মৃত ব্যক্তি রসনার দ্বারা বা অবস্থার রসনার দ্বারা কথা বলে। অবস্থার রসনার দ্বারা কথা বলা রসনার দ্বারা কথা বলার চেয়ে অধিক ফলপ্রদ। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হলে কবর বলে, হে আদম সন্তান। তোমার জন্য দুঃখ, তোমাকে আমার সম্বন্ধে কে ভুলিয়ে রেখেছিল? তুমি কি জান না যে আমি দুঃখ-কষ্টের গৃহ। কীটপতঙ্গের গৃহ, অন্ধকার পূর্ণ গৃহ, নির্জন গৃহ। আমার পার্শ্ব দিয়ে যাওয়ার সময়ে কেন এত ভয় করেছিলে? মৃতাত্মা সৎ-সাধু ব্যক্তি হলে তার পক্ষ থেকে কোন এক ব্যক্তি উত্তর দেয়, তুমি কি দেখনি, সে সৎকার্য করতে উপদেশ দিত এবং মন্দকার্য করতে নিষেধ করত। তখন কবর বলে, তবে আমি তার বিচরণের জন্য বেহেশতকে উদ্যান করে দিচ্ছি। তখন তার শরীর উজ্জ্বল বর্ণ হয়ে যায় এবং আত্মা আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওমায়ের বলেছেন, এমন কোন মৃত ব্যক্তি নেই, যার মৃত্যু হলে কবর তাকে না বলে যে, আমি অন্ধকার ও নির্জন গৃহ। যদি তোমার জীবদ্দশায় আল্লাহর ইবাদাত করে এসে থাক, তবে আজ আমি তোমার উপর করুণার আগার'হব। আর যদি তুমি পাপ করে এসে থাক, আজ আমি তোমার জন্য শান্তির আগার হব। যে ব্যক্তি আমার মধ্যে আল্লাহর অনুগত বান্দারূপে প্রবেশ করে, সে আনন্দিত ও প্রফুল্লরূপে বের হবে। আর যে পাপী বান্দারূপে আমার মধ্যে প্রবেশ করে, সে অত্যন্ত দুঃখিত অবস্থায় বের হবে।
হযরত মুহাম্মদ ইবনে ছাবীহ (রহঃ) বলেছেন, আমরা শুনেছি যে, যখন কোন লোককে তার কবরে রাখা হয়, সে যা ভালবাসাতো না তখন তা-ই তাকে শাস্তি দেয়। তার কবরের প্রতিবেশী তাকে সম্বোধন করে বলে, হে আমার আত্মীয় প্রতিবেশী। তুমি তো আমার পরেও দুনিয়ায় থেকে গিয়েছিলে, তুমি আমার অবস্থা দেখে কেন উপদেশ গ্রহণ করলে না? তুমি আমাকে আসতে দেখেও কেন সতর্ক হলে না? আমার যে সৎকর্ম করার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে তাকি তুমি দেখনি? তুমি তো প্রচুর সময় পেয়েছিল, তোমার অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণ যা করতে পারেনি তুমি তো তা' করতে পারতে। মৃত্তিকা তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকে, হে দুনিয়ার মদমত্ত ব্যক্তি! মাটির গর্ভে তোমার পরিবারের লোক প্রোথিত হওয়ায় কি তুমি কোন উপদেশ লাভ করতে পারলে না? তোমার পূর্বে কি দুনিয়া তাদেরকে প্রবঞ্চিত করেনি? মৃত্যু তো তাদেরকেও কবরে নিয়ে এসেছে। তুমি তো তাদেরকে লোকগণ যে কবরে বহন করে নিয়ে এসেছে তা' দেখেছ, তুমি তো নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে যে, তোমাকে অবশ্যই সেখানে যেতে হবে, যেখানে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হযরত ইয়াযিদ রাক্কাশী (রহঃ) বলেছেন, আমি শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তার আমল তখন তাকে নির্জনে দেখতে পায়। আল্লাহতায়ালা তখন আমলকে বাকশক্তি দেন এবং সে তখন বলে, হে নির্জন কবরে প্রোথিত বান্দা! তোমার বন্ধুগণ ও পরিজনবর্গ তোমার নিকট থেকে চলে গেছে, আমাদের নিকট তোমার আর কোন বন্ধু নেই। হযরত কা'ব (রাঃ) বলেছেন, যখন সৎবান্দাকে কবরে রাখা হয়, তার সৎকর্মসমূহ যথাঃ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, জিহাদ, ছদকাহ ইত্যাদি তাকে ঘিরে দাঁড়ায়। যখন শাস্তির ফিরেশতা তার পায়ের দিক থেকে আসে তখন নামায বলে, তার নিকট থেকে চলে যাও। তার কাছে যাবার তোমাদের কোন পথ নেই। সে আল্লাহর জন্য আমার ভয় করে বহু সময় দাঁড়িয়ে থাকতো। অতঃপর তারা তার মস্তকের দিক থেকে আসতে চাইলে রোযা বলে, তার কাছে যাবার তোমাদের কোন