"আল্লাহুম্মা ইন্নি ওরিদো তাওয়াফা বায়তেকাল হারামে ছাবয়া'তা আশওয়াতেন তাওয়াফাল কুদমে ছুন্নাতাল হাচ্ছে ফাইয়া- চ্ছেরহো-লি অতাকাববালহো মিন্নি।"
অর্থঃ- ইয়া আল্লাহ, আমি তোমার সম্মানিত গৃহের চারিদিকে সাতবার ঘুরিবার অর্থাৎ হজ্জের ছুন্নত তাওয়াফে কদুম করার নিয়ত করিতেছি, তুমি আমার পক্ষে উহা সহজ করিয়া দাও এবং তুমি আমার জন্য উহা কবুল করিয়া লও।"
১০ই, ১১ই ১২ই জেলহাজ্জ তারিখে হজ্জের ফরজ তাওয়াফে জিয়ারত করার নিয়ত,-
اللَّهُمَّ إِنِّي أُريدُ طَوَفَ بَيْتِكَ الْحَرَامِ سَبْعَةَ أَشْوَطٍ طَوَفَالزِّيَارَةِ فَرُضَ الْحَجِّ فَيَسْرُهُ لِي وَ تَقَبَّلُهُ مِنِّي *
"আল্লাহোম্মা ইন্নি ওরিদো তাওয়াফা বায়তেকাল হারামে ছা'বায়া'তা আশওয়াতেন তাওয়াফাজ্জেয়ারাতে ফারদ্বাল-হাজে ফাইয়াচ্ছেরহোলি অতাকাববালহো মিন্নি।"
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ্ আমি তোমার সম্মানিত ঘরের চারিদিকে সাতবার ঘুরিবার অর্থাৎ হজ্জের ফরজ তাওয়াফে জিয়ারত করার নিয়ত করিতেছি তুমি উহা আমার পক্ষে সহজ করিয়া দাও এবং তুমি আমার জন্য উহা কবুল করিয়া লও।"
ওমরার তাওয়াফ করার নিয়ত,-
اللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ طَوَافَ بَيْتِكَ الْحَرَامِ سَبْعَةِ أَشْوَاطٍ طَوَافَالْعَمْرَةَ فَيَسْرُهُ لَي وَ تَقَبَّلُهُ مِنِّي *
"আল্লাহোম্মা ইন্নি ওরিদু তাওয়াফা বায়তেকাল হারামে স্থাবয়'তা আশওয়াতেন তাওয়াফাল ওমরাতে ফাইয়াচ্ছেরহো লি অতাকাব্বালহো মিন্নি।"
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার সম্মানিত ঘরের চারিদিকে সাতবার ঘুরিবার অর্থাৎ ওমরার তাওয়াফ করার নিয়ত করিতেছি, তুমি আমার পক্ষে ইহা সহজ করিয়া দাও এবং তুমি আমার জন্য উহা কবুল করিয়া লও।"
যে ব্যক্তি হজ্জ এবং ওমরাহ একই এহরামে করে, সে ব্যক্তি প্রথমে উল্লিখিত ভাবে প্রথমে ওমরার তাওয়াফের নিয়ত করিয়া তাওয়াফ করিবে, পরে ছাফা এবং মারওার মধ্যে শওত (প্রদক্ষিণ) করিয়া তাওয়াফে কলুমের নিয়ত করিয়া তাওয়াফে কদুম করিবে, তৎপরে ১০ই, ১১ই, কিম্বা ১২ই তারিখে তাওয়াফে জিয়ারতের নিয়ত করিয়া তাওয়াফে জিয়ারত করিবে।
নফল তাওয়াফের নিয়ত,-
اللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ طَوَفَ بَيْتِكَ الْحَرَامِ سَبْعَةَ أَشْوَظَ فَيَسْرُهُ لِي وَ تَقَبَّلُهُ مِنِّي .
"আল্লাহোম্মা ইন্নি ওরিদো তাওয়াফা বায়তেকাল হারামে ছাবয়'তা আশওয়াতেন ফাইয়াচ্ছেরহো লি অতাকব্বালহো মিন্নি।
অর্থ:- "ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার সম্মানিত ঘরের চারিদিকে সাতবার ঘুরিবার নিয়ত করতেছি তুমি আমার পক্ষে উহা সহজ করিয়া দাও এবং আমার জন্য উহা কবুল করিয়া লও।"
ক'বা শরিফ হইতে বিদায় গ্রহণ কালে যে তাওয়াফ করিতে হয়, উহাকে তাওয়াফে অদা বলা হয় উহার নিয়ত,-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَرِيدُ طَوَافَ بَيْتِكَ الْحَرَامِ سَبْعَةَ أَشْوَاطٍ
طَوَافَ الْوَدَاعِ فَيَسِّرُهُ لِى وَ تَقَبَّلُهُ مِنِّي *
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার সম্মানিত ঘরের চারিদিকে সাতবার ঘুরিবার অর্থাৎ বিদায়ের তাওয়াফকরার নিয়ত করিতেছি, তুমি আমার পক্ষে উহা সহজ করিয়া দাও এবং আমার জন্য উহা কবুল করিয়া লও।"
তাওয়াফের নিয়ত করিয়া ডাহিন দিকে চলিবে, এমন কি হাজারে আছওয়াদের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া সেই দিকে মুখ করিয়া বলিবে,-
بِسْمِ اللَّهِ وَ اللَّهُ أَكْبَرُ
বিছমিল্লাহে আল্লাহো আকবর।
এই তকবির পঁড়া কালে দুই হাত দুই কাণ অবধি উঠাইবে। দুই হাতের পেটকে হাজারে আছওয়াদ এবং কা'বা ঘরের দিকে করিবে।
তৎপরে নিম্মোক্ত দোয়া কিম্বা যে কোন দোয়া ইচ্ছা হয় প্রথম শওত কালে পড়িবে,-
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهِ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا يَا اللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ وَ الصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ *
اللَّهُمَّ إِيمَانًا بِكَ وَ تَصْدِ بِقًا بِكِتَا بِكَ وَ وَ فَاءً بِعَهْدِكَ وَالْبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَ جَبِيبِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلْكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ وَ الْمُعَا فَاتَ الدَّالَمَةَ فِي الدِّينِ وَالدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَالْفَوْنَ بِالْجَنَّةِ وَالنَّجَةَ مِنَ النَّارِ .
