তাড়াহুড়ো করা এবং অস্থিরমতি হওয়া

        শয়তানের অন্য একটি বড় দরজা হল যে কোন কাজে তাড়াহুড়ো করা এবং কাজে-কর্মে দৃঢ়তা না থাকা ও অস্থিরতা প্রকাশ পাওয়া। হুযুরে পাক (সঃ) এরশাদ করেছেন, "সত্বরতা শয়তান থেকে এবং বিলম্বতা বা ধীর-স্থিরতা আল্লাহ থেকে আসে।

        আল্লাহতায়ালা বলেন, "খুলিকল ইনসানু মিন আজাল।" অর্থাৎ মানুষ সত্বরতা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ আরও বলেন, "ওয়া কানাল ইনসানু আজুলা।" অর্থাৎ মানুষ সত্বরতা প্রিয়। আল্লাহতায়ালা তাঁর নবীকে বললেন, "কুরআনের ব্যাপারে সত্বরতা করো না যে পর্যন্ত তার অবতরণ তোমার উপর সম্পূর্ণ না হয়।" বর্তমানে অনুধাবন ও পরিচয় জ্ঞান অর্জনের সাথে সব কাজ করা উচিত এবং অনুধাবন চিন্তা-ভাবনা ও বিলম্বতার প্রয়োজন। সত্বরতা এর বিপরীত এবং প্রতিবন্ধক। সত্বরতার সময় শয়তান মানুষের উপর তার মন্দ প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়ে যায়। কেননা সে তার বিষয়ে অজ্ঞাত থাকে। বর্ণিত আছে যে. যখন হযরত ঈসা (আঃ)এর জন্য হল তখন সব শয়তান তালের সর্দার ইবলীসের নিকট এসে বলল, হঠাৎ সমস্ত দেব মূর্তির মস্তকগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। ইবলীস বলল, তাহলে নিশ্চয়ই কোন নতুন ঘটনা ঘটেছে। তোমরা সবাই যার যার স্থানে থাক। অতঃপর ইবলীস সারা জগত ঘুরে আসল, কিন্তু কোথাও তেমন কিছু দেখতে পেল না। অবশেষে তার নজরে এল হযরত ঈসা (আঃ)এর জন্য হয়েছে এবং ফিরেশতাগণ তাকে ঘিরে রেখেছে। ইবলীস তার দলবলের নিকট গিয়ে বলল, দুনিয়ায় একজন নবীর জন্য হয়েছে। আমার অনুপস্থিতিতে কোন স্ত্রীলোকের কখনও কোন গর্ভ হয়নি বা কোন স্ত্রীলোক কোন সন্তান প্রসব করেনি কিন্তু তা-ই হল। এ বাত্রের পর আর প্রতিমা পূজা হবে না দেখে তারা নিরাশ হয়ে গেল। কিন্তু তারা আদম সন্তানকে তাদের সত্বরতা, চঞ্চলতা এবং অস্থিরতা অভ্যাসের জন্য প্রশংসা করল।

        প্রয়োজনাতিরিক্ত ধন-সম্পদ থাকাঃ শয়তানের জন্য অন্য একটি বড় দরজা অর্থ-সম্পদ। বিষয়-সম্পত্তি, ধন-দৌলত, পশু-প্রাণী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকা শয়তানের জন্য একটি প্রশস্ত প্রবেশপথ। যদি কারও নিকট জীবিকা প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকে তা' শয়তানের জন্য বিশ্রাম স্থলস্বরূপ হয়। যার নিকট প্রয়োজনীয় খাদ্য থাকে তার হৃদয় শান্ত। থাকে, যদি কেউ পথিমধ্যে হঠাৎ শতাধিক স্বর্ণ মোহর পায় তবে তার হৃদয়মধ্যে নতুন দশটি লোভের জন্ম লাভ করে। প্রত্যেকটি মোহর আরও একশ' মোহরের আবশ্যকতার দিকে উক্ত মোহর প্রাপককে নিয়ে যায়। সুতরাং সে যা' পেল তা' তার জন্য যথেষ্ট হয় না; বরং সে আরও বহু মোহরের জন্য লালায়িত থাকে। অথচ উক্ত মোহরপ্রাপ্তির পূর্বে মাত্র একটি মোহর পাওয়াই তার জন্য গনীমত ছিল। যখন সে এক শ' মোহর পেল, সে ভাবল যে, এখন সে ধনী হয়ে গেছে। অতএব, তার বসবাস করবার জন্য একটি নতুন গৃহ, খেদমতের জন্য একজন ক্রীতদাসী, গৃহের সাজ-সরঞ্জাম এবং গৌরবজনক পোশাক-পরিচ্ছদের জন্য আরও নয় শ' মোহরের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এসব বস্তু যোগাড় হয়ে গেলে এর আনুষঙ্গিক অন্যান্য বস্তুর প্রয়োজন দেখা দেয়। সুতরাং তার প্রয়োজনের আর শেষ হয় না। এই প্রয়োজনের চাহিদা শেষ পর্যন্ত তাকে হাবিয়া দোযখের তলদেশে নিপতিত করে।