পথ নেই। কেননা সে দুনিয়ায় শুধু আল্লাহরই উদ্দেশ্যে বহুদিন ধরে তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করেছিল। তারপর শাস্তির ফিরেশতাগণ তার শরীরের দিক থেকে আসতে চাইলে হজ্জ এবং জিহাদ বলে, তোমরা এখান থেকে বহু দূরে সরে যাও। কেননা সে নিত্য বহু কষ্ট ভোগ করেছে, তার শরীরকে সে বহু কষ্ট দিয়েছে এবং আল্লাহর জন্য হজ্জ ও জিহাদ করেছে; সুতরাং তার নিকট যাবার তোমাদের কোন পথ নেই। তারপর যখন শাস্তির ফিরেশতাগণ তার হস্তের দিক দিয়ে আসতে চায়। তখন হস্ত বলে, তোমরা আমার মালিক থেকে দূরে চলে যাও। এক সময় আমাদের দু'হস্তের মাধ্যমে সে বহু দান-খয়রাত করেছে এবং সে দান আল্লাহতায়ালাই গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্বেষণেই সে দান-খয়রাত করা হয়েছে; সুতরাং আমাদের মালিকের নিকট যাবার তোমাদের কোন পথ নেই। তখন মৃত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলা হয়, তোমাকে অভ্যর্থনা, তুমি যেমন উত্তমরূপে জীবদ্দশায় ছিলে তেমনি উত্তমরূপে মৃত অবস্থায়ও কালযাপন কর।
তারপর রহমতের ফিরেশতা মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে তার জন্য সাজ শোভাময় সুসজ্জিত বেহেশতী শয্যা বিছিয়ে দেয়; এবং তার কবরের অভ্যন্তর যতদূর চোখের দৃষ্টি যায় ততদূর বিস্তৃত ও প্রসারিত করে দেয়। বেহেশত থেকে আলোক মালা এনে কবরের অভ্যন্তর আলোকোজ্জ্বল করা হয়। হযরত আবদুল্লাহ (রহঃ) কোন এক মৃত ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেছেন, আমি শুনেছি যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, মৃত ব্যক্তি কবরে উঠে বসে এবং জীবিত লোকের পদধ্বনি শুনতে পায়। সে তার সাথে কোন কথা বলে না। তবে তার কবর বলে, হে আদম সন্তান! তোমার জন্য আক্ষেপ! তোমাকে কি আমার বিষয়ে কেউ সতর্ক করেনি? আমার সংকীর্ণ স্থানের কথা কেউ কি স্মরণ করিয়ে দেয়নি? আমার পুঁতি গন্ধময় ভয়াবহ অবস্থা ও আমার নিকট কীট-পতঙ্গের কথা কেউ কি তোমাকে জানিয়ে দেয়নি? তবে তুমি আমার জন্য কি প্রস্তুত করে রেখেছ?
কবর আযাব, মুনকার ও নকীবের প্রশ্নঃ হযরত বারা' ইবনে আজেব (রাঃ) বলেছেন, একবার আমরা আনছার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির জানাজায় হুযুরে পাক (দঃ)সহ শরীক হয়েছিলাম, তিনি তার কবরের পার্শ্বে বসে বিনিতভাবে তিনবার বললেন, হে মাবুদ! কবর আযাব থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। তারপর তিনি বললেন, মু'মিন ব্যক্তি যখন আখেরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে আল্লাহতায়ালা সূর্যের অনুরূপ উজ্জ্বল মুখমণ্ডলবিশিষ্ট কয়েকজন ফিরেশতাকে তার নিকট' পাঠিয়ে দেন। তাদের সাথে সুঘ্রাণযুক্ত কাফন থাকে। তারা এসে যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত আসন গ্রহণ করে। যখন মু'মিন ব্যক্তির প্রাণ বের হয়ে যায় স্বর্গ ও মর্ত্যের প্রত্যেক ফিরেশতা স্বর্গের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়। এমন কোন দ্বার নেই যে, ঐ মু'মিন ব্যক্তির আত্মাকে তার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে দিতে আগ্রহ না। করে। বলা হয় যে, হে প্রভু! এ তোমার অমুক বান্দা। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা তাকে ফিরিয়ে দাও। কেননা তার জন্য যে সম্মাণ আমি তৈয়ার করে রেখেছি তা' তাকে দেখাও। কেননা আমি ওয়াদা করেছি, যা থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব। সে তাদের পদধ্বনি শুনতে পায়, যখন তারা চলে যায়। অতঃপর তাকে বলা হয়, হে বান্দা। তোমার প্রভু কে? তোমার ধর্ম কি? তোমার নবী কে? সে বলে, আমার প্রভু আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম এবং আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ)। এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত কঠোরভাবে করা হয় এবং তা-ই মৃত ব্যক্তির সম্মুখে শেষ বিপদরূপে উপস্থিত করা হয়। যখন সে উল্লিখিতরূপে প্রশ্নগুলির জবাব দেয় তখন একজন ঘোষণাকারী বলে, তুমি সত্য এবং যথার্থ কথাই বলেছ। এই অর্থেই আল্লাহতায়ালা বলেন, "ইয়ুছাব্বিতুল্লাহুল্লাযীনা আমানু বিলক্বাওলিছ ছাবিতি।" অর্থাৎ যারা ঈমানদার আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত কালেমা দ্বারা তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
অতঃপর তার নিকট সুন্দর আসন বিশিষ্ট ও সুগন্ধিযুক্ত উত্তমবস্ত্র পরিহিত একজন এসে তাকে বলে, হে বান্দা! তোমার প্রভুর রহমতের এবং স্থায়ী সুখ বিশিষ্ট বেহেশতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। তখন সে ব্যক্তি বলে, তোমাকেও আল্লাহ সুসংবাদ দিন। তুমি কে? সে বলে নেক আমল অর্থাৎ সৎকার্য।, আমি তোমার আল্লাহর কসম। আমি জানি না, যদি তুমি আল্লাহর ইবাদাত কার্যে দ্রুততা এবং পাপকার্যে শিথিলতা অবলম্বন করে থাক, তবে আল্লাহ তোমাকে মঙ্গলময় পুরস্কার দান করুন। তারপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে, বেহেশতের একটি সুন্দর শয্যা এর জন্য বিছিয়ে দাও। এবং বেহেশতের দিকে এর জন্য একটি দরজা উন্মুক্ত করে দাও। তখন তার জন্য বেহেশতের একটি অত্যুত্তম শয্যা পেতে দেয়া হয় এবং বেহেশতের দিকে একটি দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হয়। তখন সে ব্যক্তি বলে, হে মাবুদ! তুমি তাড়াতাড়ি কিয়ামত দাও যেন আমি আমার পরিজনবর্গের সাথে মিলিত হতে পারি।
যখন কাফির ব্যক্তি আখেরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং তার সাথে দুনিয়ার সম্বন্ধ ছিন্ন হতে থাকে তখন তার নিকট বিকট ও ভীষণ আকৃতি বিশিষ্ট ফিরেশতা অবতীর্ণ হয়। তার শরীরে অগ্নির বস্ত্র ও আলকাতরার জামা পরিহিত থাকে। তারা এসে তাকে চার দিক থেকে ঘিরে ধরে। যখন তার প্রাণবায়ু বের হয়ে যায়, স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী ফিরেশতাগণ এবং স্বর্গের প্রত্যেক ফিরেশতা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। স্বর্গের দরজাসমূহ বন্ধ হয়ে যায়। তার জন্য এমন কোন দরজা থাকে না যা তার আত্মাকে গ্রহণ করতে পছন্দ করে। যখন তার আত্মাকে ঊর্ধ্বপানে নিয়ে যাওয়া হয়, তা' হঠাৎ নিম্নে পতিত হয়। তখন বলা হয়, হে প্রভু! তোমার অমুক বান্দাকে আসমান ও যমিন গ্রহণ করছে না। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা তাকে ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য আমি কি শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি তা' দেখিয়ে দাও। আমি তার সাথে ওয়াদা করেছি, যা থেকে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তাতে তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব। যখন তারা চলে যায় সে তাদের পদধ্বনি শুনতে পায়। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, হে বান্দা তোমার প্রভু কে? তোমার ধর্ম কি? এবং তোমার নবী কে? সে বলে, আমি তা' জানি না। তাকে বলা হয়, তোমাকে কি এসব বিষয় বলা হয়নি। অতঃপর তার নিকট বিকট মূর্তি বিশিষ্ট দুর্গন্ধযুক্ত এবং কুৎসিত বস্ত্র পরিহিত একজন ফিরেশতা এসে তাকে বলে, হে বান্দা। তুমি আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং স্থায়ী শান্তির সুসংবাদ গ্রহণ কর। তখন সে বলে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিন। তুমি কে? সে বলে, আমি তোমার বদ আমল অর্থাৎ অসৎকর্ম। আল্লাহর কসম। তুমি আল্লাহর অবাধ্যতায় দ্রুততা এবং আল্লাহর ইবাদাতে শিথিলতা করতে। আল্লাহ তোমার মন্দ করুন। তারপর তার নিকট একজন অন্ধ, মূক ও বধির ফিরেশতা নিযুক্ত করা হয়। তার হস্তে ভীষণ লৌহ মুদগর থাকে। দুনিয়ার সব মানুষ ও জীন একযোগে যদি তা' উত্তোলন করতে চায় তা' পারবে না। যদি সে মুদগর দ্বারা দুনিয়ার কোন বিরাট পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তবে তা' খন্ড-বিখন্ড, চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ধূলার সাথে মিশে যায়। অতঃপর আত্মা পুনরায় তার শরীরের মধ্যে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তার দুই চোখের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করা হয়। সে আঘাতের প্রচণ্ড আওয়াজ দুনিয়ার জীন ও মানুষ ব্যতীত সবাই-ই শুনতে পায়। তরপর এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করে, দোযখের দুটো তক্তা এর জন্য বিছিয়ে দাও এবং দোযখের দিকে একটি দরজা এর জন্য উন্মুক্ত করে দাও। তখন দোষখ থেকে দুটো আগুনের তক্তা এনে তার জন্য শয্যা পেতে দেয়া হয় এবং দোযখের দিকে একটি দুয়ার তার জন্য খুলে দেয়া হয়।
হযরত মুহাম্মদ ইবনে আলী (রহঃ) বলেছেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট মৃত্যুকালে তার সৎকর্ম ও অসৎকর্মের আকৃতি তৈরী করে সামনে ধরে রাখা হয়। তখন সে তার সৎকর্মের আকৃতির দিকে দৃষ্টিপাত করে এবং অসৎকর্মের আকৃতির দিক থেকে চক্ষু ফিরিয়ে রাখে। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, মু'মিন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হলে ফিরেশতাগণ মেস্ক এবং সুগন্ধিযুক্ত জরীর বস্ত্র নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হয়। মৃত্যুকালে তার আত্মা দেহ পিঞ্জর থেকে এমনভাবে বের করে নেয়া হয় যেরূপভাবে আটার খামির থেকে একটি কেশ বের করে নেয়া হয়। তাকে বলা হয়, হে নফসে মুৎমাইন্নাহ (সন্তুষ্ট আত্মা) তুমি সন্তুষ্ট হয়ে এবং আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করে আল্লাহর রূহ জগতের দিকে এবং তার সম্মানের দিকে বের হয়ে এসো। যখন তার আত্মা বের হয়ে আসে, তা' সেই মেশক ও সুগন্ধি যুক্ত জরীর বস্ত্র দ্বারা আবৃত করে রাখা হয় এবং তদ্দ্বারা তাকে ইল্লিয়্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কাফিরের যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় তার নিকট ফিরেশতাগণ জ্বলন্ত অঙ্গারবিশিষ্ট লৌহ মুক্তাসহ এসে তার আত্মা বের করে নেয় এবং অত্যন্ত কঠোরভাবে তা' টেনে বের করে। আর তাকে বলা হয়, হে অপবিত্র আত্মা। তুমি অসন্তুষ্ট হয়ে এবং আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে আল্লাহর অপমান ও শাস্তির দিকে বের হয়ে এসো। যখন তার আত্মা বের হয়ে আসে, তখন তা' অগ্নির লৌহ ভাণ্ডারে স্থাপন করে এবং তা' ছিজ্জীনে নিয়ে যায়।
