পাঠক-পাঠিকা! জেনে রাখ যে, মনের কুমন্ত্রণা অতি সূক্ষ্ম। এ সম্বন্ধে কুরআনের আয়াত এবং পরস্পর বিরোধী হাদীস রয়েছে। শরীয়তে অভিজ্ঞ আলিমগণ ব্যতীত অন্য কেউ এর পন্থা বর্ণন। করতে পারে না। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মনের মধ্যে যে ভাব উত্থিত হয় আল্লাহ তা' ক্ষমা করবেন। যে পর্যন্ত সে তা' বাক্যে প্রকাশ না করে বা কার্যে পরিণত না করে। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালা কেরামন কাতেবীনকে বলেন, যখন আমার কোন বান্দা কোন কাজ করবার ইচ্ছে করে তখন তা' লিখোনা। যখন তা' কার্যে পরিণত করে তজ্জন্য একটি পাপ লিখো। যখন সে নেক কাজ করবার ইচ্ছে করে তখন তার জন্য একটি পুণ্য লিখো। যদি সে তা' কার্যে পরিণত করে তার জন্য দশটি নেকী বা পুণ্য লিখো। একথা ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ রয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে যে, হৃদয়ের মন্দ চিন্তা ও মন্দ কাজ করবার ইচ্ছে ক্ষমা করা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ করবার ইচ্ছা করে তা' কার্যে পরিণত নাও করে, তার জন্য একটি পুণ্য লিখা হয়। হাদীস শরীফে এরূপও লিখা রয়েছে যে, যে ব্যক্তি নেক কাজ করবার ইচ্ছে করে তা' কার্যে পরিণত করে তার জন্য সাতশ' নেকী পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজ করবার ইচ্ছে করে তা' কার্যে পরিণত না করে তার জন্য কোন পাপই লিপিবদ্ধ করা হয় না। তবে যদি সে তা' কার্যে পরিণত করে তখন একটি মাত্র পাপ লিপিবদ্ধ করা হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, যে ব্যক্তি পাপকার্য করবার জন্য সংকল্প করে, আমি তাকে তা' ক্ষমা করে দেই যে পর্যন্ত সে তা' কার্যে পরিণত না করে। উল্লিখিত হাদীসসমূহ ক্ষমার কথাই প্রকাশ করেছে।
মানসিক চিন্তার শাস্তিঃ মনের (মন্দ) চিন্তার যে শাস্তি হয় সে সম্বন্ধে আল্লাহতায়ালার নিম্নোক্ত আয়াতে রয়েছে। যথাঃ "যা তোমাদের মনের মধ্যে আছে তা' প্রকাশ কর বা গুপ্ত রাখ শান্তি দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যে বিষয়ে তোমার জান নেই তজ্জন্য তুমি ব্যস্ত থেক না। নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু এবং হৃদয় ইত্যাদি প্রত্যেককেই নিজ নিজ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। এতে দেখা যাচ্ছে যে, মনের কার্যও চক্ষু এবং কর্ণের কার্যের ন্যায়। তার জন্যও সাধারণতঃ কোন ক্ষমা নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করে সে তার আত্মার প্রতি অন্যায় করে। তিনি আরও বলেন যে, আল্লাহ তোমাদের শপথের মধ্যে অনর্থক কথার জন্য শান্তি দেবেন না কিন্তু তোমাদের আত্মা যা' অর্জন করে তজ্জন্য তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন। আমাদের নিকট এই বিতর্কের সমাধান নিম্নরূপ ।
