ঈমান ও ইসলামের মূল বিশ্বাস সমূহের বর্ণনাকে আকায়েদ বলা হয়। যাহা ব্যতীত মুমেন ও মুসলমান হওয়া যায় না।
আকীদা- আল্লাহতায়ালা এক। তিনি কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন, তিনি কাহাকেও জন্ম দেন নাই এবং তাঁহাকেও কেহ জন্ম দেন নাই। তাঁহার কোন স্ত্রী নাই, তাঁহার সমান কেহ নাই।
আকীদা- তাঁহার সমস্ত গুনাবলী স্থায়ী এবং চিরস্থায়ী থাকবে, তাঁহার কোন গুনাবলী কখনও বিনষ্ট হইবে না।
আকীদা- মখলুকের সেফাত গুণ হইতে তিনি পাক তাঁর কোন উপমা নাই।
আকীদা- পৃথিবীতে ভাল মন্দ যাহা কিছু হইতেছে তাহা হওয়ার পূর্ব্বে আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বিষয়ে সর্ব্বদাই অবগত আছেন। এবং স্বীয় জানিত হিসাবে উহা সৃষ্টি করিয়াছেন। ইহারই নাম তাব্দীর। অপ্রিয় বস্তুগুলির সৃষ্টির মধ্যে অনেক ভেদ আছে তাহা সকলে বুঝিতে পারে না।
আকীদা- বান্দাকে আল্লাহ তায়ালা বুদ্ধি ও ইচ্ছা দিয়াছেন যাহার ফলে মানুষ স্বেচ্ছায় সাওয়াব ও গোনাহের কার্য্য করিয়া থাকে কিন্তু বান্দার কোন কার্য্য সৃষ্টি করার ক্ষমতা নাই। গুনাহের কার্য্য করিলে আল্লাহ নারায অসুন্তুষ্ট হন এবং সাওয়াবের কার্য্য করিলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন।
আকীদা - আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে এমন হুকুম করেন না, যাহা তাহার দ্বারা সম্ভব হয় না।
আকীদা - খোদাতায়ালার উপরে কোন বস্তুর বা বিষয়ের দায়িত্ব নাই। তিনি যাহা করেন তাহা কেবল মাত্র তাঁহার মেহের বাণী।
আকীদা- আল্লাহ তায়ালা তাঁহার বান্দাকে সৎপথ দেখাইবার জন্য অনেক পয়গম্বর পাঠাইয়াছেন, এবং তাঁহারা সকলেই গুনাহ হইতে পাক, তাঁহাদের পূর্ণ সংখ্যা আল্লাহ তায়ালাই অবগত আছেন। তাঁহাদের দ্বারা সৎপথ প্রদর্শন করাইবার জন্য আল্লাহতায়ালা নূতন নূতন অসম্ভব ও কঠিন কার্য্যগুলি প্রকাশ করাইয়াছেন।, যাহা কাহারও দ্বারা সম্ভব নহে। এই গুলিকেই মোজেজা বলে।
আকীদা- জানা এবং অজানা যত পয়গম্বর আল্লাহতায়ালা প্রেরণ করিয়াছেন উহার প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ তায়ালাই অবগত আছেন। উহাদের প্রত্যেকের উপর ঈমান আনিতে হইবে। সংখ্যা ধার্য্য করা ঠিক নহে।
আকীদা- পয়গম্বরের মধ্যে কাহারও দজ্জা কাহারও চেয়ে বেশী বহিয়াছে, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে সাল্লামের দজ্জা সর্ব্বাপেক্ষা বেশী এবং হুজুরে আক্রম (দঃ) এর পরে কিয়ামত পর্য্যন্ত আর কোন নবী আসিবে না। তিনি সমস্ত মানুষ ও জ্বেনের নবী।