হযরত ইবনে কা'ব (রাঃ) আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করতেছিলেন, "যখন তাদের কারও নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, সে বলে, হে প্রভু! আমাকে তুমি পুনরায় পাঠিয়ে দাও যেন আমি সৎ কার্য করতে পারি।" তিনি বলেন, তুমি কি ইচ্ছা কর? তুমি কোন বস্তুর আকাঙক্ষা কর? তুমি কি ধন-দৌলত সংগ্রহ, বৃক্ষরাজি রোপন এবং সালান-কোঠা নির্মাণের জন্য ফিতে যেতে চাও? সে বলে, কখনই নয়; বরং আমি যা' ত্যাগ করে এসেছি তথায় গিয়ে যেন সৎকার্য করতে পারি। তখন আল্লাহ বলেন, তা' কখনই হবে না। এটা কেবল এর বাক্যমাত্র অর্থাৎ মৃত্যুর সময় সে একথাই বলবে।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশান করেছেন, মু'মিন ব্যক্তি তার কবরের মধ্যে বেহেশতের উদ্যানে থাকবে। তার কবর সত্তর গঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এবং তা' উজ্জ্বল আলোকে উদ্ভাসিত থাকবে। এমনকি তা' পূর্ণচন্দ্রের রাত্রির ন্যায় উজ্জ্বল করা হবে। তোমরা কি অবগত আছ যে, কোন বস্তু সম্বন্ধে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে? যথাঃ "তার জন্য সঙ্কীর্ণ জীবিকা আছে।" তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই এ বিষয় উত্তম অবগত আছেন। তিনি বললেন, কাফিরের শাস্তি এই যে, তার কবরের মধ্যে নিরানব্বইটি বিষাক্ত অজগর তাকে দংশন করতে থাকবে। তোমরা কি জান ঐ অজগরগুলো কিরূপ? প্রত্যেকটি অজগরের সাতটি করে মস্তক থাকবে। তারা তার শরীরে দংশন, ফুৎকার এবং উৎপীড়ন করতে থাকবে, যে পর্যন্ত না কিয়ামত সংঘটিত হয়। তোমরা অজগরের এই সংখ্যা শুনে আশ্চর্যান্বিত হয়ো না। অজগরের সংখ্যা এর বেশীও হতে পরে। কেননা এই সর্প ও অজগরের সংখ্যা নিন্দনীয় স্বভাবের সংখ্যার পরিমাণ অনুসারে হবে। অহংকার, রিয়া, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি অসৎ স্বভাবের অন্ত নেই। এই স্বভাবগুলো থেকে আবার তার শাখা-প্রশাখাও বের হয়ে থাকে। সেই সব দোষই ধ্বংসকর এবং তাই সর্প ও অজগররূপে পরিণত হবে। অধিক শক্তিশালী অজগরগুলো ভীষণভাবে দংশন করবে এবং দুর্বলগুলো তাদের শক্তি অনুসারে দংশন করবে। কলবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ এবং অন্তর্দর্শী বুযর্গগণ তাদের অন্তর্দৃষ্টির আলোকে এসব ধ্বংসকর বস্তু দেখে থাকেন। আর এর শাখা-প্রশাখাসমূহও দেখতে পান। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যার পরিমাণ নবুয়তের নূর ব্যতীত উপলব্ধি করা যায় না। সব বিষয়ের দৃষ্টান্তের বাহ্যিক অবস্থা বিশুদ্ধ এবং আভ্যন্তরীণ অবস্থা গুপ্ত। অবশ্য অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিগণের নিকট তা' সুস্পষ্ট। যার নিকট এর প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ পায় না তার এগুলোর প্রকাশ পাওয়াকে অস্বীকার করা উচিত নয়; বরং ঈমানের স্বল্প স্তরের অর্থ তাছদীক করা এবং তাসলীম করা অর্থাৎ সত্য বলে জেনে নিয়ে তা' মান্য করা। আমরা অনবরতই কাফিরদের কবর দেখে আসছি এবং তার অবস্থাও লক্ষ্য করছি, কিন্তু আমরা তাতে কিছুই দেখতে পাই না; সুতরাং অদর্শনের বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা সমর্থনের প্রমাণ কি? এর উত্তরে বলছি, প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ যে, এই প্রকার দৃষ্টান্তে সত্য ঘটনা প্রমাণের তিনটি মাকাম আছে।
প্রথম মাকামঃ তাছদীকের পক্ষে এই স্তর অধিক প্রকাশ্য, বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ। মৃত ব্যক্তিকে দংশন তোমার না দেখার কারণ এই যে, এই বাহ্যিক চক্ষু আধ্যাত্মিক জগতের ব্যাপার দর্শনের পক্ষে উপযোগী নয়। আখেরাতের সাথে যে বস্তুর সম্বন্ধ আছে তা' আধ্যাত্মিক জগতের অন্তর্গত। তোমরা কি ছাহাবীগণকে দেখনি যে, তারা কিরূপ জিব্রাইলের অবতরণ বিশ্বাস করেছেন? তাদের এই বিশ্বাসের কারণ এই যে, হুযুরে পাক (দঃ) তাঁর সাক্ষ্য দিয়েছেন। যদি তুমি তা' বিশ্বাস না কর, তাহলে ঈমানের মূল ফিরেশতা ও অহীর উপর বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা একান্ত আবশ্যক । আর যদি তুমি তাতে বিশ্বাস কর এবং উম্মতগণ যা' দেখেনি নদী তা সত্যরূপে দেখেছেন বলে মেনে নাও তবে মৃত ব্যক্তির বিষয়গুলোকে তোমাদের বিশ্বাস না করার যুক্তি কি? যেরূপ ফিরেশতা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় নয় তদ্রূপ যে সব সর্প ও অজগর কবরে দংশন করতে থাকবে তা; আমাদের জানা সর্প ও অজগরের শ্রেণীভুক্ত নয়; বরং তা' অন্য শ্রেণীভুক্ত যা' আমাদের বাহ্যিক ইন্দ্রিয় দ্বারা ধরা যায় না; বরং গুপ্ত ইন্দ্রিয়ের যারা অনুভব করা যায়।
দ্বিতীয় মাকামঃ এটা হল নিদ্রিত ব্যক্তির অবস্থা স্মরণ করা। নিদ্রিত ব্যক্তি স্বপ্নে সর্প দংশন দেখে এবং তার যন্ত্রণাও সে অনুভব করে। এমন কি কখনও কখনও সে নিদ্রা থেকে চীৎকার দিয়ে জাগ্রত হয়ে যায় এবং তার ললাটদেশ থেকে ঘর্ম মুছতে থাকে। তার শয়নের স্থান থেকে দূরে সরে যায়। সে এসব তার নিজের মধ্যেই দেখতে পায় এবং কষ্ট ভোগ করতে থাকে যেরূপ জাগ্রত ব্যক্তি তা' দেখে কষ্ট ভোগ করে। তুমি নিদ্রায় তার বাহ্যিক অবয়ব প্রশান্ত দেখতে পাও এবং তার চার পার্শ্বে কোন সর্প দেখতে পাও না। অথচ যে স্বপ্ন দেখেছে তার বেলায় সর্প সত্য এবং তার শাস্তিও সত্য। কিন্তু তা' তোমার বেলায় সত্য নয়। যখন শাস্তি তার দংশনের যন্ত্রণার মধ্যে নিহিত তখন কল্পনার সর্প ও দর্শনজনিত সর্পের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
তৃতীয় মাকামঃ তুমি জান যে, সর্প স্বয়ং যন্ত্রণা দিতে পারে না; বরং সে যে বিষ তোমার মধ্যে ঢেলে দেয় তাই যন্ত্রণা দেয়। তারপর সেই বিষাক্ত যন্ত্রণা নয়; বরং উক্ত বিষের প্রভাবে তোমার মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাই তোমার শাস্তি। যদি বিষ ব্যতীত এই ক্রিয়া করা যায় তাহলে তা' শাস্তির পক্ষে যথেষ্ট হয়, এই প্রকার শাস্তির ব্যাখ্যা চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী বস্তুর সাথে সম্পর্ক ব্যতীত করা সম্ভব হয় না। বস্তু দ্বারাই ব্যাখ্যার সম্পর্ক হয় এবং ফল অর্জন করা যায়, বস্তুর রূপ অর্জিত হয় না। বস্তু উপভোগের জন্য চাওয়া হয়, তার নিজস্ব আকৃতির জন্য নয়। এ সব ধ্বংসকর দোষ মৃত্যুর সময় কষ্ট প্রদানকারী যন্ত্র বা বস্তুতে পরিণত হয়। মৃত্যুর সময় প্রাণের উপর যে কষ্ট হয় তার যন্ত্রণা সর্প দংশনের যন্ত্রণাতুল্য, অথচ সর্পের আকৃতি সেখানে নেই। স্বভাবের পরিবর্তন কষ্টদায়ক যেরূপ ভালবাসার বস্তুর বিচ্ছেদ বা তার মৃত্যুতে মনে কষ্ট উপস্থিত হয়, কেননা তার পরিবর্তন কষ্টকর। তা' প্রেমাস্পদের মৃত্যুর সময় প্রেমের পরিবর্তনের কষ্টের ন্যায়। তা' প্রথমে সুস্বাদু থাকে। সেই স্বাদের উপর এমন অবস্থা ঘটে যে, সেই স্বাদ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন কি তা' মনের উপর শাস্তিতে পরিণত হয়। কেননা প্রেমিক তখন প্রেমাস্পদের সাথে মিলনের স্বাদ হারিয়ে ফেলে, তা' মৃত ব্যক্তির নানাবিধ শাস্তির মধ্যে একটি শাস্তি। সংসারের প্রতি তার ভালবাসা ছিল প্রবল। ধন-দৌলত, বিষয়-সম্পত্তি, নাম-ধাম, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের প্রতি তার ভালবাসা ছিল গভীর। যদি তার পার্থিব জীবনে সে এই সুখ পায় সে তা' থেকে ফিরতে চায় না। সুতরাং মৃত্যুর সময় তার অবস্থা তুমি কি মনে কর? তার কি দুর্ভাগ্য গুরুতর হবে না এবং তার শাস্তি কি অধিক হবে না? সে কবরে বলতে থাকবে আমার যদি কোন ধন-সম্পদ না থাকত, কখনও আমার নামযশ না থাকত তবে তার বিচ্ছেদে আমার এত কষ্ট হত না; সুতরাং মৃত্যুর অর্থ এসব পার্থিব বিষয় অল্প পূর্বেই প্রীতিকর ছিল এবং সেই প্রীতি তারই অভাবে এখন দুঃখে পরিণত হয়েছে।
