হজ্জের ফল কি ?


প্রঃ    হজ্জ শব্দের অর্থ কি? 

উঃ    উহার আভিধানিক অর্থ কোন বৃহৎ কার্য্যের ইচ্ছা করা। শরিয়তের ব্যবহারে উহার অর্থ এই যে, হজ্জের নিয়ম করিয়া এহরাম বাঁধিয়া জিল-হাজ্জ চাঁদের ৯ই তারিখে অর্থাৎ আরফার দিবসে সূর্য্য গড়িয়া যাওয়ার পর হইতে ১০ই রাত্রের ফজর পর্যন্ত এক মূহুর্ত হইলেও আরাফার ময়দানে দণ্ডায়মান হওয়া এবং ১০ই ফজরের পর হইতে কা'বা শরিফের তওয়াফ (চারিদিকের প্রদক্ষিণ) করাকে হজ্জ বলা হয়।

প্রঃ    হজ্জ কোন সালে ফরজ হইয়াছিল?

উঃ    হিজরীর নবম বৎসরের শেষাংশে হজ্জ ফরজ হইয়াছিল।

প্রঃ    হজ্জের ফল কি?

উঃ হজরত বলিয়াছেন, "হজ্জ করিলে পূর্ব্বকার সমস্ত গোনাহ মাফ হইয়া যায়।"

     আরও তিনি বলিয়াছেন- "যে ব্যক্তি হজ্জ করে এবং উহাতে স্ত্রীসঙ্গম না করে বা স্ত্রীসঙ্গমের কথা উল্লেখ না করে এবং কন প্রকার ফাছেকি কায্য না করে ,সে ব্যক্তি সদ্য প্রসূত সন্তান ন্যয় বেগনা ফিরিয়ে আসিবে।

        আরও তিনি বলিয়াছেন_বিশুদ্ধ হজ্জের ফল বেহস্ত ছাড়া অন্য কিছু নয়।

প্রঃ    হজ্জের উপযুক্ত লোক হজ্জ না করিলে কি হইবে?

উঃ    হজরত বলিয়াছেন," যে ব্যক্তি হজ্জের উপযুক্ত পথ খরচের অধিকারি হইয়াও হজ্জ না করে, সে ব্যক্তি ইহুদী অথরা। খ্রীষ্টানের ন্যায় মৃত্যুপ্রাপ্ত হইবে।"

প্রশ্নঃ     হজ্জ কয় প্রকার? 

১) হজ্জের উপযুক্ত লোকের প্রতি হজ্জ করা ফরজ। 

২) যদি কেহ এহরাম না বাঁধিয়া এহরাম বাঁধার স্থান। অতিক্রম করে, তবে তাহার পক্ষে উক্ত স্থানে ফিরিয়া যাইয়া হজ্জ কিম্বা ওমরার নিয়তে এহরাম বাঁধা ওয়াজেব, এরূপ ক্ষেত্রে যদি সে ব্যক্তি হজ্জের এহরাম বাঁধে তবে উক্ত হজ্জটী ওয়াজেব হইবে।

৩) যদি কেহ সুদ, ঘুষ, চুরি ইত্যাদি হারাম অর্থ দ্বারা হজ্জ করে, তবে উহা হারাম হইবে।

৪) যদি পিতা মাতার কিম্বা তাহাদের অভাবে দাদা দাদির অথবা নানা নানির খেদমত করা কোন লোকের ওপর ওয়াজেব হয়, তবে তাহাদের অনুমতি লওয়া ওয়াজেব, তাহাদের বিনা অনুমতি হজ্জ করা মকরুহ তহরিমি হইবে। এইরূপ দেনাদারের পক্ষে ঋণদাতার ঋণের জামিনের অনুমতি ব্যতীত হজ্জ করা মকরুহ তহরিমি হইবে।

        যদি কেহ স্ত্রী পরিজনের খোরপোষনা দিয়া হজ্জ করিতে যায়, তবে উক্ত হজ্জ করা মকরুহ তহরিমি হইবে।

        যদি কোন স্ত্রীলোক তিন দিবসের পথের সফরে স্বামী বা কোন মহরম (১) পুরুষ সঙ্গে না লইয়া হজ্জ করিতে যায়, তবে উক্ত হজ্জ মকরুহ তহরিমি হইবে।