আকীদা- আমাদের নবী করীম (দঃ) কে আল্লাহ তায়ালা জাগ্রত অবস্থায়, মক্কা হইতে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত, সেখান হইতে সপ্ত আকাশে এবং সেখান হইতে যে পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার মঞ্জুর ছিল সেই পর্যন্ত লইয়া গিয়াছিলেন। অতঃপর সেখান হইতে পুনরায় মক্কা শরীফে পৌঁছাইয়া দেন। ইহাকেই মে'রাজ বলে।
আকীদা- আল্লাহ তায়ালা কতকগুলি সৃষ্ট জীবকে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করিয়া আমাদের নজর হইতে আড়ালে রাখিয়াছেন। তাহাদিগকে ফেরেস্তা বলে।
আকীদা - যখন কোন মুসলমান খুব এবাদত করে, গুনাহ হইতে দূরে থাকে এবং দুনিয়ার মহব্বৎ ত্যাগ করিয়া হজরত পয়গম্বর (দঃ) এর তাবেদারী করে তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার দোস্ত ও পেয়ারা হইয়া থাকেন। ঐরূপ লোককে ওলী বলে। এবং ঐ প্রকার লোক হইতে যদি কোন অস্বাভাবিক কার্য্য প্রকাশ পায় উহাকে কারামত বলে। ইহাকে হক জানিয়া মান্য করিতে হইবে।
আকীদা- অলী যতই বড় হউক না কেন তাঁহারা কখন ও নবীদের দজ্জা পাইতে পারেন না।
আকীদা- খোদাতায়ালার যত বড় পেয়ারাই হউক না কেন জ্ঞান থাকিতে শরীয়তের হুকুম মত চলা তাহার উপর ফরজ হইবে। নামায রোজা বা অন্য এবাদাৎ তাহার জন্য মাফ নহে। কোন গুনাহের কার্য্য করা তাহার জন্য দুরস্ত হইবে না।
আকীদা- যে ব্যক্তি শরীয়তের খেলাফ চলে সে কখনও খোদা তায়ালার ভালবাসা লাভ করিতে পারে না। যদি তাহা দ্বারা কোন অস্বাভাবিক ঘটনা প্রকাশ পায় উহা যাদু নফছানী বা শয়তানী প্রভাব বলিয়া গন্য হইবে। উহা ধোকা ভিন্ন কিছুই নহে। উহা বিশ্বাস করা উচিত নহে। এইরূপ কার্য্যগুলিকে এস্তেদ্রাজ বলে। সাবধান এইরূপ শয়তানের চেলা খুব বাহির হইয়াছে এবং পীর বলিয়া দাবী করিতেছে।
আকীদা- ওলী আল্লাহগণ নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থায় অনেক বিষয় অবগত হইয়া থাকেন। উহাকে কাশফ বা এলহাম বলে। যদি উহা শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী হয় তবে গ্রহনীয় হইবে, নচেৎ নহে।
আকীদা- আল্লাহ্ তায়ালা হযরত জিব্রাইল আলাইহেসাল্লামের মারফত। ছোট বড় অনেক কিতাব নবীদিগের উপর অবতীর্ণ করিয়াছেন কেননা তাঁহারা তাহাদের উম্মতগণকে উহা দ্বারা দ্বীনি বিষয় অবগত করান। উহার মধ্যে চারিখানা কিতাব প্রসিদ্ধ, তৌরিত হযরত মুছা আলাইহেসাল্লামের উপর, জাবুর হযরত দাউদ আলায়হেসাল্লামের উপর, ইনজিল হযরত ইছা আলাইহেসাল্লামের উপর এবং কোরআন মাজীদ আমাদের হযরত মুহাম্মাদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হেসাল্লাম এর উপরে অবতীর্ণ হইয়াছিল। কোরান মাজীদই সর্ব্ব শেষ কিতাব, কেয়ামত পর্যন্ত আর কোন কিতাব অবতীর্ণ হইবে না। এই কোরান মাজীদের হুকুমই চলিতে থাকিবে। অন্যান্য কেতাবগুলিকে গোমরাহ্ লোকেরা অনেক বদল করিয়া ফেলিয়াছে। কোরআন মাজীদের রক্ষণাবেক্ষন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং করিবেন বলিয়া ওয়াদা করিয়াছেন উহা কেহই বদলাইতে পারিবে না।
