হজ্জের সুন্নত কি কি

 

প্রঃ হজ্জের সুন্নত কি কি?

উঃ    ১) মক্কা শরিফে উপস্থিত হইয়া তাওয়াফ করা।

    ২) উক্ত তাওয়াফ এবং ফরজ তাওয়াফে প্রথম তিনবার কা'বা গৃহের চারিদিকে ঘুরিবার সময় দুই স্কন্ধ কাঁপাইয়া অল্প অল্প দৌড়ান।

    ৩) ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে দুইটি সবুজ ও জয়দ মিলের মধ্যে দৌড়ান।

    ৪) ৮ই জেলহজ্জ তারিখের ফজরের পরে মক্কা শরিফ হইতে মিনার দিকে গমন করা।

    ৫) আরফার রাত্রিতে মিনা নামক স্থানে রাত্রি যাপন করা।

    ৬) আরফার দিবসে (৯ই তারিখে) সূর্য্য উদয় হওয়ার পরে আরফাত ময়দানের দিকে রওয়ানা হওয়া।

    ৭) আরফাত ময়দানে গোসল করা।

    ৮) ১০ই রাত্রিতে মোজদালেফাতে রাত্রি যাপন করা।

    ৯) ১০ই সূর্য্য উদয় হওয়ার অগ্রে মোজদালেফা হইতে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া।

    ১০) মিনা নামক স্থানে কোরবাণির কয়েক রাত্রি যাপন করা।

    ১১) তিন স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করার মধ্যে তরবির লক্ষ্য রাখা।

    ১২) আবতাহা নামক স্থানে বিশ্রাম করা।

    ১৩) জমজমের পানি পান করা। লোবাবের টীকা, ২৬। মাঃ, ৪২৪/৪২৫, আঃ, ১/২৩৩।

    প্রঃ     হজ্জের মোস্তাহাব ও আদব কি কি?

উঃ     ১) প্রথম বিশুদ্ধ (খাঁটি) তওবা করা, যাহার ক্ষতি করিয়া থাকে, তাহার ক্ষতিপূরণ করা, এবাদতে যাহা ত্রুটি করিয়া থাকে তাহার কাজা আদায় করা এবং এই ত্রুটির জন্য পরিতাপ করা এইরূপ কার্য্য পূণরায় না করার দৃঢ়সকল্প (খাঁটি নিয়ত) করা।

        যাহাদের সহিত কলহ বিরোধ, আদান প্রদান অথবা ব্যবসায়ে বাণিজ্য করিয়া থাকে, তাহাদের নিকট মাফ লওয়া।

    ২)যাহার বিনা অনুমতি বিদেশ যাত্রা করা মকরুহ তাহার অনুমতি লওয়া। খোলাসা কেতাবে আছে, পুত্র হজ্জে ইচ্ছা করিতেছে কিন্তু পিতা ইহাতে নারাজ, এক্ষেত্রে যদি পিতা উক্ত পুত্রের খেদমতের মোহতাজ (মুখাপেক্ষী) না হয়, তবে তাহার হজ্জ করাতে কোন দোষ হইবে না। আর যদি পিতা তাহার খেদমতের মোহতাজ হয়, তবে তাহার হজ্জ করিতে যাওয়া মকরুহ। এইরূপ মাতার অবস্থা

        বুঝিতে হইবে। ছায়রে কবিরে আছে, যদি পিতার দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা না হয়, তবে তাহার হজ্জ করিতে। যাওয়ার কোন দোধ হইবে না। এইরূপ ঋণদাতার বা ঋণের জামিনের অনুমতি ব্যতীত হজ্জ করিতে যাওয়া মকরূহ।

    ৩) সেই সময় হজ্জ করিতে যাওয়া সম্বন্ধে বুদ্ধিমান লোকের নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করা।

    8) কোন্ ভাবে হজ্জ করিবে, কাহাকে সঙ্গী লইবে, তৎসম্বন্ধে ইস্তেখারাহ্ করা।

    ৫) হালাল টাকা সংগ্রহ করিতে নিতান্ত চেষ্টা করা, কেননা হারাম অর্থের দ্বারা হজ্জ করিলে, হজ্জের দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি পাইলেও তাহার হজ্জ কবুল হইবে না এবং উহার ছওয়াব পাইবে না, ইহা ফৎহোল কদিরে আছে।

        যদি কাহারও হালাল অর্থ থাকে, কিন্তু উহাতে হারাম মিশ্রিত থাকায় সন্দেহ থাকে, তবে হজ্জের পথ খরচ কাহারও নিকট হইতে কর্জ করিয়া লইবে এবং নিজের সন্দেহযুক্ত অর্থের দ্বারা কর্জ পরিশোধ করিবে, ইহা কাজিখানে আছে।

    ৬) একজন সৎলোকসঙ্গী লওয়া, উদ্দেশ্য এই যে, যখন সে অসাবধান হয় তখন তাহাকে সাবধান করাইয়া দেয় যে সময় সে ধৈর্য্যহারা (অস্থির) হইয়া পড়ে, তখন তাহার সাহায্য করে, উক্ত সঙ্গীটা আত্মীয় না হইয়া বেগানা হওয়াই ভাল, কেননা আত্মীয় হইলে তাহার হক পয়মালির আশঙ্কা থাকে।

