আত্মার প্রকৃতি এবং দৃষ্টান্ত কেমন

 

        মানুষের চারটি স্বভাবঃ পাঠক-পাঠিকা! জেনে রাখবে যে, মানুষকে চীরটি প্রকৃতি বা স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের মধ্যে চারটি স্বভাব বিদ্যমান। যথা (১) হিংস্র জন্তুর স্বভাব, (২) ইতর জীবের স্বভাব, (৩) শয়তানের স্বভাব এবং (৪) ফিরেশতার স্বভাব। মানুষের মধ্যে ক্রোধ প্রবল হলে তার স্বভাব হয়ে যায় হিংস্র পশুর স্বভাবের ন্যায়। যেমন তখন মানুষ শত্রুতা, দ্বেষ, হিংসা, প্রহার, তিরস্কার এবং মানুষের প্রতি আক্রমণ ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়। যখন মানুষের উপর কামরিপু প্রবল হয় তখন সে ইতর প্রাণীর স্বভাবের ন্যায় লোভ- লালসা এবং অন্যান্য অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। আবার যখন মানুষের মধ্যে ক্রোধ, মোহ ইত্যাদি প্রবল হয় তখন সে শয়তানের স্বভাবের ন্যায় কুমন্ত্রণা, ধোকাবাজি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ইত্যাদি গর্হিত কার্যসমূহে রত হয়।

        পক্ষান্তরে মানুষের মধ্যে ফিরেশতার এবং খোদায়ী স্বভাবও আছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "কুলির রুহু মিন আমরি রাব্বী।" অর্থাৎ বল, আত্মা আমার প্রভুর নির্দেশ। মানুষের মধ্যে খোদায়ী শক্তি ও স্বভাব আছে বলেই সে দাসত্ব, নম্রতার বন্ধন এবং হীনতার অপদস্থতা থেকে মুক্তি ভালবাসে, সমস্ত বিদ্যার অনুসন্ধান করতে আগ্রহী হয়। বরং সে নিজেই জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান বা প্রত্যেক বস্তুর প্রকৃত পরিচয় জ্ঞানের দাবীদার হয়; মানুষকে জ্ঞানী বলা হলে সে আনন্দিত হয় এবং অজ্ঞতার দুর্নাম দিলে দুঃখিত হয়। প্রত্যেক কার্যের প্রকৃত তত্ত্ব অবগত হওয়া এবং সমস্ত সৃষ্ট জীবের উপর বলপূর্বক প্রভুত্ব করা, খোদায়ী স্বভাবের অন্তর্গত। মানুষের ভিতর এ লোভ ও আকাঙক্ষা আছে। মানুষের মধ্যে ইতর প্রাণীর স্বভাব আছে বলে সে অসৎ হয়। তার মধ্যে কাম ও ক্রোধ সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে শয়তানী স্বভাব আছে বলে সে অপকর্মের বিভিন্ন পন্থা আবিষ্কার করে, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা ও ছলনা দ্বারা তার অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করে। এমন কি সৎকার্যেও তার মন্দ স্বভাবজনিত নিদর্শন প্রকাশ পায়। উল্লিখিত চারটি স্বভাবের মূল প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে। এ স্বভাবগুলো আত্মার মধ্যে কেন্দ্রীভূত রয়েছে।

