পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, মিথ্যা কথা তার নিজস্ব দোষের জন্য হারাম নয়। কিন্তু যার সাথে মিথ্যা কথা বলা হয় তার বা অন্যান্য লোকের ক্ষতি এবং অনিষ্টের কারণেই মিথ্যা কথা হারাম হয়। মিথ্যার সর্বনিম্ন সোপান এই যে, যার নিকট মিথ্যা কথা বলা হয় সে প্রকৃত অবস্থার বিপরীত বুঝে নিতে বাধ্য হয় এবং তজ্জন্য সে প্রকৃত ঘটনা সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকে। তাতে তার বা অন্যান্যের ক্ষতি হয়। কোন কোন অজ্ঞতা আছে যে, তা' উপকার এবং মঙ্গলের কারণ হয়। যখন মিথ্যার দ্বারা সেই অজ্ঞতা অর্জিত হয় তখন মিথ্যা নাজায়েয নয়। কখনও কখনও মিথ্যা বলা ওয়াজিবও হয়ে পড়ে। হযরত মাইমুন ইবনে মেহরান (রহঃ) বলেছেন, কোন কোন স্থানে মিথ্যা বলা সত্য কথা বলা থেকেও উত্তম। যেমন যদি কোন লোক তরবারী হস্তে কোন লোককে হত্যা করবার জন্য তার পিছনে দৌড়াতে থাকে এবং সে লোকটি একটি গৃহে প্রবেশ করে, তারপর হত্যা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি এসে যদি তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে যে, তুমি অমুক লোককে দেখেছ কি? তখন তুমি তাকে দেখে থাকলেও বলবে যে, আমি তাকে দেখি নি। এক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলা তোমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়।
বাক্য উদ্দেশ্যের একটি অবলম্বন। উত্তম উদ্দেশ্যের নিকট পৌছার জন্য সত্য ও মিথ্যা যোগে তা' সম্ভব হলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলা হারাম। আর যদি শুধু মিথ্যার দ্বারাই সে উদ্দেশ্য সাধিত হয় তবে সেক্ষেত্রে মিথ্যা বলা হালাল যদি উদ্দেশ্যের বিষয়-বস্তু হালাল হয়। আর যদি উদ্দেশ্যের বিষয় বস্তু ওয়াজিব হয় তবে মিথ্যা বলাও ওয়াজিব। এর দৃষ্টান্ত আমরা এই মাত্র উল্লেখ করলাম। অন্যায়-অত্যাচার থেকে কাউকে রক্ষা করা ওয়াজিব; সুতরাং তাকে রক্ষা করার বিকল্প কোন পন্থা না থাকলে সেক্ষেত্রে মিথ্যা কথার দ্বারা তাকে রক্ষা করা ওয়াজিব হয়। বিশেষতঃ মুসলমানের প্রাণ রক্ষা করা ওয়াজিব কিন্তু সত্য কথা বলার কারণে যদি মুসলমানের প্রাণহানি ঘটে তবে সেক্ষেত্রে মিথ্যা না বললে ওয়াজিব তরক হয়। দুটো বিপক্ষ দলের মধ্যে মীমাংসার উদ্দেশ্যে, যুদ্ধ-বিগ্রহ থামিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে অথবা দু' সপত্নীর মধ্যে সভাব রক্ষা করার প্রয়োজনে মিথ্যা বলা হালাল হয়। অবশ্য এ কথা সত্য যে, যখন পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় ব্যতীত সদুদ্দেশ্য সাধিত হয়, তখন পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করবে না। কেননা মিথ্যার দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে গেলে তা' থেকে পরিত্রাণ পাওয়া বড়ই দুষ্কর। হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) তিনটি স্থান ব্যতীত মিথ্যা বলতে আদেশ দেন নি। যথাঃ (১) দুটো বিপক্ষ দলের মধ্যে মীমাংসার উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা। (২) যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলা। এবং (৩) পত্নীর নিকট স্বামীর মিথ্যা বলা এবং স্বামীর নিকট পত্নীর মিথ্যা বলা। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি দু'পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয় সে মিথ্যাবাদী নয়। কেননা সে মানুষের কল্যাণ এবং মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করে। তিনি আরও বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক মিথ্যাই লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু দু'জন মুসলমানের মধ্যে মীমাংসার জন্য যে মিথ্যা বলে তা' লিপিবদ্ধ হয় না। হযরত আবুল কাসেম বলেছেন, একবার হুযুরে পাক (দঃ)এর ছাহাবীদের মধ্যে দু'জনের ভিতর বিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাদের একজনের সাথে আমার সাক্ষাত হলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, অমুকের সাথে তোমার কি হয়েছিল? সেত আমার নিকট তোমার যথেষ্ট প্রশংসা করল। তারপর আমার তার বিপক্ষ ব্যক্তির সাথেও সাক্ষাত হয়েছিল এবং আমি তার নিকটও ঐরূপ কথা বললাম। এর ফলে তাদের উভয়ের মধ্যে মীমাংসা এবং সম্ভাব সৃষ্টি হয়ে গেল। এরূপ কাজ করার পর আমি নিজেকে লক্ষ্য করে বললাম, তুমি অন্যের উপকার করলে ঠিকই, কিন্তু নিজের ত ক্ষতিসাধন করলে। অতঃপর আমি এ ঘটনা হুযুরে পাক (দঃ) এর গোচরে আনলে তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, আবুল কাসেম! তুমি এভাবে মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে দিও, যদিও তাতে মিথ্যার প্রয়োজন হয়।
হযরত আতা ইবনে ইয়াসার বলেছেন, এক ব্যক্তি হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার স্ত্রীর সাথে মিথ্যা কথা বলব? তিনি বললেন, মিথ্যা বলায় কোন মঙ্গল নেই। তখন সে পুনরায় বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আবার বলুন, আমি তার সাথে কি মিথ্যা কথা বলব? এবার তিনি বললেন, তাতে তোমার কোন দোষ নেই। হযরত ইবনে আবি উজরাহ (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের সময় জীবিত ছিলেন। পুনঃ পুনঃ বিবাহ করে স্ত্রীকে তালাক দেয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। একথা লোক সমাজে প্রকাশ হয়ে গেলে ক্রমে তা' খলীফা ওমর (রাঃ) এরও কর্ণগোচর হল এবং এ ব্যাপারটি তার নিকট খুবই খারাপ লাগল। তারপর ঐ ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে আবুল কাসেমের হস্ত ধরে তাকে তার গৃহে এনে তার সামনে নিজের স্ত্রীকে বললেন, আমি আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাকে বলছি তুমি কি আমাকে ঘৃণা কর? স্ত্রী বলল, কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করো না। কিন্তু তিনি বললেন, না, কসম দিয়েই জিজ্ঞেস করছি। তখন তার স্ত্রী বলল, হাঁ আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তখন তিনি আবুল কাসেমকে বললেন, তুমি কি তার কথা শনেছ? এরপর তারা উভয়েই হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলেন এবং হযরত ইবনে আবি উজরাহ বললেন, আপনারা বলাবলি করছিলেন