ছাফা ও মারওয়ায় শওত করার বিবরণ

         যে 'ব্যক্তি ওমরার তাওয়াফ করে' সেব্যক্তি উহার পরেই ছাফা এবং মারওয়ায় দৌড়ান কাৰ্য্য আদায় করিবে। আর যে ব্যক্তি এক সঙ্গে হজ্জ ও ওমরার নিয়ত করে, প্রথমে সে ব্যক্তি ওমরার তাওয়াফ করিবে, তৎপরে ওমরার জন্য ছাফা এবং মারওয়ার শওত করিবে। তৎপরে সেই সময় হজ্জের সুন্নত তাওয়াফে-কদুম করিয়া হজ্জের জন্য দ্বিতীয়বার ছাফা ও মারওয়ায় শওত করিবে। আর যদি ইচ্ছা করে, তবে দ্বিতীয় ছাফা ও মারওয়ায় শওতটি তাওয়াফে জিয়াতের পরে আদায় করিবে। তাওয়াফ শেষ করিয়া তৎক্ষণাৎ 'বাবোছছাফা' দিয়া বাহির হইয়া ছাফা পাহাড়ের উপর উঠিতে হইবে। যদি অন্য দরওয়াজা দিয়া বাহির হয়, তাহাও জায়েজ হইবে। বাহির হওয়া কালে প্রথমে বাম পা নামাইবে। ছাফায় পৌঁছিবার অগ্রে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া মোস্তাহাব-

أَبْدَأَ بِمَا بَدَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ إِنَّ الصَّفَا وَ الْمَرْوَةَ مِنْ ا رَبَّ الْعَالَمِينَ . شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يُطَوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللَّهُ شَاكِرٌ عَلِيمٌ *

        অর্থঃ- "যাহা দ্বারা আল্লাহাতায়ালা শুরু করিয়াছেন, আমিও তদ্বারা শুরু করিতেছি। নিশ্চয় ছাফা ও মারওয়া আল্লাহ্ তায়ালার নেশানির (নিদর্শনের) অন্তর্গত। যে ব্যক্তি এই ঘরের হজ্জ করে কিম্বা ওমরা করে, তাহার পক্ষে উভয়ের তাওয়াফ করা দোষ হইবে না, আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন নেকি করে, নিশ্চয় আল্লাহ্ ছওয়াব দেনেওয়ালা (সুফল প্রদাতা) জাননেওয়ালা (অভিজ্ঞ)।

        ছাফায় উঠিবার অগ্রে হজ্জের জন্য এরূপ নিয়ত করিবে,- "আল্লাহোম্মা ইন্নি ওরিদো আন আছয়া" মাবায়নাছ ছাফা গুল মারওয়াতে ছাবয়াতা আশওয়াতেন ছা'ইয়াল হাজ্জে সল্লাহতায়ালা আড্ডা অজাল্লা ইয়া রাব্বাল আ'লামিন।” 

اللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَسْعَى مَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعَةَ

أَشْوَاطٍ سَعْيَ الْحَجِّ لِلَّهِ تَعَالَى عَزَّ وَ جَلَّ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ .

অর্থঃ-ইয়া আল্লহ্ যে সমস্ত আলমের প্রতিপালক, নিশ্চয় আমি আল্লাহ বোজর্গ মহানের জন্য হজ্জের উদ্দেশ্যে ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাত শওত দৌড়িবার নিয়ত করিতেছি।

        আর ওমরার জন্য নিম্নোক্ত প্রকার নিয়ত করিবে,-

اللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَسْعَى مَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعَةَ

أَشْوَاطٍ سَعْيَ الْعُمْرَةِ لِلَّهِ تَعَالَى عَزَّ وَ جَلَّ يَا رَبِّ الْعَالَمِينَ .

        "আল্লাহোম্মা ইন্নি ওরিদো আন আছয়া" মাবায়নাছ ছাফা অল মারওয়াতে ছাবয়াতা আশওয়াতেন ছা'ইয়াল ওমরাতে লিল্লাহে তায়ালা আড্ডা অজাল্লা ইয়া রাববাল আলামিন।"

অর্থঃ- ইয়া আল্লাহ, হে সমস্ত আলমের প্রতিপালক, আমি আল্লাহ বোজর্গ মহানের জন্য ওমরার উদ্দেশ্যে ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাত শওত দৌড়িবার নিয়ত করিতেছি।"

        তৎপরে ছাফার সিঁড়ির উপর উঠিবে যেন উহার বরাবর যে বাবোছছাফা নামক দরওয়াজা আছে তাহা দিয়া খানায় কা'বা দেখিতে পার। ছাফা পাহাড়ের উপর উঠিবার আবশ্যক নাই। আর যদি খানায় কাবা দেখা সম্ভব না হয়, তবে সেই দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবে। তৎপরে দুই হাত দুই স্কন্ধ পর্যন্ত উঠাইয়া দুই হাতের তালুকে করিবে। আর মারওয় আছমানের দিকে ফিরাইয়া পড়িবে,-

اللهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ *

"আল্লাহো আকবর আল্লাহো আকবর, আল্লাহো আকবর অলিল্লাহেল হামদ।"

অর্থ:- আল্লাহ সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ সর্ব্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্ব্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ-তায়ালার জন্য প্রশংসা।

        উপরোক্ত কথাগুলি উচ্চঃস্বরে পড়িবে, তৎপরে কলেমা উচ্চঃস্বরে পড়িবে, তৎপরে চুপে চুপে দরুদ এবং নিজের ও মুছলমানগণের জন্য দোয়া করিবে। তৎপরে বার বার উল্লিখিত তকবির পড়িবে।

        তৎপরে ছাফা হইতে নামিয়া দোয়া পড়িতে পড়িতে স্বাভাবিক চলনে চলিতে চলিতে সবুজ খুটির ছয় হাত বাকি থাকিতে মধ্যম ধরণের দৌড়িতে আরম্ভ করিয়া দ্বিতীয় সবুজ খুটি পর্যন্ত দৌড়িবে, তৎপরে স্বাভাবিক চলনে চলিয়া মারওয়া পাহাড়ের সিঁড়ির উপর উঠিবে, তথায় একটু ডাহিন দিক ফিরিয়া কা'বা ঘরের দিকে মুখ করিয়া ও ছাফা পাহাড়ের ন্যায় তকবির, জেকর, দরুদ ও দোয়া পাঠ করিবে।

        পাঠক, মনে রাখিবেন, ছাফা হইতে মারওয়া পর্যন্ত চলাকে এক শওত বলা হয়।

        তৎপরে মারওয়া হইতে ছাফা পর্যন্ত চলাকে দ্বিতীয় শওত হইবে। এইরূপ সাত শওত করিতে হইবে। প্রথমে ছাফা হইতে আরম্ভ করিয়া সপ্তম শওত মারওয়াতে শেষ হইবে।

        ছাফার দিক হইতে চলিবার সময় সবুজ খুটির ছয় হাত দূর থাকিতে দৌড়িতে আরম্ভ করিবে ও দ্বিতীয় খুটি পর্যন্ত দৌড়ান শেষ করিবে । আর মারওয়ার দিক হইতে চলিবার সময় দ্বিতীয় খটির নিকট হইতে দৌড়ান আরম্ভ করিয়া প্রথম খুটি ছাড়িয়া ছয় হাত পর্যান্ত দৌড়িবে।

        বর্তমানে সবুজ খুটি তথায় নাই, কিন্তু মছজিদের প্রাচীরে ক্ষুদ্র চিহ্নিত পাথর রক্ষিত আছে। ছাফা ও মারওয়ায় দৌড়ান শেষ করিয়া মছজিদে গিয়া দুই রাকায়াত নফল নামাজ পড়িবে।

        দুই পাহাড়ের মধ্যম পথে এবং দুই সবুজ নেশানির মধ্যে নিম্নোক্ত দোয়া পড়িবে,-

رَبِّ اغْفِرُ وَارْحَمُ وَتَجَاوَزُ عَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا لَمْ نَعْلَمُ إِنَّكَ أَنتَ الْآعَزَّ الْأَكْرَمُ وَاهْدِنِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ حَجَّا مَبْرُورًا وَسَعْيًا مَشْكُورًا وَذَنْبًا مَغْفُورًا اللَّهُمَّ اغْفِرُ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ يَا مُجِيبَ الدَّعْوَاتِ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ *

        হে প্রতিপালক, তুমি মাফ কর, দয়া কর, যাহা তুমি জান তাহার ত্রুটী মার্জনা কর, নিশ্চয় আমরা যাহা নাজানি, তুমি তাহা জান নিশ্চয় তুমি বড় পরক্রান্ত বড় দানশীল। তুমি আমাকে সোজা পথ দেখাও। ইয়া আল্লাহ, তুমি হজ্জকে কবুল চেষ্টাকে সফল ও গোনাহ্ মার্জনা কর। ইয়া আল্লাহ, তুমি আমাকে, আমার পিতা মাতাকে, ইমানদার পুরুষ ও স্ত্রীগণকে মুছলমান পুরুষ ও স্ত্রীগণকে মাফ কর হে দোয়া কবুল করনে ওয়ালা।

        হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি দুনইয়াতে আমাদিগকে ভাল। কর এবং আখেরাতে আমাদিগের ভাল কর, আর আমাদিগকে দোজখের আজাব হইতে রক্ষা কর।

        ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে যে কোন দোয়া ইচ্ছা হয় পড়িতে পারে, কিন্তু এস্থলে মানাছেকের কেতাবে যে সমস্ত দোয়া আছে তৎসমস্ত পাঠ করিলে ভাল হয়। দোয়াগুলি খুব লম্বা হওয়ায় এস্থলে লিখিত হইল না।

        (মসলা) যে ব্যক্তি কেবল হজ্জের এহরাম বাধিয়াছে, সে ব্যক্তি মক্কা শরিফে এহরাম অবস্থায় থাকিবে, তাহার পক্ষে ওমরা করিয়া হজ্জের এহরাম ফছক করা জায়েজ হইবে না। তৎপরে নফল তওয়াফ করিতে থাকিবে, এই তওয়াফের প্রথম তিন শওতে দৌড়িতে হইবে না, চাদর 'এজতেবা' করিতে হইবে না এবং ইহার পরে ছাফা এবং মারওয়ায় দৌড়িতে হইবে না। ইহার পক্ষে নফল নামাজ অপেক্ষা তওয়াফ করাই সমধিক সওয়াবের কার্য্য।

        (মসলা) যে ব্যক্তি হজ্জ এবং ওমরা একই এহরামে বাধিয়াছে, সে ব্যক্তি প্রথমে ওমরার তাওয়াফ করিবে, ছাফা মারওয়ার শওত করিবে, তৎপরে হজ্জের তাওয়াফ কদুম করিয়া এবং ইচ্ছা করিলে, ছাফা ও মারওয়ার শওত করিয়া এহরাম অবস্থায় থাকিবে।

        (মসলা) যে ব্যক্তি তামাত্তো করিয়াছে, সে ব্যক্তি প্রথমে ওমরার তাওয়াফ ও ছাফা মারওয়ার শওত করিয়া ইচ্ছা হয়ত মস্তক মুণ্ডন করিয়া কিম্বা চুল ছাটিয়া ওমরা শেষ করিবে, এরূপ অবস্থায় ওমরার প্রথম তাওয়াফে লাব্বায়কা বলা বন্ধ করিবে। তৎপরে মক্কা শরিফে বা কোন স্থানে হালাল অবস্থায় থাকিবে।

        তৎপরে ৮ই জিলহাজ্জ তারিখে হজ্জের এহরাম বাঁধিবে, ৮ই তারিখের অগ্রে উহার এহরাম বাঁধিলে ভাল হয়। আর যদি আরফার দিবসে উহার এহরাম বাঁধে, তাহাও জায়েজ হইবে।

        (মসলা) স্ত্রীলোকদের রাত্রিতে তওয়াফ করা মোস্তাহাব। পরুষদিগের জনতা হইলে, তাহাদের বাহিরে না আসা উচিত। 

         (মসলা) স্ত্রীলোকের ওমরায় এহরাম বাঁধার পরে হায়েজ কিম্বা নেফাছ হইলে, পাক হওয়ার পরে ওমরার তাওয়াফ করিবে। এহরাম বাঁধিয়া লইবে এবং মিনা ও আরফাতে উপস্থিত হইয়া তাওয়াফে জিয়ারত ব্যতীত হজ্জে সমস্ত কাৰ্য্য আদায় করিবে। পাক হওয়ার পরে তাওয়াফে জিয়ারত করিয়া লইবে, তৎপরে ওমরা কাজা করিবে এবং একটী কোরবাণি করিয়া দরিদ্রকে দান করিবে।

        আর যদি একসঙ্গে হজ্জ এবং ওমরার এহরাম বাঁধার পরে তাহার হায়েজ ও নেফাছ হয় এবং হজ্জের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়, তবে সেই স্ত্রীলোকটি তাওয়াফে ওমরা ও তাওয়াফে কদুম করিবে না, এইরূপ অবস্থায় মিনা ও আরফাতে পৌঁছিবে আরফাতে দাঁড়াইলে, ওমরার এহরাম, বাতীল হইয়া যাইবে। কেরাণ বাকী থাকিবে না এই অবস্থায় সেই স্ত্রীলোক তওয়াফে জিয়ারত ব্যতীত হজ্জের সমস্ত কাৰ্য্য আদায় করিবে। তৎপরে পাক হইলে তওয়াফে জিয়ারত করিয়া লইবে। অবশেষে ওমরা কাজা করিয়া একটী কোরবাণী দরিদ্রদিগকে দান করিবে।

        আর যদি কেবল হজ্জের এহরাম বাঁধার পরে তাহার হায়েজ বা নেফাছ হয়, তবে তাওয়াফে কদুম করিবে না, মিনা আরফাতে গিয়া হজ্জের সমস্ত কার্য্য করিবে, পাক হওয়ার পরে তাওযাফে জিয়ারত করিবে, কিন্তু তাওয়াফে কদুম ছাড়ার জন্য কিছু ক্ষতি হইবে না।

Post a Comment

0 Comments