রসনার নবম বিপদ ঃ হাস্য কৌতুক রসনার দশম বিপদ। হাস্যকৌতুক মূলতঃ নিষিদ্ধ হলেও সীমিত এবং স্বল্প পরিমাণ হাস্য কৌতুক করা নাজায়েয নয়। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, তোমার ভ্রাতার সাথে তর্ক বিতর্ক করো না এবং তার সাথে হাস্য কৌতুক করো না।
প্রশ্নের উদয় হবে যে, তর্ক বিতর্ক দ্বারা প্রতিপক্ষকে কষ্ট দেয়া হয়, কটুকথা, রুক্ষ কথা প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু হাস্য কৌতুকে ত হৃদয়ে আনন্দ আসে, স্ফুর্তির উদয় হয়, তবে তা' নিষিদ্ধ হল কেন? এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, তোমরা জেনে রাখবে, অধিক পরিমাণে হাস্য কৌতুক নিষিদ্ধ হবার কারণ হল, অধিক পরিমাণে হাস্য কৌতুক ক্রীড়া কৌতুকের পর্যায়ে চলে যায়। ক্রীড়া কৌতুক হালাল হলেও তাতে অতিরিক্ত অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তা' নিন্দনীয় হয়। অধিক হাস্য মানুষের হৃদয় মৃত করে। কখনও কখনও বা এর দ্বারা হিংসা-বিয়েষের সৃষ্টি হয়। পাীর্ণ এবং ভয় নষ্ট করে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমি কৌতুক করি বটে, কিন্তু তাতে সত্য কথা ভিন্ন থাকে না। তোমরা সতর্ক হও তাঁর মত ব্যক্তিত্ব হাস্য কৌতুকে সমর্থ ছিলেন, তার কৌতুকে সত্য ব্যতীত মিথ্যার লেশ মাত্র ছিল না। কিন্তু তোমাদের জন্য তা' সম্ভব নয়। কারণ তোমরা যখন হাস্য কৌতুকে রত হবে, তখন তোমাদের উদ্দেশ্য থাকবে, যেভাবেই হোক মানুষের হাস্যের উদ্রেক করা। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বন্ধু-বান্ধবের হাস্যোদ্রেক করাবার জন্য মানুষ কথা বলে বটে, কিন্তু সে তাকে নিজেকে আকাশ থেকে পাতালে। দোযখের তলদেশে নিয়ে যায়। হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, যার হাসি অধিক হয়, তার ভয় কমে যায়। যে হাসি তামাসা করে সে লোকের নিকট হালকা হয়ে যায়। যে ব্যক্তি কোন অতিরিক্ত রহস্য করে, সে বিখ্যাত হয়, যে ব্যক্তি অধিক কথা বলে, তার অধিক দোষত্রুটি ঘটে এবং তার লজ্জা কমে যায়, পরহেজগারী হ্রাস পায়। যার পরহেজগারী হ্রাস পায়, তার হৃদয় মরে যায়। হাস্য রহস্য পরকাল থেকে মানুষকে উদাসীন রাখে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, "লাও তা'লামুনা মা আ' লামু লাবাকাইতুম কাছীরাও ওয়াদ্বহাকতুম কালীলা"। অর্থাৎ আমি যা জানি, তা' যদি তোমরা জানতে, নিশ্চয় তোমরা বেশী কাঁদতে এবং অল্প হাসতে।
কোন এক ব্যক্তি তার বন্ধুকে বলেছিল, হে বন্ধু। তোমার নিকট কি এ আয়াত আসে নি যে, তুমি দোযখের দিকে অগ্রসর হচ্ছ? সে বলল যে, হাঁ। তখন সে বলল, তোমার নিকট কি এমন কোন আয়াত এসেছে যে, তুমি তা' থেকে বের হয়ে আসবে? সে বলল যে, না। তখন সে বলল যে, তা'হলে তুমি কিসের জন্য হাস্য কর? কথিত আছে যে, তারপর মৃত্যু পর্যন্ত তাকে আর হাস্য করতে দেখা যায় নি। হযরত ইউসুফ ইবনে আছবাত বলেছেন যে, হযরত হাসান বছরী (রহঃ) ত্রিশ বছর ধরে হাস্য করেন নি। বর্ণিত আছে যে, হযরত আতা সালমী (রহঃ) একাধারে চল্লিশ বছর ধরে হাস্য করেন নি। হযরত ওয়াহহাব ইবনে ওয়ারদ (রহঃ) একদা একদল লোককে ঈদুল ফিতরের দিন হাস্য কৌতুক করতে দেখে বললেন, যদি এসব লোকের পাপ আল্লাহ ক্ষমা করে থাকেন, তাহলেও এটা কৃতজ্ঞ লোকদের কাজ নয়। আর যদি এদের পাপ আল্লাহ ক্ষমা না করে থাকেন, তাহলে খোদাভীরুদের কাজ এটা নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি ইয়ালা (রহঃ) বলেছেন, তুমি হাসছ, অথচ হয়ত