        হযরত সাবেত বানানী (রহঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) যখন নবুয়ত লাভ করলেন, তখন ইবলীস তার দলবলকে বলল, দুনিয়ায় কি যেন একটি অঘটন ঘটেছে তোমরা তার অনুসন্ধান কর। তার কথামত শয়তান দল উক্ত ঘটনা তালাশ করতে দুনিয়ার সব এলাকায় ছুটে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থমনোরথ হয়ে পরিশ্রান্তভাবে তারা ফিরে এসে বলল, আমরা কোন কিছুই দেখতে পেলাম না। অতঃপর ইবলীস নিজে অনুসন্ধানে বের হয়ে গেল। তারপর ফিরে এসে তার দলবলকে বলল, আমি তোমাদের জন্য একটি খবর নিয়ে এসেছি। আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (দঃ) কে নবুয়ত দান করেছেন। এরপর ইবলীস তার দলবলকে আল্লাহর নবীর ছাহাবীদের নিকট পাঠাতে শুরু করল। তারা বিফলমনোরথ হয়ে ফিরে এসে বলতে লাগল, এসব লোকের ন্যায় আমরা কখনও কোন মানুষ দেখিনি। আমরা তাদেরকে কোন ব্যাপারে প্ররোচনা দিলে তারা নামাযে দাঁড়িয়ে যায় এবং আমাদের সব চেষ্টা পরিশ্রম বার্থ করে দেয়। ইবলীস বলল, এদেরকে একটু সময় দাও। হয়ত এক সময় আল্লাহ এদেরকে পার্থিব ঐশ্বর্গ দান করবেন। তখন এদের মধ্যে আমরা সফলতার সাথে কাজ চালাতে পারব।

         বর্ণিত আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) একটি প্রস্তর খণ্ডকে বালিশরূপে ব্যবহার করবার কালে ইবলীস তাঁর নিকট দিয়ে যেতেছিল। তখন সে বলল, হে ঈসা। তোমার পার্থিব লালসা জন্মেছে। একথা শুনামাত্র হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর মস্তকের নীচ থেকে প্রস্তর খন্ড উঠিয়ে ইবলীসের প্রতি নিক্ষেপ করে বললেন, যাও, এ সংবাদের জন্য এটাই তোমার পুরস্কার। প্রকৃতপক্ষে নিদ্রার জন্য বালিশরূপে ব্যবহার করতে যার একখন্ড প্রস্তর থাকে তার জন্য সেটাই কিছু সম্পদ হল বলে ইবলীস মনে করে। কেননা এতে তার নিদ্রায় কিছুটা আরাম বেশী হয় এবং তজ্জন্য তাহাজ্জুদের নামায তার থেকে ছুটে যাবার সম্ভাবনা থাকে। যদি তার বালিশ না থাকত তবে তার নিদ্রার দিকে আকাঙক্ষা হত না বা বালিশ ব্যতিরেকে শায়িত হলেও তার চোখে নিদ্রা আসত না। পাঠক-পাঠিকা! চিন্তা কর, যে ব্যক্তি উত্তম বালিশ, সুকোমল তাকিয়া এবং মখমলের ফরাশ বিছিয়ে নিদ্রা গমন করে তার অবস্থা কিরূপ হবে? আল্লাহর ইবাদাত তার পক্ষে কিরূপে সহজ হতে পারে?

