নীরব থাকার কল্যাণ কি

        পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, রসনার বিপদের অন্ত নেই এবং নীরবতা অবলম্বন ব্যতীত সে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। এজন্যই শরীয়ত নীরবতা বা নির্বাক থাকার প্রশংসা করে তা' অবলম্বনের জন্য উৎসাহিত করেছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন যে, যে ব্যক্তি মৌনাবলম্বন করে, সে মুক্তি পায়। তিনি আরও বলেছেন, মৌনাবলম্বন এমন একটি বিষয় যা' খুব অল্প লোকই অবলম্বন করে। হযরত সুফিয়ান (রহঃ) এর পিতা একদা হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে এমন কিছু বলুন, যাতে আপনার অন্তর্ধানের পর অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে না হয়। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, তুমি বল, আমি ঈমান আনলাম। তারপর তুমি এর উপর সুস্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থেক। তারপর তিনি বললেন, কোন বিষয়কে অধিক ভয় করব? হুযুরে পাক (দঃ) স্বীয় হস্ত দ্বারা রসনার প্রতি ইঙ্গিত করলেন। হযরত ওকবাহ ইবনে আমের (রাঃ) বলেছেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কিরূপে নাজাত পাব? তিনি বললেন, তোমার রসনাকে সংযত কর। তোমার গৃহকে বিস্তৃত কর এবং তোমার পাপের জন্য অনুতাপ কর। হযরত ছহল ইবনে সা'দ (রাঃ) বলেছেন যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, যে বস্তু মানবের দু'গন্ডের মধ্যে অবস্থিত এবং যে বস্তু দু'উরুর মধ্যে অবস্থিত এ দুটো বস্তু সম্বন্ধে যে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাকে আমি বেহেশতের নিশ্চয়তা দিতে পারি।

        হযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি উদর, কামেন্দ্রিয় এবং রসনার আপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে সে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ তিনটি রিপুর কারণেই অধিকাংশ লোক বিনাশপ্রাপ্ত হয়। আমরা এজন্যই উদর ও কামেন্দ্রিয়ের আপদ বর্ণনা করবার পর রসনার আপদ বর্ণনা শুরু করেছি। হুযুরে পাক (দঃ)কে একদা বেহেশতে প্রবেশ করবার প্রধান গুণগুলো সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেন, তা' হল আল্লাহর ভয় এবং সৎস্বভাব। তারপর যে পাপ মানুষকে  ্দোযখে প্রবেশ করাবে তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় পাপন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তা' হল দুটো। শূন্য জিনিস। একটি মুখ এবং অন্যটি কামেন্দ্রিয়। মুখ বলতে তিনি রসনার আপনের উদ্দেশ্য করেছেন। এটা উদয়ের অর্থেও গ্রহণ করা যায়। কেননা, মুখ থেকেই খাদ্য উদরে যায়। হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেছেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমরা যা' বলি তার জন্য কি শাস্তি হবে? তিনি বললেন, হে ইবনে জাবাল। তোমার যাতা তোমাকে গর্ভে ধারণ করুক। মানুষ কি দোযখের মধ্যে তাদের নাসিকার উপর তাদের রসনার বিপদ বাতীত আর কোন কারণে উল্টে পড়বে? হযরত আবদুল্লাহ সাকাফী (রাঃ) বলেছেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমাকে এমন কার্যের সন্ধান বলে দিন, যা' আমি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারি। তিনি বললেন, বল আল্লাহই আমার প্রভু। তারপর তার উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাক তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনি আমার জন্য কোন বিষয় সর্বাপেক্ষা অধিক ভয় করেন? তিনি স্বীয় রসনা ধরে বললেন, এই বস্তু। হযরত আজ (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। কোন কার্য সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি তার জিহ্বা বের করে তার উপর অঙ্গুলি স্থাপন করলেন।

        হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে পর্যন্ত কোন লোকের হৃদয় ঠিক না হয়, সে পর্যন্ত তার ঈমান ঠিক হয় না এবং যে পর্যন্ত তার রসনা ঠিক না হয়, তার হৃদয় ঠিক হয় না। যে ব্যক্তির অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামে সন্তুষ্ট হতে চায়, সে যেন নির্বাক অবস্থা অবলম্বন করে। তিনি আরও বলেছেন, যখন আদম সন্তান গাত্রোত্থান করে তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও রসনাকে স্মরণ করে উত্থিত হয় অর্থাৎ তারা রসনাকে লক্ষ্য করে বলে, তুমি আমাদের সম্বন্ধে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তুমি যখন ঠিক থাক, আমরাও ঠিক থাকি এবং তুমি যখন বক্র হও আমরাও বাঁকা হয়ে যাই। একদা হযরত ওমর (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)কে তার রসনা ধরে টেনে দীর্ঘ করতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এর খলীফা। এ আপনি কি করছেন? তিনি বললেন, এটা আমাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, দেহের এমন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই, যা' রসনার কর্কশ ব্যবহার সম্বন্ধে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করবে না।

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একদা সাফা পর্বতে আরোহণ করে লাব্বায়েক বলে এরূপ বলতেছিলেন, হে রসনা। তুমি উত্তম কথা বলবে, তাহলে ধন-রত্ন লাভ করবে। মন্দ কথা হতে নির্বাক থাকবে, তাহলে অনুতাপের পূর্বে নিরাপদ থাকবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আবু আবদুর রহমান! এ কথা কি তুমি বলছ না আর অন্য কাউকে বলতে শুনেছ? তিনি বললেন, একথা আমার নয়। আমি হুযুরে পাক (দঃ) কে বলতে শুনেছি, "ইন্না আকছারা খাত্মাইয়া ইবনে আদামা ফী লিসানিহী" অর্থাৎ আদম সন্তানের অধিকাংশ পাপ তার রসনার মধ্যে নিহিত। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার রসনাকে সংযত করে আল্লাহতায়ালা তার গুপ্ত বিষয়কে গোপন রাখেন। যে ব্যক্তি তার ক্রোধকে দমন করে আল্লাহ তাকে শাক্তি থেকে রক্ষা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট ওজর প্রদর্শন করে, আল্লাহ তার ওজর কবুল করেন।

        বর্ণিত আছে যে, হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) হুযুরে পাক (দঃ)এর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ এবং তুমি নিজেকে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করবে। আর যদি তুমি শুনতে চাও তাহলে এ বিষয় থেকেও তোমার জন্য অধিক জরুরী বিষয় তোমাকে জানাব। একথা বলে তিনি স্বীয় রসনার দিকে ইঙ্গিত করলেন। হযরত সাফওয়ান ইবনে সোলায়মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, একদা হুযুরে পাক (দঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কি তোমাকে সর্বাপেক্ষা সহজ এবং শরীরের পক্ষে আরামদায়ক ইবাদাতের বিষয় বলব না? তা হল মৌনাবলম্বন ও সৎস্বভাব। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর এবং আখেরাতের উপর বিশ্বাস করে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরবতা অবলম্বন করে। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যে কথা বলে ছওয়ার অর্জন করে অথবা নীরব থেকে নিরাপদ থাকে। হযরত ঈসা (আঃ)কে বলা হল, আমাদেরকে এমন বিষয় শিক্ষা দিন যার দ্বারা আমরা বেহেশতে যেতে পারব। তিনি বললেন, তোমরা কখনও কথা বলো না। তারা বলল, আমরা তা' পারব না। তখন তিনি বললেন, তাহলে ভাল কথা ব্যতীত অন্য কিছু বলো না।