অর্থঃ- "আল্লাহতায়ালার পাকি বর্ণনা করিতেছি, আল্লাহতায়ালার জন্য সমস্ত প্রশংসা (তারিফ)।
আল্লাহতায়ালা ব্যতীত বন্দেগির উপযুক্ত কেহ নাই। আল্লাহই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ বোজর্গ ও মহানের সাহায্য ব্যতীত গোনাহ হইতে বিরত থাকা এবং এবাদাতের ক্ষমতা (সম্ভব) হইতে পারে না।
রাছুলোল্লাহ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে অছাল্লামের উপর দরুদ এবং ছালাম নাজেল হউক।
ইয়া আল্লাহ তোমার উপর ইমান আনার জন্য, তোমার কেতাবের উপর বিশ্বাস করার জন্য, তোমার ওয়াদাকে পূর্ণ করার জন্য তোমার নবি এবং তোমার হাবিব মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে অছাল্লামের ছুন্নাতের তাবেদারি করার জন্য (তাওয়াফ করিতেছি)। ইয়া আল্লাহ, আমি তোমার নিকট মাফি, শান্তি দ্বীন, দুনইয়া এবং আখেরাতে চির শাস্তি, বেহেশত লাভ এবং দোজখ হইতে নাজাত চাহিতেছি।"
তৎপরে হাজারে আছওয়াদের উপর দুই হাতের তালু রাখিবে এবং দুই তালুর মধ্যস্থলে মুখ রাখিয়া উক্ত প্রস্তরকে চুম্বন করিবে কিন্তু এই চুম্বন করিতে লোককে কষ্ট দিবে না। যদি উহা চুম্বন করা সম্ভব না হয়, তবে উহার উপর দুই হাত কিম্বা ডাহিন হাত রাখিয়া উক্ত হাত চুম্বন করিবে। আর যদি উহার উপর হাত রাখা সম্ভব না হয় তবে লাঠি বা তত্ত্বল্য কোন বস্তু দ্বারা উক্ত প্রস্তরকে স্পর্শ করিয়া উক্ত লাঠিকে চুম্বন করিবে। আর যদি ইহাও সম্ভব না হয়, তবে দুই হাত কান অবধি উঠাইয়া দুই হাতের পিঠকে চেহরার দিকে এবং পেটকে প্রস্তরের দিকে ফিরাইয়া উহার দিকে ইশারা করিয়া তকবির কলেমা আলহামদো লিল্লাহ ও দরুদ পড়িয়া দুই তালুকে চুম্বন করিবে।
এইরূপ প্রত্যেক শওতে হাজারে আছওয়াদের নিকট পৌঁছিয়া উপরোক্ত প্রকার চুম্বন করিবে।
হাজারে-আছওয়াদ একখানি বেহেশতী পাথর, হজরত আদম আলায়হেচ্ছালামের সহিত দুনইয়ায় প্রেরিত হইয়াছিল' হজরত নুহ (আঃ) এর জামানায় যখন মহা তুফান হইয়াছিল, তখন উহা ফেরেশতা কর্তৃক পাহাড়ের উপর রাখা হইয়াছিল, হজরত এবরাহিম আলায়হেচ্ছালাম কা'বা শরিফের ঘর প্রস্তুত করা কালে উক্ত প্রস্তুরখানি তথা হইতে আনিয়া কা'বা গৃহের এক কোণে স্থাপন করিয়াছিলেন। উক্ত প্রস্তুরখানি দুগ্ধ অপেক্ষা অধিকতর শ্বেতবর্ণের ছিল তৎপরে আদম সন্তান উহা স্পর্শ করিতে তাহাদের গোনাহ উহাকে কালিমাময় করিয়া ফেলিয়াছে উহা স্পর্শ করিলে বা চুম্বন করিলে মুনধ্যের গোনাহ মাফ হইয়া যায়। যে কোণে হাজারে আছওয়াদ আছে এবং যে কোনটী রোকণে ইমানি নামে বিখ্যাত, এই দুইটি কোণ হজরত এবরাহিম আলায়হেচ্ছালাম কর্তৃক নির্মিত হইয়াছিল, এই জন্য উভয়টা স্পর্শ করিতে হয়।
তৎপরে তাওয়াফকারী নিজের ডাহিন দিক্ হইতে অর্থাৎ যে দিকে কা'বা গৃহের দরজা আছে সেই দিক হইতে তাওয়াফ করা আরম্ভ করিবে। হাজারে আছওয়াদ হইতে তাওয়াফ আরম্ভ করিয়া কা'বা শরিফের চারিদিক ঘুরিয়া পুনরায় উক্ত হাজারে আছওয়াদের নিকট পৌঁছালে এক শওত হইবে, এইরূপ সাত শওত করিতে হইবে।
প্রথম তিন শওতে বীর যোদ্ধা বীরত্ব সহকারে যেরূপ দ্রুতবেগে চলিতে থাকে, সেইরূপ ত্রস্তভাবে চলিবে, ইহাতে পা নিকটে নিকটে ফেলিবে এবং দুই স্কন্ধ নাড়াইতে থাকিবে, লাফ মারিবে না বা বেশী দৌড়িবে না। অবশিষ্ট চারি শওতে ধীরে ধীরে চলবে। কা'বা গৃহের নিকট নিকট স্থান দিয়া মন্দা মন্দা দৌড়ান উত্তম। আর যদি ইহা সম্ভব না হয়, তবে দূর দূর স্থান দিয়া মন্দা মন্দা দৌড়িবে। আর যদি অতিরিক্ত জনতার জন্য কোন স্থান দিয়া দৌড়ান সম্ভব না হয়, তবে বিলম্ব করিয়া জনতা কম হইলে, মন্দা মন্দা দৌড়িবে যদি নীড়া বশতঃ কেহ মন্দা দৌড়িতে না পারে, তবে কোন দোষ হইবে না। বিনা ওজরে দৌড়ান ত্যাগ করিবে না। এই দৌড়ান ছুন্নত। যদি কেহ প্রথম শও তে দৌড়িতে ভুলিয়া যায় কিম্বা দৌড়ান ত্যাগ করে, তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শওতে দৌড়িবে। আর যদি তিন শওতে দৌড়ান ত্যাগ করে বা ভুলিয়া যায়, তবে অবশিষ্ট চারি শওতে দৌড়িবে না। তাওয়াফ কালে হাতেমের বাহির দিয়া তাওয়াফ করা ওয়াজেব আর যদি কেহ হাতিম ও খানায়-কা'বার মধ্যস্থিত সঙ্কীণ' স্থান দিয়া তাওয়াফ করে, তবে উক্ত তাওয়াফ বাতীল হইবে।
