সমস্ত প্রশংসা পরম রুণাময় আল্লাহর জন্য। যিনি তাঁর রহমত ও ক্ষমার আশাকারীর উপর করুণা বর্ষণ করেন। যার যারা সতর্ক করেন। যিনি তাঁর তাঁকে কে ভয় করে তাদেরকে যিনি তাঁর ক্রোধ ও অসন্তোষ থেকে গণকে কোন অজ্ঞাত উপায়ে সাহায্য করেন। যিনি তাদের উপর ার বান্দাগণ কিন্তু লোভনীয় বস্তু থেকে বিরত থাকবার জন্য করেছেন; লোভ-লালসা প্রবল করে ন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যিনি তাদেরকে ক্রোধ দ্বারা পরীক্ষা করেন এবং তারা যে ক্রোধ করে তা' দমনের ক্ষমতা দিয়েছেন। যিনি দুঃখ, কষ্ট ও সুখাস্বাদ দ্বারা তাদেরকে আবৃত করে রেখেছেন এবং তারা কিরূপ কার্য করে, তা' পরীক্ষা করবার জন্য তাদেরকে অবসর দিয়েছেন, যিনি তদ্বারা তাদের ভালবাসা পরীক্ষা করেন যেন তারা যা' ওয়াদা করেছে তার সত্যতা জানতে পারে। যিনি তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যা' তারা গোপনে করে বা প্রকাশ্যে করে তা' কিছুই তাঁর নিকট গুপ্ত নয়। যিনি তাদের উপর অকস্মাৎ শাস্তি দেন কিন্তু তারা তা' জানতে পারবে না বলে পূর্বেই সতর্ক করেছেন। যিনি বলেছেন, তারা একটি ফুৎকার ব্যতীত অপেক্ষা করছে না। যা' তাদেরকে আবৃত করবে এবং তারা তর্ক-বিতর্কই করতে থাকবে। তখন তারা অন্তিম বাক্য বলতেও সমর্থ হবে না এবং তারা পরিবারবর্গের দিকেও তাকাতে পারবে না। তারপর তাঁরা রাসূলেকরীম হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রতি অসংখ্য দরূদ ও সালাম, যাঁর পতাকাতলে সব নবী একত্র হবেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সহচরগণের উপরও অসংখ্য সালাম।
ক্রোধ অগ্নিস্ফুলিঙ্গঃ আল্লাহর অগ্নি থেকে ক্রোধের উৎপত্তি যা' হৃদয় মধ্যে উত্থিত হয়। ক্রোধ হৃদয় মধ্যে তুষের নিচে অগ্নির ন্যায় প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে। প্রত্যেক অত্যাচারী এবং অবাধ্য লোকের মনের মধ্যে যে গুপ্ত অহঙ্কার নিহিত আছে লৌহের সাথে প্রস্তর ঘষলে যে অগ্নি নির্গত হয়, সেই অগ্নির ন্যায় ক্রোধ অহঙ্কারকে বহির্গত করে। ঘৃণিত শয়তানের দিকে মানুষের একটি গ্রন্থি বের হয়ে গেছে। ক্রোধের অগ্নি যার মধ্যে স্থান পেয়েছে শয়তানের স্বভাব তার মধ্যে প্রবল হয়েছে। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেছেন, শয়তান বলল, "খালাক্কানী মিন নারিও ওয়াখালাক্বতাহু মিন ত্বীন"। অর্থাৎ আমাকে তুমি আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ আর তাকে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছ। মৃত্তিকা স্থির ও শান্ত এবং অগ্নি চঞ্চল, গতিবিশিষ্ট, উর্ধগামী ও প্রজ্জ্বলিত। ক্রোধের ফল হিংসা-বিদ্বেষ এবং তদ্বারাই মানুষ ধ্বংস হয়। আর তাদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ হয়। এই দুই দোষের সমষ্টি একটি রক্তপিন্ড। যখন তা' সুস্থ থাকে সমগ্র শরীর তখন সুস্থ থাকে। যখন ক্রোধ হিংসা-বিদ্বেষ জন্মায় যা' কোন লোককে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। তখন তার পরিচয় ও ক্ষতি অবগত হওয়া অতি প্রয়োজনীয়, যেন সতর্ক হতে পার, তা' থেকে 'আত্মরক্ষা করতে পার। যেন হৃদয় থেকে তা' দূর করতে পার যদি তা' তোমার মনে বদ্ধমূল হয়ে যায় তা' দূর করবার দাওয়াই প্রয়োগ করা দরকার। যে ব্যক্তি মন্দের পরিচয়ই