মসআলা যাহার প্রতি ফেতরা ওয়াজেব হয় তাহার প্রতি কেরবানীও ওয়াজেব হয়। যাহার প্রতি কোরবানী ওয়াজেব নহে সে যদি ইচ্ছা করিয়া কোরবানী দেয় তাহাতেও বহু নেকী হইবে। মোসাফেরের প্রতি কোরবানী ওয়াজেব নহে।
মসআলা- বকরাঈদের ১০ই হইতে ১২ই তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানী করিবার সময়। সূর্য অস্ত হইবার পর আর কোরবানী দূরস্ত হইবে না। ১০ই তারিখে কোরবানী দেওয়া অতি উত্তম তারপর ১১ই ও ১২ই।
মসআলা- বকরাঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানী দেওয়া দুরস্ত নহে।
মসআলা- এক ব্যক্তি ১০ই ও ১১ই জিলহজ্জে সফরে ছিল। ১২ই তারিখে সূর্যাস্তের পূর্বে বাড়ি পৌঁছিল বা ১৫ দিন কোন স্থানে থাকিবার নিয়ত করম কিম্বা সুর্যাস্তের পূর্বে ফেতরা ওয়াজেব হওয়ার পরিমাণ মালপত্র আসিয়া গেল, এমারাবস্থায় কোরবানী করা ওয়াজের হইবে।
মসআলা- নিজের কোরবানী নিজ হস্তে করাই আতি উত্তম। যদি ভাল মত জবহ কারিতে না জানে তবে অন্যের দ্বারা জব্হ করিয়া লইবে, এবং স্বয়ং পশুটির সম্মুখে উপস্থিত থাকাই উত্তম। কোরবানীর সময় মুখে নিয়ত করা বা দোওয়া পড়া জরুরী নহে, দেলে খিয়াল করিলেই হইবে। তবে উক্ত দোওয়াটি পড়া উত্তম।
মাসআলা- কোরবানী দেওয়া কেবল নিজের জন্য ওয়াজেব, ছেলে- মেয়ের তরফ হইতে ওয়াজের নহে। নাবালেগ ছেলে-মেয়ে মালদার হইলেও ওয়াজেব হইবে না, যদি কেহ নাবালেগের তরফ হইতে কোরবানী দেয় তবে নফল হইবে। সাবধান! যে, নাবালেগের মালের দ্বারা কোরবানী না দেওয়া হয়।
মসআলা- খাশী, বকরী, ভেড়া, দুম্বা, গরু, গাভী, বাড়, বলদ, মহিষ ও উট ব্যাতীত অন্য কোন পশুর কোরবানী দুরস্ত নহে।
মসআলা -গরু, মহিষ ও উট দ্বারা সাত ব্যক্তি শরীক হইয়া কোরবানী করা দুরস্ত আছে। কিন্তু ইহার শর্ত সাত অংশ হইতে কাহারও অংশ কম না হয়, যেন সকলের কোরবানী বা আকীকার নিয়ত হয়; কেবল গোস্ত খাইবার নিয়ত না হয়। সাত অংশের মধ্যে যাদি কাহারও অংশ কম হয় তবে কাহারও কোরবানী দুরস্ত হইবে না।
মাসআলা- যদি কোন গরুতে পাঁচ বা ছয় জন শরীক হইয়া থাকে তবে সকলের কোরবানী দুরস্ত হইবে, কিন্তু আট জন শরীক হইলে কাহারও কোরবানী সহীহ হইবে না।
মসআলা -জেন্দা এবং মুর্দার নাম মিলিত করিয়া কোরবানী দেওয়া জায়েজ আছে, এমদাদুল ফাতাওয়া ২য় খণ্ড ১১২ পৃঃ দ্রঃ। উহার গোস্ত সকলে খাইতে পারিবে। নজর ও অসীয়তের কোরবানীর গোস্ত মিসকীন বা গরীব খাইবে অন্য কেহ নহে।