            কৃপণতা ও দারিদ্র্য ভীতি: শয়তানের জন্য আর একটি বড় দরজা কৃপণতা ও দারিদ্র্য ভীতি। কেননা এই ভয়ই তার ব্যয় এবং দান-খয়রাতকে সঙ্কুচিত করে এবং সঞ্চয়ের দিকে তাকে উদ্বুদ্ধ করে। যারা ধন-দৌলত বৃদ্ধি করে তাদের জন্যে ভীষণ শাস্তির ওয়াদা রয়েছে এবং তা' পবিত্র কুরআনে উক্ত হয়েছে। খায়ছামাহ বিন আবদুর রহমান বলেছেন, শয়তান বলতেছে যে, আদম সন্তান আমার উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আধিপত্য করবে কিন্তু তিনটি ব্যাপারে সে আমার উপর জয়লাভ করতে পারবে না। সে তিনটি ক্ষেত্রে আমি তাদেরকে আমার পথেই চালিয়ে নেব। যথাঃ (১) অন্যায়ভাবে কারও ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা (২) অন্যায়ভাবে তা' ব্যয় করা, (৩) এবং হকদারকে তার হক থেকে বঞ্চিত করা। হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেছেন, দারিদ্র্য ভীতির ন্যায় শয়তানের অমোঘ অস্ত্র দ্বিতীয়টি নেই।

            হাট-বাজারে অবস্থান করাঃ কৃপণতা এবং লোভের এক বিপদ এই যে, ধন-সম্পদ অর্জন এবং তা' সঞ্চয়ের জন্য অনেকেই সদাসর্বদা হাট-বাজারে লেগে থাকে। অথচ হাট-বাজারই শয়তানের বসবাসের স্থান। হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যখন ইবলীসকে দুনিয়ায় নিক্ষেপ করা হল তখন সে বলল, হে প্রভু। তুমি আমাকে দুনিয়ায় নামিয়ে দিয়েছ এবং নিজের নিকট থেকে তাড়িয়ে দিয়েছ। এখন আমার জন্য বসবাসের স্থান দাও। আল্লাহতায়ালা বললেন, তজ্জন্য তোমাকে হাম্মামখানা দিলাম। শয়তান বলল, আমার জন্য মজলিসের অনুরূপ কোন স্থান দাও। তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, তবে তোমাকে বাজার এবং চলার পথে কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থান দিলাম। শয়তান বলল, এখন আমার জন্য খাদ্য দাও। আল্লাহ বললেন, যে খাদ্যে আমার নাম লওয়া হয় না তা-ই তোমার খাদ্য। শয়তান বলল, আমার জন্য পানীয় দাও। আল্লাহ বললেন, তোমাকে সমস্ত নেশা উৎপাদনকারী পানীয় নিলাম। শয়তান বলল, আমার জন্য একজন আমন্ত্রণকারী বা ঘোষণাকারী দাও। আল্লাহ বললেন, তোমাকে মাজামীর (এক প্রকার বিশেষ বাদ্যযন্ত্র) দিলাম। শয়তান বলল, আমার জন্য একখানা কুরআন দাও। আল্লাহ বললেন, তোমাকে কবিতা দিলাম। শয়তান বলল, আমাকে একটি কিতাব দাও। আল্লাহ বললেন, তোমাকে প্রাণীর চিত্র দিলাম। শয়তান বলল, আমাকে হাদীস দাও। আল্লাহ বললেন, তোমাকে মিথ্যা বাক্য দিলাম। শয়তান বলল, আমাকে শিকার দাও। আল্লাহ বললেন, যাও, তোমাকে স্ত্রীলোক দিলাম।

