মৃত্যুকষ্ট উপদেশস্বরূপঃ
হযরত হাসান (রা) বলেন হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন: মৃত্যুকষ্ট তলোয়ারের তিনশ আঘাতের সমতুল্য তিনি আরো বলেছেন: মৃত্যুকষ্ট আমার উম্মতের জন্য উপদেশস্বরূপ।
পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটির পূর্ব গনীমত মনে করোঃ
হযরত মায়মুন বিন মাহরান (রহ) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন: পাঁচটি বিষয়কে তোমরা অন্য পাঁচটির পূর্বে গনীমত মনে করো। যথা:
১. বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকালকে।
২. অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে।
৩. ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে।
৪. দরিদ্রতার পূর্বে সম্পদশালিতাকে। এবং
৫. মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।
যৌবনকাল তথা শক্তি-সামর্থ্য থাকা অবস্থায় যতটুকু ইবাদত ও মেহনত করা যায়, বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর তা কল্পনা করাও অসম্ভব। দ্বিতীয়ত যৌবনকালে যখন গুনাহের কাজ ও অলসতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর তা দূর করা খুবই কঠিন। সুস্থতার সময়টা বড়ই মূল্যবান। অসুস্থ হলে পরে তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়। তাই সুস্থতার সময়কে নষ্ট করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
রাত হলো অবসর সময়। সুতরাং রাতের অবসর সময়টুকু যদি কেউ যিকির-আযকার ও ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত না হয়ে নষ্ট করে দেয়, তাহলে দিনের বেলায় পার্থিব শত ঝামেলার মধ্যে ইবাদত-বন্দেগী করার আর সময় পাওয়া যায় না। তাই রাতের বেলা ইবাদত-বন্দেগী করা চাই। বিশেষ করে শীতকালীন রাতে।
শীতকাল মুমিনের জন্য গনীমত সমতুল্য
হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন: শীতকাল মুমিনের জন্য গনীমত সমতুল্য। কারণ, এসময় রাত লম্বা হয়। তাতে সে ইবাদত-বন্দেগী করে। আর দিন হয় ছোট, তাতে সে রোযা রাখে। উল্লেখ্য, শীতকালে রাতে ইবাদত করা এবং দিনে রোযা রাখা অতি সহজ।
হযরত মুহাম্মদ (সা) আরো বলেন (শীতকালে) রাত লম্বা হয়। সুতরাং ঘুমিয়ে তা ছোট করো না। আর দিন উজ্জ্বল হয়, সুতরাং গুনাহ দ্বারা তা অন্ধকার করো না।
আল্লাহপাক তোমাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে ধৈর্য ধারণ করো এবং সন্তুষ্ট থাক। আর যদি ধৈর্য ও সন্তুষ্টি অর্জিত হয়ে থাকে, তাহলে তা গনীমত মনে করো। এবং আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করো। অন্যের ধন-সম্পদের প্রতি লোভ করো না।
জীবিত অবস্থায় মানুষ সর্বপ্রকার আমল করতে পারে। কিন্তু মৃত্যুর পর কোন কিছুরই ক্ষমতা রাখে না। এ কারণেই জীবনকে গনীমত মনে করে যা কিছু করার করে নাও। জনৈদ্ধ কবি বলেছেন:
یکون کی بازي ببيري سستي ، بجواني مستی خدا را کی پرستی
কাবানুবাদ। শৈশব কাটালে খেলাধুলায়।
যৌবন-বার্ধক্য অবহেলায়,
মরণের পরে ইবাদত করার
সে সময় তুমি আর পাবে কোথায়?