        যখন মানুষের মধ্যে ইতর প্রাণীর স্বভাব প্রবল হয় তখন সে শূকর বা কুকুরের ন্যায় হয়ে যায়। তখন তার মধ্যে শয়তানী স্বভাব প্রবল হয় তখন সে কার্যকলাপে শয়তানের রূপ ধারণ করে। আর তার মধ্যে ফিরেশতার স্বভাব বা খোদায়ী স্বভাব প্রবল হলে সে তখন প্রকৃত জ্ঞানী লোকে পরিণত হয়। আমরা এখানে শূকরের অর্থ কামপ্রবৃত্তিকে গ্রহণ করেছি। আকৃতি, বর্ণ এবং পঠনের জন্য শূকরকে নিন্দা করা হয় না বরং তার অপবিত্র ও কদর্য স্বভাবের জন্য সে সবার নিকট ঘৃণার পাত্র। কুকুর দ্বারা আমরা এখানে ক্রোধের অর্থ গ্রহণ করেছি। হিংস্র পশু এবং কুকুরের আকৃতি, বর্ণ ও গঠন দোষের জন্য এগুলো নিন্দিত নয় বরং তাদের পরস্পরের মধ্যে আক্রমণ প্রতি আক্রমণ এবং শত্রুতার জন্য তারা নিন্দার পাত্র। মানুষের মধ্যে পশুর হিংস্রতা এবং ক্রোধ আছে এবং শূকরের লোভ ও অপবিত্রতাও আছে। শূকর অশ্লীল ও নিন্দনীয় কাজে লিপ্ত হয় এবং হিংস্র পশু ক্রোধভরে অত্যাচার এবং কষ্ট প্রদানের কাজে এগিয়ে যায়। আর শয়তান শূকররূপ কামরিপুর উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং হিংস্র পশুর ক্রোধ বৃদ্ধি করে। তাদের একটির বিরুদ্ধে অন্যটিকে লেলিয়ে দেয় এবং তাই তাদের নিকট উত্তম বিবেচিত হয়। 

        বিজ্ঞ ব্যক্তি বুদ্ধির আধার। শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ষড়যন্ত্র ভন্ডুল করে দেয়া তার কাজ। তার সূক্ষ্ম অন্তদৃষ্টি এবং সমুজ্জ্বল ও স্বচ্ছ নূর দ্বারা সে তার সন্দেহকে দূর করে দেয় এবং কামরূপ শূকরের প্রতি ক্রোধরূপ কুকুরকে লেলিয়ে দিয়ে শূকরের কদর্য ও অপবিত্র স্বভাব বিনষ্ট করে দেয়। আবার কামরূপ শূকরকে ক্রোধরূপ কুকুরের উপর লেলিয়ে দিয়ে কুকুরের অনিষ্টতা দূর করে। ফলে ক্রোধরূপ কুকুর তার কর্তৃত্বাধীনে থাকে। যখন সে এরূপ কার্যের দ্বারা ভারসাম্য বজায় রাখে, তখন তার দেহ রাজ্যেও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং সবাই-ই সরল সোজা পথে এসে যায়। আর সে এ ব্যাপারে ব্যর্থ হলে তারা তাকে পরাস্ত করে এবং তারা তাদের কাজে ন্যস্ত করে। তখন সে ষড়যন্ত্রের পথ আবিষ্কারে আত্মনিয়োগ করে এবং কামরূপ শূকরকে সন্তুষ্ট করবার জন্য চিন্তা করতে থাকে এবং এভাবে সে ক্রোধরূপ কুকুরেরও অনুগত হয়ে ভাদের উভয়ের পূজারী হয়ে যায়। এটাই অধিকাংশ লোকের প্রকৃতি। তাদের অধিকাংশ কাজকর্ম উদরতৃপ্তি, কামরিপুর তৃপ্তি ইত্যাদির জন্য হয়ে থাকে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এরা মূর্তিপূজকদেরকে মূর্তি পূজা করতে নিষেধ করে বটে, কিন্তু যদি তাদের উপর থেকে মোহের পর্দা উন্মোচিত হয়ে যায়, তবে তারা নিজেরাই দেখতে পারে যে, তারা কামরূপ শূকরের সামনে রক্ সিজদাহ করছে ও অন্যান্য নির্দেশ পালনের জন্য অপেক্ষা করছে। যখনই এদের কামরূপ শূকর উত্তেজিত হয়, তখনই তার পরিচর্যায় নিযুক্ত হয়ে এরা কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করে, ক্রোধরূপ কুকুরের ক্ষেত্রেও এরা এরূপ করে থাকে। যখন ক্রোধ প্রবলাকার ধারণ করে, তখন নিজেদেরকে তার পদতলে সোপর্দ করে দেয়। এভাবে এরা শয়তানেরও সাহায্যকারী এবং ইবাদাতকারী হয়ে যায়। এ অবস্থা শুধু তাদেরই হয় যারা গাফিল, উদাসীন এবং কর্তব্যবিমুখ। এজন্যই প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজ নিজ চরিত্র, অবস্থা, কথাবার্তা, আলাপালোচনা এবং নীরবতা ও উপবেশন, দন্ডায়মান এবং শয়নের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা চাই। যদি মানুষ ত্যর অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা এগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করে, তবে সে দেখতে পাবে যে, সে দিবা-নিশি এসব কুবিষয়গুলোরই সেবা করে অন্যায় পথকেই আঁকড়ে ধরে আছে। এটাই আত্মার প্রতি চরম জুলুম এবং অত্যাচার। এর দ্বারা শুধু রাজ্যকে ভৃত্য, প্রভুকে লাল মুনিবকে গোলাল এবং শক্তিশালীকে দুর্বল করা হয়।