         যাহার উপর হজ্জ হইয়াছে, যদি সে ব্যক্তি নিজের হজ্জ আদায় না করিয়া অন্যের বদলা হজ্জ করিতে যায়, তবে উহা মকরুহ তহরিমি হইবে। শাঃ ২/১৫১/১৫২/১৫৮/১৫৯/২৬২।

(১) যে আত্মীয় ব্যক্তির সহিত নিকাহ করা একেবারেই হারাম, তাহাকে মহরম বলা হয়।

প্রশ্নঃ    কোন সময় হজ্জ করা অবশ্যক?

উঃ    এমাম আবু ইউসুফ (রঃ) বলিয়াছেন, যে বৎসরে কাহারও উপর হজ্জ করা ফরজ হয়, সেই বৎসরেই তাহার পক্ষে হজ্জ আদায় করা ওয়াজেব, কেননা যদি সে ব্যক্তি হজ্জ করিতে বিলম্ব করে, তবে বিনা হজ্জ আদায়ে তাহার মরিয়া যাওয়াও অসম্ভব নহে, কাজেই হজ্জ ওয়াজেব হওয়ার প্রথম বৎসরেই তাহার হজ্জ আদায় করা এহতিয়াতের জন্য আবশ্যক।

        এমাম আবু হানিফা (রঃ) উপরোক্ত মত প্রকাশ করিয়াছেন। ইহাই তাহার সমধিক সহিহ মত। এসূত্রে হজ করিতে এ বৎসর দেরী করা মকরুহ তহরিমি ও গোনাহ ছগিরা হইবে। আর তিন বৎসর দেরী করিলে, ফাসেক হইয়া যাইবে, তাহার সাক্ষ্য (শাহাদাত) শরিয়ত অনুযায়ী অগ্রাহ্য হইয়া যাইবে কিন্তু দুই বৎসর দেরী করিলে, সে ব্যক্তি ফাসেক হইবে কিনা, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে, বাহরোর- রায়ে প্রণেতার মতে সে ব্যক্তি ফাসেক হইয়া যাইবে আর এবনে আবেদিন শামির মতে এই ব্যক্তি ফাসেক হইবে না।

        যদি কেহ হজ্জ করিতে বিলম্ব করে, তৎপরে মৃত্যুর অগ্রে হজ্জ আদায় করে, তবে সমস্ত এমামের মতে তাহার উপরোক্ত গোনাহ মাফ হইয়া যাইবে। তাঃ ১/৪৮১/ শাঃ ২/১৫২। 

        (মসলা) ফকিহগণ বলিয়াছেন, যদি কোন মোশরেক কাফের কাফেরী অবস্থায় হজ্জের উপযুক্ত অর্থশালী হইয়া থাকে তৎপরে দরিদ্র হইয়া মুসলমান হইয়া যায় তবে তাহার উপর হজ্জ করা ফরজ হইবে না।

        আর যদি কোন মুসলমান হজ্জের উপযুক্ত অর্থশালী হইয়াপরে দরিদ্র হইয়া যায়, তবে তাহার উপর হজ্জ ফরজ থাকিয়া যাইবে। ইহা ফৎহোল কদিরে আছে। শাঃ ২/১৫৩।

        যে ব্যক্তি হজ্জের উপযুক্ত অর্থশালী হয়, তৎপরে সে ব্যক্তি নিজেই উক্ত টাকাগুলি নষ্ট করিয়া ফেলে কিম্বা (চুরি ইত্যাদি এইরূপ কোন বিপদে) উত্তটাকা গুলি নষ্ট হইয়া যায়, এক্ষেত্রে তাহার উপর হজ্জ ফরজ থাকিয়া যাইবে। এইরূপ কোন অর্থশালী লোক সুস্থ-দেহে হজ্জ আদায় করে নাই, তৎপরে অন্ধ হইয়া যায়, এক্ষেত্রে তাহার উপর হজ্জ ফরজ থাকিয়া যাইবে। লোবারের টীকা মসেলাক, ২২।

প্রশ্নঃ     যদি কেহ অর্থশালী থাকা অবস্থায় হজ্জ আদায় না করে তৎপরে নিজের অর্থ ব্যয় করিয়া ফেলে, তবে তাহার পক্ষে টাকা কজ্জ লইয়া হজ্জ করা জায়েজ হইবে কিনা?

