শয়তানের জন্য বড় দরজাসমূহের অন্যতম হল, মুসলমানদের সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করা। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুজ তানিবু কাছীরাম মিনাজ জান্নি ইন্না বা'দ্বাজ জান্নি ইছমুন।” অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ। অনেক ধারণাকে ত্যাগ কর। নিশ্চয়ই কোন কোন ধারণা অন্যায় বা পাপরূপে গণ্য।
যে ব্যক্তি অন্যের উপর কুধারণা রাখে শয়তান তার রসনাকে পরনিন্দা চর্চার জন্য উৎসাহ দেয়। তাতে সে ধ্বংস হয়। এরূপ ক্ষেত্রে পরনিন্দাকারী যার নিন্দা করে তার হক নষ্ট করে, তাকে সম্মানের চোখে দেখে না; বরং তাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে এবং সে নিজেকে তার চেয়ে উত্তম মনে করে। এ সমস্তই তার ধ্বংসের কারণ। এজন্যই শরীয়ত এ অভ্যাসটিকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, তোমরা অপবাদের স্থান থেকে বেঁচে থাক। এমন কি তিনি নিজেও এ থেকে নিজেকে রক্ষা করতেন।
হযরত হোসায়েন তনয় হযরত জয়নাল আবেদীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, উম্মুল মু'মিনীন হযরত সুফিয়াহ (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, হুযুরে পাক (দঃ) মসজিদে ই'তেকাফরত অবস্থায় তিনি তাঁর নিকট এসে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলে সন্ধ্যা বেলায় চলে গেলেন। হুযুরে পাক (দঃ) উঠে দাঁড়ালেন। এ সময় দুজন আনছার এসে তাঁকে সালাম দিয়ে চলে গেল। তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন, ইনি আমার স্ত্রী হাই-এর কন্যা সুফিয়াহ। ছাহাবীদ্বয় বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সম্বন্ধে আমাদের ধারণা উত্তম। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই শয়তান আদম সন্তানের মনের মধ্যে রক্ত চলাচলের ন্যায় চলাচল করে। আমি ভয় করি যে, সে তোমাদের মধ্যেও প্রবেশ করতে পারে। লক্ষ্য করবার বিষয় হল, হুযুরে পাক (দঃ) তাঁর উম্মতগণকে রক্ষা করবার জন্য কত বেশী দয়ালু এবং সতর্ক ছিলেন। তিনি তাদেরকে অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিভাবে তাদেরকে শিক্ষাদান করেছিলেন, অবশ্যই তা' লক্ষ্য করা দরকার। পক্ষান্তরে যে আলিম পরহেজগার, ধর্মে কর্মে পরিপক্ক এবং সে নিজেকে উত্তম ব্যক্তি মনে করে বলে যে, আমার ন্যায় লোকের প্রতি কারও মন্দ ধারণা হতে পারে না, তার মনে করা উচিত যে, যিনি সর্বাপেক্ষা পরহেজগার, খোদাভীরু এবং শ্রেষ্ঠ আলিম, তাকেও সবাই একভাবে দেখে না. একরূপ মনে করে না। কেউ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে আবার কেউ অসন্তুষ্ট থাকে। সুতরাং মানুষের মন্দ ধারণা এবং অপবাদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সতর্ক থাকা অবশ্য কর্তব্য। কেননা মন্দ লোকেরা যে কোন লোক সম্বন্ধেই কুধারণা করে। যখনই কোন লোক মানুষের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করে, কুধারণা পোষণ করে তখন মনে করবে যে, সে একটি গুপ্ত খবীছ বা কদর্য লোক। তার কাছ থেকে অশ্লীলতা প্রকাশ পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সে অন্য যে কোন লোককেই নিজের ন্যায় মনে করে। কিন্তু মু'মিন লোকগণ ওজর-আপত্তির বিষয় চিন্তা করে। যারা মু'দিন তারা প্রত্যেক লোকের যে কোন কাজকেই সহৃদয়তা ও সহানুভূতির স্যাথে বিচার করে।
উল্লিখিত সোধাবলী হৃদয়ের দিকে শয়তানের দরজা বা প্রবেশ পথ। এগুলোর দ্বারা তার অন্যান্য সংবন পথ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। আর স্মরণ রাখবে যে, মোটামুটিভাবে যত রকমের পাপ রয়েছে সবই তার অস্ত্র এবং প্রবেশ দ্বার।
প্রশ্ন। শয়তান তাড়াবার উপায় কি? আল্লাহর যিকির এবং 'লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ' বলাই কি যথেষ্ট?
