হযরত ইব্রাহীম (আ) এর ঘটনা

        কোরআনুল কারীম হযরত ইব্রাহীম (আ) এর ঘটনাবলিকে বিভিন্নভাবে স্থানে স্থানে বর্ণনা করেছে, একজায়গায় সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করলে অন্য জায়গায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছ এবং কোন স্থানে বিভিন্ন প্রকার অবস্থা ও গুণাবলির কারণে তাঁর ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করা হয়েছে, এ কারণে যথোপযোগী তারতীবের সাথে সেগুলোকে পেশ করা হচ্ছে।

        তাওরাতের ভাষ্যমতে, ইব্রাহীম (আ) ইরাকের 'আওর' নামক স্থানের অধিবাসি এবং 'ফাদ্দান' গোত্রের লোক ছিলেন। আর তাঁর সম্প্রদায় ছিল প্রতিমা পূজারী। আর ইঞ্জিলে বর্ণিত আছে যে, তাঁর পিতা কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রের জন্য কাটের মূর্তি নির্মাণ করে বিক্রি করতেন। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা হযরত ইব্রাহীম (আ) কে প্রথম হতেই সত্যের উপলব্ধি এবং সত্য পথের সন্ধান ও হেদায়ত দান করেছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস রাখতেন যে, মূর্তিগুলো শুনতেও পায় না, দেখতেও পায় না এবং কারো ডাকে সাড়াও দিতে পারে না এবং ক্ষতি বা উপকার সাধনের সাথে তাদের কোন সম্পর্কও নেই। আর কাঠের এ পুতুলগুলো এবং অন্যান্য হস্ত নির্মিত পদার্থগুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি প্রত্যহ সকালে ও সন্ধ্যায় স্বচক্ষে দেখতেন যে, এসব নিষ্প্রাণ মূর্তিগুলোকে আমার পিতা নির্মাণ করে থাকেন এবং যেমন তাঁর ইচ্ছা হয় তেমন করে নাসিকা, কর্ণ, চক্ষু এবং দেহাবয়ব কর্তন ও কুন্দন করে তৈরি করেন। অতঃপর ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করে থাকেন। সুতরাং, তা কি আল্লাহ হতে পারে? কিংবা আল্লাহর সমতুল্য ও সমকক্ষ বলা যেতে পারে। কখনো না, অতঃপর নবুওয়াত লাভ করে সর্বপ্রথম তিনি এদিকেই মনোযোগ দিলেন।

নবুওয়াত লাভ


কোরআনুল কারীম হযরত ইব্রাহীম (আ)এর জ্ঞান চক্ষু উন্মিলনকারী হেদায়ত ও সৎপথ প্রাপ্তির বিষয় নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছে-

وَلَقَدْ أَتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رَشَدَهُ مِنْ قَبْل وَكُنَّا بِهِ عَلِمِينَ إِذْ قَالَ لِأَبِيْهِ وَقَوْمِ مَاهْذِهِ التَّمَائِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا كَفُونَ - قَالُوا وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عِيدِينَ - قَالَ لَقَدْ كُنتُمْ أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِي ضَلِيلٍ مُّبِينٍ - قَالُوا أَجِنَتَنَا بِالْحَقِّ أَمْ أَنْتَ مِنَ اللَّعِبِينَ - قَالَ بَلْ بُّكُمْ رَبُّ السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَإِنَّا عَلَى ذَلِكُمْ مِّنَ الشَّهِدِينَ - (الْأَنْبِيَاءُ)

        অর্থাৎঃ "আমি তো ইতোপূর্বে ইব্রাহীমকে সৎপথের জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তাঁর সম্বন্ধে ছিলাম পরিজ্ঞাত। যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এ মূর্তিগুলো কি? যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ। তারা বলল, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি। ইব্রাহীম (আ) বললেন, নিঃসন্দেহ তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে রয়েছে। তারা উত্তর করল, তুমি কি আমাদের জন্য কোন সত্য নিয়ে এসেছ? না কি এমনি বিদ্রূপকারীদের মত বলছ? তিনি বললেন, (এসব মূর্তি তোমাদের রব নয়) বরং তোমাদের প্রতিপালক জমিন ও আসমানসমূহের প্রতিপালক, যিনি এই সমুদয়কে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি এ বিষয়ে অন্যতম সাক্ষী। (সূরা আম্বিয়া: ৫১-৫৬)

        যখন এ মহান মর্যাদাশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী মহাপুরুষের উপর আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহ ও দানের স্রোত অবিরত ধারায় দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হচ্ছিল, তখন তার ফল এই দাঁড়াল যে, তিনি আম্বিয়ায়ে কেরামের সারিতে বিশিষ্ট স্থান লাভ করলেন এবং তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগের কেন্দ্রটি 'হানাফী ধর্ম' নামে অভিহিত হল।

        তিনি যখন দেখলেন যে, তাঁর সম্প্রদায় মূর্তিপূজা, নক্ষত্রপূজা এবং বিভিন্ন জড় পদার্থের পূজায় এমনভাবে মশগুল রয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলার অসীম কুদরত ও তাঁর একত্ব এবং তাঁর অভাব শূন্যতার কল্পনাও তাদের অন্তরে অবশিষ্ট থাকেনি এবং তাদের নিকট আল্লাহ্ তা'আলার একত্ববাদের বিশ্বাসের চেয়ে অধিক বিশ্বয়কর এবং আজগুবি কথা আর কিছুই নেই। এমনি সময়ে হযরত ইব্রাহীম (আ) একান্ত সাহসের সাথে এক আল্লাহর উপর ভরসা করে কাওমের সম্মুখে সত্যের পয়গাম নিয়ে এলেন এবং ঘোষণা করলেন:

        "হে আমার সম্প্রদায়। তোমরা নির্মিত মূর্তিসমূহের পূজায় বিভোর রয়েছে। তোমরা কি এমনই অজ্ঞতার নিদ্রায় বিভোর রয়েছ যে, সেসব নিষ্প্রাণ কাষ্ঠকে নিজেস্ব যন্ত্রপাতি দ্বারা কেটে, খোদাই করে প্রতিমা তৈরি করছ এবং তোমাদের পছন্দমত না হলে তা ভেঙ্গে পুণরায় বানাচ্ছ। তৈরির পর ওটাকেই আবার পূজা করছ এবং উপকার ও ক্ষতি সাধনের মালিক মনে করছ। তোমরা এসব অনর্থক কার্য হতে বিরত হও। আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদত কর যিনি একমাত্র তোমাদের এবং সমগ্র বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও মালিক।

        কিন্তু তাঁর জাতি তাঁর আহ্বানের প্রতি একটুও কর্ণপাত করল না। আর যেহেতু তারা সত্য শ্রবণকারী কান এবং সত্য দর্শনকারী চক্ষু হতে বঞ্চিত ছিল, কাজেই তারা এমন উচ্চ মর্যাদাশালী রাসূলের সত্যের দাওয়াত নিয়ে উপহাস করল এবং আরও অধিক অবাধ্যতা ও নাফরমানীতে লিপ্ত হল।

Post a Comment

0 Comments