কবর বেহেশতের বাগান বা জাহান্নামের গর্তঃ
হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন: (মুমিনের জন্য) কবর হবে বেহেশতের উদ্যান। অথর (কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকের জন্য হবে) জাহান্নামের গর্ত। সুতরাং তোমরা মৃত্যুকে বেদি বেশি স্বরণ কর, যা তোমাদের কু-প্রবৃত্তির ওপর পানি ছিটা দেয়। অর্থাৎ দমন করে রাখে।
মৃত্যুর উপমাঃ
হযরত উমর ফারুক (রা) হযরত কা'ব (রা) কে বললেন: মৃত্যু হলো কাঁটাযুক্ত গাছের ন্যায়। যা মানুষের পেটে ঢুকানো হবে। তার কাঁটাগুলো মানুষের শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়বে। তারপর কোন শক্তিশালী ব্যক্তি তা টানতে থাকবে। আর সেই বৃক্ষটি চামড়া গোশত কেটে চিড়ে বের হয়ে আসবে। এটাই মৃত্যুর অবস্থা।
তিনটি বিষয় ভুলা উচিত নয়ঃ
জনৈক বুযুর্গ বলেছেন: তিনটি বিষয় কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্যে ভুলা উচিত নয়। যথা:
১. দুনিয়া ও তা ধ্বংস হওয়া।
২. মৃত্যু। এবং
৩. ঐ সকল বিপদাপদ যা থেকে মানুষের নিরাপত্তা নেই।
চারটি বিষয়ের মূল্য চার ব্যক্তিই বুঝতে পারে
১. যৌবনের মূল্য যৌবনহারা বুড়োই বুঝতে পারে।
২. শাস্তি ও নিরাপত্তার মূল্য বিপদগ্রস্তই বুঝতে পারে।
৩. সুস্থতার মূল্য অসুস্থ ব্যক্তিই বুঝতে পারে। এবং ৪. জীবনের মূল্য মৃত ব্যক্তিই বুঝতে পারে।
মৃত্যুর হাকীকত
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) বলেন: আমার পিতা (আমর ইবনুল আস) প্রায়ই একথা বলতেন যে, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আমি অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত, যার ওপর মুত্যুর আলামত প্রকাশ হচ্ছে। এবং তার হুঁশ ও অনুভূতিও আছে। বাকশক্তিও রহিত হয়নি। এতদসত্ত্বেও সে কেন মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে না? ঘটনাচক্রে তাঁর প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত প্রায়, তখনো তার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পায়নি। বাকশক্তিও ছিল তাঁর ভালই। এমনি মুহূর্তে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম: আপনার বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়ে কোন ব্যক্তি মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা না করলে আপনি তার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হতেন। অতএব আপনি আজ মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে কিছু বলুন।
তখন হযরত আমর ইবনুল আস (রা) বললেন: আদরের সন্তান আমার, মৃত্যুর অবস্থ্য পুরোপুরি বর্ণনা করা তো আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়, তবু আমি কিছু বলছি, শুন।
আল্লাহর কসম। আমার মনে হচ্ছে যে, আমার কাঁধের ওপর কোন পাহাড় রেখে দেওয়া হয়েছে। আমার আত্মা যেন সূচের ছিদ্র দিয়ে বের করা হচ্ছে। আমার পেট যেন কাঁটায় পরিপূর্ণ। এমন মনে হচ্ছে যেন, আকাশ ও যমীন একত্রে মিলে গেছে। আর এই দুয়ের মাঝে পড়ে আমি পিষ্ট হচ্ছি।
কথা ও কাজের পার্থক্যঃ
হযরত শাকীক ইবনে ইবরাহীম (রহ) বলেন: চারটি কথা মানুষ মুখে মুখে বলে, কিন্তু কাজ করে এর বিপরীত। যথা:
(১) প্রতিটি মানুষই বলে আমি আল্লাহপাকের গোলাম। কিন্তু তার কাজকর্ম দেখে মনে হয় যে, সে কারো গোলাম নয় এবং তার কোন মালিক নেই।