কা'বা শরিফের একদিকে, অর্দ্ধবৃত্তের ন্যায় প্রাচীর দ্বারা যে স্থানটী বেষ্টন করা আছে উক্ত স্থান ও খানায় কা'বার মধ্যে একটু সঙ্কীর্ণ স্থান খালি আছে, উহা ঠিক কা'বা ঘরের 'মিজাবের' (পয়নালার) নীচে। তথায় হজরত ইছমাইল ও হজরত হাজেরা আলায়হেমাছ-ছালামের কবর আছে। এই স্থানটিতে অনুমান হয় ছয় হাত কাবা ঘরে অংশ আছে।
হজরত এবরাহিম (আঃ) এর জামানায় উক্ত অংশটুকুকা'বা ঘরের মধ্যে ছিল। তৎপরে কোরেশ জাতি যে সময় কা'বা শরিফ প্রস্তুত করে সেই সময় ঐ অংশটুকু বাদ দিয়া ঘর প্রস্তুত করে। হজরত নবি (ছাঃ) বলিয়াছেন, যদি নূতন ইসলামের জন্য লোকের মনে সন্দেহ উপস্থিত হওয়ার আশঙ্কা না হইত তবে আমি উক্ত স্থানটি কা'বা গৃহের অন্তভূক্ত করিয়া দিতাম।
চারি খলিফা যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকার কারণে উক্ত কাৰ্য্য করিতে পারেন নাই। তৎপর হজরত আবদুল্লাহ বেনে জোবাএর খেলাফতের দাবি করিয়া উক্ত স্থানটাকে কা'বার অন্তভূক্ত করিয়া দেন। তৎপরে তিনি শহিদ হইয়া গেলে, হাজারে ছাখাফি উহ নাপছন্দ করিয়া উক্ত এমারত ধ্বংস করিয়া ফেলিয়া দেয়। পরে কোন খলিফা কর্তৃক সেই স্থানটী প্রাচীর দ্বারা বেষ্টন করিয়া রাখা হইয়াছে। উক্ত স্থানটাকে 'হাতিম' বলা হয়।
কাবা শরিফের এক কোণে প্রায় তিন হাত উচ্চে হাজারে আছওয়াদ নামক প্রস্তুর খানি রক্ষিত আছে, তৎপরে কা'বা গৃহের যে কোণটী পড়ে, উহাকে রোকনে এরাকি বলা হয়, তৎপরে কোণটিকে রোকনে সামি বলা হয়, তৎপরে চতুর্থ কোণটিকে রোকনে ইমানি বলা হয়।
তাওয়াফ করা কালে প্রত্যেক শওতে রোকনে ইমানিকে দুই হাত অথবা শুধু ডাহিন হাত দ্বারা স্পর্শ করা মোস্তাহাব। রোকনে শামি ও রোকনে এরাকিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করা মকরুহ তাঞ্জিহি, কেননা উক্ত রোকনদ্বয় প্রকৃত পক্ষে কা'বা ঘরের কোণ নহে, বরং কা'বা ঘরের মধ্যের অংশ।
যদি কেহ জানিয়া শুনিয়া সাত সওত করিয়া অতিরিক্ত আর এক শওত করিয়া ফেলে' তবে তাহাকে আরও ছয় শওত করা ওয়াজেব হইবে। আর যদি অষ্টম শওতকে সপ্তম শওত ধারণা করিয়া ফেলে, তবে তাহাকে আর কিছু করিতে হইবে না।
(মসলা) যদি কেহ ফরজ তাওয়াফে কয় শওত করিয়াছে ইহাতে সন্দেহ করে, তবে উক্ত তাওয়াফ দোহরাইয়া লইবে। কোন বিদ্বান বলিয়াছেন, যদি বহুবার এইরূপ সন্দেহ করে, তবে আন্দাজ করিয়া একটা ঠিক করিয়া লইবেন। যদি কোন একজন দীনদার পরহেজগার লোক কয় শওত হইয়াছে, ইহা বলিয়া দেয়, তবে তাহার কথা গ্রহণ করা মোস্তাহাব। আর যদি দুইজন পরহেজগার ইহার সংবাদ দেয়, তবে তদনুযায়ী আমল করা ওয়াজেব।
(মসলা) মছজিদের ভিতরে কোন এক স্থানে এমন কি জমজম কূপের পশ্চাদিকে কিম্বা মকামে এবরাহিমের বা স্তম্ভগুলির পশ্চাতে তাওয়াফ করিলেও উহা জায়েজ হইবে, কিন্তু মছজিদের বাহিরে তাওয়াফ করিলে, জায়েজ হইবে না।
(মসলা) যদি কেহ তাওয়াফ করিতে করিতে কিম্বা ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌড়িতে দৌড়িতে জানাজা কিম্বা ফরজ নামাজ পড়িতে কিম্বা নূতন ওজু করিতে চায় তবে পুনরায় তাওয়াফ স্থলে পৌঁছিয়া যে স্থান থেকে তাওয়াফ করা ছাড়িয়াছিল, সেই স্থান হইতে পুনরায় আরম্ভ করিবে।
যদি কেহ বিনা ওজরে তাওয়াফ ছাড়িয়া বাহিরে চলিয়া যায়, তবে তাওয়াফ বাতিল হইবে না, কিন্তু মকরুহ হইবে, উহা শুরু হইতে আরম্ভ করা ওয়াজেব হইবে না, বরং মোস্তাহাব হইবে।