মসআলা- কোরবানীর জন্তুর কান্না শরীকগণ রাজী হইয়া কোন গরীব বা ধনীকে দিতে পারে। যদি নজর বা অসীয়তের কোরবানী হয়, কেবল গরীবকেই দিতে হইবে।
মসআলা কোরবানীর জন্য যে পশু খরিদ করা হইয়াছে উহ্য কোন কাজে লাগান বা উহার দুগ্ধ পান করা দুরস্ত নহে। জব্হ করিবার পূর্ণ উহার লোম কাটিয়া লওয়া মাকরুহ। আলমগিরী।
মসআলা- গাভীন পশুর কোরবানী মাকরুহ তাহরীমা। তবে জব্হ করিয়া দিলে কোরবানী দুরস্ত হইবে। কিন্তু গুনাহগার হইবে। কোরবানীর পর জীবিত বাচ্চা বাহির হইলে উহাও জব্হ করিয়া খাওয়া হালাল হইবে।
মসআলা যিনি কোরবানী দিবেন তিনি বকরাঈদের চন্দ্র উদয় হওয়া মাত্র নখ, চুল কাটা বা হাজামত করিবেন না। ইহা মুস্তাহাব।
মসআলা কোরবানীর জন্য গরু খরিদ করিবার সময় নিয়ত করিয়াছিল যদি অন্য কোন শরীক পাই তবে তাহাকে শামিল করিয়া লইব, পরে কিছু লোক আসিয়া শরীক হইল, ইহা দুরস্ত হইবে। যদি খরিদ করিবার সময় অন্যকে শরীক করিবার নিয়ত না থাকে, তবে কেবল নিজেই গরুটি কোরাবানী দিবে। উহাতে অন্য কাহাকেও শরীক করা ভাল নয়। আর যদি কেহ শরীক হইয়া যায় তবে জায়েজ হইবে। তবে যে ব্যক্তি শরীক হইল সে যদি ধনী হয় তবে তাহার কোরবানী জায়েজ হইবে, কিন্তু গরীব হইলে হইবে না।
মসআলা- যদি কোরবানীর পশু হারাইয়া বা চুরি হইয়া যায় এবং দ্বিতীয় আর একটি খরিদ করে, ইতিমধ্যে হারানটি পাওয়া গেল, ধনী হইলে একটি এবং গরীব হইলে দুইটি কোরবানী দিবে। হেদায়া ৪র্থ খণ্ড ৪৪৬ পৃঃ দ্রঃ।
মসআলা- সাত ব্যক্তি উট, মহিষ বা গরুতে শরীক হইলে গোস্ত ভাগ করিবার সময় আন্দাজে ভাগ করা চলিবে না। খুব ভাল মত প্রত্যেক অংশ ওজন করিবে। কাহারও অংশ কম বা বেশী হইলে নাজায়েজ হইবে। বেশী হইলে সুদের মধ্যে গণ্য হইবে। কঠিন গুনাহ হইবে। বকরী, ভেড়া ইত্যাদি একজনের নামে কোরবানী হইবে।
মসআলা- বকরী এক বৎসর, গরুর, মহিষ দুই বৎসর, উট পাঁচ বৎসর এবং দুম্বা ভেড়া এক বৎসর পূর্ণ হইলে কোরবানী জায়েজ হইবে। উক্ত বয়সের কম হইলে কোরবানী জায়েজ হইবে না। তবে দুম্বা ও ভেড়া খুব মোটা তাজা হইলে এবং এক বৎসরের মত দেখাইলে ছয় মাসেরও দুরস্ত আছে।
মসআলা- যদি কোরবানীর পশুটি অন্ধ, কান কাটা বা লেজ কাটা হয় এবং উক্ত অঙ্গগুলির এক তৃতীয়াংশের বেশী নষ্ট হয় তবে উহা দ্বারা কোরবানী দুরস্ত হইবে না।
মসআলা যদি কোরবানীর পশুটি লেংড়া হয়, তিন পায়ে চলে, চতুর্থ পদটি মাটিতে রাখিতে না পারে তবে উহা দ্বারা কোরবানী দূরস্ত হইবে না। যদি মাটিতে ঠেশ দিয়ে চলে, বা লেংড়াভাবে চলে এমতাবস্থায় উহার কোরবানী জায়েজ হইবে।