(২) প্রতিটি মানুষই বলে আল্লাহপাক রায্যাক; সকলের অন্নদাতা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুনিয়া ও ধন-সম্পদ ছাড়া তার অন্তর কখনো শান্ত হয় না।
(৩) প্রতিটি মানুষই একথা জানে এবং বলে আখেরাত দুনিয়ার চেয়ে উত্তম। তবু সে দুনিয়ার ধন-সম্পদ উপার্জনে দিন-রাত সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। এমনকি সে বৈধ-অবৈধের প্রতিও লক্ষ্য রাখে না। আরো বলে মৃত্যু অবশ্যই উপস্থিত হবে। কিন্তু তার কাজকর্ম দেখে মনে হয় যে, সে কখনো মৃত্যু বরণ করবে না।
তিনটি বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনকঃ
হযরত আবু যর (রা) বলেন: তিনটি বিষয়ের ওপর আমার বড়ই আশ্চর্যবোধ হয়। শুধু তাই নয়, বরং হাসিও আসে। আর অন্য তিনটি বিষয়ের ওপর এতই চিন্তিত হই যে, কান্না এসে যায়। আশ্চর্যের তিনটি বিষয় হলো:
(১) মৃত্যু সারাক্ষণ পিছনে পিছনে লেগে থাকার পরও যে দুনিয়ার পিছনে ঘুরে। অর্থাৎ নিজের কু-প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা চরিতার্থেই যে ব্যস্ত, কিন্তু মুত্যুর কোন চিন্তা করে না।)
(২) কিয়ামত সামনে থাকার পরেও যে গাফেল উদাসীন। অর্থাৎ কিয়ামতে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণে উদাসীন।
(৩) মুখ ভরে যে অট্টহাসি হাসে। অথচ তার জানা নেই যে, আল্লাহপাক কি তার প্রতি সন্তুষ্ট আছে না অসন্তুষ্ট?
আর চিন্তার ফলে কান্না আসে: এমন তিনটি বিষয় হলো:
(১) প্রিয় মানুষ অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া।
(২) মৃত্যু। কারণ, ঈমানের সাথে মুত্যু হবে কি না তা তো এখনো জানা যায়নি।
(৩) হাশরের ময়দানে আল্লাহপাকের সামনে দাঁড়ানো। কারণ, জানা নেই, সেই দিন আমাদ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়; বেহেশতের নাকি দোযখের?
মৃত্যু মোটা হতে দেয় নাঃ
হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন। মৃত্যু সম্পর্কে তোমরা যতটুকু জান, যদি প্রাণীকুল ডতটুকু জানতো, তাহলে কখনো মোটা পশুর গোশত তোমাদের ভাগ্যে জুটতো না।
মৃত্যু স্মরণ রাখা না রাখার ফল
হযরত হামিদ আল-লিফাফ (রহ) বলেন: যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করে, তাকে তিনটি বিষয়ে সম্মানিত করা হয়। যথা:
১. দ্রুত তাওবা করার তাওফীক হয়।
২. আল্লাহপাক যা কিছু দান করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা নসীব হয়।
৩. ইবাদতে একনিষ্ঠতা অর্জিত হয়।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা ভুলে যায়, তাকে তিনটি বিষয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। যথা:
১. তাড়াতাড়ি তাওবা করার তাওফীক হয় না।
২. জীবিকার ওপর সন্তুষ্ট থাকা নসীব হয় না।
৩. ইবাদতে অলসতার সৃষ্টি হয়।
মৃত্যুর স্বাদ অত্যন্ত তিক্তঃ