যে ব্যক্তি শুধু সংসারে মত্ত তার অবস্থা কিরূপ হবে। ঐ ব্যক্তির অবস্থা এরূপ হবে যে, তার থেকে সমস্ত সংসার কেড়ে নিয়ে শত্রুদেরকে অর্পণ করা হবে। পারলৌকিক যে সুখ-সম্পদ সে হারিয়েছে এবং তার উপর আল্লাহ থেকে যে পর্দা পড়ে গেছে তার অনুতাপ ও বিক্ষোভ উপরোক্ত শাস্তির সাথে সংযুক্ত হবে।
আল্লাহ ভিন্ন অন্য বস্তু আল্লাহর সাথে সাক্ষাত থেকে এবং তাঁর অমূল্য নিয়ামত থেকে দূরে রাখে। মোটকথা সব প্রিয় বস্তু থেকে বিচ্ছেদ এবং পারলৌকিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার অনুতাপ ও ক্ষোভ এবং আল্লাহর নিকট থেকে দূরে থাকার অপমান তার ভোগ করতে হবে। এসব শাস্তি দ্বারা তাকে কষ্ট দেয়া হবে। দোযখের অগ্নি এই বিচ্ছেদের অগ্নির পিছনে পিছনে থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "কাল্লা ইন্নাহুম আররাব্বিহিম ইয়াওমায়িযিল লা মাহযুবুন ঘুমা ইন্নাহুম লা ছালুল জাহীম" অর্থাৎ কখনই নয়, সেই দিন তারা তাদের প্রভু থেকে দূরে সরে থাকবে। তারপর তারা নিশ্চয়ই দোযখে দন্ধীভূত হতে থাকবে।
যে ব্যক্তি দুনিয়ার সাথে আসক্তি রাখে না, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভালবাসে না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য সর্বদা উদগ্রীব থাকে সে সংসাররূপ কারাগার থেকে এবং লোভের মন্দ থেকে মুক্তি পায় আর তার প্রিয়জনের নিকট চলে যায়। সংসার থেকে তার সব বন্ধন এবং সংসারের প্রতি তার মনের আকর্ষণ ছিন্ন হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তার উপর এমন সুখ-সম্পদ ও শান্তি পূর্ণরূপে বর্ষিত হয়, যার কখনও বিলুপ্তি নেই এবং যা' অনন্তকাল স্থায়ী।
আমাদের উদ্দেশ্য এরূপ। যেমন এক ব্যক্তি তার অশ্বকে অত্যন্ত ভালবাসে। যদি সে ব্যক্তিকে এরূপ দুটো বিষয়ের একটিকে পছন্দ করতে বলা হয় যে, হয় তোমার নিকট থেকে অশ্বটি নিয়ে যাওয়া হবে, না হয় তুমি সর্প দংশনের জ্বালা সহ্য হরবে। ঐ ব্যক্তি সর্পদংশনের যন্ত্রণাই সহ্য করাকে পছন্দ করবে। কেননা সর্প দংশনের যাতনা থেকে তার নিকট অশ্বের বিচ্ছেদ যাতনা অধিক। যদি তার নিকট থেকে অশ্বটি নিয়ে যাওয়া হয় তবে অশ্বের প্রতি ভালবাসাই তাকে দংশন করতে থাকে। সুতরাং এরূপ দংশন জ্বালা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কেননা মৃত্যু তার নিকট থেকে তার অশ্ব, অন্যান্য যানবাহন, বাসগৃহ, বিষয়-সম্পদ, পরিজনবর্গ, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্য পরিচিত লোকদের থেকে বিচ্ছেদ ঘটাবে। তার নিকট থেকে তার নাম-ধাম কেড়ে নেবে; বরং তার নিকট থেকে তার চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা এবং অন্যান্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে যাবে। এগুলোর নিকট তার আর প্রত্যাবর্তন করা হবে না। যখন যে সব বস্তু সে ভালবাসে সেগুলো তার নিকট থেকে পৃথক করে দেয়া হবে, তখন তা' তার নিকট সর্প ও বিচ্ছুর দংশনের চেয়ে অধিক যন্ত্রণাদায়ক হবে। তদ্রূপ যখন তার মৃত্যু হয় তখন তার উপর এরূপ শাস্তি হয়। কেননা যে আত্মা এই শাস্তি ভোগ করে তার মৃত্যু নেই। এজন্যই তার শাস্তি অতি কঠোর হবে ইহ জীবনে আত্মার জন্য এমন অনেক উপকরণ ছিল যার দ্বারা সে সান্ত্বনা লাভ করত। যেমন লোকের নিকট যাওয়া-আসা, তাদের সাথে উঠা-বসা ও তাদের সাথে বাক্যালাপ করা, তাদের থেকে সান্ত্বনা পাওয়া, অপহৃত বস্তুগুলো পুনরায় পাওয়া যাবে