চিন্তার চারটি স্তরঃ যে পর্যন্ত মনের ভাব প্রথম থেকে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ না করে সে পর্যন্ত তার প্রকৃত বৃত্তান্ত জানা যায় না। তাই আমরা বলি যে, সর্বপ্রথম হৃদয়ের মধ্যে যে ভাব উত্থিত হয় তার নাম আকস্মিক চিন্তা। একটি স্ত্রীলোক কারো পিছনে হাঁটতে থাকলে হঠাৎ তার মনে হয় যে, যদি সে তার দিকে আবার দৃষ্টিপাত করে সে তাকে নিশ্চয়ই উত্তমরূপে দেখতে পাবে। সুতরাং হৃদয়ের দ্বিতীয় ভাব তাকে পুনঃ দেখবার জন্য লালসা জন্মিয়ে দেয়। এটা মোহের স্বাভাবিক আলোড়ন। প্রথম ভাব থেকে দ্বিতীয় ভাবের উদয় হয়। আমরা প্রথম ভাবের নাম দেব হাদীসুন নফস বা প্রবৃত্তির উক্তি। দ্বিতীয় ভাবের নাম দেব মাইলুত তবএ' বা প্রকৃতির অনুরক্তি। তৃতীয় ভাবের নাম দেব হুকমুল কলব বা মনের নির্দেশ, কেননা মন তা' কার্যে পরিণত করবার জন্য আদেশ দেয়। অর্থাৎ তৃতীয় ভাব সে রমণীর দিকে দৃষ্টিপাত করায়। প্রকৃতি অনেক সময় কোন বিষয়ে অনুরক্ত হয় বটে, কিন্তু তা' নিষিদ্ধ হবার কারণে মন তার অনুমতি দেয় না। যেমন লজ্জা বা ভয়ের কারণে সে রমণীর দিকে দৃষ্টিপাত করা যায় না বা অনেক সময় তা' নিষিদ্ধ হবার কারণে সে চিন্তাকে ফিরিয়ে আনতে হয়। এটা প্রত্যেক অবস্থায়ই বুদ্ধির আদেশ। এর নাম এ'তেকাদ বা বিশ্বাস। এটা প্রথম ও দ্বিতীয় ভাবের পরে আসে। চতুর্থ ভাব হল, রমণীকে দেবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া এবং সংকল্প সুপ্রতিষ্ঠিত করা। এর নাম দেব কার্য ও নিয়ত সহকারে ইচ্ছে পোষণ। প্রথমে ইচ্ছে দুর্বল থাকে। কিন্তু যখন হৃদয় প্রাথমিক হঠাৎ ভাবের দিকে মনোনিবেশ করে তখন এই ইচ্ছে দৃঢ় হয়। এই দৃঢ় ইচ্ছে হওয়া সত্ত্বেও মানুষ কখনও কখনও অনুতাপ ও অন্যান্য কারণে পাপের কার্যে অগ্রসর হয় না। আবার কখনও কখনও অন্যমনষ্ক থেকে তা' করে না এবং তার দিকে দৃষ্টিপাত করে না। অনেক সময় অবাধ্য লোক তা' অমান্য করে সেই কাজের জন্য ওজর আপত্তি করে। সুতরাং কার্যের পূর্বে হৃদয়ে এই চারটি অবস্থা হয়। প্রথমে প্রবৃত্তির উক্তি। তারপর প্রকৃতির অনুরুক্তি বা মনের টান। তারপর মনের নির্দেশ এবং তারপর ইচ্ছে ও সংকল্প।
প্রথম স্তরঃ মনের আকস্মিক ভাব বা প্রবৃত্তির কোন শাস্তি নেই। কেননা তাতে লোকের কোন হাত নেই।
দ্বিতীয় স্তরঃ তদ্রূপ প্রকৃতির অনুরুক্তি এবং কামভাব উদ্রেকের কোন শাস্তি নেই। কেননা এটাও মানুষের ইচ্ছানুযায়ী নয়। এ দু'বিষয় লক্ষ্য করে হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে তাদের প্রবৃত্তি যে ভাব উদয় করে তা' ক্ষমার্হ। প্রবৃত্তির উক্তি ঐ চিন্তা যা হৃদয়ে হঠাৎ উত্থিত হয়। তা' কার্যে পরিণত করবার জন্য কোন দৃঢ়সংকল্প করা হয় না। ইচ্ছে ও সংকল্পকে প্রবৃত্তির উক্তি বলে গণ্য করা যায় না। নিম্নোক্ত হাদীস মর্মেই তা' উপলব্ধি করা যায়। যথাঃ হযরত ওসমান বিন মাজউন (রাঃ) হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার প্রবৃত্তি-খাওলাকে তালাক দিতে বলে। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, বিলম্ব কর, বিবাহ করা আমার সুন্নত। তিনি বললেন, আমার নফস আমাকে খোজা বা পুরুষত্বহীন হতে বলে। তিনি বললেন, ধৈর্য ধর, আমার উম্মতের জন্য রোযাই খোজার কাজ করে। তিনি বললেন, আমার প্রবৃত্তি আমাকে সন্ন্যাস অবলম্বন করতে বলে। তিনি বললেন, থাম, আমার উম্মতের সন্ন্যাস জিহাদ এবং হজ্ব। তিনি বললেন, আমার প্রবৃত্তি আমাকে মাংস ভক্ষণ বর্জন করতে বলে। তিনি বললেন, থাম। আমি মাংস ভালবাসি। আমি পেলে তা' ভক্ষণ করি। যদি আমি মাংসের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, নিশ্চয় তিনি আমাকে তা' দেবেন। উল্লিখিত ভাবগুলোর মধ্যে কার্যে পরিণত করবার কোন সংকল্প নেই। সুতরাং এগুলোই প্রবৃত্তির উক্তি। এজন্যই হুযুরে পাক (দঃ) কোন ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প করবার পূর্বে এবং তা' কার্যে পরিণত করবার পূর্বে পরামর্শ সভা আহ্বান করতেন।
তৃতীয় স্তর: তৃতীয় স্তরে মন বিবেচনা করে যে, তা' কার্যে পরিণত করা উচিত কি-না। মনের এই অবস্থা ইচ্ছে এবং অনিচ্ছার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এর মধ্যে অবস্থার প্রভেদ হয়ে যায়। যা' তার ইচ্ছাধীন। এজন্য তৃতীয় স্তরের ভাবের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। অবশ্য যে ভাব তার ইচ্ছাধীন নয়, তজ্জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
চতুর্থ স্তর: মন্দভাবকে কার্যে পরিণত করবার ইচ্ছে, তজ্জন্য শাস্তি হবে। তবে যদি সে তা' কার্যে পরিণত না করে, তার বিধান সম্পর্কে মতভেদ আছে। যদি সে আল্লাহর ভয়ে এবং তার মন্দ ইচ্ছের কারণে তাওবাহ করে তা' কার্যে পরিণত না করে, তবে তার জন্য একটি পুণ্য লিখা হয়। কেননা তার মন্দ ইচ্ছে একটি পাপকাজ বটে। কিন্তু তা' থেকে বিরত থাকা এবং নিজেকে চেষ্টা যত্ন দ্বারা বিরত রাখা পুণ্যকার্য। নিজ প্রকৃতির প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে চেষ্টা পরিশ্রম করে পাপ থেকে বিরত থাকার ইচ্ছায় অধিক শক্তির প্রয়োজন। এভাবে প্রকৃতির বিরুদ্ধে চেষ্টা চরিত্র করবার অর্থ আল্লাহর কাজ করা। আল্লাহর কাজ করা শয়তানের অনুসরণ করা অপেক্ষা অনেক কষ্টকর। তজ্জন্য একটি পুণ্য লিখা হয়। কেননা ঐ কাজ থেকে তার বিরত হবার চেষ্টা অধিক প্রবল হয়।
যদি আল্লাহকে ভয় না করে অন্য কোন কারণে সে তা' থেকে বিরত হয় তবে তজ্জন্য একটি পাপকার্য লিপিবদ্ধ হয়। কেননা তার ইচ্ছে তার হৃদয়ের একটি কার্য। এর প্রমাণ ছহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, ফিরেশতাগণ বলেছিল, হে মাবুদ! তোমার বান্দা যদি অজ্ঞানে কোন পাপকার্য করে তার অবস্থা কি হবে? আল্লাহ তায়ালা বললেন, তার প্রতি লক্ষ্য করবে যদি সে তা' কার্যে পরিণত করে তখন তার জন্য ঐ কার্যের