        জ্ঞানবুদ্ধিই এ কর্তৃত্ব, প্রভুত্ব ও নেতৃত্বের যোগ্যঃ উল্লিখিত বিষয়ত্ররই তার বেদষতের জন্য বুদ্ধির অধীন করে দেয়া হয়েছে। উক্ত বিষয় তিনটির অনুরক্ত হলে মনে এমন সব দোল জয়ে স্বভাবে পরিণত হয় যে, আত্মার জন্য তা' বিনাশক এবং মৃত্যুস্বরূপ হয়। যদি তুমি কাজ বা লালসারূপ শূকরকে মেনে চল, তবে অপবিত্রতা, নির্লজ্জতা, নীচতা, কৃপণতা, রিয়া, পরসোর চর্চা, নোংরামী, বৃথা কথা, চাটুকারিতা, লোভ, লিলা, তোষামোস, হিংসা-বিয়েল, পরসোসে সন্তোষ এবং অন্যান্য কুস্বভাব আত্মার মধ্যে বিরাজ করবে। আর লালসারূপ শূকরকে বলে রেখে ক্রোধরূপ কুকুরকে মেনে চললে অন্তরে দায়ীকতা, অহংকার, ক্ষমতা লিলা, অপরকে ঘৃণা, কলহপ্রিয়তা, আত্মম্ভরিতা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ, মানুষকে অবজ্ঞা, মানুষকে অত্যাচারের প্রবৃত্তি ইত্যাদি নিকৃষ্ট স্বভাবগুলো এসে যাবে। আর কাম-ক্রোধ রিপুদ্বয়কে বশ করে শুধু শয়তানকে মেনে চললে হৃদয়ে প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, ছলনা, বিশ্বাসঘাতকতা, অহমিকতা, কুটিলতা, ধোকাবাজী, অনিষ্টকারিতা ইত্যাদি দোষ স্বভাবে পরিণত হবে।

        আর যদি উল্লিখিত ব্যাপারের বিপরীত কর অর্থাৎ শয়তানী প্রবৃত্তিকে সাধ্যানুযায়ী বশে রাখ এবং কামরূপ শূকর, ক্রোধরূপ প্রকৃতিকে দমন করে রাখ এবং এগুলোকে ফিরেশতা স্বভাবের আয়ত্তাধীন কর, তবে আত্মার মধ্যে খোদায়ী গুণাবলী বিরাজ করতে থাকবে। যেমন, জ্ঞান, হেকমত, ইয়াকীন, দৃঢ়বিশ্বাস সব বস্তুর প্রকৃত পরিচয় জ্ঞান, বস্তুসমূহের স্বাভাবিক অবস্থার পরিচয়ের জ্ঞানের পরিপূর্ণতা ইত্যাদি। তখন তুমি কাম-ক্রোধ ইত্যাদি দোষ থেকে যুক্ত এবং পবিত্র হবে। লালসা থেকে রেহাই পাবে। তখন তোমার মধ্যে নিম্নোক্ত উত্তম গুণাবলী বিকশিত হবে। যথাঃ ক্ষমা, সন্তোষ, আত্মতৃপ্তি, বৈরাগ্য বা পার্থিব অনাসক্তি, পরহেজগারী, আল্লাহভীতি, প্রসন্নতা, লজ্জাশীলতা, নিরুদ্বিগ্নতা, আত্মমর্যাদাবোধ, লোভশূন্যতা ইত্যাদি। ক্রোধ প্রবৃত্তিকে দমনে রাখলে আত্মার মধ্যে নিম্নোক্ত গুণগুলো জন্মে। যেমনঃ সাহসিকতা, দয়া-মমতা, বীরত্ব, আত্মসংযম, ধৈর্য, গাম্ভীর্য, ক্ষমা, নীরবতা, স্থিরতা ইত্যাদি।