উত্তর। পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, শয়তান তাড়াবার একমাত্র উপায় হল উল্লিখিত নিন্দনীয় যোগগুলো থেকে আস্থাকে পরিশুদ্ধ করতঃ শয়তানের প্রবেশ দ্বারগুলো বন্ধ করে দেয়া। এ বিষয়ের বর্ণনা অতিপয় দীর্ঘ হবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও আমাদের উদ্দেশ্য ধ্বংসকর দোষসমূহের বিষয় বর্ণনা করা। প্রত্যেক দোষ আমরা এক একটি পৃথক পৃথক অনুচ্ছেদে বর্ননা করব। একথা সত্য যে, যখন এ সমস্ত দোষের মূল হৃদয় থেকে কর্তন করে ফেলা হয় তখন শয়তান হৃদয়ের মধ্যে ঘুরা-ফিরা করে এবং অন্তরে মন্দ চিন্তার সৃষ্টি করে। তখন তার আর বিশ্রাম নেয়ার সময় থাকে না। তবে আল্লাহর যিকির এ সময় তাকে বাধা দেয়।
শয়তান ক্ষুধার্ত কুকুরের ন্যায়, সে তোমার নিকট আগমন করবে। যদি তোমার নিকট মাংস বা রুটি না থাকে, তুমি তাকে তাড়িয়ে দাও। তাহলে সে চলে যাবে। কিন্তু যদি তোমার সামনে মাংস ও ত্রুটি থাকে তাহলে তাকে শতবার তাড়ালেও সে দূর হবে না; বরং ঐ মাংস ও রুটির উপর লাফিয়ে পড়বে। তদ্রুপ শয়তানের খাদ্য হতে যে হৃদয় শূন্য থাকে শুধু অনবরত যিকির দ্বারাই তার ফায়েদাহ হবে। কিন্তু যখন মোহ ও লালসা হৃদয়ের উপর প্রবল হবে তখন যিকিরের তত্ত্ব হৃদয়ের মধ্যে স্থির হয়ে না বসে তা' চতুর্দিকে ঘুরতে থাকবে। আর এ সুযোগে শয়তান হৃদয়ের অভ্যন্তরে প্রশান্ত মনে বসে থাকবে। বস্তুতঃ যেসব ধর্মভীরুদের হৃদয় মোহ ও নিন্দনীয় দোষ থেকে পবিত্র থাকে শয়তান লালসা নিয়ে তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু হৃদয় যখন যিকির থেকে গাফেল থাকে তখন শয়তানের কুমন্ত্রণা যিকিরের নিকট ফিরে আসে। এর প্রমাণ আল্লাহতায়ালার এই বাণীঃ অর্থাৎ "বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।" যিকির সম্বন্ধে যত আয়াত ও হাদীস এসেছে তা' সবই এই কথা প্রমাণ করে।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, একবার মু'মিনের শয়তান এবং কাফিরের শয়তানের মধ্যে পরস্পর সাক্ষাত হয়েছিলো। কাফিরের শয়তান হৃষ্টপুষ্ট, মোটা-তাজা এবং উত্তম বস্তু পরিহিত ছিল। পক্ষান্তরে, মু'মিনের শয়তান জীর্ণ-শীর্ণ, কৃশ, আলু-খালু কেশবিশিষ্ট এবং নিকৃষ্ট পোশাক পরিহিত ছিল। কাফিরের শয়তান মু'মিনের শয়তানকে বলল, তোমার অবস্থা এরূপ কেন? তুমি এত কৃশ এবং জীর্ণ শীর্ণ হয়ে গেলে কেন? সে বলল, আমি এমন লোকের সঙ্গে আছি যখন সে ভক্ষণ করে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তখন আমি কৃশ হয়ে যাই। যখন সে পানীয় পান করে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তখন আমি তৃষ্ণার্ত হয়ে যাই। যখন সে বস্ত্র পরিধান করে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তখন আমি বস্ত্রহীন হয়ে যাই। যখন সে তেল ব্যবহার করে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তখন আমি আলুথালু কেশবিশিষ্ট হয়ে যাই। ওমান কাফিরের শয়তান বলল, আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে আছি, সে ঐ সমস্ত কোন কাজেই আল্লাহর নাম স্মরণ করে না। সুতরাং আমি তার খাদ্যে, পানীয় দ্রব্যে এবং পোশাক-পরিচ্ছদে শরীক হয়ে যাই। যার ফলে আমি অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে আছি।