যোগ্য একটি পাপ লিপিবদ্ধ করবে। যদি সে তা' না করে তবে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করবে। কেননা সে ঐ কাজ আমারই জন্য ত্যাগ করে। যদি বান্দা অশ্লীল কার্য করবার জন্য দৃঢ় সংকল্প করে অথচ কোন ওজর বা অন্যমনষ্কতার জন্য তা' কার্যে পরিণত না করে, তার জন্য কিরূপে নেকী লিপিবন্ধ হবে? হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, "ইন্নামা ইউহশারুন নাসু আলা নিয়্যাতিইম।" অর্থাৎ মানুষকে তাদের নিয়তের উপর পুনরুত্থান করা হবে। যে ব্যক্তি রাত্রে এই দৃঢ়সংকল্প করে যে ভোরে উঠে সে একজন মুসলমানকে হত্যা করবে বা কোন স্ত্রীলোকের সঙ্গে ব্যভিচার করবে এবং যদি ঐ রাত্রেই তার মৃত্যু হয় তখন ঐ সংকল্পের উপরই তার মৃত্যু হয়েছে মনে করতে হবে। এ অবস্থায় তাকে তার নিয়তের উপর পুনরুত্থান করা হবে। কেননা সে পাপকার্যের দৃঢ়সংকল্প করেছে। যদিও সে তা' কার্যে পরিণত করতে পারে নি। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যখন দু'জন মুসলমান অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পরস্পরের সম্মুখীন হয় তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই দোযখে যাবে। আরজ করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! হত্যাকারীর দোযখে যাবার কারণ বুঝা গেল, কিন্তু নিহত ব্যক্তি দোযখে যাবে কেন? তিনি বললেন, তার কারণ এই যে, সেও তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করবার নিয়ত করেছিল। সে তার ইচ্ছের জন্যই দোযখরাসী হবে যদিও সে অত্যাচারিত ব্যক্তি।
উল্লিখিত প্রমাণের পর কি করে বলা যাবে যে, আল্লাহতায়ালা ইচ্ছে ও নিয়তের জন্য শান্তি দেবেন না? বরং বান্দার প্রত্যেক মন্দ ইচ্ছের জন্যই শাস্তি হবে যদি তার বিনিময়ে কোন নেক কার্য করা না হয়। অনুতাপ অনুশোচনা দ্বারা সংকল্প ভঙ্গ করা নেকীর কার্য। এরূপ অনুতাপ ও অনুশোচনার ফলে তার জন্য একটি নেকী লিখা হয়। অবশ্য যদি কোন ওজরবশতঃ ইচ্ছে বিলুপ্ত হয় তাতে নেকী হয় না। এজন্যই যখন আল্লাহতায়ালার এ আয়াত নাযিল হল যে, "তোমাদের অন্তরে যা' আছে তা' প্রকাশ কর বা গুপ্ত রাখ আল্লাহ তজ্জন্য হিসাব নেবেন।" তখন কয়েকজন ছাহাবী হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করলেন, যা' আমাদের সাধ্যের অতীত তার জন্যও আমাদের হিসাব লওয়া হবে কি? আমাদের কারও কারও মনে কোন কোন সময়ে এমন খেয়াল আসে যে, তা' আসুক এরূপ ইচ্ছে কেউই করে না। তার জন্যেও কি শাস্তি হবে? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, হযত যেরূপ ইয়াহুদীগণ বলেছিল তদ্রূপ তোমরা বল যে, আমরা শ্রবণ করলাম কিন্তু তা' মান্য করলাম না। বল, আমরা শ্রবণ করলাম ও তা' মান্য করলাম। তারপর আল্লাহতায়ালা এক বছর পর নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা তা' থেকে মুক্তি দিলেন। যথাঃ "লাইয়ুকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা" অর্থাৎ আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেন না।
