আদম (আঃ) হতে আবদুল্লাহ্ আমিনা পর্যন্ত নূর আগমন

            আল্লাহ তায়ালার তকদীর অনুযায়ী হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) যখন আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) এর নিকট বেহেশতের নহর পাঠায়ে দিলেন, হযরত আদম (আঃ) উক্ত নহরে গোসল করে হযরত হাওয়া (আঃ) কে আলিঙ্গন করলেন এবং এ সময় এ নূর মোবারক হযরত হাওয়া (আঃ) এর নিকট চলে গেল, এরপর হতে নূরে মুহাম্মদী এক পুরুষের ৭৫ হতে অন্য পুরুষের পৃষ্টে এবং এক মহিলার পেট হতে অন্য মহিলার পেটে স্থানান্তরিত হয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পর্যন্ত এসে পৌঁছল।

আবদুল মুত্তালিবের স্বপ্ন

        মক্কার শাসভার ও নেতৃত্ব আবদুল মুত্তালিবের হস্তে ন্যস্ত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নাম নিশানা বিলুপ্ত অনাবাদী যমযম কূপের পুনরায় প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ পাক ইচ্ছা করেন এবং কূপ খনন করার জন্য স্বপ্নের মাধ্যমে আবদুল মুত্তালিবকে নির্দেশ প্রদান করতে থাকেন, যমযম কূপ কালের বিবর্তনে সমতল ভূমির সমান হয়ে কূপের চিহ্নটুকু পর্যন্ত মুছে যায়। আল্লাহ তায়ালা আবদুল মুত্তালিবকে উক্ত চিহ্ন ও নিদর্শন সমূহ স্বপ্নের মাধ্যমে অবহিত করতে থাকেন, আবদুল মুত্তালিব নিজেই বলেন, একদা আমি হাতিমে নিদ্রামগ্ন ছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি আমার সামনে উপস্থিত হয়, সে স্বপ্ন যোগে আমাকে বলে- বাররা অর্থাৎ শুষ্কভূমি খনন কর।

        আমি বললাম বাররা কি? সে কোন জবাব না দিয়েই চলে গেল, দ্বিতীয় দিন যখন আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম তখন স্বপ্নে দেখতে পাই যে সে ব্যক্তি আমাকে বলতেছিল যে এ স্থানটি খনন কর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কোন স্থানটি? এবারও সে আমাকে কিছু না বলেই চলে গেল, তৃতীয় দিন একই স্থানে স্বপ্নে দেখতে ছিলাম যে সে ব্যক্তি পুনরায় বলতেছিল পবিত্র স্থান খনন কর। আমি বললাম যে কোন পবিত্র স্থান? এবারও সে আমাকে অধিক কিছু না বলে চলে গেল। চতুর্থদিন ঐ স্থানেই স্বপ্নযোগে সে আমাকে বলতেছিল যে, যমযম খনন কর। আমি বললাম- যমযম কি? উত্তরে সে বলল- যমযম একটি পানির কূপ। এ কূপের পানি কখনও নিঃশেষ হয় না। আবার কমবেও না। অগনিত হজযাত্রীগণ এর পানিতে তৃষ্ণা মিটাতে পারবে। অতঃপর যে স্থানটি খনন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে স্থানের কিছু নিদর্শন তাকে বলে দেয়া হয়েছিল বেশ কয়েকবার স্বপ্ন দেখার পর আবদুল মুত্তালিবের এ স্বপ্নের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আনল। তিনি কুরাইশদের একত্রকরে তাদের সকল কথা খুলে বললেন। আর উক্ত স্থান খনন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।

