হজ্জের কয়টি ফরজ আছে?
উঃ ১) অন্তরে হজ্জের নিয়ত করা এবং লাব্বায়কা বলা বা ততুল্য কোন কার্য্য করা, ইহাকে এহরাম বলে।
২) আরফাত ময়দানে অন্ততঃ এক নিমেষ দাঁড়ান।
৩) তওয়াফে জিয়ারতের অধিকাংশ আদায় করা।
উপরোক্ত তিনটি বিষয় হজ্জের ফরজ, কিন্তু শেষে দুইটি বিষয়কে উহার রোকন বলা হইয়াছে। ৪) তওয়াফের নিয়ত করা ফরজ।
৫) উপরোক্ত তিনটি ফরজের মধ্যে তরতিব লক্ষ্য রাখা ফরজ অর্থাৎ প্রথমে এহরাম বাঁধা তৎপরে আরফাতে দাঁড়ান, তৎপরে তওয়াফ করা।
৬) প্রত্যেক ফরজটি ওয়াক্ত মত আদায় করা অর্থাৎ আরফাতে ৯ই জেলহাজ্জ তারিখের দ্বিপ্রহেরর সূর্য্য গড়িয়া যাওয়ার পর হইতে ১০ই রাত্রির ফরজ পর্যন্ত আরফাতে দাঁড়ানোর সময়, উক্ত সময়ের মধ্যে এক নিমিষও আরাফাত ময়দানে দাঁড়াইলে হজ্জ আদায় হইয়া যাইবে। ঈদের ফরজ হইতে শেষ জীবন অবধি কা'বা শরিফের চারিদিকে তাওয়াফ করিে আদায় হইয়া যাইবে। ল, তাওয়াফ
৭) আরফাতের নিদ্ধারিত স্থানে দাঁড়ান। কেবল কা'বা গৃহের তাওয়াফ করা।
৮) (এহরাম বাঁধার পরে) আরফাতে দাঁড়ানোর অগ্রে স্ত্রীসঙ্গম না করা। ইহা লোবাবের টিকায় আছে। শাঃ ২।
প্রঃ হজ্জের ওয়াজেব কি কি?
১) মোজদালেফা নামক স্থানে দাঁড়ান।
২) হজ্জের নির্দিষ্ট কয়েক মাসের মধ্যে ছাফা ও মারাওয়া এই দুই পাহাড়ের মধ্যে গমণ করা।
৩) তিন স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
৪) বিদেশী লেকেরা বিদায় কালে কা'বা শরিফের তাওয়াফ করা, কিন্তু যে স্ত্রীলোকটির হায়েজ হইয়াছে, তাহার পক্ষে এই তাওয়াফ করা ওয়াজেব নহে।
৫) চুল মণ্ডন করা কিম্বা ছাটিয়া ফেলা।
৬) এহরামের নির্দিষ্ট স্থান হইতে এহরাম বাঁধা আরম্ভ করা।
৭) যদি কেহ দিবসে আরফাতে দাঁড়াইয়া থাকে, তবে সূর্য ডুবিয়া যাওয়া পর্যন্ত তথায় দাঁড়ান।
৮) তাওয়াফ করা কালে 'হাজারে আছওয়াদ' হইতে আরম্ভ করা। ইহাই গ্রহণ যোগ্য মত।
৯) ডাহিন দিক্ হইতে তাওয়াফ করা।
১০) ওজোর না থাকিলে, পদব্রজে তাওয়াফ করা।
১১) ওজু গোসল থাকা অবস্থায় তাওয়াফ করা।
১২) তাওয়াফ করা কালে গুপ্তাঙ্গ ঢাকা। যদি কেহ কোন গুপ্তাঙ্গের এক চতুর্থাংশ খুলিয়া রাখে, তবে তাহার পক্ষে কোরবানি করা ওয়াজেব।
১৩) ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে চলার সময় প্রথমে ছাফা হইতে আরম্ভ করা। যদি কেহ মারওয়া হইতে আরম্ভ করে, তবে উহা গণনার মধ্যে আসিবে না।
১৪) যদি কোন ওজোর না থাকে, তবে তাহার পক্ষে পদব্রজে চলা।
১৫) যে ব্যক্তি হজ্জ ও ওমরা একই এহরমে আদায় করে কিম্বা একবার এহরাম বাঁধিয়া ওমরা আদায় করিয়া পরে দ্বিতীয়বার এহরাম বাঁধিয়া হজ্জ আদায় করে, তাহার পক্ষে ছাগল কিম্বা মেষ জবাহ করা।আর যে ব্যক্তি কেবল হজ্জ আদায় করে, তাহার প্রতি কোরবানি করা ওয়াজেব নহে।
১৬) প্রত্যেক প্রকার তাওয়াফে সাতবার কা'বাগৃহে প্রদক্ষিণ শেষ করিয়া দুই রাকায়াত নামাজ পড়া। যদি কেহ উহা না পড়ে তবে মোলতাকার টিকা, জওহেরা ও বাহরে জাখেরের মতে তাহার উপর কোরবানি ওয়াজেব হইবে।