যে, আমি স্ত্রীলোকদের উপর অত্যাচার করি এবং তাদেরকে তালাক দেই। কিন্তু এই লোকটি আমার সঙ্গে গিয়েই একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করে এসেছে। তার নিকট শুনে দেখুন। হযরত ওমর (রাঃ) তার নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি য়া' জেনে এবং দেখে এসেছেন তা-ই বললেন। তখন হযরত ইবনে আবি উজরাহ (রাঃ) এর পত্নীকে তলব করা হল। সে তার ফুফীকে সহ হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি একথা বলেছ যে, তোমার স্বামীকে তুমি মন্দ জান? স্ত্রীলোকটি বলল, দেখুন, এখন আমি আল্লাহর নিকট তাওবাহ করে আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি। সে আমাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সেজন্য আমি মিথ্যা বলতে পারি নি। আমার মনের সত্য কথাই বলে ফেলেছি। হে আমীরুল মুমিনীন। আমি আপনার নিকট জিজ্ঞেস করছি, এ অবস্থায় কি আমার মিথ্যা কথা বলা উচিত ছিল। খলীফা ওমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ তোমার মিথ্যা বলাই উচিত ছিল। কোন স্ত্রীলোক যদি তার স্বামীকে পছন্দ না করে বা ভালবাসতে না পারে তবে তা' এভাবে প্রকাশ করতে নেই। কেননা পারিবারিক সুসম্পর্ক এবং সুখ-শান্তি ভালবাসার উপর স্থাপিত। ইসলাম ধর্ম পারিবারিক জীবনে প্রীতি ও ভালবাসার মাধ্যমেই বসবাস করার বিধান দিয়েছে।
হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, এ অবস্থা কেন হল যে, আমি তোমাদেরকে এরূপ মিথ্যার উপর ঘুরপাক খেতে দেখছি? যেমন করে পতঙ্গ অগ্নির চতুর্দিকে ঘুরপাক খায়। জেনে রাখ, আদম সন্তানের সকল মিথ্যাই লিপিবদ্ধ হয়। তবে সে যুদ্ধের ময়দানে যে মিথ্যা কথা বলে তা' লিপিবদ্ধ হয় না। কেননা যুদ্ধ একটি প্রতারণার স্থল। অথবা দু'জন মুসলমানের মধ্যে বিবাদ থাকলে তাদের মধ্যে মীমাংসা বা শান্তি স্থাপন করে দেয়ার জন্য যে মিথ্যা কথা বলা হয় তাও লিপিবদ্ধ হয় না।
হযরত ছাওবান (রাঃ) বলেছেন, যে কোন মিথ্যায়ই পাপ আছে। তবে যে মিথ্যায় মুসলমানের উপকার হয় বা তার নিকট থেকে কোন ক্ষতি দূর হয় তাতে পাপ নেই। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, যখন আমি তোমাদের নিকট হুযুরে পাক (দঃ) এর হাদীস বা তেমাদের ও আমার মধ্যে যা' ঘটেছে তা' বর্ণনা করি তাতে মিথ্যা প্রয়োগ করার চেয়ে আকাশ থেকে ভূতলে পতিত হওয়া আমি অধিক প্রিয় মনে করি। অবশ্য যুদ্ধ প্রতারণা মাত্র। তিন স্থানে মিথ্যা বলা জায়েয তা' হুযুরে পাক (দঃ) এর হাদীসে রয়েছে।
উক্ত বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা বলা জায়েয হয়, যদি উদ্দেশ্য সৎ এবং মহৎ হয়। যেমন কোন অত্যাচারী ব্যক্তি যদি কাউকে ধরে বলে, বল্ তোর ধন-সম্পদ কোথায় রেখেছিস? তখন সে যদি বলে, আমি জানিনা। তবে তা' জায়েয হবে। যদি কোন রমণীকে ধরে কেউ তার সাথে অশ্লীল কাজ করবার ইচ্ছা করে, তখন তার বলা উচিত আমি কোনদিন ব্যভিচার করি নি। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এসব অপবিত্র কাজ করে ফেলে সে যেন তা' আল্লাহর গোপনতার সাথে গোপন করে রাখে। কেননা অশ্লীল কাজ প্রকাশ করাও একটি অশ্লীল কাজ। সুতরাং প্রত্যেক লোকের তার প্রাণ ও ধন যা অন্যায় ভাবে আত্মসাৎ য়েছে এবং তার সম্মান রসনার সাহায্যে রক্ষা করা উচিত, যদিও তজ্জন্য মিথ্যার আশ্রয় করা হয়েে হয়। যদি তোমার মুসলমান ভ্রাতার কোন নিতে হয় তার সম্মান রক্ষাকল্পে তুমি তার বিষয় হয় তবে। ইবাদ রত লোকের মধ্যে মীমাংসার জন্য। দু'জন বিবা ামার নিকট অনুসন্ধান করা গোপন বিষয় তোমা অস্বীকার করতে পারবে। জানা সত্ত্বেও তা' অর্থ বা নিজের পড় পত্নীদের মধ্যে মীমাংসার জন্য যে, আমি তোমাকে পারে। শেষের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পত্নী মিখ্য বলা যেতে পারে পত্নীকে বলা যেতে পারে। ভালবাসি। তাকে সন্তুষ্ট করবার জন্য বা সর্বাপেক্ষা অধিক ভাল লোকের নিকট ওজর-আপত্তি সাথে এমন বস্তুরও ওয়াদা করা যেতে যেতে পারে, যা' তার শি দেখাবার জন্য তার সাথে শক্তির বহির্ভূত। সে জানে যে, যদি এরূপ বলা না হয় বা এরূপ ভালবাসা দেখানো না হয় তার মন শান্ত হবে না। এমতাবস্থায় তার মিথ্যা বলায় দোষ নেই।
স্মরণ রাখতে হবে যে, মিথ্যা কথা নিষিদ্ধ যদিও ঐ স্থানে সত্য বললে ক্ষতি। হয়। ত তখন দেখতে হবে যে, মিথ্যা বললে কি পরিমাণ উপকার হয় এবং সত্য বললে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়। এ দুটোর পরিমাপে যে দিকটি ভারী হবে সে দিকটিই রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ যদি সত্য কথা বললে মিথ্যা কথার চেয়ে অধিক ক্ষতি হয় তবে মিথ্যা বলা যাবে। আর যদি মিথ্যা বললে সত্য কথার চেয়ে অধিক ক্ষতি হয় তবে সত্য কথা বলবে। যখন সত্য ও মিথ্যার ক্ষতির পরিমাণ সমান হয় তখন সত্য কথার দিকে অনুরক্ত হওয়া উত্তম। কেননা শুধু প্রয়োজনের সময় তা' বিশেষ জরুরী কাজে মিথ্যা কথা হালাল। যদি কার্যটি প্রয়োজনীয় মিথ্যা বলেও সন্দেহ হয় তখন মিথ্যা বলা যে হারাম সে বিধানই বলবৎ থাকবে। এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম মাসয়ালা এটাই। প্রত্যেকেরই এ সূক্ষ্মতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তজ্জন্য সাধারণ বিধান এই যে, মিথ্যা থেকে মানুষ যতদূর সম্ভব বিরত থাকবে; বরং যদি নিজের মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয় সে তার উক্ত প্রয়োজন ত্যাগ করবে তবু মিথ্যা বলবে না। তবে অন্যের প্রয়োজনে মিথ্যা বলার দরকার হলে তা' উপেক্ষা করে অন্যের অনিষ্ট করা নাজায়েয। সাধারণতঃ মানুষের অধিকাংশ মিথ্যাই নিজের নিরাপত্তার জন্য বলা হয় বা নিজের নাম-ধাম বা যশঃবৃদ্ধির জন্য বলা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এমন কোন জিনিসের জন্যও মিথ্যা বলা হয়, যে জিনিস হারিয়ে গেলে তা' এমন কোন ক্ষতির কারণ নয়। এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা কোনক্রমেই জায়েয নয়।