মসআলা যে পশুর কোন দাঁত উঠে নাই তাহার কোরবানী দুরস্ত নহে। যদি দাঁত বেশী থাকে বা কম পড়িয়া যায় তবে উহার কোরবানী জায়েজ হইবে।
মসআলা যে পশুর জন্ম হইতেই কান না থাকে, তাহার কোরবানী দুরস্ত নহে। তবে ছোট কান থাকিলে দুরস্ত হইবে।
মসআলা যে পশুর জন্ম হইতেই শিং নাই বা শিং-এর অগ্রভাগ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে উহার দ্বারা কোরবানী দুরস্ত হইবে। আর যদি গোড়া হইতে শিংটি ভাঙ্গিয়া যায় তবে দুরস্ত হইবে না।
মসআলা- একটি কোরবানীর পশু খরিদ করিবার পর এমন কোন দোষ বাহির হইল যাহাতে কোরবানী দুরস্ত হয় না। ধনী হইলে অন্য একটি খরিদ করিয়া কোরবানী দিবে আর গরীব হইলে উক্ত পশুটিই কোরবানী করিবে।
মসআলা- কোরবানীর গোস্ত নিজে খাইবে। পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়- স্বজনকে দিবে। উত্তম এই যে; গোস্ত তিন ভাগ করিয়া এক ভাগ গরীবদিগকে, এক ভাগ প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনকে দিবে, এক ভাগ নিজে খাইবে। যদি কিছু গোস্ত খয়রাত করিয়া অবশিষ্ট রাখিয়া দেয়, তাহাতে কোন দোষ হইবে না।
মসআলা- কোরবানীর চামড়া গরীবকে দান করিবে বা বিক্রয় করিয়া উহার মূল্য খয়রাত করিবে। যাহারা জাকাত' গ্রহণের উপযুক্ত তাহাদিগকে দিবে। মূল্য বাবদ যে পয়সাগুলি পাইবে সেই পয়সাগুলি খয়রাত করিবে। তাহার বদলে অন্য পয়সা খয়রাত করা খুব খারাপ তবে খয়রাত করিলে আদায় হইবে। চামড়ার পয়সা মসজিদ মেরামত বা কোন নেক কার্যে লাগান দুরস্ত নহে।
মসআলা- চামড়া বিক্রয় না করিয়া কেবল নিজের ব্যবহারের জন্য রাখিতে পারে। যথা-জায়নামাজ, ডোল বা মশক ইত্যাদি। প্রকাশ থাকে যে, হিলা করিয়া জাকাত, ফেতরা ও চামড়ার পয়সা মাদ্রাসায় লাগাইতে পারে, নচেৎ না। প্রথমতঃ গরীবকে দিবে, সে স্বইচ্ছায় মাদ্রাসায় দিবে। এইরূপ পূর্ব হইতে বলিয়া রাখিতে পারে।
মসআলা কসাইকে গোস্ত ছাড়ান মজুরী বাবদ গোস্ত দেওয়া জায়েজ হইবে না, মজুরী স্বতন্ত্র ভাবে দিতে হইবে।
মসআলা কাহারও প্রতি কোরবানী ওয়াজেব ছিল, তিন দিন শেষ হইয়া গেল, কোরবানী দিতে পারিল না। তাহাকে একটি বকরী বা ভেড়ার মূল্য খয়রাত করিতে হইবে। যদি বকরী খরিদ করিয়া থাকে তবে সেই বকরীটিই খয়রাত করিবে।
মসআলা কেহ যদি কোরবানী করিব বলিয়া মান্নত করে আর সেই কার্যটি পূর্ণ হইয়া যায় (অর্থাৎ যে কারণে মান্নত করিয়াছিল) তবে কোরবানী দেওয়া ওয়াজেব হইবে। এইরূপ কোরবাণীর গোস্ত গরীব ব্যতীত অন্য কেহ খাইতে পারিবে না।
0 Comments