তোমার কাফন তৈরী হয়ে গেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সহাস্যে পাপ কাজ করে, সে দোযখে ক্রন্দন করতে করতে প্রবেশ করবে। মুহাম্মদ ইবনে আব্বাস বলেছেন, যদি বেহেশতের মধ্যে কোন লোককে ক্রন্দন করতে দেখ, তার ক্রন্দন দেখে কি তুমি আশ্চর্যান্বিত হবে না? বলা হল যে, হাঁ। তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি দোযখে যাবে কি বেহেশতে যাবে, তা' জানা নেই। তার হাস্য কৌতুক কি আরও অধিক আশ্চর্যজনক নয়? এগুলোই হল হাস্য কৌতুকের বিপদ। হাস্য কৌতুকে লিপ্ত থাকা নিন্দনীয়। তবে মৃদু হাস্য করা প্রশংসনীয় বৈ কি। শুধু দন্ত দেখা গেলে এবং শব্দ শ্রুত না হলে তাকেই মৃদু হাস্য বলে। হুযুরে পাক (দঃ) এরূপ মৃদু হাস্য করতেন। হযরত মুআবিয়ার দাস কাসেম বলেছে, জনৈক গ্রাম্য আরব একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রারোহণে হুযুরে পাক (দঃ)এর সরবারে এসে তাঁকে সালাম দিল এবং তাঁর সন্নিকটবর্তী হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবার ইচ্ছে করল। সে এইরূপ ইচ্ছে করে উষ্ট্রটি প্রতই সামনে এগুবার চেষ্টা করল, উষ্ট্রটি ততই পিছিয়ে যেতে লাগল। তা' দেখে হুযুরে পাক (সঃ)এর কোন কোন ছাহাবী হাসতে লাগলেন। এঐ ব্যক্তি কয়েকবার এরূপ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় চেষ্টা করতেই উষ্ট্রটি তাকে পিঠের উপর থেকে ফেলে দিল। লোকটি তাতে মারা গেল। তখন হুযুর (দঃ)কে বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)। লোকটি যে প্রাণ ত্যাগ করেছে। শুনে তিনি বললেন, তার মৃত্যু হয়েছে বটে, কিন্তু তোমাদের মুখ যে রক্তে ভরপুর হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ তার এ দুর্দশা দেখে তোমাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। হাস্য কৌতুকের জন্য গাম্ভীর্য চলে যাবার বিষয় হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। সে তজ্জন্য হালকা হয়ে যায়। মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির বলেছেন, একদা আমার মাতা আমাকে বললেন, হে বৎস। বালকদের সাথে ঠাট্টা-কৌতুক করো না। তাতে তুমি তাদের নিকট হেয় হয়ে যাবে। হযরত সাইদ ইবনে আস (রহঃ) তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, হে পুত্র। কোন সম্মানিত লোকের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করো না। তার ফলে সে তোমাকে হিংসাবিদ্বেষ করতে পারে। কোন অসম্মানিত লোকের সাথেও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করো না। তাহলে তোমার সাথে তার সাহস বেড়ে যাবে।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয বলেছেন, আল্লাহকে ভয় কর। হাস্য-কৌতুক করো না। কেননা তা' মনোমালিন্য জন্মায় এবং মন্দ কাজের দিকে নিয়ে যায়। যখন সবাই একত্রে বস, তখন কুরআনের কথা আলোচনা কর। যদি তা' তোমাদের প্রতি কষ্টকর হয়, তবে সাধু লোকদের জীবন চরিত আলোচনা কর। হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, কৌতুকের নাম মজাক হয়েছে কেন তা' তোমরা জান কি? লোকজন বলল, আমরা জানি না। তিনি বললেন, তার কারণ এই যে, কৌতুক কৌতুককারীকে সত্য থেকে ভ্রষ্ট করে ফেলে। মানুষ বলে, প্রত্যেক জিনিসের জ্বর আছে। শত্রুতার জ্বর ঠাট্টা-বিদ্রূপ। কেননা তা' বুদ্ধিকে খর্ব করে, বন্ধু-বান্ধবকে বিচ্ছিন্ন করে।
প্রশ্ন: হাস্য-কৌতুক আমাদের নবী এবং তাঁর ছাহাবাগণও করেছেন। সুতরাং তা' নিষিদ্ধ হয় কিভাবে?