        হযরত সোলায়মান (আঃ) বলেছেন, যদি কথা রৌপ্যের দ্বারা তৈরী হত তাহলে নীরবতা স্বর্ণের দ্বারা নির্মিত হত। হযরত বারা' ইবনে আজেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, একদা জনৈক গ্রাম্য আরব হযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কার্য শিক্ষা দিন যদ্বারা আমি বেহেশতে যেতে পারব। তিনি বললেন, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, পিপাসার্তকে পানি দাও, সৎকার্যে আদেশ কর এবং অসৎ কার্যে নিষেধ কর। যদি এগুলো না পার তবে কখনও ভাল কথা ব্যতীত মন্দ কথা বলো না। অন্য কথায় রসনাকে সংযত কর। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, তোমরা উত্তম কথা ব্যতীত অন্য কথা থেকে রসনাকে রক্ষা করবে। কেননা তার কল্যাণে তোমরা শয়তানকে পরাভূত করতে পারবে। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকটি কথা বলার সময় রসনার নিকট থাকেন। সুতরাং যখন সে কথা বলে তখন সে যেন সম্পূর্ণরূপে সতর্ক থাকে। তিনি আরও বলেছেন, যখন তুমি কোন মুমিন ব্যক্তিকে নীরব এবং গম্ভীর থাকতে দেখবে তখন তুমি তার নিকটবর্তী হবে। কেননা তার সে নীরবতা ও গাম্ভীর্যের মধ্যে হেকমত রয়েছে।

        হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, মানুষ সাধারণতঃ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হল, যুদ্ধসম্ভার লুণ্ঠনকারী। দ্বিতীয় শ্রেণী হল, অনর্থক বাক্য ব্যয়কারী। আর তৃতীয় শ্রেণী হল, নিরাপদ ব্যক্তি। যুদ্ধসম্ভার লুণ্ঠনকারী ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর যিকির করে। নিরাপদ ঐ ব্যক্তি যে নির্বাক থাকে এবং অনর্থক বাক্য ব্যয়কারী ঐ ব্যক্তি, যে বেহুদা ও নিরর্থক কথা বলে। তিনি আরও বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির রসনা তার হৃদয়ের পিছনে থাকে, যখন সে কোন কথা বলতে ইচ্চ্য করে তখন সে তার হৃদয়ের দ্বারা চিন্তা করে। তারপর তার রসনার মাধ্যমে তা' পাঠিয়ে সেয়। পক্ষান্তরে মুনাফিকদের রসনা তার হৃদয়ের সামনে থাকে, যখন তার কোন চিন্তার কারণ হয় সে হৃদয়ের দ্বারা চিন্তা-ভাবনা করে তা' রসনার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। হযরত ঈসা (আঃ) বলেছেন, ইবাদাতের দশটি অংশ আছে। তন্মধ্যে নয়টি অংশই নীরবতার মধ্যে। আর অবশিষ্ট একটি অংশ নির্জনবাসের মধ্যে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অধিক কথা বলে তার দোষ-ত্রুটিও অধিক হয়। যার দোষ-ত্রুটি অধিক হয় তার পাপও অধিক হয়। যার পাপ অধিক তয় তার জন্য দোযখের অগ্নি নির্ধারিত হয়।

        বিজ্ঞ বুযর্গদের বাণী: একদা হযরত আবুবকর (রাঃ) তাঁর মুখে প্রস্তর খন্ড রেখে কথা বলা বন্ধ করতেছিলেন। তিনি তাঁর রসন্যর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এটাই আমাকে ধ্বংসের সম্মুখীন করেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! যিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই, দীর্ঘ দিন আবদ্ধ রাখার বস্তু হল একমাত্র রসনা। হযরত তাউস (রহঃ) বলেছেন, আমার সাতটি রসনা আছে। যদি আমি তাদেরকে পাঠিয়ে দেই তারা আমাকে ভক্ষণ করে ফেলবে। হযরত ওয়াহহাব ইবনে মুনাব্বাহ হযরত দাউদের পরিবারবর্গের বিষয় বলেছেন, বুদ্ধিমানের কর্তব্য হল, তার যুগের আরেফ অর্থাৎ খোদাতত্ত্ব জ্ঞানের জ্ঞানী ৩ওয়া, রসনাকে রক্ষা করা এবং তার মর্যাদার সম্মুখীন হওয়া। হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, যে তার রসনাকে রক্ষা করে না সে তার ধর্মকে পালন করে না। হযরত আওযায়ী বলেছেন, খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযীয আমাদের নিকট এই ফরমান পাঠিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি অধিকাংশ সময় মৃত্যুকে স্মরণ করে সে সংসারে স্বল্পেই তুষ্ট থাকে। যে তার কার্যের মধ্যে তার কথা গণনা করে তার কথা অল্পই হয়ে থাকে। তবে যে কথায় তার উপকার হয় সে কথা সে অধিকই বলে। জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন, নীরবতা মানুষকে দুটো কল্যাণ দান করে। তার একটি ধর্মের নিরাপত্তা এবং অন্যটি বন্ধুর পরিচয় লাভ করা।

        মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসে' (রহঃ) হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহঃ) কে বলেছিলেন, হে আবু ইয়াহইয়া। অর্থ রক্ষা করা থেকে রসনা রক্ষা করা অধিক কষ্টকর। হযরত ইউনুস ইবনে ওবায়েদ (রহঃ) বলেছেন, এমন কোন লোক নেই যে, তার রসনা তার হৃদয়ের মধ্যে রাখলে তার যে কোন কার্যে মঙ্গল হয় না। হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, একদা হযরত মুআবিয়ার মজলিসে বহুলোক কথাবার্তা বলতেছিল। শুধু আহনাফ ইবনে কায়েস (রহঃ) নীরব ছিলেন। তখন মুআবিয়া তাকে বললেন, হে আহনাফ। তোমার কি হয়েছে? তুমি কোন কথা বলছ না কেন? তিনি বললেন, যদি মিথ্যা বলি তজ্জন্য আল্লাহকে ভয় করি। আর যদি সত্য বলি তজ্জন্য আপনাকে ভয় করি।

        হযরত আবুবকর ইবনে আ'মাশ (রহঃ) বলেছেন, একদা চারজন অধিপতি একস্থানে সমবেত হয়েছিলেন। তাঁরা ছিলেন ভারতের অধিপতি, চীনের অধিপতি, রোমের অধিপতি এবং পারস্যের অধিপতি। তম্নাধ্রে একজন অধিপতি বললেন, আমি যে কথা বলেছি তজ্জন্য আনি অনুতাপ করি। আর যে কথা বলি নি তজ্জন্য আমার অনুতাপ নেই। দ্বিতীয় অধিপতি বললেন, যখন কথা জামার উপর প্রবল ৩য় তা' আমার অধীনে থাকে না। যখন আমি কথার উপর বাবল হই তখন তা' জামার উপর আদিপত্য করতে পারে না। তৃতীয় অধিপতি বললেন, যে ব্যক্তি কথা বলে তার জন্য আমি চিন্তা কতি। যদি তার কথা তার নিকট ফিরে আসে তবে তা' তার অনিষ্ট করে। আর যদি ফিরে না আসে তা' তার কোন উপকার করে না। চতুর্থ অধিপতি বললেন, যে কথা আমি বলি না তা' আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি। যেকথা আমি বলি তাও প্রত্যাখ্যান করতে পারি। হযরত মনসুর ইবনে সা'তাজ (রহঃ) একাধারে চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার নামাযের পর কোনদিন কোন কথা বলেন নি। হযরত রবী ইবনে খায়ছ্যম (রহঃ) একাবারে বিশ বছর পর্যন্ত তার সংসার সম্পর্কিত কোন কথা মুখ থেকে উচ্চারণ করেন নি। যখন তোর হত তিনি দোয়াত কলম ও কাগজ নিয়ে বসতেন। তাঁর যা' কিছু বলার প্রয়োজন হত তা' তিনি কাগজে লিখতেন। আবার সন্ধ্যায় তিনি লিখার মাধ্যমেই সব কিছুর হিসাব নিতেন।

