হযরত ইব্রাহীম (আ) দেখলেন, শিরকের সর্বাপেক্ষা প্রধান কেন্দ্র তাঁর নিজের ঘর। আর আঘরের মূর্তি নির্মাণ ও মূর্তি পূজা গোটা সম্প্রদায়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও মেরুদণ্ড হয়ে রয়েছে। সুতরাং এটাই সুকৌশল হবে যে, সত্যের প্রতি আহবান এবং সত্যের পয়গাম প্রচার কার্যের কর্তব্য পালন নিজ গৃহ হতেই শুরু করা। অতএব, ইব্রাহীম (আ) সর্বপ্রথম স্বীয় পিতা আযারকেই লক্ষ্য করে বললেন, হে পিতা। আল্লাহর ইবাদত এবং আল্লাহকে চেনার জন্য আপনি যে পন্থা গ্রহণ করেছেন এবং যাকে পূর্বপুরুষদের পুরাতন পন্থা বলে থাকেন, তা প্রকাশ্য ভ্রান্তি। ছিরাতুল মুস্তাকীম ও সত্যপথ তাই, যার দিকে আমি আহবান করেছি। হে পিতা। এক আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বে বিশ্বাস করাই নাজাতের উৎস, আপনার হাতে গড়া এ সব মূর্তির পূজা নাজাতের উৎস নয়। আপনি এ পন্থা ত্যাগ করুন এবং আল্লাহর একত্বের পথকে দৃঢ়তার সাথে ধরুণ। তাতে আপনি আল্লাহ্ তা'আলার সন্তোষ এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবেন।
কিন্তু আফসোস! আযারের উপর ইব্রাহীম (আ) এর এ আহবান কোনই কাজ হল না; বরং সত্য গ্রহণের পরিবর্তে আষর স্বীয় পুত্রকে ধমকাতে লাগল। বলতে লাগল, তুমি যদি মূর্তিসমূহের নিন্দাবাদ হতে বিরত না হও, তবে আমি তোমাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করব। হযরত ইব্রাহীম (আ) কঠিন প্রশ্নের সম্মুখিন হলেন। একদিকে পিতার সম্মান রক্ষা করার প্রশ্ন, অন্যদিকে কর্তব্য পালন, সত্যের সংরক্ষণ ও আল্লাহর আদেশ পালনের প্রশ্ন। অতএব, তিনি চিন্তা করলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাই করলেন যা এরূপ একজন মনোনীত মানুষ এবং আল্লাহ তা'আলার উচ্চ মর্যাদাশালী পয়গম্বরের মর্যাদার উপযোগী ছিল। তিনি পিতার কঠোর উক্তির উত্তর কঠোরতার দ্বারা দিলেন না, বিনয়ের সাথে উত্তর দিলেন, বললেন হে পিতা! যদি আমার কথার উত্তর তাই হয়, তবে আজ হতে আপনাকে সালাম করে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। আমি আল্লাহ্ তা'আলার সত্য দ্বীন ত্যাগ করতে পারব না এবং কোন অবস্থায়ই মূর্তিসমূহের পূজা করতে পারব না। আমি আজ হতে আপনার সংসর্গ হতে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আপনার অগোচরে আপনার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব। যাতে আপনার হেদায়াত লাভের সৌভাগ্য হয় এবং আপনি আল্লাহর আযাব হতে নাজাত পান। সূরা-মারইয়ামে এ ঘটনাটি নিম্নোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছে-
"আর (হে রাসূল!) স্মরণ করুন, এ কিতাবে উল্লিখিত ইব্রাহীমের আলোচনা। তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ নবী। যখন তিনি স্বীয় পিতাকে বললেনঃ হে আমার পিতা। আপনি কেন তার ইবাদত করছেন? যে শুনতেও পায় না এবং দেখতেও পায় না। আর আপনার কোন কাজেও আসতে পারে না? হে আমার পিতা! আমি জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছি। যা আপনি প্রাপ্ত হননি। অতএব, আমার অনুসরণ করুন, আপনাকে সরল পথ প্রদর্শন করব। হে আমার পিতা। শয়তানের দাসত্ব করবেন না। শয়তান তো আল্লাহর অবাধ্য। হে আমার পিতা! দয়াময়ের আযাব আপনাকে ঘিরে ফেলবে এবং আপনি শয়তানের বন্ধু হয়ে পড়বেন। পিতা (এসব কথা শুনে) বলল, হে ইব্রাহীম! তুমি কি আমার দেবতা হতে ফিরে গেছ? স্মরণ রাখ, তুমি যদি এসব কথা হতে বিরত না হও, তবে তোমাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করে ছাড়ব। তুমি চিরদিনের জন্য আমার নিকট থেকে দূর হয়ে যাও। ইব্রাহীম (আ) বললেন, আপনার প্রতি আমার সালাম। আমি আমার রব্বের দরবারে আপনার ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করব। তিনি আমার প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। আমি আপনাদের থেকে এবং আপনারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের পূজা করছেন তাদের থেকে পৃথক হচ্ছি। আশা করি, আমার চএব, ইব্রাহীম (আ) প্রতিপালককে ডেকে আমি ব্যার্থকাম হব না। (সূরা মারইয়াম: ৪১-৪৮)
সূরা আনআমে হযরত ইব্রাহীম (আ) পিতা আযারকে নসীহত করার ঘটনাটি নিম্নরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
"আর স্মরণ করুন ইব্রাহীম স্বীয় পিতা আযারকে বলেছিলেন, আপনি কি মূর্তিসমূহকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছেন। আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতার মধ্যে দেখেছি।" (সূরা আন'আমঃ ৭৪)
0 Comments