জনৈক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আ) কে বললো আপনি তো সদ্য মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করেন। তা আমরা দেখেছি। কিন্তু এবার কোন পুরানো মৃতকে জীবিত করে দেখান। হযরত ঈসা (আ) তখন হযরত সাম বিন নূহ (আ) কে আল্লাহপাকের হুকুমে জীবিত করলেন। কবর থেকে ওঠার সময় তার মাথার চুল ও দাড়ি সাদা ছিল। তাই হযরত ঈসা (আ) জিজ্ঞেস করলেন: হযরত। আপনার চুল-দাড়ি সাদা কেন? আপনার যুগে তো আমরা জানি কোন বার্ধক্যই ছিল না। জবাবে হযরত সাম বিন নূহ (আ) বললেন: আমি যখন মৃত্যুর শব্দ শুনলাম, তখন আমার ধারণা হয়েছিল যে, মনে হয় কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেছে। এই ভয়ের কারণেই আমার চুল-দাড়ি সাদা হয়েছে। হয়রত ঈসা (আ) জিজ্ঞেস করলেন: আপনার মৃত্যু কখন হয়েছিল? জবাবে তিনি বললেন: চার হাজার বছর আগে। অথচ এখনো মৃত্যুর তিক্ততা শেষ হয়নি।
চারটি গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ
হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহ) কে কেউ বললো: যদি আপনি মজলিসে উপস্থিত থাকেন, তাহলে আমাদের উপকার হয়। ধর্মীয় কথা-বার্তা শুনার সুযোগ হয়। তখন হযরত ইবরাহীম (রহ) বললেন: আমি চারটি কাজে ব্যস্ত থাকি। যদি তা হতে অবসর পাই তাহলে মজলিসে উপস্থিত হব। সময় বেশি দেব। লোকটি তখন জিজ্ঞেস করলো, হযরত যে চারটি কাজে ব্যস্ত থাকেন, ঐ চারটি কাজ কী কী?
জবাবে তিনি বললেনঃ
(১) প্রথম চিন্তা তো এই যে, আল্লাহ তা'আলা প্রতিশ্রুতি গ্রহণের দিন (য়াওমে মীছাক) বান্দাদের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণের সময় কিছু লোকের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন: এসব লোক বেহেশতী। এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমার কোন উৎকণ্ঠা নেই। অন্য কিছু লোকের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন: এসব লোক দোযখী। এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও আমার কোন উৎকণ্ঠা নেই। কিন্তু আমার তো জানা নেই যে, তখন আমি কোন দলে ছিলাম?
(২) মায়ের গর্ভে শিশুর ভেতরে রূহ ফুঁকে দেওয়ার সময় ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেন: হে আল্লাহ! তাকে কী খোশনসীব লেখা হবে না বদনসীব? এরপর আল্লাহপাকের নির্দেশ অনুযায়ী ফেরেশতা তা লেখেন। কিন্তু আমার তো জানা নেই যে, আমার ভাগ্যে তখন কী লেখা হয়েছে।
(৩) মালাকুল মওত বা মৃত্যু দানকারী ফেরেশ্তা রূহ বের করার সময় আল্লাহপাকের নিকট জিজ্ঞেস করেন যে, হে আল্লাহ। তাকে কি মুসলমানদের সাথে রাখা হবে না কাফেরদের সাথে? কিন্তু আমার তো জানা নেই যে, আল্লাহপাক তখন আমার বিষয়ে কী নির্দেশ দেন।
(৪) আল্লাহপাক ইরশাদ করেন: হে পাপিষ্ঠের দল! আজ তোরা পৃথক হয়ে যা। এই আয়াত নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। কারণ, আমার তো জানা নেই যে, আমি তখন সেই পাপিষ্ঠ দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই কি না।
উদাসীনতা থেকে সচেনতার নিদর্শন চারটিঃ
যে ব্যক্তি উদাসীনতার পর্দা ছিড়ে সচেতন হয়, তার আলামত চারটি। যথা:
(১) সে দুনিয়ার ব্যাপারে অল্পে তুষ্ট ও ধৈর্য ধারণকারী হয় এবং তা সম্পাদনে তাড়াহুড়া করে না।
(২) পরকালীন ব্যাপারে খুবই উৎসাহী হয় এবং তাড়াতাড়ি নেক আমল সম্পাদন করে।
(৩) ধর্মীয় ব্যাপারে চেষ্টা-তদবীর এবং ইলমের আলোকে কার্যাবলী আঞ্জাম দেয়। এবং
(৪) সৃষ্ট জীবের সাথে তার আচরণ হয় উপদেশ ও সৌজন্যমূলক।
সর্বোত্তম মানুষঃ
জনৈক বলেছেন: সর্বোত্তম মানুষ সেই, যার মধ্যে পাঁচটি গুণাবলী পাওয়া যায়। যথা:
(১) যে আল্লাহপাকের ইবাদতকারী হয়।