আকীদা- আমাদের পয়গম্বর (দঃ) কে যে সমস্ত মুসলমান দেখিয়াছেন, তাঁহাদিগকে সাহাবা বলে। তাহাদের সম্বন্ধে বড় বড় বোজগীর বর্ণিত আছে। তাঁহাদের প্রত্যেকের উপর মহাব্বৎ ও ভাল ধারণা রাখা অতি জরুরী।
আকীদা- কোন অলী, দজ্জায় সাহাবার সমকক্ষ হইতে পারে না।
আকীদা- হযরত পয়গম্বর (দঃ) এর বিবিগণ ও সস্তান সন্ততি সকলেই সম্মানের পাত্র। সন্তানদের মধ্যে হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ) এবং বিবিদের মধ্যে হযরত খাদীজা ও হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহোমার দর্জা সর্ব্বাপেক্ষা বেশী।
আকীদা- যখন ঈমান দুরস্ত হয় তখন আল্লাহ এবং তাঁহার রসুলের সমস্ত কথা সত্য বলিয়া জানিতে হইবে এবং ঐগুলি বিশ্বাস করিতে হইবে। আল্লাহ্ তায়ালা এবং রসুলের কথায় সন্দেহ করা, উহা মিথ্যা বা উহার দোষত্রুটি বাহির করা ও উহা লইয়া ঠাট্টা করিলে দ্বীন ইসলাম হইতে খারিজ হইয়া যাইবে।
আকীদা- কোরআন ও হাদীসের স্পষ্ট মর্ম্মগুলি না মানিয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া স্বীয় মতলব সিদ্ধ করার ইচ্ছা করা বেদ্বিনী কার্য্য।
আকীদা- গুনাহ্ করা হালাল জানিলে ঈমান যাইবে।
আকীদা- গুনাহ যত বড়ই হউক না কেন উহাকে খারাব জানিলে ঈমান যাইবে না বটে, কিন্তু ঈমান দুর্ব্বল হইবে।
আকীদা- আল্লাহ তায়ালা হইতে নির্ভয় ও নিরাশ হওয়া কুফরী কার্য্য।
আকীদা- আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কেহ গায়েবের অবস্থা জানেন না, তবে নবীগণ অহী দ্বারা, শরীয়ত পন্থি আলেম ও অলীগণ কাশফ এলহাম্ দ্বারা এবং সাধারণ লোক লক্ষণের দ্বারা কোন কোন বিষয় জানতে পারেন।
আকীদা- মোদ্দার জন্য দোয়া বা খায়রাত করিলে উহার সওয়াব পৌঁছিয়া থাকে। তবে মূল্য ধার্য্য করিয়া সওয়াব পৌঁছাইলে পৌঁছিবে না।
আকীদা- আল্লাহ্ এবং তাঁহার রসুল কিয়ামতের যে সমস্ত আলামত বলিয়াছেন উহা অবশ্যই সত্য এবং উহা নিশ্চয়ই হইবে। ইমাম মেহদী (আঃ) প্রকাশ হইবেন এবং খুব সুবিচারের সহিত বাদশাহী করিবেন। কানা দজ্জাল বাহির হইবে এবং দুনিয়ায় বহু ফাসাদের সৃষ্টি করিবে। তাহাকে হত্যা করিবার জন্য হযরত ঈসা (আঃ) আসমান হইতে নামিয়া আসিবেন এবং তাহাকে মারিয়াও ফেলিবেন। এয়াযুষ মানুষ অতী সাঙ্ঘাতিক লোক, তাহারা সমস্ত পৃথিবীতে ছড়াইয়া পড়িবে এবং অতি সাংঘাতিক অবস্থার সৃষ্টি করিবে। খোদা তায়ালার কহরে তাহারা ধ্বংস হইয়া যাইবে। এক আশ্চর্য্য রকমের জন্তু বাহির হইবে যাহাবা মানুষের সহিত কথা বলিবে, পশ্চিম দিক হইতে সূর্য্য উদয় হইবে, কোরআন শরীফ উঠিয়া যাইবে এবং অল্প দিনের মধ্যে সমস্ত মুসলমান মরিয়া যাইবে। সমস্ত পৃথিবী কাফের দ্বারা পূর্ণ হইয়া যাইবে, ইহা ছাড়া আরও অনেক কিছু ঘটিবে।