১৭) কোরবানির দিবস চারিটি কার্য্য করা ওয়াজেব, কিন্তু প্রথম কঙ্কর মারা, তৎপরে কোরবানি করা, তৎপরে মস্তক মণ্ডন করা, তৎপরে তাওয়াফ করা এরূপ তরতিব লক্ষ্য রাখা ওয়াজেব, যদি কেহ কঙ্কর নিক্ষেপ করার ও চুল মুণ্ডন করার পূর্ব্বে তাওয়াফ করে, তবে তাহার পক্ষে কোরবানি করা ওয়াজেব হইবে না, কিন্তু ছুন্নত তরক করার জন্য উহা মকরুহ হইবে।
১৮) কোরবানির তিন দিবসের মধ্যে কোন এক দিবসে জিয়ারতের তাওয়াফ করা।
১৯) তাওয়াফ করা কালো হাতিমে'র পশ্চাতে তাওয়াফ করা।
২০) তাওয়াফে অন্ততঃ চারিবার কা'বার চারিদিকে ঘুরিবার পরে ছাফা ও মরওয়ার মধ্যে চলা।
২১) হজ্জকারীর পক্ষে কোরবাণীর কোন দিবসে হেরম শরিফের মধ্যে চুল মুণ্ডন করা, কিন্তু কেবল ওমরা আদায়কারী যে কোন সময়ে চুল মুণ্ডন করিতে পারিবে।
২২) আরফাতে দাঁড়ানোর পরে স্ত্রীসঙ্গম না করা, কিন্তু আরফাতে দাঁড়ানোর পূর্ব্বে এহরাম অবস্থায় স্ত্রীসঙ্গম করিলে হজ্জ নষ্ট হইয়া যাইবে।
২৩) উক্ত অবস্থায় সিলাই করা কাপড় না পরা।
২৪) উক্ত অবস্থায় মস্তক না ঢাকা।
২৫) উক্ত অবস্থায় চেহারা না ঢাকা। এইরূপ যে কোন কার্য্য ত্যাগ করিলে, কোরবানি করা ওয়াজেব হয়, উহা করা ওয়াজেব।
২৬) স্ত্রীসঙ্গমের কথা স্ত্রীলোকদিগের সাক্ষাতে না বলা।
২৭) কোন রকম ফাসেকি কার্য্য না করা।
২৮) উষ্ট্রচালক বা সঙ্গিদিগের সহিত কলহ ঝগড়া না করা।
২৯) এহরাম অবস্থায় জন্তু শীকার না করা।
৩০) কোন জন্তুর দিকে ঈশারা না করা।
৩১) কোন জন্তুর সন্ধান বলিয়া না দেওয়া।
৩২) এমাম আরফাত হইতে চলিয়া গেলে, তাহার পরে আরফাত হইতে বাহির হওয়া।
৩৩) মাগরিব ও এশা মোজদালেফা পৌঁছান পর্যন্ত দেরী করিয়া পড়া।
আরফাত হইতে বাহির হওয়া।
৩৪) তাওয়াফে জিয়ারত করা কালে কা'বা শরিফের চারিদিকে চারিবার ঘুরিয়া বেড়ান ফরজ, আর অবশিষ্ট তিনবার ঘুরিয়া বেড়ান, ওয়াজেব।
৩৫) রাত্রির একাংশ মোজদালেফাতে বিশ্রাম করা।
৩৬) প্রতোক দিবসে নির্দ্ধারিত কঙ্কর নিক্ষেপ তৎপর দিবস অবধি দেরী করিয়া না করা।
৩৭) যে ব্যক্তি এক এহরামে বা দুই এহরামে হজ্জ ও ওমরা আদায় করে, তাহার পক্ষে কোরবাণী করার পূর্ব্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
৩৮) উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের প্রতি 'হাদি' পাঠান।
৩৯) উক্ত পশুটি চুল মুন্ডনের অগ্রে এবং কোরবানির দিবসে জবাহ করা।
৪০) কেহ কেহ মক্কা শরিফ পোওছিয়া তাওয়াফ করাকেও ওয়াজেব বলিয়াছেন।
৪১) রাত্রের কিছু অংশ অরফাতে দাঁড়ান।
৪২) যদি কেহ নাপাকি কিম্বা বেওজু অবস্থায় তাওরান করিয়া থাকে, তাকে ছাফা ও মারওয়ার দৌড়িবার পরে বিষ্টিয় বার তাওয়াফ করা। শাঃ, ২। মাঃ, ৪২৩। বাঃ, ২/৩০৬।
প্রঃ যদি কেহ হজ্জের কোন ওয়াজেব আদায় না করে, তবে কি হইবে?
উঃ বিনা ওজরে উহা ত্যাগ করিলে, একটি ছাগল কিম্বা নেখ কোরবাণী করিতে হইবে। কেবল তাওয়াফ করার পরে দুই রাকয়াত নামাজ ত্যাগ করিলে, কোরবাণী করা ওয়াজেব হইবে কি না, ইরাতে মতভেদ হইয়াছে, কিন্তু কোরবাণী করাই এহতিরাত। বাঃ, ২/৩০৮। শাঃ, ২।
0 Comments