(২) যে মাখলুকের কল্যাণ ও মঙ্গলকামী হয়।
(৩) মানুষ যার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকে।
(৪) অন্যের ধন-সম্পদের প্রতি যার লোভ থাকে না। এবং
(৫) মৃত্যুর জন্য যে সর্বদাই প্রস্তুত থাকে।
পছন্দনীয় তিনটি গুণঃ
হযরত আবুদ্দারদা (রা) বলেন:
(১) দরিদ্রতাকে আমি পছন্দ করি। কারণ, এর মাধ্যমে আল্লাহপাকের দরবারে বিনয়ী হয়ে। থাকতে পারি।
(২) অসুস্থতাকে আমি পছন্দ করি। কারণ, এর মাধ্যমে আমার গুনাহ মাফ হতে থাকে।
(৩) মৃত্যুকে আমি পছন্দ করি। উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে আমি আমার প্রভুর দীদার লাভ করতে লাভ করতে পারব।
সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বাধিক বুদ্ধিমান মানুষঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন: জনৈক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ। সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ কে? জবাবে হযরত মুহাম্মদ (সা) বললেন : যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম। আবার জিজ্ঞেস করলেন: সর্বাধিক বুদ্ধিমান কে? জবাবে বললেন : যে ব্যক্তি মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, সেই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।
পাঁচ প্রকার সুসংবাদঃ
আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের প্রভু আল্লাহ। তারপর এতে অটল থাকে তখন তাদের প্রতি ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়। (আর বলতে থাকে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের কাছে প্রতিশ্রুত বেহেশতের সুসংবাদ গ্রহণ করো।
এই সুসংবাদ পাঁচ প্রকার
(১) সাধারণ মুমিনদের জন্য। অর্থাৎ তোমরা সর্বদা আযাবে পড়ে থাকার ভয় করো না। কারণ, অবশ্যই তোমাদেরকে একদিন আযাব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। নবী ও সালেহগণ তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন।
(২) মুখলিসগণের জন্য। অর্থাৎ তোমরা নিজেদের আমল কবুল না হওয়ার ভয় করো না। কারণ, তোমাদের আমলসমূহ মাকবুল গ্রহণযোগ্য। আর সওয়াব থেকেও বঞ্চিত হওয়ার চিন্তা করো না। কারণ, তোমাদেরকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে।
(৩) তাওবাকারীদের জন্যে। অর্থাৎ তোমরা নিজেদের গুনাহ সম্পর্কে ভয় করো না। তোমাদের গুনাহ তো মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এবং তাওবা করার পর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ারও ভয় করো না।
(৪) যাহেদ বা কৃচ্ছতা অবলম্বনকারীদের জন্যে। অর্থাৎ তোমরা হাশর ও হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ভয় করো না। বরং হিসাব-নিকাশ ছাড়াই তোমরা বেহেশতে প্রবেশের সুসংবাদ গ্রহণ করো।
(৫) উলামায়ে কেরামের জন্যে। অর্থাৎ ঐ সকল উলামায়ে কেরাম, যারা মানুষকে কল্যাণ ও সৎ কর্ম শিক্ষা দেন এবং নিজের ইলম অনুযায়ী আমল করেন। তাদেরকে বলা হবে:
তোমরা কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যকে ভয় করো না। বিন্দুমাত্রও চিন্তা করো না। অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে। অতএব তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীগণ বেহেশতের সুসংবাদ গ্রহণ করো।
0 Comments