হযরত মুহাম্মদ বিন ওয়াসে' ফজরের নামাযের বাদে প্রত্যেক দিন বলতেন, হে মাবুদ। তুমি আমাদের দোষ-ত্রুটি অবহিত এমন এক শত্রুকে আমাদের উপর প্রবল করে রেখেছ যে, সে এবং তার সঙ্গীগণ আমাদেরকে এমন স্থানে দেখে যেখানে আমরা তাদেরকে দেখতে পাই না। হে মাবুদ। তুমি আমাদের এ বিষয়ে তাকে বঞ্চিত কর। যেরূপ তুমি তাকে তোমার রহমত থেকে বঞ্চিত করেছ এবং আমাদের বিষয়ে তাকে অসন্তুষ্ট কর যেরূপ তুমি তাকে তোমার ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করেছ। তার থেকে আমাদেরকে তুমি এত দূরে রাখ তোমার রহমত থেকে তাকে যত দূরে রেখেছ। নিশ্চয়ই তুমি সমস্ত বিষয়ে শক্তিশালী।
তিনি আরও বর্ণনা করেছেন যে, একদা ইবলীস মসজিদের পথে মানুষের রূপ ধরে উপবিষ্ট ছিল। এ সময় সে তাঁকে বলল, হে ইবনে ওয়াসে'। তুমি কি আমাকে চিন? তিনি বললেন, না, তুমি কে? শয়তান বলল, আমি ইবলীস। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ইচ্ছা কি? শয়তান বলল, আমার ইচ্ছা এই যে. তুমি এ দোয়াটি আর কাউকে শিক্ষা দেবে না এবং আমিও আর তোমার নিকট উপস্থিত হব না। ইবনে ওয়াসে' বললেন, আল্লাহর কসম, যে ব্যক্তি এ দোয়া পেতে ইচ্ছে করে আমি তা' থেকে তাকে বিরত করব না। এখন তোমার যা' ইচ্ছে তাই করতে পার।
হযরত আবদুর রহমান আবি লায়লা থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা শয়তান অগ্নির মশাল হস্তে হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট উপস্থিত হল। তিনি তখন নামাযের মধ্যে কিরাত পড়তেছিলেন। শয়তান তার নিকট থেকে দূর না হওয়ায় ফিরেশতা জিব্রাইল তার নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে নিম্নোক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দিলেন এবং বললেন, আপনি এ দোয়াটি পাঠ করুন। দোয়াটি এইঃ "আউযু বিকালিমা তিত্তাম্মাতিল্লাতী লা ইউযাবিযুহুন্না বিররুন ওয়ালা ফাজিরুন মিন শাররি মা ইয়ালিজু ফিল আরদ্বি ওয়ামা ইয়াখরুজু মিনহা ওয়ামা ইয়ানযিলু মিনাসামায়ি ওয়ামা ইয়া'রুজু কীহা ওয়া মিন ফিতানিল লাইলি ওয়ান্নাহারি ইল্লা ওয়া মিন তাওয়ারিকিল লাইলি ওয়ান্নাহারি ইল্লা তারিক্বান ইয়াতরুকু বিখাইরিন ইয়া রাহমান" অর্থাৎ হে মাবুদ। পরিপূর্ণ কালেমার সাহায্যে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি যা' ধার্মিক ও অধার্মিক কেউই হারায়না ঐ মন্দ থেকে যা দুনিয়ায় প্রবেশ করে এবং যা তা' থেকে বের হয়। যা আসমান থেকে অবতরণ করে এবং যা তাতে বিচরণ করে। আর রাত্র ও দিবসের বিপদাপদ থেকে। রাত্র ও দিবসের মধ্যে যা কিছু যাতায়াত করে তা' থেকে। তবে যা মঙ্গল নিয়ে বিচরণ করে তা' থেকে নয়; হে রাহমান। হুযুরে পাক (দঃ) উক্ত দোয়া পাঠ করবার সাথে সাথে শয়তানের অগ্নির মশাল নিবে গিয়ে সেটা তার মুখের উপর পড়ল।
হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি একদা হযরত জিব্রাইল (আঃ) হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এসে তাঁকে বললেন, একদল জ্বিন আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সুতরাং আপনি সন্ধ্যা বেলায় আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, অতঃপর আমার নিকট শয়তান উপস্থিত হয়ে গোলমাল শুরু করে দিল। তখন আমি তার গ্রীবাদেশ ধারণ করলাম। যিনি আমাকে নবীরূপে প্রেরণ করেছেন তাঁর কসম, আমি তাকে ছাড়লাম না যে পর্যন্ত আমার হস্ত তার মুখের লালায় ভিজে গেল, এ সময় যদি আমার ভাতা হযরত সোলায়মান (আঃ) আমাকে আওয়াজ না দিতেন তবে শয়তানের মসজিদের মধ্যেই পড়ে থাকতে হত।
হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, ওমর যে পথে গমন করে শয়তান সে পথে না গিয়ে অন্য পথ দিয়ে যাতায়াত করে। তার কারণ ওমরের হৃদয় শয়তান প্রদত্ত লালসা থেকে পবিত্র ছিল। সুতরাং তুমিও যদি আকাঙক্ষা কর যে, শয়তানকে তাড়িয়ে দেবে যেমন হযরত ওমর (রাঃ) তাড়িয়েছিলেন। তা' তোমার জন্য অসম্ভব হবে না। কিন্তু তুমি যদি ঐ ব্যক্তির মত হও, যে উদর পরিষ্কার হবার পূর্বে ওষুধ সেবন করতে চায়। অথচ তার উদর নানাবিধ অখাদ্য ও কুখাদ্য দ্বারা পরিপূর্ণ। তা' হলে তোমার দ্বারা তা' সম্ভব হবে না। কেননা উদরের উপকার করবার ইচ্ছা করলে উদর পরিষ্কার করবার পর এবং তা' শূন্য করবার পর ওষুধ সেবন করতে হবে। তদ্রূপ যিকির রূপ ওষুধ এবং আল্লাহর ভয়রূপ পরিষ্কার কারক কাম ও মোহ থেকে হৃদয়কে পরিষ্কার কর যখন যিকির এমন হৃদয়ের মধ্যে পতিত হয়ে যা অন্যান্য বিষয়ের চিন্তা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। তখন শয়তান হৃদয় হতে পালিয়ে যায়। যেরূপ খাদ্যশূন্য পরিষ্কার উদরে ওষুধ পতিত হলে রোগ দূর হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, "শয়তানের জন্য এটা লিখে রাখা হয়েছে যে, যার উপর সে কর্তৃত্ব করবে তাকে সে গোমরাহ করবে এবং তাকে প্রজ্জ্বলিত নরককুন্ডের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি তার কার্য দ্বারা শয়তানকে সাহায্য করে সে তার বন্ধু। যদিও সে তার রসনা দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করে।
প্রশ্ন: হাদীস শরীফে এসেছে, আল্লাহর যিকির শয়তানকে দূর করে, কিন্তু তুমি যে কথা বলতেছ তা' হাদীস এবং আলিমগণের কথার বিপরীত; সুতরাং তোমার কথা বোধগম্য নয়। উত্তর: জেনে রাখ, শ্রবণ কখনও প্রত্যক্ষ দেখার ন্যায় নয়। তুমি তোমার নিজের অবস্থা দেখেই বিষয়টির মীমাংসা করতে পারবে। নামায তোমার সব ইবাদাত ও যিকিরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যখন তুমি সেই নামাযের মধ্যে থাক তখন নিজের হৃদয়ের দিকে লক্ষ্য কর কিভাবে শয়তান তোমার হৃদয়কে হাট-বাজার ও সমস্ত দুনিয়ার হিসাব-নিকাশের দিকে নিয়ে যায়? কিরূপে সে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবার পরামর্শ যোগায়? কিরূপে সে তোমাকে নিয়ে কত দূরবর্তী এলাকায় ঘুরা-ফিরা করে? এমন কি তখন দুনিয়ার যে সব ব্যাপার তুমি ভুলে গিয়েছিলে সেগুলোকেও তোমার হৃদয়মধ্যে এনে হাজির করে দেয়। এসব ব্যাপার শয়তান তোমার নামাযের মধ্যেই বেশী করে ঘটিয়ে থাকে।