        প্রশ্নের উদয় হতে পারে যে, নীরবতা আবলম্বন করায় এত কল্যাণের কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো রসনার আপদের কারণ। যথাঃ ভুল-ত্রুটি হওয়া, কলিত বাক্য মিথ্যা হওয়া, পরনিন্দা করা, রিয়া প্রকাশ পাওয়া, কূটনামী করা, মুনাফিকী করা, অশ্লীল কথা উচ্চারিত হওয়া, বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি হওয়া, অনর্থক বিষয়ে বাক্য ব্যয় করা, শত্রুতার সৃষ্টি হওয়া, মানুষের মনে কষ্ট দেয়া, গুপ্ত বিষয় প্রকাশ পাওয়া ইত্যাদি উল্লিখিত দোষগুলো রসনা থেকেই উৎপত্তি হয়। অথচ এসব কথা বলতে রসনার কোন কষ্ট হয় না। হৃদয়ও এর দ্বারা স্বাদ পায়। আর এতে প্রবৃত্তির ও শয়তানের প্ররোচনা থাকে। যে ব্যক্তি অনর্থক কথা বলে, সে খুব কমই রসনাকে সংযত করতে পারে। অনর্থক বাক্য ব্যয়কারী মনে বাসে ভালবাসে তা-ই অনর্গল বলে যায়। অবশ্য যা' সে ভালবাসে না তাতে সংযত থাকে। এটাই জ্ঞানের সূক্ষ্ম বিষয়। মোটকথা অনর্থক কথার মধ্যে দোষ আছে এবং নীরবতার মধ্যে নিরাপত্তা রয়েছে। এ জন্যই মৌনাবলম্বন করায় এত অধিক কল্যাণ।

        নীরবতার উপকারঃ কথা না বলে নীরবতা অবলম্বন করলে চিন্তা ভাবনা মনের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়। তাছাড়া সৎচিন্তা, ইবাদাত এবং যিকিরের অবসর পাওয়া যায়, পরলোকের কঠিন হিসাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "মা ইয়ালফিযু মিন ক্বাওলিন ইল্লা লাদাইহি রাব্বীবুন আ'তীদ"। অর্থাৎ প্রত্যেকটি কথা বলার সময় তার নিকট একজন সতর্ক প্রহরী থাকে।

        কথা বা বাক্য চার ভাগে বিভক্ত। যেমন, প্রথম প্রকার বাক্য সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকর। দ্বিতীয় প্রকার বাক্য সম্পূর্ণরূপে উপকারী। তৃতীয় প্রকার বাক্য ক্ষতি ও উপকার মিশ্রিত, এবং চতুর্থ প্রকার বাক্য কোন উপকারে আসে না এবং অপকারও করে না। যে বাক্য সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকর তাতে নীরব থাকা অত্যাবশ্যক। যে বাক্যে ক্ষতি ও উপকার মিশ্রিত তাতেও নীরব থাকা

        আবশ্যক। যে বাক্যে উপকার নেই এবং অপকারও নেই তা' অনর্থক ও অনাবশ্যক। অর্থাৎ এগুলো বাহুল্য বাকোর মধ্যে গণ্য করবার যোগা। তাতে রত থাকলে সময়ের অপচয় হয়। সেদিক থেকে এগুলোও ভীষণ ক্ষুতিকর। চতুর্থ প্রকার বাক্যের মধ্যেও কিছু না কিছু দোষ থাকে। কেননা তাতে ওগুপ্ত রিয়া, পরনিন্দা এমনভাবে মিশে থাকে যা' সহজে অনুধাবন করা যায় না। যার ফলে এ জাতীয় বাকা ব্যয় দ্বারাও মানুষ দোষী হয়ে যেতে পারে। যে ব্যক্তি রসনার এ সমস্ত আপদের সুক্ষ্মতত্ত্ব আবগত রয়েছে সে নিশ্চিতরূপে জানে যে, হুযুরে পাক (দঃ) যে কথা বলেছেন তা' বড়ই উত্তম। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নির্বাক থাকে সে নাজাত লাভ করে। আল্লাহর কসম, হুযুরে পাক (দঃ)এর বহু মূল্যবান উপদেশ এ বাক্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে। যার মর্ম বিজ্ঞ আলিমগণই বুঝতে পারে।

Post a Comment

0 Comments