        আত্মা একটি আয়না সদৃশঃ উক্ত আয়নার মধ্যে উল্লিখিত দোষাবলী ও গুণাবলী প্রতিবিম্বিত হয়। যে উত্তম গুণাবলীর কথা বর্ণিত হল, তা' আত্মারূপ আয়নাকে উজ্জ্বল, দীপ্ত এবং আলোময় করে তুলে, এমন কি তার মধ্যে সত্যের জ্যোতি চমকিতে থাকে। তার মধ্যে ধর্ম সম্বন্ধীয় অনুসন্ধানের ব্যাপারের প্রকৃত তত্ত্ব প্রকাশ পেতে থাকে। এরূপ আত্মার প্রতি হুযুরে পাক (দঃ) এর হাদীসে ইঙ্গিত রয়েছে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যখন আল্লাহতায়ালা কোন বান্দার মঙ্গল কামনা করেন, তখন তিনি তার আত্মা থেকে এক উপদেষ্টা তার জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি অন্য হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তির মধ্যে উপদেষ্টা আছে, তার জন্য আল্লাহর নিকট হতে একজন নেগাহবান থাকে। এরূপ আত্মার মধ্যেই বিকির বা আল্লাহর স্মরণকারী হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, সতর্ক হও। আল্লাহর স্বরণেই আত্মা শান্তি লাভ করে। যেমন কুরআনে পাকে উক্ত হয়েছেঃ "আলা বিষিকরিল্লাহি তাত্বমায়িন্ত্রকুলুব"।

        পক্ষান্তরে উল্লিখিত নিকৃষ্ট দোষগুলো অন্ধকারপূর্ণ ধূদ্রের ন্যায়। এগুলো অন্তর আয়নাকে আছন্ন করে ফেলে। নিকৃষ্ট দোষগুলো একটির পর একটি ধুম্রজালের মত আত্মার মধ্যে আসতে থাকে যে পর্যন্ত আত্মা সম্পূর্ণই অন্ধকারাচ্ছন্ন ও কালবর্ণ হয়ে যায়। এর ফলে আত্মা আল্লাহর দরবার হতে অপসারিত হয় এবং তার উপর কালবর্ণের যবনিকা লটকিয়ে যায়। এটাই আত্মার জং বা মরিচা। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ "কাল্লা বাল রা'না আলা কুলুবিহিম মা কানু ইয়াকসিন। অর্থাৎ এ কখনই নয়, স্বীয় অর্জিত কর্মের দোষে তাদের আত্মার উপর মরিচা পড়ে গেছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যদি ইচ্ছে করতাম, তাদের পাপের কারণে তাদেরকে নিশ্চয়ই শাস্তি দিতাম এবং তাদের আত্মার উপর মোহর করতাম। তার ফলে তারা শুনতে পেত না। এখানে পাপের কারণে যে মোহর পতিত হয়, তার সাথে শ্রবণহীনতার বন্ধন রাখা হয়েছে, যেরূপ পরহেজগারীর সাথে শ্রবণ শক্তির বন্ধন রাখা হয়েছে।

        আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ "অত্তাকুল্লাহা ওয়াসমাউ অত্তাকুল্লাহা ওয়া ইয়ুআল্লিমুকুমুল্লাহু”। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় কর এবং শ্রবণ কর। আল্লাহকে ভয় কর আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিবেন। যখনই পাপরাশি আত্মার উপর পুঞ্জীভূত হয়, তখন আত্মার উপর মোহর অঙ্কিত হয়ে যায়, তখন আত্মা ধর্মের মঙ্গল ও কল্যাণ উপলব্ধি করা থেকে অন্ধ হয়ে যায়। তখন আখেরাতের ব্যাপারকে অবজ্ঞা করা হয় এবং পার্থিব ব্যাপারকে বড় মনে করা হয় এবং তজ্জন্যই সদাসর্বদা চিন্তা-ভাবনা থাকে। যখন তার কর্ণে আখেরাতের ব্যাপার সঙ্কেত দেয় এবং তার ঘটনাবলী সে শ্রবণ করে, তখন তা' তার কর্ণে প্রবেশ করে কিন্তু অন্য কর্ণ দিয়ে বের হয়ে যায়। তা' তার হৃদয়মধ্যে স্থায়ী হয় না। তা' তাকে তাওবাহ এবং অনুতাপের দিকে নিয়ে যায় না, তারাই আখেরাত সম্বন্ধে নিরাশ হয়। যেরূপ কাফিরগণ কবরের অধিবাসী সম্বন্ধে নিরাশ হয়। পাপদ্বারা আত্মা মসিলিপ্ত হবার অর্থ এটাই। এটা ফুরআনে পাক এবং হাদীস দ্বারা সমর্থিত।