        কুরাইশগণ উক্তকূপ খনন করতে বাঁধা প্রদান করলেও তিনি সমস্তা বাধা ডিঙ্গিয়ে স্বীয় পুত্র হারিছকে নিয়ে টুকরী কোদালসহ নির্দেশিত স্থানে পৌছে ঐ স্থান খনন করতে শুরু করলেন। আবদুল মুত্তালিব মাটি খনন করতেন আর পুত্র হারিছ মাটি বহন করে দূরে নিক্ষেপ করতেন। তিনদিন খননকাজ চলার পর এক প্রকার মিঠা তরলা পদার্থ দেখতে পেয়ে আনন্দের অতিশায্যে "আল্লাহু আকবার" তাকবীর দিতে শুরু করেন এরপর তিনি যমযম কূপের আশেপাশে কয়েকটি চৌবাচ্চা নির্মাণ করেন যাতে চৌবাচ্চাগুলোতে যমযমের পানি ভর্তি করে উক্ত পানি হজ্বযাত্রীদের পান করানো সহজ হয়। কিন্তু কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক হিংসাবশত রাতে এসে চৌবাচ্চার পানিগুলি অপবিত্র করে ফেলত। পরদিন সকালে আবদুল মুত্তালিব পানি পবিত্র করার ব্যবস্থা করতেন।

আবদুল মুত্তালিবের মান্নত

        যমযম কূপ খনন করার সময় আবদুল মুত্তালিবের একমাত্র হারিছ ব্যতীত অন্য কেহ তার সাহায্যকারী ছিলনা। এজন্য তিনি মান্নত করলেন যে যদি আল্লাহ পাক আমার দশটি পুত্র সন্তান দান করেন আর তারা যৌবনে পদার্পণ করার ফলে আমার হাত শক্তি শালী হয় তাহলে আমি তাদের একজনকে আল্লাহর নামে যবেহ করব। অতঃপর আল্লাহ পাক তাকে দশ পুত্র দান করলেন, তার আশা পূর্ণ করেন। তখন কোন এক রাত্রে কাবাঘরের সামনে ঘুমিয়েছিলেন, স্বপ্নে দেখলেন যে কোন এক ব্যক্তি তাকে বলছে- হে আবদুল মুত্তালিব? তুমি প্রভুর নামে যে মান্নত মেনেছিলে তা পূরণ কর। আবদুল মুত্তালিব জাগ্রত হয়ে সকল পুত্রগণকে একত্রে সমবেত করেন এবং স্বীয় মান্নতের কথা আর রাতে দৃষ্ট স্বপ্নে কথা খুলে বললেন। পুত্রগণ সকলেই সমস্বরে উত্তর দিল- হে পিতা, আপনার মান্নত আপনি পুরা করুন, আপনার যা ইচ্ছা হয় করতে পারেন কোন পুএকে  যবেহ করা হবে তা নির্ধারিত করার জন্য আবদুল মুত্তালিব স্বীয় পুত্রদের নামে লটারী দিলেন। ঘটনা ক্রমে লটারীতে পরপর আবদুল্লাহর নাম উঠল, আর আবদুল মুত্তালিব তাকেই সবচেয়ে অধিক ভালবাসতেন, আবদুল মুত্তালিব এক হাতে ছুরি ও অপর হাতে আবদুল্লাহর হাত ধরে বধ্যভূমির দিকে চলেছেন আর পিছনে পিছনে আবদুল্লাহর ভগ্নীগণ দিরতম ভাতার জন্য রোগন করতে করতে চলছেন। তার মধ্যে এক ভগ্নী বললেন- হে পিতা, আপনি দশটি উট আর আবদুল্লাহর নামে লটের দিন, যদি লটারীতে উট দশটির নাম আসে তাহলে গণটি উট যবেহ করে আমাদের প্রাণ প্রিয় ভাতা আবদুল্লাহকে রেহাই দিন। তৎকালে দশটি উট এক ব্যক্তির খুন খেসারত বা জরিমান ছিল, তার আবেদন অনুসারে লটারী দেয়া হল, কিন্তু এবারও আবদুল্লাহর নাম এল, অতঃপর আবদুল মুত্তালিব দশটি উট অতিরিক্ত করে লটারী দিতে লাগলেন। কিন্তু প্রত্যেক বারই আবদুল্লাহর নাম আসছিল। অবশেষে যখন একপার্শ্বে একশত উট আর অপর পার্শ্বে আবদুল্লাহর নাম রেখে লটারী দেয়া হল তখন লটারীতে উটের নায় এল, তখন আবদুল মুত্তালিবসহ উপস্থিত সকলে "আল্লাহু আকবার" তাকবীর ধ্বনি দিলেন এবং সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে একশত উট কুরবানী দিলেন।

Post a Comment

0 Comments