প্রঃ যদি কোন লোকের পক্ষে হজ্জ ফরজ হইয়া থাকে, কিন্তু বর্তমানে হজ্জের উপযুক্ত অর্থ তাহার না থাকে, তবে সেই ব্যক্তি ছওয়াল (ভিক্ষা) করিয়া হজ্জ আদায় করিতে পারে কি না?
উঃ হ্যাঁ, পারে। হাদিছ শরিফে আছে, জরুরি কার্য্যের জন্য ছওয়াল করা জায়েজ আছে। আর ফরজ হজ্জ আদায় করা যে জরুরি বিষয়, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।
প্রঃ যে ব্যক্তি হজ্জ করিতে চাহে, কিন্তু টাকার অভাবে হজ্জ করিতে যাইতে অক্ষম, সে ব্যক্তিকে জাকাতের টাকা দেওয়া যাইতে পারে কি না?
উঃ হ্যাঁ, তাহাকে জাকাতের টাকা দেওয়া যাইতে পারে। কোরআন শরিফে আছে, "যে ব্যক্তি খোদাতায়ালার পথে আছে, (সেই ব্যক্তি জাকাতের উপযুক্ত)। যে ধর্মযোদ্ধা টাকার অভাবে জেহাদে যাইতে অক্ষম, যে ব্যক্তি টাকার অভাবে হজ্জ করিতে অক্ষম। এবং যে তালেবল এলম্ টাকার অভাবে এলেম্, দিনি শিক্ষা করিতে অক্ষম, তাহাদিগকে খোদাতায়ালার পথের পথিক বলা হইয়াছে এবং তাহাদিগকে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলা হইয়াছে।
বাদায়ে কেতাবে আছে, সৎকার্য্যে রত ব্যক্তিকে খোদার পথের পথিক বলা হইয়াছে, এক্ষেত্রে যে কেহ খোদার এবাদত সাধ্য সাধনা করে ও সৎপথে ধাবিত হয়, যদি সে ব্যক্তি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে জাকাত লইতে পারে। বাঃ, ২/২৪২। শাঃ ২৬৭।
পাঠক, ইহাতে বুঝা যায় যে, যদি কোন আলেম দ্বীনি কেতাব ক্রয় বা দ্বীনি কেতাব ছাপাইবার সাধ্য সাধনা করে, কিন্তু উহার উপযুক্ত অর্থ না থাকে, তবে জাকাতের টাকা লইয়া উক্ত কার্য্য করিতে পারে।
প্রঃ হজ্জের ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি?
উঃ ১) মুসলমান হওয়া একটি শর্ত কাফেরের উপর হজ্জ ফরজ নহে।
(মসলা) যদি কোন মুসলমান হজ্জ করিয়া মোরতাদ্দ (কাফের) হইয়া যায়, তৎপরে মুসলমান হইয়া যায়, তবে সক্ষম হইলে, দ্বিতীয়বার তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবেঃ-আঃ ১/২৩০।
২) যে মুসলমান দারোল হরবে থাকে, তাহার হজ্জ ফরজ হওয়ার জ্ঞান থাকা একটা শর্ত, যদি সেই মুসলমান হজ্জ ফরজ বলিয়া অবগত না থাকে, তবে তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি দারোল ইসলামে থাকে, তবে তাহার হজ্জ ফরজ হওয়ার এলম (জ্ঞান) থাকুক আর নাই থাকুক, তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে। শাঃ ২/১১৪, লোবাবের টীকা, ৯।
৩) সজ্ঞান হওয়া একটা শর্ত, পাগলের উপর হজ্জ ফরজ হইবে না। শাঃ ২/১৫৩।
৪) বালেগ হওয়া একটি শর্ত, নাবালেগের উপর হজ্জ ফরজ হইবে না। যদি বালেগ হওয়ার পূর্ব্বে কেহ হজ্জ করে, তবে উহা নফল হজ্জ হইয়া যাইবে, ফরজ হজ্জ হইবে না। যদি কেহ নাবালেগ অবস্থায় হজ্জের এহরাম বাঁধে, তৎপরে আরফাতে দাঁড়াইবার পূর্ব্বে বালেগ হইয়া যায়, যদি প্রথম এহরামের অবস্থায় থাকিয়া হজ্জ সম্পন্ন করে, তবে উক্ত হজ্জ নফল হইয়া যাইবে। আর যদি বালেগ হওয়ার পরে নূতন করিয়া ফরজ হজ্জের নিয়ত করিয়া লাব্বায়কা বলে তৎপরে আরফাতের ময়দানে দণ্ডায়মান হয়, তবে তাহার ফরজ হজ্জ আদায় হইয়া যাইবে, ইহা তাহাবির টীকায় আছে।