জানে না সে তাতে পতিত হয়। যে ব্যক্তি তার পরিচয় জানে সে পরিচয় জানাই যথেষ্ট যে পর্যন্ত না সে তা' দূর করবার পন্থা জানে। এখন আমরা ক্রোধের ক্ষতি এবং হিংসা-বিদ্বেষের আপদ সম্বন্ধে এখানে বর্ণনা করব। প্রথমে ক্রোধের ক্ষতি, তারপর ক্রোধের পরিচয়, তারপর ক্রোধ দূরীকরণ, ক্রোধের দাওয়াই, ক্রোধ দমনের মাহাত্ম্য, ধৈর্যের মাহাত্মা ও ফজীলত, ক্রোধের আবশ্যকতার পরিমাণ বর্ণনা করব। তারপর হিংসা-বিদ্বেষের অর্থ, তার কুফল এবং ক্ষমতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করব। তারপর ঈর্ষার ক্ষতি, তার পরিচয় ও কারণ এবং তার দাওয়াই ইত্যাদি বর্ণনা করব। ক্রোধের অকল্যাণঃ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "ইয জাআলাল লাযীনা কাফার ফী কুলুবিহিমিল হামিয়্যাতাল জাহিলিয়্যাতা ফাআনযালাল্লাহু সাকীনাতাহু আলা রাসূলিহী ওয়া আলাল মু'মিনীন'। অর্থাৎ যারা কাফির তাদের মনে আল্লাহতায়ালা অজ্ঞতার উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর রাসুল এবং মু'মিনদের উপর শান্তি অবতীর্ণ করেছেন, তারপর তিনি কাফিরদেরকে তিরস্কার করেছেন। কেননা তারা অসত্য বিষয়ে ক্রোধ থেকে উৎপন্ন উত্তেজনা প্রকাশ করে থাকে। তিনি মু'মিনদেরকে প্রশংসা করেছেন। কেননা আল্লাহতায়ালা তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ করেন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, একব্যক্তি হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এসে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত কার্যের আদেশ দিন। তিনি বললেন, ক্রোধ করো না। তারপর সে লোকটি পুনরায় আরজ করলেও তিনি বললেন, ক্রোধ করো না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেছেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ) কে বললাম আমাকে এমন সংক্ষিপ্ত উপদেশ দিন যার দ্বারা আমি কল্যাণের আশা করতে পারি। তিনি বললেন, ক্রোধ করো না। তিনি পর পর আরও দুবার তাঁর নিকট এরূপ আরজ করলেন। প্রত্যেকবারই তিনি তাঁকে বললেন, ক্রোধ করো না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেছেন, আমি একদা হুযুরে পাক (দঃ) কে বললাম, আমাকে আল্লাহর ক্রোধ থেকে কোন বস্তু রক্ষা করবে? তিনি বললেন, ক্রোধ প্রকাশ করো না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন যে, একদা হুযুরে পাক (দঃ) আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা শক্তিশালী গণ্য কর। আমরা বললাম, এমন ব্যক্তিকে যাকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না। তিনি বললেন, না, তা' নয় বরং শক্তিশালী ঐ ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় প্রবৃত্তিকে দমন রাখতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, যার শারীরিক শক্তি বেশী, সে অধিক শক্তিশালী নয়; বরং ক্রোধের সময় যে তার প্রবৃত্তিকে দমন রাখবে সে-ই অধিক শক্তিশালী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার ক্রোধকে হজম করতে পারে আল্লাহ তার গুপ্ত ব্যাপারকে গোপন রাখেন। হযরত সোলায়মান (আঃ) বলেছেন, হে বৎস! অধিক ক্রোধ থেকে আত্মরক্ষা করবে। কেননা অতিরিক্ত ক্রোধ-সহিষ্ণু লোকের হৃদয়কে লঘু দ। আল্লাহতায়ালা ফেলে বলেছেন "ওয়া সাইয়্যিদাও ওয়া হুজ্জ্বলা"। অর্থাৎ তিনি (ইয়াহইয়া আঃ) সর্দার ও পবিত্র চরিত্র। হযরত আকরামাহ (রাঃ) এই আয়াতের অর্থ সম্বন্ধে। সর্দার ঐ ব্যক্তি যাকে ক্রোধ পরাভূত করতে পারে না। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন, আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমাকে এমন কার্য শিখিয়ে দিন যা' আমাকে বেহেশতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, ক্রোধ করো না। হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) হযরত ঈসা (আঃ)কে বলেছিলেন, ক্রোধ করো না। তিনি বললেন, আমি ক্রোধ না করে পারব না, আমি সামান্য মানুষ মাত্র। তখন হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) বললেন, ধন সঞ্চয় করো না। হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, হাঁ, এটা হতে পারে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, সিরকা যেমন মধু নষ্ট করে, ক্রোধ তদ্রূপ ঈমানকে নষ্ট করে। তিনি আরও বলেছেন, কোন ব্যক্তি ক্রোধ করলে সে দোযখের কিনারায় ঘোরা-ফিরা করে। একব্যক্তি একদা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, কোন বস্তু কঠিন। তিনি বললেন, আল্লাহর ক্রোধ। সে বলল, আল্লাহর ক্রোধ থেকে কোন বস্তু আমাকে দূরে রাখবে? তিনি বললেন, তুমি নিজে ক্রোধ প্রকাশ করো না।
বিজ্ঞ বুযর্গদের বাণীঃ হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, হে আদম সন্তান। যখনই ক্রোধ কর এবং তা' স্থায়ী থাকে তখনই তুমি লাফিয়ে দোযখের আগুনে পড়তে পার, যুলকারনাইন বলেছেন যে, একদা তার এক ফিরেশতার সাথে সাক্ষাত হলে তিনি তাকে বললেন, আমাকে এমন একটি বিদ্যা শিখিয়ে দিন যদ্বারা আমি ঈমান, একীন বৃদ্ধি করতে পারি। তিনি বললেন, ক্রোধ করো না। কেননা মানুষের ক্রোধের সময় শয়তান অধিক শক্তিশালী হয়। ক্রোধ দমন করে তাকে শান্ত কর। সত্বরতা বা কাজের মধ্যে ব্যস্ত-ত্রস্ততা ত্যাগ কর। কেননা যখন তুমি ব্যস্ততা অবলম্বন কর তখন তোমার মনে শান্তি ও সুখের অংশ থাকে না। নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সব লোকের প্রতিই সহজ এবং বিনম্র হও। কিন্তু অবাধ্য ও অত্যাচারী হয়ো না।
হযরত ওয়াহহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রহঃ) বলেছেন যে, জনৈক খৃষ্টান সাধক তার ইবাদাত গৃহে থাকাকালে শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করবার ইচ্ছে করল কিন্তু সে তাতে সক্ষম হল না। তারপর সে তার নিকট আবার এসে বলল, দরজা খোল। কিন্তু সাধক তার কোন উত্তর দিল না। তারপর সে আবার বলল, দরজা খোল। যদি আমি চলে যাই তবে অনুষ্ঠাপ করতে হবে। কিন্তু সাধক সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করল না। তারপর শয়তান বলল, আমি যিশু খৃষ্ট। তখন সাধক বলল, যদি তুমি যিশু খৃষ্ট হও আমি কি করতে পারি? তুমি কি আমাদেরকে ইবাদাত করতে বল নি এবং আমাদেরকে কিয়ামতের কথা জানাও নি? অদ্য যদি তুমি তা' ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে আস আমরা তোমার নিকট থেকে তা' গ্রহণ করব না। তখন শয়তান বলল, আমি শয়তান। আমি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে এসেছি। যদি তোমার কিছু চাওয়ার মত থাকে তা' তুমি আমার নিকট থেকে চেয়ে নিতে পার। তখন সাধক বলল, তোমার নিকট আমি কিছুই চাই না। অতঃপর শয়তান চলে যেতে উদ্যত হলে সাধক বলল, তুমি আমার কথা কি শ্রবণ করেছ? শয়তান বলল, হাঁ। সাধক বলল, তবে আমাকে বল যে, আদম সন্তানের স্বভাবের মধ্যে কোন কোন স্বভাব তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করে। শয়তান বলল, তা' হল ক্রোধ। মানুষ যখন রাগান্বিত হয় তখন তাকে আমি এমনভাবে ওলট-পালট করি যেমন কোন বালক তার পুতুলকে ওলট-পালট করে।