(মসলা) তাওয়াফ কালে কিছু খাওয়া বা ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ আছে, কিন্তু মকরুহ হইবে, ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌঁড়ান কালে উহা মকরুহ হইবে না। উক্ত উভয় সময় পানি পান করা মোবাহ। তাওয়াফ কালে ফৎওয়া দেওয়া জায়েজ হইবে। উক্ত সময় কোরআন পাঠ না করাই ভাল বরং জেকর করাই উত্তম।
রোকনে ইমানি হইতে হাজারে আছওয়াদ পর্যন্ত যাওয়া কালে পড়িবে,-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَاعَذَابَ النَّارِ .
'হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি দুনিয়াতে আমাদিগকে -কল্যাণ (ভালায়ি) এবং আখেরাতে কল্যাণ দান কর। এবং আমাদিগকে দোজখের আজাব হইতে নাজাত দাও।'
দ্বিতীয় শওত কালে পড়িবে,-
اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا البَيْتَ بَيْتِكَ وَ هَذَا الْحَرَمَ حَرَ مُكَ وَهَذَا الا مَنْ أَمْكَ وَ الْعَبُدَ عَبْدُكَ وَأَنَا عَبْدُكَ وَ ابْنُ عَبْدَكَ وَهَذَا مُقَلَمُ العَائِدِ بِكَ مِنَ النَّارِ فَحَرِّمُ لُحُومَنَا وَ بَشَرَ تَنَا عَلَى النَّارِ اللَّهُمَّ حَيْبُ إِلَيْنَا الْإِيمَانَ وَ زَيَّنَهُ فِي قُلُو بِنَا وَ كَرَهُ إِلَيْنَا الْكُفْرَا وَ الفُسُوقَ وَ الْعِصْيَانَ وَ اجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ اللهُمَّ قِنِي عَذَا بَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ اللَّهُمَّ ارْزِقُنِي الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابِ .
অর্থ:- "ইয়া আল্লাহ নিশ্চয় এই ঘরটী তোমার, এই সম্মানিত স্থানটি তোমার সম্মানিত স্থান, এই শাস্তি তোমার শাস্তি, এই বান্দা, তোমার বান্দা, আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার পুত্র। ইহা তোমার নিকট দোজখ হইতে উদ্ধার প্রার্থীর স্থান। এক্ষণে তুমি আমাদের মাংস এবং চামড়াকে দোজখের উপর হারাম কর। ইয়া আল্লাহ, আমাদের প্রতি ইমানকে প্রিয়পাত্র করিয়া দাও। আমাদের অন্তরের উক্ত ইমানকে সুন্দর কর। আমাদের উপর কাফেরি, ফাছেকি এবং গোনাহকে মকরূহ (নাপাছন্দ) করিয়া দাও। আমাদিগকে সত্যপথ প্রাপ্ত দিগের মধ্যে করিয়া দাও। ইয়া আল্লাহ, যে দিবস তুমি তোমার বান্দাকে জীবিত করিবে, সেদিবস তুমি আমাকে আজাব হইতে রক্ষা করিও। ইহা আল্লাহ, তুমি আমাকে বিনা হিসাবে বেহেশত দান কর।"
তৃতীয় শওত কালে পড়িবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الشك والشرب والنفاق وَ النِّفَاقِ وَسُوءِ الْاخْلَاقِ وَ سُوْءِ المَنظَرِ وَ الْمُنقَلِب في المال و الا خَلِ وَالْوَلَدِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلْكَ رضاك والجنة واغو نقل ذُبِكَ مِنْ سَخَطِكَ وَ النَّارِ اللَّهُمَّ إِلى أَعُوذُبك من الفطرة اللهأَعوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ المَمَاتِ *
অর্থঃ- 'ইয়া আল্লাহ নিশ্চয় আমি তোমার নিকট শেরক, শত্রুতা মোনাফেকি, মন্দ স্বভাব, অর্থ, পরিজন ও আওলাদে অসৎদৃষ্টি এবং অসৎ পরিবর্তন' হইতে নিষ্কৃতি চাহিতেছি ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার সন্তোষ ও বেহশত চাহিতেছি। আর তোমার নিকট তোমার নারাজি ও দোজখ হইতে নিষ্কৃতি চাহিতেছি। ইয়া আল্লাহ নিশ্চয় আমি তোমার নিকট দরিদ্রতা হইতে নিষ্কৃতি চাহিতেছি। আর তোমার নিকট জীবন এবং মরণের ফাসাদ হইতে নিষ্কৃতি চাহিতেছি।"