এইরূপ যদি আরফাতে দাঁড়াইবার অগ্রে পাগল চৈতন্য লাভ করে কিম্বা কাফের মুসলমান হইয়া যায়, তৎপরে তাহাদের উভয়ে নূতন করিয়া এহরাম বাঁধিয়া আরফাতে দাঁড়াইয়া যায় তবে তাহাদের ফরজ হজ্জ আদায় হইয়া যাইবে, ইহা বাদায়ে কেতাবে আছে।
এইরূপ যদি কোন নাবালেগ বিনা এহরামে এহরামের স্থান অতিক্রম করার পরে মক্কা শরিফে উপস্থিত হইয়া বালেগ হইয়া যায় এবং মক্কা শরিফ হইতে এহরাম বাঁধে, তবে তাহার ফরজ হজ্জ আদায় হইয়া যাইবে। ইহা কাজিখানে আছে।
যদি নাবালেগ হজ্জের কার্য্যগুলি বুঝিতে পারে তবে নিজেই এহরাম বাঁধিবে ও উহার কার্য্যগুলির সমাধা করিবে। আর যদি সে তৎসমস্ত বুঝিতে না পারে, তবে তাহার পিতা বা ওলি তাহার পক্ষ হইতে এহরাম বাঁধিবে ও হজ্জের কার্য্যগুলি করিবে, কিন্তু ওলি উক্ত নাবালেগকে এহরামের নিষিদ্ধ কার্য্যগুলি করিতে বিরত রাখিবে, আর যদি উক্ত নাবালেগ নিষেধ করা সত্ত্বেও উহা করিয়া ফেলে তবে তাহার কিম্বা ওলির কোন দোষ হইবে না। আঃ, ১/২০০। শাঃ,২/১৫৯।
৫) স্বাধীন (আজাদ) হওয়া একটি শর্ত, গোলামের (ক্রীতদ সের) উপর হজ্জ করা ফরজ নইে। যদি কোন গোলাম আজাদ হওয়ার পূর্ব্বে তাহার মনিবের সঙ্গে হজ্জ করে, তবে উহা তাহার ফরজ হাড্ড আদায় হইবে না। আজাদ হওয়ার পরে তাহার উপর হজ্জ ফরজ। হইলে, দ্বিতীয়বার তাহার উপর হজ্জ আদায় করা ফরজ হইবে। যদি তাহার এহরাম বাঁধার পূর্ব্বে পথিমধ্যে তাহাকে আজাদ করিয়া দেওয়া হয়, তৎপরে সে ব্যক্তি এহরাম বাঁধিয়া হজ্জ আদায় করে, তবে উহা তাহার ফরজ হজ্জ হইয়া যাইবে। আর যদি আজাদ হওয়ার। পূর্ব্বে সে ব্যক্তি এহরাম বাঁধে এবং আজাদ হওয়ার পরে নূতন। এহরাম বাঁধে, তবে উহা ফরজ হজ্জ হইবে না।-আঃ,১/২৩০।
৬) পথ খরচ থাকা শর্ত। যদি জরুরি বিষয়গুলি বাদ দিয়া কাহারও পথের খরচ অর্থাৎ খোরাক ও সওয়ারির মাশুলও স্ত্রী পরিজনের খোরপোষ থাকে, তবে তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে। আর যদি কাহারও পথের খোরাক পরিমণ টাকা থাকে কিন্তু রেল জাহাজ ও উটের মাশুল না থাকে, তবে তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে না।
যদি কাহারও পথ খরচ থাকে, কিন্তু হজ্জ করিতে গেলে, তাহার পরিজনের খোরপোষ পরিমাণ টাকার অভাব হইয়া পড়ে তবে তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে না।
যত দিবস সে ব্যক্তি হজ্জ করিয়া ফিরিয়া না আসে, তত দিবস তাহার পরিজনের মধ্যম ধরণের খোরপোষ ও গৃহ মেরামত ইত্যাদি জরুরি খরচ বাদ দিয়া যদি হজ্জের উপযুক্ত টাকা হয়, তবে হজ্জ ফরজ হইবে।
তাহার বাসগৃহে, পরিধেয় পোষাক, খেদমতের গোলাম, সওয়ারির ঘোড়া, যুদ্ধের অস্ত্র, পেশার উপকরণগুলি ও গৃহের আসবাব জরুরি বিষয় বলিয়া গণ্য হইবে, তৎসমস্তে হঞ্জ ফরজ হইবে না।
কর্জের পরিমাণ টাকা বা স্ত্রীলোকের দেনমোহর বাদদিয়া যে সম্পত্তি বা অর্থ থাকে, তাহাই হজ্জের উপযুক্ত হইলে হজ্জ ফরজ হইবে আর যদি কর্জ বা দেনমোহর আদায় করিলে, যাতায়াতের। খরচ ও পরিজনের খোরপোষ সঙ্কুলান না হয়, তবে তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে না।
যে ব্যক্তি যেরূপ সওয়ারির উপযুক্ত সে ব্যক্তির সেইরাপ সাওয়ারির খরচ সংগ্রহ করিতে পারিলে, তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে, নচেৎ তাহার উপর হজ্জ ফরজ হইবে না।