উত্তরঃ হুযুরে পাক (দঃ) ও তাঁর ছাহাবাগণ যে হাস্য-কৌতুক করতেন, তা' তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তোমরাও যদি তদ্রূপ তা' নিয়ন্ত্রণে রাখতে পার, তাহলে উত্তম। নিয়ন্ত্রণে রাখার অর্থ হল, সত্য ব্যতীত হাস্য-কৌতুক করবে না। কোন লোককে কষ্ট দেবে না। হাস্য- কৌতুকে অতিরঞ্জন করবে না। কিন্তু এটা বড়ই অন্যায় যে, মানুষ হাস্য-কৌতুককে ব্যবসারূপে গ্রহণ করে এবং তা' অনবরত করতে থাকে ও তাতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। তারপর দাবী করে যে, সে হুযুরে পাক (দঃ) এর সুন্নত অনুসরণ করছে। সে ঐ লোকের ন্যায়, যে সারাদিন হাবসীদের সাথে চলাফেরা করে। তাদের নৃত্য দেখে এবং বলে যে, হুযুরে পাক (দঃ) ঈদের দিনে হযরত আয়েশা (রাঃ)কে হাবসীদের নৃত্য দেখবার অনুমতি দিয়েদিলেন। এটা ভুল ধারণা। ক্ষুদ্র পাপে অভ্যস্ত হয়ে গেলে মহাপাপ হয় এবং অনবরত বৈধ কাজ করতে থাকলে তা' ক্ষুদ্র শুনায় পরিণত হয়, একথা ভুলে গেলে চলবে না।
সত্য বটে যে, হয়রত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনি আমাদের সাথে কৌতুক করেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি কখনও তখনও তোমাদের সাথে কৌতুক করি। কিন্তু তা' সত্য ব্যতীত নয়। হযরত আতা (রহঃ) বলেছেন, একব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, হুযুরে পাক (দঃ) কি কৌতুক করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে আবার জিজ্ঞেস করল, তাঁর কৌতুক কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, তাঁর কৌতুক ছিল নিম্নরূপঃ
একদিন হুযুরে পাক (দঃ) তাঁর কোন এক স্ত্রীকে সুন্দর বেশভূষা দিয়ে বললেন.. এগুলো পরিধান কর এবং আল্লাহর শোকর কর। আর এই বস্তুটি দিয়ে দুলহানের ঝুটির ন্যায় ঝুটি বানাও। হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, হযুরে পাক (দঃ) তাঁর স্ত্রীগণের সাথে সর্বাপেক্ষা অধিক কৌতুক এবং হাস্য-রসিকতা করতেন। বর্ণিত আছে যে, এসব ক্ষেত্রে সর্বদাই তিনি মৃদুহাস্য করতেন। হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, একদা এক বৃদ্ধা রমণী হযুরে পাক (দঃ) এর দরবারে এলে তিনি তাকে বললেন, কোন বৃদ্ধা রমণী বেহেশতে যাবে না। একথা শুনে বৃদ্ধা রমণী কাঁদতে লাগল। তখন তিনি তাকে বললেন, সেদিন তুমি বৃদ্ধা থাকবে না। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি তাদেরকে অন্যরূপে সৃষ্টি করব এবং তাদেরকে যুবতী করে দেব। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম বলেছেন, উম্মে আইমান নামক একজন রমণী হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এসে বলল, আমার স্বামী আপনাকে আহ্বান করেছে। তিনি বললেন, কে সে? যার চোখে শ্বেতবর্ণ আছে, সে-ই কি তোমার স্বামী? রমণী বলল, আল্লাহর শপথ, আমার স্বামীর চক্ষু সাদা নয়। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, এমন লোক কি আছে যার চোখে শুভ্রতা নেই? আর একদিন এক রমণী এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। আমাকে উটের পিঠে চড়িয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমাকে উটের বাচ্চার উপর চড়িয়ে দিচ্ছি। তখন রমণী বলল, আমি উটের বাচ্চা দিয়ে কি করব? সে আমাকে বহন করতে পারবে না। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, এমন কোন উট নেই যা' প্রথমে বাচ্চা ছিল না। তিনি উক্ত রমণীর সাথে রহস্যচ্ছলে একথা বলেছিলেন।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, আবু তালহা (রাঃ) এর আবু ওমায়ের নামক এক পুত্র ছিল। হুযুরে পাক (দঃ) তার নিকট এসে বললেন, হে আবু ওমায়ের। চড়ুইর বাচ্চা কি করল? আবু ওমায়ের চড়ুই পাখীর বাচ্চা নিয়ে খেলা করত। বাচ্চাটি মরে গেলে বালকটি রোদন করতেছিল দেখে হুযুরে পাক (দঃ) তাকে ঐরূপ বললেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ)এর সাথে বদরের যুদ্ধে বের হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, এস আমরা হার জিতের দৌড় খেলি, আমি আমার চাদর উদরের সঙ্গে বাঁধলাম এবং কয়েক পেঁচ করে তা' এঁটে নিলাম এবং তাঁর নিকট দাঁড়িয়ে উভয়েই দৌড় শুরু করলাম। দৌড়ে হুযুরে পাক (দঃ) এর জিত হলে তিনি বললেন, এটা যুলমিজায স্থানের ঘটনার প্রতিশোধ। উক্ত ঘটনাটি ছিল এইঃ
একদা হুযুরে পাক (দঃ) ও হযরত আয়েশা (রাঃ) যুলসেজলম নামক স্নানে জিসেদ। জণতার আয়েশা (রাঃ) তখন অল্পবয়স্কা ছিলেন, আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমার পিতা সাদার নিকট একটি দ্রব্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, তা' আমাকে দাও। সাদি তাঁকে তা' দিতে অস্বীকার করে বস্তুটি নিয়ে দৌড়তে লাগলাম। তিনিও আমার পিছনে দৌড়তে লাগলেন। কিন্তু দৌড়ে তিনি আমার নাগাল পেলেন না। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ঐ দিল হুযুরে পাক (দঃ) আমাকে দৌড়ে পরাজিত করেছেন কিন্তু পূর্বকার উক্ত দিনেস আমি তাকে পরাজিত করেছিলাম। যখন আমি স্কুলকায় হয়েছিলাম, তিনি আমার সালে দৌড়ের হারজিত খেলে আমাকে পরাজিত করলেন এবং তারপর তিনি বললেন, আয়েশা। এটা আমাক পূর্ব পরাজয়ের প্রতিশোধ।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমার নিকট হুযুরে পাক (দঃ) এবং জলমআর কল্যা ছাওদাহ উপস্থিত ছিল। আমি হারিরাহ নাস্তা তৈয়ার করে এনে হাওদাহকে বললাম, দাও তরুণ কর। হাওদাহ বলল, আমি এ নাস্তা পছন্দ করি না। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, তুমিই এ নাস্তা প্রথম ভক্ষণ করবে। নতুবা আমি এ নাস্তা তোমার মুখে লেপে দেব। জাওদাহ বলল, আমি এর স্বাদ গ্রহণ করব না। তখন আমি পাত্র হতে কিছু নাস্তা উঠিয়ে তার মুসে মেসে দিলাম। তখন হুযুরে পাক (দঃ) আমাদের দুজনের মধ্যখানে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তাঁর জানুদ্বয় গুটিয়ে নিয়ে আমাকে এমনভাবে আবদ্ধ করে রাখলেন, যেন ছাওদাহ আমার প্রতিশোধ নিতে না পারে। তখন ছাওদাহও পাত্র থেকে কিছু নাস্তা উঠিয়ে আমার মুখে দেবে দিল। আমাদের এ কৌতুক দেখে হুযুরে পাক (দঃ) হাসতে লাগলেন।
বর্ণিত আছে যে, জাহহাক অত্যন্ত কুশ্রী লোক ছিলেন। তিনি হুযুরে পাক (দঃ)এর আনুগত্য গ্রহণ করেছিলেন। একদিন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। আমার দুজন সুন্দরী স্ত্রী আছে। তারা প্রত্যেকেই হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকেও সুন্দরী। তার একজনকে তালাক দিয়ে আপনার নিকট এনে বিবাহ দিতে পারি। হযরত আয়েশা (রাঃ) তার কথা শুনতেছিলেন। তিনি জাহহাককে বললেন, সে কি তোমার চেয়ে সুন্দর না তুমি তার চেয়ে সুন্দর? জাহহাক বললেন, আমি তার চেয়ে অধিক সুন্দর এবং সম্মানিত। হুযুরে পাক (দঃ) একথা শুনে হেসে উঠলেন, কেননা জাহহাক অত্যন্ত কুৎসিত ছিলেন।
হযরত আকলামাহ (রাঃ) বলেছেন যে, হুযুরে পাক (দঃ) স্বীয় জিহ্বা বের করে শিশু হাসান (রাঃ) কে চুম্বন করেছিলেন। আইনাহ ফাজারী নামক এক মহিলা বলল যে, আল্লাহর কসম আমি আমার পুত্রকে তার শাশ্রু বের না হওয়া পর্যন্ত এরূপ স্নেহ করি নি। তাকে আমি কখনও চুম্বন করি নি। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, যে দয়ালু নয়, সে দয়া পাবে না। হুযুরে পাক (দঃ) এর অধিকাংশ হাস্য কৌতুকই তার স্ত্রীগণ এবং ছোট বালক-বালিকাদের সাথে হাত। কেননা তাঁর হৃদয় কৌতুক ও কোমলতার দিকে অনুরক্ত থাকত। একবার হোহায়েবের চোকে প্রদাহ রোগ হয়েছিল। হুযুরে পাক (দঃ) ছোহায়েবকে এ অবস্থায় পুরমা যেতে দেখে বলেছিলেন, তোমার চোখে প্রদাহ হয়েছে, অথচ তুমি খুরমা খেতেছ। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)। আমি বিপরীত দিকের মাড়ীর দ্বারা চিলাচ্ছি। এ কথা শুনে হুযুরে পাক (সঃ) এত হাসতে লাগলেন যে, তাঁর দন্তরাজি দেখা যেতে লাগল।
হযরত খাওয়াত ইবনে জোবায়ের আনছারী একদা মক্কার কতিপয় রমণীসহ উপবির ছিলেন। তখন হঠাৎ হুযুরে পাক (দঃ) সেখানে এসে পড়লেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু আবদুল্লাহ। তুমি এদেরকে নিয়ে এখানে কি করছ? তিনি বললেন, আমার জন্য এই স্ত্রীলোকগণ একটি অবাধ্য উটকে বাঁধবার জন্য একগাছি রশি তৈরী করে দিচ্ছে। হুযুরে পাক (দঃ) একবা শুনে চলে গেলেন। তারপর তিনি ইস্তেঞ্জা সেরে আবার এসে তাঁকে দেখে বললেন, কিত্রে। দে উট কি অবাধ্যতা ত্যাগ করেছে? হযরত খাওয়াত (রাঃ) বলেন, তখন আমি লজ্জিত হয়ে নীরব থাকলাম। এরপর তিনি যখনই আমাকে দেখতেন, আমাকে ঐ প্রশ্ন করতেন। একবার আমি মদীনায় এলে তিনি আমাকে মসজিদে নামায পড়তে দেখে আমার নিকট বসলেন। আমি দীর্ণ সময় পর্যন্ত নামায পড়তে লাগলাম। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নামায এত দীর্ঘ করো না; কেননা আমি তোমার অপেক্ষায় আছি। আমি নামায শেষ করে সালাম ফিরাবার পর তিনি আমাকে বললেন, কিহে আবু আবদুল্লাহ। সেই অবাধ্য উটের অবাধ্যতা ছেড়েছে কি? তারপর তিনি নীরব হলেন, কিন্তু আমি লজ্জা পেলাম। তিনি উঠে দাঁড়ালে আমি তাঁর নিকট থেকে পালিয়ে গেলাম।
একদা তিনি একটি গর্দভের পৃষ্ঠে একপার্শ্বে দুপা ঝুলিয়ে দিয়ে আসতেছিলেন। তিনি আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কিহে আবু আবদুল্লাহ। সেই উটের অবাধ্যতা কি ছেড়েছে? আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, তার কসম, যেদিন আমি মুসলমান হয়েছি সেদিন থেকে উটটি আর আমার অবাধ্য হয় নি। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ! আবু আবদুল্লাহকে হেদায়েত কর। তারপর সত্যই সে অত্যন্ত পাক্কা মুসলমান হয়েছিল এবং আল্লাহ তার হেদায়েত নছীব করেছিলেন। হযরত নো'মান আনছারী কৌতুকপ্রিয় লোক ছিলেন। তিনি মদীনায় মদপানও করতেন। তাকে হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি তাঁর পাদুকা দ্বারা তাকে প্রহার করলেন এবং তাঁর ছাহাবীগণকে তাকে প্রহার করতে বললেন। তারাও তাদের জুতা দ্বারা তাকে প্রহার করলেন। যখন তাদের প্রহার চরম সীমায় পৌঁছল, তখন জনৈক ছাহাবী তাকে বললেন, তোমার উপর আল্লাহর লা'নত। তখন হুযুর (দঃ) তাকে বললেন, তাকে লা'নত করো না, কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। মদীনার বাজারে কোন নতুন ফল এলে তিনি তা' খরিদ করে হুযুরে পাক (দঃ) এর জন্য নিয়ে যেতেন এবং বলতেন হে আল্লাহর রাসূল! এ ফল আপনার জন্য খরিদ করেছি এবং আপনাকে উপঢৌকন দিতেছি। ফল বিক্রেতা মূল্য চাইলে তাকে হুযুর (দঃ) এর নিকট নিয়ে এসে হুযুর (দঃ) কে বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার ফলের দাম দিন। তখন হযরত রাসূলে করীম (দঃ) তাকে বলতেন, তুমি কি এ ফল আমাকে হাদিয়া দাওনি? সে বলত, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এর দাম আমার নিকট ছিল না কিন্তু ফল দেখে আমার মনে হল যে, যেহেতু আপনি এ ফল ভক্ষণ করেন, তাই এ ফল আপনার জন্য দিয়ে আসি। তখন হুযুরে পাক (দঃ) মৃদু হাস্য করতেন এবং তার মূল্য দিয়ে দিতেন।
আমরা এতক্ষণ কতগুলো হালাল হাস্য-কৌতুকের কথা বর্ণনা করলাম। এগুলো সময় সময় করা জায়েয, তবে তা' সর্বদা নয়। সর্বদা এরূপ হাস্য-কৌতুক করলে তা' খেলা-ধূলায় কত থাকার ন্যায় হয়ে যায়। যা' নিন্দনীয় এবং যা' অত্মার মৃত্যু ঘটিয়ে দেয়।
0 Comments