চতুর্থ শওত কালে পড়িবে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًا مُبْرُورًا وَسَعْيَا مَشْكُورًا وَدُنْيَا تَغْفُورُاوْ عَمَلًا صَالِحًا مَقْبُوْلًا وَتِجَارَةً أَنْ تَبُوْرًا يَا عَالِمَ مَا فِي الصَّدُورِأَخْرِجْنِي يَانِيَةٍ لِي مِنكَ بِخَيْرٍ * اللَّهُوَالعَنِيمَةَ مِنْ كُلِلٍ نِرِّ وَ الْفَوْزُ بِالْجَنَّةِ وَ النَّجَاةَ مِنَ النَّارِ رَبِّ تَبْعِنِي بِمَا رَزَقْتَنِي وَ بَارِكْ لِي فِيْمَا أَعْطَيْتَنِي وَ الْخُلُفْ عَلَى كُلِّلَ غَا مِنَمُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَ عَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَ السلامة من كلل الم الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ اللَّهُمَّ إِلَى أَسْتَلْكَ
অর্থ:- "ইয়া আল্লাহ তুমি হজ্জকে মক্কবুল, চেষ্টাকে কৃতজ্ঞতার যোগ্য, গোনাহটি মাফ আমলকে নেক মকবুল এবং বাণিজ্যটা লাভজনক কর। হে অন্তরের যাবতীয় বিষয়ের জাননেওয়ালা, ইয়া আল্লাহ, তুমি আমাকে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোকের দিকে আনয়ন কর। ইয়া আল্লাহ্ আমি তোমার নিকট তোমার রহমতের আসবাব (উপকরণ) তোমার মাফির অছিলা, প্রত্যেক গোনাহ হইতে দূরে থাকা, প্রত্যেক নেকির অংশ বেশেত লাভ দোজখ হইতে নাজাত প্রার্থনা করিতেছি। হে প্রতিপালক তুমি আমাকে যাহা দান করিয়াছ, তাহার প্রতি আমাকে সন্তুষ্ট রাখ। তুমি যাহা আমাকে দান করিয়াছ, আমার পক্ষে তাহাতেই বরকত দাও। আর তুমি আমার প্রত্যেক অনুপস্থিত বিষয়ের প্রতি কল্যাণ (খয়রিয়ত) সহ খলিফা হও।"
পঞ্চম শওতে পড়িবে,-
شِكَ وَ لا بَا قِيَ إِلَّا وَجُهَكَ وَ اسْقِنِي مِنْ حَوْضَ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَ وَ سَلَّمَ شَرْبَةً هَنِئَةً مَرِيئَةً لَا نَظْمَا بَعْدَهَا أَبَدًا اللَّهُمَّ إِنِّي السَّئَلُكَنَعْمَهَا وَ مَا يُقَرِّبُنِي إِلَيْهَا مِن قَوْلِ أو فعلا مِنَ النَّارِ وَ مَا يُقَرِّبُنِي إِلَيْهَا مِنْ قَوْلِ أَوْ فَعْلِ أَوْ عَمَلٍ . مِنْ خَيْرٍ مَا سَتَلَكَ مِنْهُ نَبِيْكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّمَا اسْتَعَادَكَ مِنْهُ نَيْكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلْكَ الْجَنَّةَ وَ
অর্থঃ- "ইয়া আল্লাহ, তুমি যে দিবস তোমার আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকিবে না এবং তোমার 'জাত' ব্যতীত কিছু বাকি থাকিবে না, সেই দিবস আমাকে তোমার আরশের ছায়ায় স্থান দান করিও। আর তোমার নবি মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে আছাল্লামের হাওজ হইতে এরূপ সুস্বাদু হজমি শরবত আমাকে পান করাইও যাহা পান করার পরে "আমরা" কখনও পিপাসাযুক্ত হইব না। ইয়া আল্লাহ্ যাহা তোমার নিকট তোমার নবি মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে অছাল্লাম চাহিয়াছিলেন আমিও তোমার নিকট তাহার কল্যাণ (ভালাই) চাহিতেছি। আর তোমার নবি মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে অছাল্লাম যাহা তোমার নিকট নিষ্কৃতি (পানাহ) চাহিয়াছিলেন, আমিও তোমার নিকট তাহার অপকারিতা (বুরাই) হইতে নিষ্কৃতি চাহিতেছি।
ইয়া আল্লাহ, আমি তোমার নিকট বেহেশত, উহার নেয়ামত আর যে কথা, কাৰ্য্য এবং আমল আমাকে উক্ত বেহেশতের নিকট পৌঁছিয়া দিবে, তাহাই চাহিতেছি। আর তোমার নিকট দোজখ এবং যে কথা, কাৰ্য্য এবং আমল আমাকে উক্ত দোজখের দিকে পৌঁছিয়া দেয়, তাহা হইতে নাজাত চাহিতেছি।
ষষ্ঠ শওতের দোয়া,-
اللَّهُمَّ إِنَّ لَكَ عَلَى حُقوقًا كَثِيرَةً فِيْمَا بَيْنِي وَبَيْنَكَوَ حُقُو قًا كَثِيرَةٍ فِيمَا بَيْنِي وَ بَيْنَ خَلْقِكَ اللَّهُمُ مَا كَانَ لَكَمِنْهَا فَاغْفِرْهُ لِي وَ مَا كَانَ لِخَلْقِكَوعظیم و و خنک گریم وَأَنتَ يَا اللَّهُ عَلِيمٌ كَرِيمٌ عَظِيمٌ تحب العفو فاعات على . الفوز بالعبور بعلالت من عَوَامِكَ وَ وَبِطَا عَنكَ عَنْ مَعْصِيَتِكَ وَ روت واني ماني بفضلك عمن سوكَ يَا وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ اللَّهُمَّ إِنَّ بَيْتِكَ فَتَحْمُلُهُ عَلَى وَ اغْبِي