তুমি তোমার মৃত্যুর সময় যে বস্তুই রেখে যাবে তা' তোমার মৃত্যুর পর অনুশোচনার কারণ হবে; সুতরাং ইচ্ছা করলে পার্থিব ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করতে পার আর ইচ্ছা করলে তা' কমও করতে পার। যদি তা' বৃদ্ধি কর তবে তোমার অনুতাপ তুমিই বৃদ্ধি করবে। আর যদি তা' কম কর তোমার পৃষ্ঠ থেকে তা' নামিয়ে বোঝা হাল্কা করবে। যে সব ধনী লোক পরকালের চেয়ে ইহকালকে অধিক ভালবাসে এবং পার্থিব ধন-সম্পদে বিভোর থাকে তারা তাদের কবরের মধ্যে সর্প ও বিচ্ছু অধিক সংগ্রহ করে রাখে। কবরের সর্প, বিচ্ছুও অন্যান্য প্রকার শাস্তির বিষয়ে এটিই হল ঈমানের বিভিন্ন মাকাম বা স্তর।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)এর পুত্রের মৃত্যুর পর তিনি মৃত পুত্রকে একদা স্বপ্নে দেখে তাকে বললেন, হে প্রিয় পুত্র। তুমি আমাকে কিছু উপদেশের কথা শুনাও। পুত্র বলল, হে পিতঃ! আপনি যা' ইচ্ছা করেন তা' যেন আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধী না হয়। তিনি আবার বললেন, হে পুত্র আমাকে আরও উপদেশ দাও। পুত্র বলল, আপনি তা' আমলে আনতে পারবেন না। তিনি বললেন, সে দেখা যাবে, তুমি বল। পুত্র বলল, পিতঃ! আল্লাহ এবং আপনার মধ্যে কোন পিরহান (পর্দা) রাখবেন না। অতঃপর সত্যিই একাধারে ত্রিশ বছর পর্যন্ত তিনি পিরহান পরিধান করেননি।
প্রশ্নঃ এই তিনটি মাকামের বা স্তরের মধ্যে অধিকতর বিশুদ্ধ মাকাম বা স্তর কি?
উত্তরঃ জেনে রাখ যে, মানুষের মধ্যে কেউ কেউ প্রথম স্তরের উপর থাকে এবং অন্য স্তর অগ্রাহ্য করে। আবার কেউ কেউ প্রথম স্তর অগ্রাহ্য করে দ্বিতীয় স্তরের উপর থাকে। আবার কেউ কেউ তৃতীয় স্তরের উপরই থাকে। অন্তর্দৃষ্টির বলে আমাদের নিকট স্পষ্ট অবস্থা এই যে, তিনটি স্তরের প্রত্যেকটিই স্থানভেদে হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি এই তিন স্তরের মধ্যে কোন একটি অস্বীকার করে সে তার গণ্ডি সংকীর্ণ করে এবং সে আল্লাহর শক্তির অসীমতা ও তাঁর আশ্চর্য কারুকার্যের প্রতি অজ্ঞ। যে পর্যন্ত আল্লাহর কারুকার্যের প্রতি আসক্তি ও ভালবাসা তার না জন্মে সে আল্লাহর কারুকার্যকে অস্বীকার করে। এটাই তার অজ্ঞতা ও ত্রুটির কারণ; বরং শাস্তির বেলায় তিনটি স্তরই সম্ভব। তা' সত্য বলে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। এর মধ্যে কোন একটির দ্বারা কাউকে শাস্তি দেয়া হয়। আবার কোন লোককে সব স্তর দ্বারা শাস্তি দেয়া হয়। সব স্তর দ্বারা শাস্তি প্রদান থেকে আমরা তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। এটাই সত্য এবং একে বিনা প্রমাণে সত্য বলে বিশ্বাস করবে। যে তা' প্রকৃতপক্ষে সত্য বলে জানে, সে এই দুনিয়ার প্রান্তরে সম্মান পায়। তা' বৃদ্ধির জন্য অধিক দৃষ্টি করবে না এবং তার পরিচয় পাওয়ার জন্যও চেষ্টা করবে না; বরং যে প্রকারেই হোক শাস্তি দূর করার জন্য চেষ্টা করবে; যদি আমল ও ইবাদাত কার্যে অবহেলা কর এবং শুধু তর্ক-বিতর্কে ব্যস্ত থাক, তবে তুমি নিম্নোক্ত ব্যক্তির ন্যায় হবে। যেমন কোন ব্যক্তিকে বাদশাহ ধৃত করে তার হস্ত এবং কর্ণ কর্তন করার জন্য তাকে আবদ্ধ করে রেখে দেয়। সে সারা রাত্রি এই চিন্তা করে যে, বাদশাহ তার হস্ত ও কর্ণ অসি দ্বারা বা ছুরি দ্বারা অথবা ক্ষুর দ্বারা কর্তন করবে। মূল শান্তি এড়াবার জন্য সে কোন উপায় উদ্ভাবন করে না। এটাই তার চরম অজ্ঞতা। কিরূপে মৃত্যুর পর ভীষণ শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বা চিরস্থায়ী সুখ পাওয়া যাবে তজ্জন্য প্রস্তুত হওয়া আবশ্যক। শাস্তি ও পুণ্য কিভাবে দেয়া হবে এই বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা সমর নষ্ট করা ব্যতীত আর কিছু নয়।
0 Comments