ইয়াজিদের কন্যা আসমা বলেছেন, আমি এক রমণীকে হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট বলতে শুনেছি, আমার সপত্নী আছে। আমার স্বামী আমার সাথে প্রেম প্রীতিমূলক যে কাজগুলো করেন তা' আমি যদি আমার সপত্নীকে বলি, তাকি আমার জন্য সঙ্গত হবে? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, যা' দেয়া হয়নি তা' যদি কেউ দেয়া হয়েছে বলে সন্তোষ লাভ করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে দু'প্রকার প্রতারণার পোশাক পরিধান করে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যাকে যা' ভক্ষণ করতে দেয়া হয়নি তা' যদি সে ভক্ষণ করেছে বলে অথবা তাকে এটা দেয়া হয়েছে এবং ওটা দেয়া হয়নি বলে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে রোজ কিয়ামতে দু'প্রকার প্রবঞ্চনার পোশাক পরিধান করবে।
এ বিষয় সম্পর্কে কোন কোন আলিম প্রকৃত তত্ত্ব না বুঝেই ফতোয়া দেয় এবং এমন হাদীসের উল্লেখ করে যা' সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। তার উদ্দেশ্য নিজের সম্মান প্রকাশ করা। তজ্জন্য বাধ্য হয়ে বলতে হয় আমি জানি না এটা হারাম। স্ত্রীলোকগণ অনেক সময় সন্তানদেরকে এরূপ কথা বলে থাকে। যদি কোন সন্তানের সাথে মিথ্যা ওয়াদা না করলে বা তাকে ধমকি না দিলে সে বিদ্যালয়ে যেতে না চায় তবে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা ওয়াদা করা হালাল। অবশ্য হাদীস অনুসারে এটাও মিথ্যা বলে লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু তা' নির্দোষ হালাল মিথ্যা বলে লিপিবদ্ধ হয়। রোজ কিয়ামতে তারও হিসাব হবে। কেননা পরীক্ষা করা হবে যে, তা' বলার সময় তার উদ্দেশ্য সৎ ছিল কি অসৎ ছিল। সৎ থাকলে ক্ষমা করা হবে কিন্তু তার মধ্যেও সঙ্কট রয়েছে। নিজের প্রয়োজনের জন্য কখনও তা' বলা হয়। কিন্তু তা' বলার তখন প্রয়োজন হয় না। এভাবে আমলনামার মধ্যে মিথ্যার দপ্তর বড় হয়ে যায়। মোটকথা, যে ব্যক্তির নিকট মিথ্যা উপস্থিত হয় সে ভীষণ সঙ্কটে পড়ে যায়। তখন তার সুক্ষ্মভাবে দৃষ্টি করা উচিত যে, সে যে মিথ্যা বলতে যেতেছে তা' শরীয়তের দৃষ্টিতে সত্য কথার চেয়ে অধিক উপকারী হবে বা হবে না। এটা বড়ই সূক্ষ্ম ব্যাপার। এ অবস্থায় মিথ্যা ত্যাগ করাই উত্তম। তবে যে স্থানে মিথ্যা বলা ওয়াজিব হয় সেখানে তা' ত্যাগ করা উচিত নয়। যথাঃ হত্যা বা বড় পাপ নিবারণের জন্য মিথ্যা বলার আবশ্যক হয়।
কোন কোন লোকের ধারণা এই যে, ইবাদাতের কল্যাণ বা মহাপাপের শাস্তির বিষয়ে হাদীসের স্থগিত রাখা জায়েয। তারা মনে করে যে, ওটা শুদ্ধ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা' ভুল। কেননা হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ইচ্ছাপূর্বক আমার উপর মিথ্যার দোষারোপ করে, সে যেন তার স্থান দোযখে তালাস করে। প্রয়োজন ব্যতীত এ হাদীস অনুযায়ী কার্য ত্যাগ করা যাবে না। এর প্রয়োজনও নেই। কেননা মিথ্যার সামনে সত্য চলে যায়। যা' কুরআনের আয়াতে ও হাদীসে এসেছে তা-ই এ বিষয়ে যথেষ্ট। কেউ কেউ বলে যে, কোন কোন বিষয় বার বার শুনতে শুনতে তার ভয় চলে যায়। ভয় থাকলেও কথার মধ্যে যত ভয় থাকে, তত হয় না। এ ধারণা সাধারণতঃ প্রবল। আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের বাণীতে মিথ্যা সংযোগের পাপের চেয়ে বড় পাপ আর কি রয়েছে?
0 Comments