অর্থঃ- ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমার উপর তোমায় এরূপ অনেক হক আছে যাহা আমার ও তোমার মধ্যে রহিয়াছে, আর এরূপ অনেক হক আছে যাহা আমার ও তোমার বান্দাগণের মধ্যে রহিয়াছে। ইয়া আল্লাহ, তৎসমুদয়ের মধ্যে যাহা তোমার হক, তৎসমস্ত তুমি আমার জন্য মাফ করিয়া দাও। আর যে সমস্ত তোমার বান্দাগণের হয়, তৎসমস্ত হইতে, আমাকে অব্যাহতি দাও তোমার হালাল স্বাধা তোমার হারাম হইতে, তোমার এবাদত দ্বারা তোমার নাফরমানি হইতে এবং তোমার মেহেরবানি দ্বারা তোমার ব্যতীত অন্য ভইতে আমাকে পৃথক ও আলহেদা করিয়া রাখ। হে বর্ণনাতীত ক্ষমাশীল। ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় তোমার ঘর বড়, তোমার জাত ক্ষমাশীল, তুমি ইয়া আল্লাহ, সহ্যগুণের অধিকারী (যোরদবার), ক্ষমাশীল, মহান, মাফি ভালবাস, আমার দোষ মাফ কর।
ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কামেল ইমান গত্য বিশ্বাস প্রশস্ত রুজি, বিনয়কারী অন্তর, জেকরকারী জবান, পাক হালাল, খাঁটি তওবা, মৃত্যুর অগ্রে তওবা, মৃত্যুকালে আরাম মৃত্যুর পরে মাফি ও রহমত, হিসাবের সময় মাফি, তোমার মেহেরবাণিতে বেহংশত লাভ এবং দোজখ হইতে নাজাত চাহিতেছি হে পরাক্রমশালী, (গালেব) বহু ক্ষমাশীল, হে প্রতিপালক, তুমি আমার এলম বৃদ্ধি কর এবং আমাকে নেককারদিগের অন্তরগত কর।
তাওয়াফ করিতে করিতে অন্যান্য দোয়া, ছোবহানাল্লাহ, অল হামদো-লিল্লাহে, অলা এলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহো আকবর, অলা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, এবং দরুদ শরিফ পড়িতে থাকিবে। সাত শওত শেষ হইলে হাজারে আছওয়াদকে চুম্বন কিম্বা স্পর্শ করিয়া তাওয়াফের খতম করা ছুন্নত।
তাওয়াফের সাত শওত শেষ করিয়া মোলতাজামের নিকট উপস্থিত হইবে, হাজারে আছওাদ ও কা'বা ঘরের দরওয়াজার মধ্যস্থিত স্থানকে মোলতাজাম বলা হয়।উক্ত মোলতাজামের কিম্বা খানায় কা'বার পরদা ধরিয়া নিজের ছিনা পেট এবং কখন ডাহিন গাল, কখন বাম গাল, কখন সমস্ত মুখ ও চেহারার উপর স্থানে লাগাইয়া দুই হাতকে মস্তকের উপর উঠাইয়া ডাহিন হাতকে ধরওয়াজার দিকে এবং বাম হাতকে হাজারে আছওয়াদের দিকে প্রাচীরের উপর বিছাইয়া নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করিবেন।
للَّهُم يَا رَبَّ الْبَيْتِ الْعَتِيقِ اعْتِقُ رِقَا بَنَا وَ رِقَابَ أَبَالِنَا وَ أُمَّهَاتِنَا وَإِخْوَانِنَا وَأَوْلَا دِنَا مِنَ النَّارِ يَادَ الْجُودِ وَ الْكَرْمَ وَ الْفَضْلِ وَ الْمَنِّ وَالْعَطَاءِ وَ إِلَّا حُسَانِ اللَّهُمْ أَحْسِنُ مَا قَبَتِنَا فِي الْأَمُورِ كُلِّهَا وَأَجْرِنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الَّا خِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَاقِفَ تَحْتَ بَابِكَ مُلْتَزِمٌ بَاعْتَابَكَ مُتَذَلَّلْ بَيْنَ يَدَيْكَ أَرْجُو رَحْمَتَكَ وَ انَخُشْي عَذَا بَكَ مِنَ النَّارِ يَاقَدِيمَ إِلَّا حْسَانِ اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَلُكَ أَنْ تَرْفَعُ ذِكُرِى وَ تَضَعَ وِزْرِى وَ تُصْلِحَ أَمْرِی وَ تُطَهِّرَ قَلْبِي وَتَنَوَّرَ لِي فِي قَبْرِي وَ تَغْفِرَ لِي ذَنْبِي وَاسْتَلْكَ
الدَّرَجَاتِ الْعَلِي مِنَ الْجَنَّةِ آمِينَ *