হযরত খায়ছামা বলেছেন, শয়তান বলে, আদম সন্তান কি করে আমাদেরকে পরাভূত করবে? যখন সে সন্তুষ্ট হয় তখন আমরা তার নিকট আসি। এমন কি তার হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করি। আর যখন সে রাগান্বিত হয়, তার মস্তকের উপর আসন গ্রহণ না করা পর্যন্ত তার উপর উড়তে থাকি। হযরত জা'ফর ইবনে মুহাম্মদ (রহঃ) বলেছেন, ক্রোধ প্রত্যেক কার্যের কুঞ্জী। কোন এক আনছার ছাহাবী বলেছেন, ক্রোধই নির্বুদ্ধিতার মূল এবং ক্রোধই তার চালক। হযরত মুজাহিদ (রাঃ) বলেন, ইবলীস বলেছে যে, আদম সন্তান আমাকে তিনটি বিষয়ে ব্যর্থ করতে পারবে না। যখন তাদের কোন ব্যক্তি নেশার ঘোরে বিভোর হয় আমরা তার নাসিকায় রশি লাগিয়ে তাকে যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে টেনে নেই এবং আমরা যা' ভালবাসি তার দ্বারা সে কাজ করিয়ে নেই। যখন তার ক্রোধ হয় তখন সে এমন বাক্য ব্যবহার করে যা' তার জানা থাকে না। সে এমন কজে করে যাতে সে পরে অনুতপ্ত হয়। সে এমন বস্তুতে কৃপণতা করে যা' তার অধিকারে থাকে এবং আমরা তাকে এমন কার্যে নিযুক্ত করি যা' তার শক্তির বহির্ভূত। জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তিকে বলা হয়েছিল, অমুক ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে অত্যন্ত বশে রাখে। শুনে তিনি বললেন, তাহলে কাম প্রবৃত্তি তাকে হেয় করতে পারবে না। মোহ তাকে পদানত করতে পারবে না এবং ক্রোধ তাকে পরাভূত করতে সক্ষম হবে না। জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন, ক্রোধ সংযত রাখবে। কেননা তা' তোমাকে কৈফিয়তের অপমানের দিকে নিয়ে যাবে। অন্য একজন বিজ্ঞ বুযর্গ বলেছেন, ক্রোধ থেকে আত্মরক্ষা করবে। কেননা তা' ঈমানকে নষ্ট করে যেরূপ সিরকা মধুকে নষ্ট করে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, মানুষের ধৈর্যের দিকে তার ক্রোধের সময় এবং আমানতের দিকে তার লোভের সময় লক্ষ্য করবে। যখন সে রাগান্বিত না হয় তখন তার ধৈর্য সম্বন্ধে তোমার জানার আবশ্যকতা নেই। যখন সে লোভ না করে তখন তার সম্বন্ধে তোমার জানার আবশ্যকতা নেই। খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযীয তাঁর কোন এক শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন, তোমার ক্রোধের সময় কাউকে শাস্তি দিয়ো না। যখন কারও উপর তোমার ক্রোধ হয়, তাকে বন্দীশালায় রেখে দিও। তারপর যখন তোমার ক্রোধ প্রশমিত হয় তখন তাকে বের করে দিও। তার দোষের পরিমাণ অনুযায়ী তাকে শাস্তি দিও। আর শাস্তি দেয়ার সময় তাকে পনেরটি বেত্রাঘাতের অধিক দিও না। হযরত আলী ইবনে যায়েদ (রহঃ) বলেছেন, জনৈক কুরায়েশ ব্যক্তি খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযীযের উপর কর্কশ কথা বললে, তিনি অনেকক্ষণ পর্যন্ত মস্তক অবনত করে রেখে তারপর বললেন, তোমার ইচ্ছে খলীফার অহঙ্কার শয়তান আমার মধ্যে জাগ্রত করুক এবং তার ফলে অদ্য তোমার সাথে এমন রুক্ষ কথা বলি যে, কল্য তুমি তদ্রূপ আমার নিকট প্রতিশোধ নিতে পার।