আল্লাহর ভয় ও স্বরণে শয়তান দূর হয়ঃ নামায় হৃদয়কে নির্মল করে। নামাযের আরাই হৃদয়ের গুণাবলী ও দোযাবলী প্রকাশ পার হয়ে সময় পার্থিব কাম, মোহ ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ তা' থেকে নামায কবুল হয় রাকাত। এটা সন্দেহাতীত যে, এমতাবস্থায় শয়তান তোমার নিকট থেকে দূর হবে না: বরং অনেক সময় তোমার প্রতি তার কুমন্ত্রণা বৃদ্ধি পাবে। যেমুক্ত জোলাপের পূর্বে ওষুধ সেবনে অনেক সময়ই অনিষ্ট বৃদ্ধি হয়। অতএব যদি শয়তান থেকে মুক্ত হতে চাও তাহলে সবার আগে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া দ্বারা হৃদয় পরীক্ষা করে নাও। তারপর যিকিরের ওষুধ তাতে প্রয়োগ কর। তবেই শয়তান তোমার নিকট থেকে পলায়ন করবে। যেরূপ ওমর থেকে পলায়ন করেছিল। এজনাই হযরত ওয়াহহাব বিন মুনাত্মাহ (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহকে ভয় কর। শয়তানকে প্রকাশ্যে তিরষ্কার করে কি হবে যখন তুমি তার গোপন বন্ধু এবং অনুসরণকারী? জনৈক বিজ্ঞ বুযর্গ বলেছেন, যে ব্যক্তি নেক কাজের পরিচয় জেনেও তা' পালন করতে অবহেলা করে এবং অভিশপ্ত শয়তানের নাফরমানীর পরিচয় জেনেও তাকে অনুসরণ করে তার প্রতি বিস্ময় প্রকাশ না করে আর কি করা যায়? আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।" অথচ তুমি তাঁকে ডাকতেছ, কিন্তু তিনি তোমার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। তদ্রূপ তুমি আল্লাহর যিকির করছ, কিন্তু শয়তান তোমার নিকট থেকে পালাচ্ছে না। এর কারণ তুমি যিকিরের ও দোয়ার শর্তসমূহ হারিয়ে ফেলেছ।
দোয়া কবুল না হবার কারণঃ হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, হুযুর। আমাদের কি হল যে, আমরা দোয়া করি অথচ আমাদের দোয়া কবুল হয় না? কিন্তু আল্লাহতায়ালা বলেন যে, "উদউনী আসতাজিবলাকুম"। অর্থাৎ আমার নিকট প্রার্থনা কর আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (রহঃ) বললেন, এর কারণ তোমাদের দিল মরে গেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন বস্তু আমাদের দিলকে মেরে ফেলেছে? তিনি বললেন, আটটি বস্তু দিলের মৃত্যু ডেকে আনে। তা' হলঃ (১) তোমরা আল্লাহর প্রতি কর্তব্যের বিষয় অবগত আছ কিন্তু তোমরা তা' প্রতিপালন করছ না। (২) তোমরা কুরআন মজীদ তিলওয়াত কর কিন্তু তার শাস্তির বর্ণনার বিষয় লক্ষ্য কর না। (৩) তোমরা মুখে বল যে, আমরা হযরত রাসূলে করীম (দঃ) কে ভালবাসি কিন্তু তোমরা তাঁর তরীকা ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জান না। (৪) তোমরা মুখে বল আমরা মৃত্যুকে ভয় করি কিন্তু তোমরা সেভাবে মোটেই প্রস্তুত হও না। (৫) আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। কিন্তু তোমরা তার বিপরীত কাজ কর অর্থাৎ গুনাহর কার্য দ্বারা তার সাহায্য গ্রহণ কর। (৬) তোমরা মুখে বল যে, আমরা দোযখের আগুনকে ভয় করি। কিন্তু তোমরা সেই দোযখের অগ্নির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে আছ। (৭) তোমরা মুখে বল যে, আমরা বেহেশতকে ভালবাসি। কিন্তু তোমরা তোমাদের কার্য দ্বারা তদ্রূপ পরিচয় দাও না। (৮) যখন তোমরা তোমাদের শয্যা থেকে উঠ, তখন তোমাদের নিজেদের দোষ-ত্রুটি পিছনে ফেলে রেখে অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দাও। এর দ্বারা তোমরা শুধু আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ ঘটিয়ে থাক। এখন তোমরাই বদ এমতাবস্থায় কিরূপে আল্লাহতায়ালা তোমাদের দোয়া কবুল করবেন?
0 Comments