    ৭) নিজের গ্রামের মজিদে দুই রাকয়াত নামাজ পড়িয়া বন্ধু-বান্ধবদিগের নিকট হইতে বিদায় লওয়া, তাহাদের নিকট দোষ ত্রুটি মাফ লওয়া এবং তাহাদের নিকট দোওয়া চাওয়া।

    ৮) বাটী হইতে রওনা কালে কিছু খয়রাত ছদকা আদায় করা।

    ৯) বৃহস্পতিবারে বাড়ী  হইতে রওয়ানা হওয়া, কেননা হজরত নবি (সাঃ) শেষ হচ্ছে উক্ত দিবসে রওয়ানা হইয়াছিলেন, কিম্বা সোমবার অথবা শুক্রবারে রওয়ানা হওয়া।

    ১০) হজ্জের মধ্যে ব্যবসায় বাণিজ্যের নিয়ত না করা, আর যদি উহার নিয়ত করে, তবে হজ্জের ছওয়াব কম হইবে না।

    ১১) রিয়া, অহঙ্কার ও সুনাম লাভ ইত্যাদি হইতে মনকে পাক করিয়া হজ্জ করিতে যাওয়া ফরজ জানিবে, ইহা বাহরোর রায়েকে আছে।

    ১২) স্ত্রীপরিজনের খোরপোষ দিয়া সস্তুষ্টচিত্তে রওয়ানা হওয়া।

    ১৩) যখন বাড়ী হইতে বাহির হইবে, তখন যেন দুনইয়া ত্যাগ করার ন্যায় বাহির হওয়া।

    ১৪) ঘর হইতে বাহির হওয়ার অগ্রে দুই রাকায়াত নামাজ পড়া এইরূপ বাড়ীতে ফিরিয়া আসিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়া।

   ১৫) উক্ত নামাজ পড়িয়া বাহির হওয়া কালে নিম্নোক্ত দোওয়া পড়িবেঃ-

اللَّهُمَّ بِكَ انْتَشَرْتَ وَاليْكَ تَوَجَّهْتُ وَبِكَ اعْتَصَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ اللَّهُمَّ أَنْتَ نِقَتِي وَأَنْتَ رَجَائِي اللَّهُمَّ اكْفِنِي مَا أَهَمَّنِي وَمَا لَا أَهْتَمَّ بِهِ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِتَّى عَزَّجَا رُكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ اللَّهُمَّ زَوَدْنِي التَّقُويَ وَغَفِرُ لِي ذُنُوبِي وَ وَجَهْنِي إلى الخير اينما توجهت اللم اني اعوذ بك مِنْ وَعُشَاءِالسَّفَرِ وَكَابَةِ الْمُنقَلِبِ وَالْحُورِ بَعْدَ الْكُورِ وَسُوءِ الْمَنْظَرِ فيالأهل والمال

আর বাড়ী হইতে বাহির হওয়া কালে নিম্নোক্ত দোওয়া পড়িবে:-

بسم اللهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ تَوَ كُلْتُ عَلَى اللهِ اللَّهُمَّ وَقِفَنِي لِمَا نُحِبُّ وَ تَرْضَى وَأَحْفِظُنِي مِنَ الشيطان الرجيم .

    তৎপরে আয়তুল কুরছি সুরা এখলাছ ও ফালাক পড়িবে।

    ১৬) পথিমধ্যে পরহেজগারি এখতিয়ার করা, অধিক পরিমাণ আল্লাহতায়ালার জেকর করা, অসৎ স্বভাব ও রাগ দোষ হইতে পরহেজ করা, লোকের অসৎ স্বভাব ও রাগ সহ্য করিয়া লওয়া। ধীর স্থির ভাবে কার্য্য করা এবং বাতিল বৃথা কার্য্য ত্যাগ করা।

    ১৭) নিজের ও সওয়ারির খোরাকে বেশী পরিমাণ ব্যয় করা কেননা হজ্জের খরচের সওয়াব জেহাদের তুল্য হইয়া থাকে।

    ১৮) সর্ব্বদা পাক অবস্থায় থাকা।

    ১৯) হজ্জের মসয় বিশেষ ভাবে পরনিন্দা, কর্কষ বাক্য ও গালিগালাজ (হইতে (জবানকে পাক রাখা।

    ২০) উষ্ট্রচালককে নিজের আসাবাবপত্র দেখাইয়া লওয়া, তাহার বিনা অনুমতিতে দিলেও উটের শক্তির অতিরিক্ত বোঝা উহার উপর না রাখা।

    ২১) যদি দুইটি লেকের মধ্যে চুক্তি ও সম্ভাব হইয়া থাকে, তবে খোরাক ইত্যাদিতে শরিক হইতে পারে, নচেৎ শরিক হইবে না, আর যদি শরিক হয় তবে প্রত্যেকে অন্যের নিকট হইতে মাফ লইবে। আঃ, ১/২৩৩/২৩৪। বাঃ, ২/৩০৮। শাঃ, ২।

Post a Comment

0 Comments