অর্থঃ-ইয়া আল্লাহ হে প্রাচীন গৃহের মালিক, তুমি আমাদের ঘাড়কে আমাদের পিতা মাতা ভাই, আওলাদের ঘাড়কে দোজখের আগ্নি হইতে রেহাই করিয়া দাও। হে দানশীল, ক্ষমাশীল অনুগ্রহকারী, উপকারক দাতা। ইয়া আল্লাহ, সমস্ত কার্য্যে আমাদের পরিণাম ভাল কর এবং দুনইয়ার দুর্নাম ও আখেরাতের আজাব হইতে আমাদিগকে রক্ষা কর ইয়া আল্লাহ নিশ্চয় আমি তোমার বান্দা তোমার বান্দার পুত্র তোমার দরওয়াজার নীচে দাঁড়াইয়া তোমার চৌকাঠগুলি ধরিয়া, তোমার সম্মুখে বিনত ভাবে রহিয়াছি। আমি তোমার রহমতের আশা করিতেছি তোমার দোজখের আজাবের ভয় করিতেছি, হে পুরাতন মেহেরবাণ ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ছওয়াল করিতেছি যে, তুমি আমার সমালোচনা উচ্চ কর, আমার বোঝা নামাইয়া দাও, আমার কার্য্য নেক কর, আমার দেল পাক কর, আমার পক্ষে আর কবরে আলোকে দান করিও, আমার জন্য আমার গোনাহ। মাফ করিও। আর আমি তোমার নিকট বেহেশতের মধ্যে উচ্চ উচ্চ দরজা চাহিতেছি খোদা কবুল কর।"
উক্ত দোয়া পাঠ কালে খুব বিনয় দৈন্য ভাব প্রকাশ করিবে, বাহা, ও অন্তরে ভক্তি প্রকাশ করিবে। অগ্রে ও পশ্চাতে দরুদ শরিফ পাঠ করিবে।
তৎপরে মকামে এবরাহিমের পশ্চাতে দুই রাকায়াত নামাজ পড়িবে, এই দুই রাকায়াত নামাজ, পড়া ছহিহ মতে ওয়াজেব, ইহার প্রথম রাকায়াতে সুরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সুরা এখলাছ পড়া হজরতের সুন্নত। মাকামে এবরাহিম উক্ত প্রস্তুরকে বলা হয় যাহার উপর হজরত এবরাহিম আলায়হেচ্ছালামের পা দুইখানির চিহ্ন আছে। যখন তিনি শামদেশ হইতে হজরত এছমাইল ও হজরত হাজেরা আলায়হেমচ্ছালামকে মক্কা শরিফে দেখিতে আসিতেন, তখন ছওয়ারী হইতে নামিবার সময় কিম্বা উপর উঠিবার সময় উক্ত প্রস্তুরের উপর পা রাখিতেন। কেহ কেহ বলেন, যখন তিনি সমস্ত লোককে হজ্জের জন্য ডাকিয়াছিলেন, তখন তিনি উহার উপর পা রাখিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। হাদিছ শরিফে আছে, হাজারে আছওয়াদ এবং মাকামে এবরাহিম বেশেতের দুইটী ইয়াকুত, খোদাতায়ালা উক্ত দুইটা ইয়াকুতের জ্যোতিকে বিলোপ করিয়াছেন, যদি তিনি উক্ত জ্যোতি বিলোপ না করিতেন, তবে সূর্য্যের উদয় ও অন্তস্থলের মধ্যস্থিত যাবতীয় বস্তুকে আলোকময় করিয়া দিত।.
মকামে এবরাহিমে উক্ত দুই রাকায়াত নামাজ পড়াই অতি উত্তম। তৎপরে কা'বার মধ্যে, পরে হাজারে ইছমাইলে, মিজানের নীচে, তৎপরে উহার নিকট স্থানে, তৎপরে হাজারে ইছমাইলের অবশিষ্ট স্থানে, তৎপরে খানায় কা'বার নিকটবর্তী স্থানে, বিশেষতঃ উহার চারি কোণের বরাবর স্থানে, মোলতাজেম ও দরওয়াজার বরাবর স্থানে ও মকামে জিবারাইলে, তৎপরে সমস্ত মছজিদে, তৎপরে সমস্ত হেরম শরিফে উক্ত দুই রাকয়ত নামাজ পড়িলে চলিবে। যদি কেহ হেরম শরিফের বাহিরে কিম্বা নিজের বাটীতে গিয়া উক্ত দুই রাকায়াত নামাজ পড়ে তবে জায়েজ হইবে, কিন্তু মকরুহ হইবে।
তাওয়াফ করার পরেই বিলম্ব না করিয়া উপরোক্ত দুই রাকায়াত নামাজ পড়া সুন্নত, কিন্তু যদি নামাজের মকরুহ ওয়াক্ত। হয়, তবে তখন উক্ত দুই রাকায়াত নামাজ পড়িবে না। যদি কেহ আছরের নামাজ পড়িয়া তাওয়াফ করে, তবে সে ব্যক্তি প্রথমে মগরেবের ফরজ পড়িবে, তৎপরে দুই রাকায়াত তাওয়াফের নামাজ পড়িবে, অবশেষে মগরবের দুই রাকায়াত সুন্নত পড়িবে।
যদি কেহ মকরুহ ওয়াক্তে তাওয়াফের দুই রাকায়াত নামাজ পড়িতে আরম্ভ করে, তবে উহা ভঙ্গ করা ওয়াজেব, আর যদি উহা আদায় করিয়া লয়, তবে উহা দোহরান মোস্তাহাব।
তাওয়াফের দুই রাকায়াত নামাজ পড়িয়া নিম্নোক্ত দোয়া পড়িবে কেন না হজরত আদম (আঃ) দুনইয়ায় আসিয়া কা'বা শরিফে সাতবার তাওয়াফ করিয়াছিলেন, এবং মকামে এবরাহিমে দুই রাকায়াত নামাজ পড়িয়া নিম্নোক্ত দোয়া পড়িয়াছেন।
দোয়াটি এই,-
ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় তুমি আমার গুপ্তভাব ও প্রকাশ্য ভাব জান, তুমি আমার ওজোর কবুল কর। তুমি আমার মতলব অবগত আছ, কাজেই তুমি আমার ছওয়াল পূর্ণ কর। যাহা কিছু আমার অন্তরে আছে, তাহা তুমি জান, এক্ষণে তুমি আমার গোনাহ মাফ কর। ইয়া আল্লাহ্, আমি তোমার নিকট অন্তর অঙ্কিত ঈমান এবং খাটী বিশ্বাস চাহি যেন আমি জানিতে পারি যে, যাহা তুমি আমার জন্য নিরূপ করিয়াছ তথ্যতীত কিছু আমার উপর পৌঁছিতে পারে না। এবং যাহা তুমি আমার জন্য নির্দ্ধারণ করিয়াছ তাহার উপর রাজি শ্রেষ্ঠতম দয়াশীল। তুমি দুনইয়া এবং অখেরাতে আমার মালিক। আমাকে মুছলমান অবস্থায় মৃত্যু দান করিও অমাকে নেককারদিগের দলভুক্ত করিও। ইয়া আল্লাহ, তুমি আমাদের এইস্থানে এরূপ দুঃখ যাহা তুমি দূর কর নাই এরূপ মতলব যাহা তুমি পূর্ণ ও সহজ করিয়া দাও, আমাদের ছিনা সকল খুলিয়া দাও আমাদের দেলগুলি আলোকময় কর, আমাদের আমলগুলি নেকি সহ শেষ করিয়া দাও, ইয়া আল্লাহ, তুমি মুসলমান অবস্থায় আমাদিগকে জীবিত রাখিও, তাহাদিগকে আমাদিগকে নেককারদিগের দলভুক্ত করিও, যেন আমরা লাঞ্ছিত ও ফাছাদগ্রস্থ না হই।
যখন হাতিম অথবা হাজারে ইছমাইলের মধ্যে প্রবেশ করিবে' তখন খানায় কা'বায় জিয়ারতের নিয়'ত করিবে, প্রথমে তথায় ডাহিন পা রাখিবে, যখন তথা হইতে বাহির হইবে, তখন বাম পা প্রথমে বাহির করিবে এবং তথায় নিম্নোক্ত দোয়া পড়িবে,-
অর্থঃ-ইয়া আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তোমা ব্যতীত বন্দেগির উপযুক্ত আর কেহ নাই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছ, আমি তোমার বান্দা, আমি তোমার একবার এবং ওয়াদার উপর আছি, যতদূর আমার দ্বারা সম্ভব হয়। আমি যাহা করিয়াছি, উহার অপকারিতা হইতে তোমার নিকট উদ্ধার চাহিতেছি। আমার প্রতি তোমার নেয়ামত যাহা আছে তজ্জন্য তোমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিতেছি, আমার গোনাহ্ আমি স্বীকার করিতেছি। এক্ষণে তুমি আমাকে মাফ কর, কেননা তোমা ব্যতীত কেহ গোনাহ সকল মাপ করিতে পারে না। ইহা আল্লাহ, তোমার নেক বান্দাগণ যাহা তোমার নিকট ছওয়াল করিয়াছেন, আমি তোমার নিকট উহার কল্যাণ কামনা করিতেছি।' ইয়া আল্লাহ, তোমার মনোনীত নবি ও পছন্দিদা রসুলের (সঃ) দরজার বরকতে যে কোন বিষয় তোমার দর্শন লাভ ও মহব্বত (প্রেম) হইতে আমাদিগকে দূরে রাখে ঐ সব বিষয় হইতে আমাদের আস্তরকে পাক রাখ এবং বোজর্গও দানশীল, তোমার সাক্ষাৎ লাভের আগ্রহে এবং ছুন্নত জামায়াতের উপর আমাদের মৃত্যু কর। ইয়া আল্লাহ, এলম দ্বারা আমার অন্তরকে আলোকময় কর, তোমার এবাদাত দ্বারা আমার শরীরকে পরিচালিত কর, ফাছাদ সমূহ হইতে আমার অন্তরকে শুদ্ধ কর, উপদেশ গ্রহণ করিতে আমার চিন্তাকে নিযুক্ত রাখ, আমাকে শয়তানের কু-মন্ত্রণা (ওছওয়াছা) সমূহ হইতে রক্ষা কর, হে রহমান, তুমি আমাকে উক্ত শয়তান হইতে রক্ষণ কর, যেন আমার উপর তাহার পরাক্রম পতিত না হয়। হে আমাদের প্রতিপালক, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনিয়াছি, তুমি আমাদের জন্য আমাদের গোনাহ মাফ কর এবং আমাদিগকে দোজখের আজাব হইতে রক্ষা কর।
তওয়াফের দুই রাকাত নামাজ ও দোয়া শেষ করিয়া জমজম কুঁঙার নিকট পৌঁছিয়া কেবলাদিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইয়া তিন দমে খুব উদর পূর্ণ করিয়া জমজমের পানি পান করিবে, প্রত্যেক দম লইবার সময় কা'বা ঘরের দিকে নজর করিবে, বিছমিল্লাহ বলিয়া পানি পান করা শুরু করিবে, পানি পান করার সময় এই দোয়া পড়িবে,-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَّافِعًا وَرِزْقًا وَاسِعًا وَعَمَلاً
صَالِحًا وَشِفَاءٌ مِّنْ كُلِّ دَاءٍ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ .
অর্থ:- "ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় আমি তোমার রহমতের অছিলায় তোমারনিকট লাভজনক এল্ম প্রশস্তুরুজি, নেক আমল, এবং প্রত্যেক পীড়া হইতে আরোগ্য চাহিতেছি, হে দায়াশীল-দিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দয়াশীল।" জমজমের পানি পান করিয়া হাজারে আছায়াদের নিকট গিয়া চুম্বন বা স্পর্শ করিবে। তৎপরে তকবির কলেমা, আলহামদো লিল্লাহ ও দরুদ পড়িয়া ছাফা পাহাড়ের দিকে যাইবে।
0 Comments