         হযরত মাইমুন বিন মেহরান (রহঃ) বলেছেন, যখন কোন বান্দা কোন গুনাহ করে, তার আত্মায় একটি কাল দাগ পড়ে যায়। যখন সে তাওবাহ করে, তখন তা' মুছে যায়। যখন আবার সে গুনাহ করে, সে দাগ বড় বড় হয়ে যায়। এরূপ গুনাহর পর গুনাহ করলে আত্মা কালিমালিপ্ত হয়ে যায়। এটাই হল আত্মার মরিচা। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, মু'মিনের অন্তর উজ্জ্বল। তার মধ্যে একটি উজ্জ্বল প্রদীপ আছে। কাফিরের হৃদয় কালবর্ণ, অন্ধ। কামরিপুর বিরোধিতা করে আল্লাহর আনুগত্য করাই আত্মার পরিচ্ছন্নতা। আর পাপ হল আত্মার কালিমা, যে ব্যক্তি গুনায় লিপ্ত হয়, সে আত্মাকে মসিলিপ্ত করে তুলে। যে ব্যক্তি পাপকার্যের পর নেককাজ করে এবং তার চিহ্ন মুছে ফেলে, যেরূপ কোন আয়নার উপর নিঃশ্বাস ফেলে, তা' পরিষ্কার করলে এবং পুনর্বার নিঃশ্বাস ফেলে আবার তা' পরিষ্কার করলে তা' মলিনতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয় না।

        আত্মা চার প্রকারঃ হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আত্মা চার প্রকার। প্রথম প্রকার উজ্জ্বল আত্মা। তার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ আছে। তা-ই মু'মিনের আত্মা। দ্বিতীয় প্রকার আত্মা কাল আত্মা। এটা কাফিরের আত্মা। তৃতীয় প্রকার আবদ্ধ আত্মা, তা' গেলাফে আবদ্ধ। এটা মুনাফিকের আত্মা। চতুর্থ প্রকার মিশ্রিত আত্মা। যার মধ্যে ঈমানও রয়েছে আবার মুনাফিকীও আছে। এরূপ লোকের মধ্যে ঈমান বৃক্ষলতা সদৃশ। বৃক্ষলতাকে নির্দোষ পানি বর্ধিত করে। তার মধ্যে মুনাফিকীর প্রভাব ঐ ক্ষেত্রের ন্যায়, যা পুঁজ-দূষিত রক্তের দ্বারা বর্ধিত হয়। অতএব ঈমান ও নিফাকের মধ্যে যেটি প্রবল হবে, অন্তরের অবস্থাও তদ্রূপ হবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "ইন্নাল্লাযীনাত্তারাও ইযা মাসসা হুম ত্বায়িফুম মিনাশ শাইতানি তাযাককার ফাইযাহুম্ মুবছিরুন"। অর্থাৎ নিশ্চয় যারা খোদাভীরু শয়তানের কল্পনা স্পর্শ করতেই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাত চক্ষুম্মান হয়ে যায়। এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর স্মরণ দ্বারা আত্মা বা আন্তরের ঔজ্জ্বল্য অর্জিত হয়। আর যারা খোদাভীরু তারাই আল্লাহকে স্মরণ করে। অতএব বুঝা গেল যে, খোদাভীতি স্মরণ অর্থাৎ যিকিরের দ্বারস্বরূপ, আর যিকির কাশফের দুয়ার এবং কাশফ হল বৃহৎ নূর দীদারে ইলাহীর দরজা।

Post a Comment

0 Comments