একজন বিজ্ঞ লোক তার পুত্রকে উপদেশ দিয়েছিলেন, হে বৎস। যেরূপ প্রজ্জ প্রাণ রক্ষা পায় না অদ্র তদ্রূপ ক্রোধের সময় বুদ্ধি ঠিক থাকে না। যে ব্যক্তির সর্বাপে বাপেক্ষা কম জোন এ দুনিয়ার কোন বিষয়ের জন্য হয় তখন তার সাম দ্ধিমান। যদি ক্রোধ। হয় সে সর্বাপেক্ষা অধিক বুদ্ধিম হয় প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা। আর যদি তা' আখেরাতের কোন বিষয়ের জন্য হয় তখন তার নাম হয় জ্ঞান ও সংযম। লোকে বলে, ক্রোধ বুদ্ধির শত্রু এবং ক্রোধ একটি বিপদ। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর খুৎবাহর মধ্যে বলতেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি লোভ, মোহ ও ক্রোধ থেকে রক্ষা পায় সে মুক্তি পাবে। জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন, যে ব্যক্তি তার প্রবৃত্তি ও ক্রোবের অনুসরণ করে, উভয়ই তাকে দোযখের দিকে নিয়ে যায়। হযরত হাসান বজরী (রহঃ) বলেছেন, মুসলমানের চিহ্নগুলো এই ধর্মে তার শক্তি থাকবে, সহজ বিষয়ে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবে, নিশ্চিত বিষয়ে ঈমান আনবে, সংযমের জ্ঞান রাখবে, দয়ার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান হবে, মানুষের ইক আদায় করবে, ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে অন্যপন্থা অবলম্বন করবে। ক্ষুধার সময় ধৈর্য ধারণ করবে, ক্ষমতার সময় উপকার করবে, বন্ধুত্বের ভার বহন করবে, বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করবে। তাহলে ক্রোধ তাকে পরাভূত করবে না, উত্তেজনা তাকে বিপদে ফেলবে না, প্রবৃত্তি তার উপ প্রবল হবে না, উদর তাকে হেয় করবে না। সে মজলুমকে সাহায্য করবে, দুর্বলের প্রতি দয়া দেখাবে, সে কৃপণ হবে না, সে অপচয় করবে না, অপব্যয় করবে না, কেউ অত্যাচার করলে ক্ষমা করবে, কোন মূর্খ ব্যক্তি দুঃখ-কষ্ট দিলে তাকে মার্জনা করবে এবং লোক তার থেকে নিরাপদ থাকবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) কে বলা হয়েছিল, সৎস্বভাবের ব্যাখ্যা এক কথাত আমাদের নিকট প্রকাশ করুন। তিনি বললেন, ক্রোধ ত্যাগ করবে। একজন নবী তার অনুবর্তীগণকে বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি কি আমার নিকট প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারে যে, সে কখনই ক্রুদ্ধ হবে না? তাহলে সে আমার পদমর্যাদা লাভ করে আমার সাথে বেহেশতে থাকতে পারবে এবং আমার পরে আমার খলীফা হবে। জনৈক যুবক উঠে বলল, আমি। তারপর উক্ত নবী আবার ঐ কথা বললেন, তখনও যুবক বলল, আমি। তারপর তিনি তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর অঙ্গীকার প্রতিপালন করেছিলেন। যখন উক্ত নবীর মৃত্যু হল উক্ত যুবক তার স্থলবর্তী হল। তার নাম ছিল যুল-কিফল। তাঁর এরূপ নাম হওয়ার কারণ তিনি তার অঙ্গীকার যথাযথভাবে পালন করেছিলেন। হযরত ওয়াহহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রহঃ) বলেছেন কুফর এর চারটি অঙ্গ আছে। যথাঃ ক্রোধ, প্রবৃত্তি, লোভ এবং নির্বুদ্ধিতা'।
0 Comments