افْتَحُ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
অর্থঃ "ইয়া আল্লাহ, তুমি আমাকে বিনা হিসাবে বেহেস্তে দাখিল কর।” এমাম আজম (রঃ) বলিয়াছেন, সেই সময় মোস্তাজাবোদ্ দাওয়াত (বাক্সিদ্ধ) হওয়ার দোয়া করাই উচিত।
মছজিদে দাখিল হওয়ার সময় জুতো খুলিয়া উহা পরিস্কার করিয়া রুমালে জড়াইয়া লইয়া যাইবে, কাঁচা পেয়াজ, রসুন বা তামাক খাইয়া যতক্ষণ মেছওয়াক করিয়া মুখ পরিস্কার না করে, ততক্ষণ মছজিদে দাখিল হইবে না।
মছজিদে দাখিল হওয়ার সময় প্রথমে ডাহিন পা মছজিদে রাখিবে এবং এই দোয়া পড়িবে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
অর্থঃ- ইয়া আল্লাহ্, তুমি আমার উপর তোমার রহমতের দরওজা খুলিয়া দাও।"
আর মছজিদ হইতে বাহির হওয়ার কালে প্রথমে বাম পা নামাইবে এবং এই দোয়া পড়িবে,-
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ্, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার অনুগ্রহে (মেহেরবাণি) চাহিতেছি।"
তৎপরে যদি ফরজরে জামায়াত ফওত হওয়ার কিম্বা ফরজ, ছুন্নত কিম্বা মোয়াক্কাদা ছুন্নত ফওত হওয়ার ভয় না হয়, তবে তাওয়াফ আরম্ভ করিবে, আর যদি উক্ত ভয় হয়, তবে প্রথমে নামাজ পড়িয়া লইবে, পরে তাওয়াফ করিবে। কা'বা শরিফের মছজিদে তাহিয়াতোল মছজিদ নামাজ না পড়িয়া তাওয়াফ করিবে, এই তাওয়াফ উহার তাহিয়াতোল মছজিদ বলিয়া গণ্য হইবে। আর যদি কেহ তাওয়াফ করিবার ইচ্ছা না করিয়া বসিবার ইচ্ছা করে, তবে মকরুহ, ওয়াক্ত না হইলে, দুই রাকয়াত তাহিয়াতোল মছজিদ পড়িয়া লইবে।
0 Comments