        মাযহাবপ্রিয়তা এবং মতবিরোধীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণঃ শয়তানের জন্য আর একটি বড় দরজা মাযহাবপ্রিয়তা, প্রবৃত্তির লালসা, মতবিরোধীর প্রতি বিদ্বেষ এবং অন্যকে অবজ্ঞা চোখে দেখা। এগুলো এমন দোষের কার্য যার কারণে ধার্মিকদেরও সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়। কেননা মানুষের দোষারোপ করা এবং তাদের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা মানুষের স্বাভাবিক পশু প্রকৃতি, যখন শয়তান তার কল্পনার মধ্যে নিজ মাযহাবের মত সত্য বলে প্রবেশ করিয়ে দেয় এবং তা' তার প্রকৃতি অনুযায়ী হয় তখন সে তার হৃদয়ের উপরে প্রবল হয়ে যায়। অথচ সে ব্যক্তি মনে করে যে, ধর্মের ব্যাপারেই সে চেষ্টিত। আসলে কিন্তু সে শয়তানেরই তাবেদারী করছে। তন্মধ্যে কাউকে দেখা যাবে যে, সে হযরত আবুবকর (রাঃ) এর পক্ষ সমর্থন করছে। অথচ সে হারাম ভক্ষণ করে। মিথ্যা এবং অনর্থক কথা বলে। আর নানাপ্রকার বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করে। হযরত আবুবকর (রাঃ) যদি তাকে দেখতেন তবে তিনিই তার প্রধান শত্রু হতেন। কেনন। তার বন্ধু ঐ ব্যক্তি যে তার পথের অনুসরণ করে। তার চরিত্র অনুকরণ করে এবং রসনাকে সংযত করে। এমন কি হযরত আবুবকর (রাঃ) এর স্বভাব এরূপ ছিল যে, মুখের মধ্যে তিনি একখন্ড পাথর রেখে দিতেন যেন তিনি অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকতে পারেন। সুতরাং ঐ ব্যক্তি কিরূপে হযরত আবুবকর (রাঃ) এর স্বভাব চরিত্রের অনুসরণ না করে তার ভালবাসা দাবী করতে পারে?

        আবার তন্মধ্যে কেউ কেউ হযরত আলী (রা:) এর পক্ষ সমর্থন করে। অথচ সে তার স্বভাব-চরিত্র অনুসরণ করে না। হযরত আলী (রা:) নিজ খেলাফতের সময় মাত্র তিন দেরহামে একটি জামা খরিদ করে পরিধান করতেন এবং গোড়ালী পর্যন্ত পায়জামার মাথা কর্তন করে রাখতেন। অথচ এখন আমরা হযরত আলী (রাঃ) এর সমর্থনকারীকে রেশমী পোশাক পরিধান করতে দেখি এবং হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থের দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত দেখতে পাই। অথচ সে হযরত আলী (রা:) এর ভালবাসা দাবী করে। রোজ কিয়ামতে এ ব্যক্তিই হযরত আলী (রাঃ) এর প্রধান শত্রু হবে। কোন ব্যক্তির নয়নের পুত্তলি ও কলিজার টুকরা প্রাণাধিক সন্তানকে কেউ ধরে নিয়ে যদি তার অনিষ্ট করে, তার মস্তকের চুল মুন্ডিয়ে দেয় এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চাকু দ্বারা কেটে দেয় আর সে ঐ সন্তানের পিতার ভালবাসা দাবী করে, তবে তার এ দাবীর মূল্য কি থাকতে পারে?

        একথা সবাই জানে যে, হযরত আবুবকর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ), হযরত ওসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ) এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম, তাঁদের পরিবার-পরিজন প্রত্যেকেই নিজেদের জীবনের চেয়ে দ্বীন-ধর্ম ও শরীয়তকে অধিক ভালবাসতেন। যারা দ্বীন-ধর্ম এবং শরীয়ত বিরোধী, তারাই শরীয়তকে বিচ্ছিন্ন করে, মোহের কাঁচি দিয়ে তাকে কর্তন করে ফেলে এবং এ কাজ দ্বারা তারা আল্লাহ ও তাঁর বন্ধুগণের শত্রু ইবলীসকেই ভালবাসে। সুতরাং তাদের অবস্থা রোজ কিয়ামতে ছাহাবায় কিরাম ও তাঁদের বন্ধুগণের নিকট কিরূপ হবে, তা' সহজেই অনুমেয়।