আকীদা- যখন কেয়ামতের সমস্ত লক্ষণ পূর্ণ হইবে তখন হযরত ইসরাফিল (আঃ) খোদা তায়ালার আদেশে সিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন।
আকীদা- যখন আল্লাহতায়ালার মঞ্জুর হইবে, তখন পুনরায় আবার পৃথিবী সৃষ্টি হইয়া যাইবে। মোদ্দাগণ জীবিত হইবে এবং কেয়ামতের মাঠে সমস্ত একত্রিত হইবে। ঐ স্থানের কষ্ট দেখিয়া সকলেই সুপারিশের জন্য পয়গম্বরদের নিকট যাইবেন, শেষ পর্য্যন্ত আমাদের পয়গম্বর (দঃ) আল্লাহর নিকট সুপারিশ করিবেন। মিযান রাখা হইবে, নেকী বদি ওজন ও হিসাব হইবে, কেহ কেহ বিনা হিসাবে বেহেস্তে যাইবেন, নেক লোকের আমলনামা ডান হাতে এবং বদ লোকের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হইবে, নবী (দঃ) তাঁহার নিজ উম্মতকে হাউযে কওসারের পানি পান করাইবেন। যাহার পানি দুধ অপেক্ষা সাদা এবং মধু অপেক্ষা মিষ্ট হইবে। পোলসেরাত পার হইতে হইবে, নেক লোকেরা উহা পার হইয়া বেহেস্তে যাইবেন এবং বদ লোকেরা উহা হইতে দোযাখে পড়িয়া যাইবে।
আকীদা - দোযখ সৃষ্টি হইয়াছে উহার মধ্যে সর্প, বিচ্ছু এবং বিভিন্ন রকমের শাস্তি রহিয়াছে। দোখখিদের মধ্যে যাহাদের সামান্য ঈমান থাকিবে তাহারা তাহাদের বদ কার্য্যের শাস্তি ভোগ করিবার পর পয়গম্বর ও বোজর্গ লোকদের সুপারিশ দ্বারা খালাস পাইয়া পরে বেহেস্তে যাইবে, কাফের এবং মুশরিক চিরকাল দোযখে থাকিবে তাহাদের মৃত্যুও হইবে না।
আকীদা- বেহেস্তও সৃষ্টি হইয়াছে, সেখানে নানা রকম আরাম ও শান্তির বস্তু সৃষ্টি করা হইয়াছে। বেহেস্তবাসিদের জন্য কোন ভয় ও দুঃখ হইবে না, এবং তাহারা চিরকাল বেহেস্তে থাকিবে, তাঁহারা সেখান হইতে বাহির হইবেন না এবং মরিবেনও না, এইখানেই আল্লাহর দিদার হইবে।
আকীদা -আল্লাতায়ালা ইচ্ছা করিলে ছোট গুনাহের জন্য শাস্তি ও বড় গোনাহ মেহেরবাণী করিয়া মাফ করিয়া দিতে পারেন।
আকীদা- শিরক ও কুফরীর শুনাহ আল্লাহতায়ালা কখনও মাফ করিবেন না। উহা ছাড়া অন্যান্য গোনাহ ইচ্ছা করিলে মাফ করিতে পারেন।
আকীদা- বেহেস্তের মধ্যে যত নেয়ামত হইবে তন্মধ্যে আল্লাহ তায়ালার দিদার সর্ব্বাপেক্ষা বড় নিয়ামত হইবে। আল্লাহতায়ালার দিদাদের লজ্জত পাইয়া সমস্ত বস্তুর লজ্জত হেয় মনে হইবে।
আকীদা- জীবনে যতই ভাল মন্দ করুক না কেন তওবা করিবার পরে শেষ অবস্থায় যেরূপ আমল করিবে তদনুরূপ বদলা পাইবে।
আকীদা- জীবনের মধ্যে মানুষ যখনই তওবা করিবে ও মুসলমান হইবে আলাহতায়ালা তখনই উহা কবুল করিবেন। কিন্তু মরণের সময় মওতের ফেরেস্তা দেখিয়া তওবা করিলে উহা কবুল হইবে না।
0 Comments