উঃ     যদি তাহার প্রবল ধারণা (জান্নে গালের) হয় যে সে ব্যক্তি কজ্জের টাকা পরিশোধ করিতে পারিবে, তবে তাহার পক্ষে টাকা কর্ড লইয়া হজ্জ করা উত্তম। আর যদি তাহার প্রবল ধারণা হয়, যে সে ব্যক্তি কর্জের টাকা পরিশোধ করিতে পরিবে না, তবে তাহার পক্ষে টাকা কর্জ না লওয়া উত্তম। আর যদি কেহ কর্জ পরিশোধ না করার ধারণা (নিয়ত) করিয়া কর্জ করিয়া হজ্জ করিতে যায়, তবে উহা জায়েজ হইবে না। শাঃ২/১৫৩।

        (মসলা) যদি কাহারও উপর জাকাত ফরজ থাকে, কিন্তু উহা আদায়ের পরিমাণ টাকা তাহার নিকট না থাকে এবং সে ব্যক্তি প্রবল ধারণা করে যে, টাকা কর্জ লইয়া জাকাত আদায় করিলে, উক্ত কর্ড পরিশোধ করিতে সক্ষম হইবে, তবে তাহার পক্ষে-কর্জ করিয়া জাকাত আদায় করা উত্তম। যদি কর্জ লইয়া জাকাত আদায় করার পরে উক্ত কর্ম্মের টাকা পরিশোধ করিতে সক্ষম না হইয়া মারিয়া যায়, তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহতায়ালা আখেরাতে তাহার কর্জ আদায় করিয়া দিবেন। আর যদি তাহার প্রবল ধারণা হয় যে, যদি কর্জ লইয়া উহা পরিশোধ করিতে সক্ষম হইবে না, তবে তাহার পক্ষে কর্জ না লওয়া উত্তম। ইহা যাহিরিয়া কেতাবে আছ -শাঃ ২/১৫৩

        (মসলা) যদি কাহারও নিকট এক সহস্র টাকা থাকে, কিন্তু তাহার উপর এক সহস্র টাকা জাকাতের বাকি থাকে এবং হজ্জ ফরাজ থাকে, তবে সে ব্যক্তি সেই টাকা দিয়া হজ্জ আদায় করিবে।

        আর খাজানাতোল-আকমাল কেতাবে আছে যে, যদি উহা স্বর্ণ, রৌপ্যের কিম্বা ইত্যাদি জাকাতের উপযুক্ত পদার্থ হয়, তবে তন্দারা জাকাত আদায় করিবে, আর যদি উহা জাকাতের উপযুক্ত পদার্থ না হয় এবং হজ্জের সময় উহা হস্তগত হইয়া থাকে, তবে তন্দারা হজ্জ আদায় করিবে, আর যদি অন্য সময় উহা হস্তগত হইয়া থাকে, তবে উহা বিক্রয় করিয়া হজ্জ আদায় করিবে' মোল্লা আলি কারি এই মতটা পছন্দ করিয়াছেন। লোবাবের টিকা, ২৩।

(মসলা) যদি কোন লোক ঋণগ্রস্থ হয় এবং তাহার উপর হজ্জ ফরজ থাকে, এক্ষেত্রে যদি ঋণ পরিশোধের উপযুক্ত টাকা তাহার নিকট থাকে এবং সত্বরেই ঋণ পরিশোধ করার তারিখ নির্দিষ্ট থাকে, তবে প্রথমই ঋণ পরিশোধ করা ওয়াজেব হইবে।

            আর যদি ঋণ পরিশোধ করার উপযুক্ত অর্থ তাহার নিকট না থাকে, তবে তাহাকে হজ্জ করিতে যাইতে নিষেধ করা কাহারও পক্ষে উচিত নহে। ঐ পৃষ্ঠা।

Post a Comment

0 Comments