        মোটকথা শয়তানী খেয়াল বশতঃ যারা তাদের মনে এই ধারণা জন্মিয়েছে যে, যে ব্যক্তি হযরত আবুবকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) কে ভালবাসে ও তাঁদের পক্ষ সমর্থন করে মৃত্যুবরণ করলে দোযখের আগুন তার কাছে আসবেনা বা হযরত আলী (রাঃ)কে ভালবেসে ও তার পক্ষ সমর্থন করলে তার কোন ভয়ের কারণ থাকবে না। তাদের লক্ষ্য করা উচিত যে, হুযুরে পাক (দঃ) তাঁর প্রিয় দুহিতা হযরত ফাতিমা (রাঃ)কে একদা বলেছিলেন, তুমি নিজে আমল কর, কেননা আল্লাহর দরবারে আমি তোমার কোন উপকারে আসবো না। মোহমুক্ত ব্যক্তির জন্য এটাই হল প্রকৃত দৃষ্টান্ত।

        যারা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ এবং অন্যান্য বুযর্গকে ভালবাসে তাদের সম্বন্ধেও এই একই বিধান। যে ব্যক্তি এক ইমামের মাযহাবপন্থী বলে দাবী করে, সেই ইমামের স্বভাব-চরিত্র অনুসরণ করে না সেই ইমাম রোজ কিয়ামতে তার প্রতিপক্ষস্বরূপ হয়ে বলবেন, রসনার তর্ক ব্যতীত আমল কি আমার মাযহাব ছিল? রসনার দ্বারা কথা বলা হয় কাজের জন্য, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু তোমার কি হয়েছিল যে, তুমি আমাকে ভালবাসার দাবী করছ অথচ তুমি আমার আমল ও স্বভাব-চরিত্রের বিরুদ্ধাচরণ করেছ? অথচ তা-ই আমার মাযহাব এবং পন্থা ছিল। তার উপর থেকেই আমি আল্লাহর নিকট পৌঁছেছি। আর তুমি আমার মাযহাবকে মিথ্যা বানিয়েছ। মাযহাবপ্রিয়তাই শয়তানের প্রবেশের বড় পথ। তদ্বারা সে অধিকাংশ আমলকে ধ্বংস করেছে। যাদের হৃদয় থেকে আল্লাহর ভয় চলে গেছে, ধর্ম সম্বন্ধে যাদের অন্তর্দৃষ্টি দুর্বল হয়ে গেছে, যাদের সংসারের প্রতি লোভ প্রবল হয়েছে, যাদের জ্বালসা অত্যন্ত তীব্র তাদের জন্যই ওয়াজ-নসীহত আবশ্যক। মাযহাবের ভালবাসা ব্যতীত খ্যাতি ও যশঃ পাওয়া এবং নিজের দল বৃদ্ধি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ধারণা তাদের হৃদয়ে শিকর গেড়ে বসেছে। তারা যে শয়তানের কুমন্ত্রণার ভিতর আছে, তা' তাদেরকে জাগ্রত হতে দেয় না। বরং সে কুমন্ত্রণা তাদের হৃদয়ে প্রবেশ করে তাদের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে আর তারাও উক্ত কুমন্ত্রণার বশে অন্য লোকদের ক্ষতি সাধন করে। হযরত হাসান বছরী (রহ:) বলেছেন, আমরা শুনেছি যে, ইবলীস বলেছিল, আমি মুহাম্মদের উম্মতের জন্য পাপকে সহজ করে দিয়েছি। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে আমার পৃষ্ঠদেশ ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারপর আমি তাদের জন্য এমন একটি পাপ কাজ সহজ করে দিয়েছি, যা' থেকে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না। তা' হল, নফসের খাহেশ বা মোহপ্রীতি। শয়তান সত্যই বলেছে, কেননা তারা জানেনা যে, মোহপ্রীতি এমন কতগুলো উপাদানের সমন্বয় যা' পাপের দিকে নিয়ে যায়। তারা কিরূপে তার থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে? মধ্যে পাড়ি জমায়। মোটকথা ধর্ম বিশ্বাস এবং মাযহাবসমূহের মধ্যে যেসব বিষয় আছে, সে সম্পর্কে শয়তানের কুচক্রের সীমা নেই।

Post a Comment

0 Comments