উল্লিখিত আয়াতের মর্মে বুঝা গেল যে, মনের মধ্যে যে সব ভাব বা খেয়াল চেষ্টা করে আনয়ন করা হয় না তজ্জন্য আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দেবেন না। যে ব্যক্তি মনে করে যে, যা-ই মনের মধ্যে আসে তা-ই প্রবৃত্তির উক্তি এবং তার মধ্যে কোন বিভক্তি নেই। তবে সে নিশ্চয় ভুলের মধ্যে আছে। অহঙ্কার, আত্মকেন্দ্রিকতা, আত্মম্ভরিতা, রিয়া, মুনাফিকী, হিংসা-বিদ্বেষ এবং মনের অন্যান্য অসৎ খেয়ালের জন্য কিরূপে শাস্তি না হবে বরং চক্ষু, কর্ণ ও হৃদয়কে তার বিষয় জিজ্ঞেস করা হবে। অর্থাৎ যা' ইচ্ছাধীন থাকে তার হিসাব লওয়া হবে। যদি কোন বালেগা বিবাহযোগ্য। স্ত্রীলোকের প্রতি অনিচ্ছাকৃতভাবে দৃষ্টি পড়ে যায় তার জন্য শাস্তি হবে না। কিন্তু যদি দ্বিতীয়বার তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হয় তাতে শাস্তি হবে। কেননা এ দ্বিতীয়বারের দৃষ্টি-দৃষ্টিকারীর ইচ্ছাধীন, অন্যান্য ক্ষেত্রেও মনের খেয়াল সম্পর্কে এরূপ বিধান। শাস্তির উপযুক্ত শুধু হৃদয়ই। কেননা হৃদয়ই মূল বস্তু। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আল্লাহর ভয় এইস্থানে একথা বলে তিনি হৃদয়ের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "আল্লাহ কুরবানীর পশুর রক্ত ও মাংস গ্রহণ করবেন না। কিন্তু তিনি তোমাদের নিকট থেকে তাকওয়া এবং আল্লাহ-ভীতি গ্রহণ করবেন।" হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে বস্তু হৃদয়ের উত্তেজনা সৃষ্টি করে তা-ই অন্যায় বা পাপ এবং যে বস্তু হৃদয়কে সান্ত্বনা দান করে তা-ই পুণ্য। যদি হৃদয় খালেছ এবং পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে আনুষ্ঠানিকতায় ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলেও তা' শাস্তির যোগ্য হয় না; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরস্কার পাওয়া যায়। যেমন যে ব্যক্তি মনে করে যে, তার অজু আছে এবং এরূপ মনে করে সে নামায আদায় করে কিন্তু নামায আদায়ের পর তার মনে হয় যে তার অজু ছিল না। তখন এই কার্যের জন্য সে পুণ্য পাবে। অবশ্য মনে পড়া সত্ত্বেও যদি সে অজু না করে তখন সে শাস্তির যোগ্য হবে। যদি কোন ব্যক্তি তার শয্যায় (অন্ধকারের মধ্যে) কোন স্ত্রীলোককে পেয়ে মনে করে যে, সে তার স্ত্রী। তখন তার সাথে সঙ্গম করলে তার কোন পাপ হবে না। যদিও সে বেগানা স্ত্রীলোক হয়। ঠিক একই ভাবে যদি সে তার স্ত্রীকে অন্য স্ত্রীলোক মনে করে তার সাথে সঙ্গম করে তবে তজ্জন্য সে গুনাহগার হবে। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক কার্যই মূলতঃ হৃদয়ের কার্য, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্য নয়।
0 Comments