যে ব্যক্তি উটের পৃষ্ঠের উপর বিনা শুকদুফ বা শিবরি বসিয়া থাকিতে পারে এবং এই অবস্থায় ছফর করিতে পারে, তাহার পক্ষে খরচ পরিমাণ টাকা থাকিলে, হজ্জ ফরজ হইবে।
যে ধনশালী ব্যক্তি শুকদুফ শিবরি উপযুক্ত, তাহার কেবল উটের পিষ্ঠের উপর বসিয়া খাওয়ার খরচ থাকিলে হজ্জ ফরজ হইবে না। আঃ, ১/২৩১, বাঃ ২/৩১৩।
(মসলা) যদি দুইজন লোকের এরূপ একটি সওয়ারী হয় যে, তাহারা পর্যাক্রমে (বারিবারিতে) উহার উপর সওয়ার হইয়া যাইতে এবং পদব্রজে চলিয়া যাইতে বাধ্য হয়, তবে এরূপ ক্ষেত্রে উভয়ের উপর হজ্জ ফরজ হইবে না। ইহা কাজিখানে আছে। আঃ ১/২৩১।
(মসলা) মক্কাবাসীদিগের সওয়ারি না থাকিলেও তাহাদিগকে পদব্রজে চলিয়া গিয়া হজ্জ করা ফরজ। অবস্য যদি কেহ পদব্রজে চলিয়া যাইতে অক্ষম হয়, তবে তাহার পক্ষে সওয়ারির আবশ্যক হইসে, এইরূপ লোকের সওয়ারির ক্ষমতা না থাকিলে 'তাহার উপর হালঙ্গ দরক্ষ হইবে না, কিন্তু প্রত্যেক অবস্থায় যত দিবস সে ব্যক্তি বাটাতে ফিরিয়া না আসে, তত দিবসের তাহার নিজের। খোরাক এবং তাহার পরিজনের মধ্যম ধরণের খোরাক থকিলে, হয় ফরজ এইনে, নচেৎ ফরজ হইবে না।
এইরূপ যাহারা মক্কা শরিফ হইতে তিন দিবসের কম পথ অবস্থিত করেন, তাহাদের সওয়ারি না থাকিলেও যদি তহারা লমন্ত্রজে চলিয়া যাইতে সক্ষম হয়, তবে পদব্রজে চলিয়া যাইয়া তাহাদের হজ্জ করা ফরজ হইবে। ইহা সেরাজ কেতাবে আছে। বাঃ, ২/৩১৬ আঃ, ১/২৩১।
(মসলা) যদি কাহারও একখানা অতিরিক্ত গৃহ থাকে যাহাতে সে ব্যক্তির বাস করার আবশ্যক হয় না, কিম্বা উহা অন্য লোককে বাস করিতে দেওয়া হয়, অথবা উহ্য ভাড়া দেওয়া হয়, কিম্বা একটি অতিরিক্ত গোলাম থাকে যাহার খেদমত লওয়া তাহার আবশ্যক হয়না, কিম্বা এইরূপ কতকগুলি কাপড় থাকে, যেগুলি পরিধান করা তাহার আবশ্যক হয় না, কিম্বা এরূপ গৃহের আসবাবপত্র থাকে যাহার ব্যবহার করা হয় না, কিম্বা এরূপ জমি থাকে যাহার চাষ করা হয় না। কিম্বা এরাপ জমি থাকে যাহার উপসত্ত্ব স্বরয়ত অপেক্ষা অতিরিক্ত হয়, কিম্বা এরূপ ফলকের বৃক্ষাদি থাকে যাহার ফল ভক্ষণ করার অতিরিক্ত হয়, কিম্বা এরূপ দোকান বা হাম্মাম থাকে যাহা তাহার দরকারে লাগে না, কিম্বা এইরূপ উট, গরু ও ছাগল থাকে যাহার দুধ পান ও মাংস ভক্ষণের আবশ্যক হয় না।
আর তৎসমস্তের মূল্য হজ্জের পথ খরচ পরিমাণ হয়, তারে তৎসমস্ত বিক্রয় করিয়া হজ্জ করা তাহার পক্ষে ফরজ হইবে। আর যদি তৎসমস্ত মূল্য জাকাতের পরিমাণ হয়, তবে তাহার উপর কোরবাণী করা ও ছদকার ফেৎরা দেওয়া ওয়াজেব হইবে এবং জাকাত গ্রহণ করা হারাম হইবে। লোবাবের টীকা, ১২।
(মসলা) যদি কোন ফকিহ ব্যক্তির অনেকগুলি শরিয়তের কেতাব থাকে এবং উহা পাঠ করা তাহার পক্ষে আবশ্যক হয়, তবে তজন্য তাহার প্রতি হজ্জ ফরজ হইবে না।
আর যদি কোন নিরক্ষর লোকের কতকগুলি শরিয়তের কেতাব থাকে যাহার মূল্য ধরিলে, হজ্জের পথ খরচ হয়, তবে তাহার পক্ষে হজ্জ ফরজ হইবে। আর যদি চিকিৎসা, জ্যোতিষ ইত্যাদি সংক্রান্ত কেতাব থাকে, যাহা শরিয়তের এলম বলিয়া গণ্য নহে এবং উহার মূল্য ধরিলে, হজ্জের পথ খরচ হইতে পারে, তবে উহাতে হজ্জ ফরজ হইবে। আঃ১/২৩১। লোঃ টাকা, ১২।
0 Comments