মসআলা- নাজাসাত বা নাপাক দুই প্রকার, যথা- নাজাসাতে গলীজা ও নাজাসাতে খাফীফা। নাজাসাতে গলীজা যেমন মানুষ, পশু, হাঁস ও কুকুরের মলমূত্র। আর যে সমস্ত বস্তু শরীর হইতে বাহির হইলে গোসল ওয়াজেব হয় তাহাও নাজাসাতে গলীজা। নাজাসাতে গলীজার হুকুম এই যে, যদি উহা গাঢ় হয় তবে, এক দেরেম অর্থাৎ সাড়ে চার মাসা পরিমাণ কাপড়ে লাগিলে উহা পরিধান করিয়া নামায পড়া দুরস্ত হইবে বটে, কিন্তু মাকরুহ হইবে। আর যদি তরল হয় তবে হাতের তালুকা পরিমাণ স্থানে লাগিলে দুরস্ত হইবে কিন্তু মাকরুহ হইবে এবং কাপড় ধুইতে হইবে। আর উক্ত পরিমাণের বেশী হইলে নামায দুরস্ত হইবে না।'
নাজাসাতে খফীফা, যেমন ঘোড়া ও যাহার গোস্ত হালাল তাহার প্রস্রাব' এবং হারাম পক্ষীর পায়খানা। এই প্রকার নাজাসাতের হুকুম এই যে উহা কাপড়ের চতুর্থাংশের কম স্থানে লাগিলে উক্ত কাপড় পরিধান করিয়া নামাজ পড়া দুরস্ত হইবে বটে তবে মাকরুহ হইবে। উহার অধিক হইলে নামাজ দুরস্ত হইবে না।
মসআলা মাছের রক্ত নাপাক নহে। নাপাক বস্তুর ছাই নাপাক নহে। প্রস্রাব কালে মূত্রের ছিটা কাপড়ে বা শরীরে লাগিলে যদি উহা সূচের অগ্রভাগ পরিমাণ হয় কিংবা চোখে দেখা না যায় তবে নামাজ দুরস্ত হইবে। আর উহা অপেক্ষা অধিক হইলে নামাজ দুরস্ত হইবে না, ধৌত করা ওয়াজেব হইবে।
মসআলা ছোট দুধের ছেলের প্রস্রাব ও পায়খানা নাজাসাতে গলীজা।
মসআলা সতরঞ্জি, পাটি, চাটাই প্রভৃতির একপার্শ্বে নাপাক থাকিলে অপর পার্শ্বে নামাজ পড়া দূরস্ত।
মসআলা পায়খানা করিবার পর প্রথমতঃ ঢেলা দিয়া মলদ্বার উত্তমরূপে মুছিয়া ফেলিবে তৎপর পানি দ্বারা যৌত করিবে। উক্ত ঢেলাকে কুলুখ বলে। পায়খানার সময় যে কয়টি ঢেলার আবশ্যক হয় সেই কয়টি ব্যবহার করিবে। বেজোড় লওয়া দরকার। শীতকালে প্রথম ও তৃতীয় ঢেলা দিয়া পশ্চাৎ হইতে সম্মুখের দিকে মুছিয়া আনিবে, আর দ্বিতীয়টি দ্বারা সম্মুখ হইতে পশ্চাৎ দিক মুছিবে। আর গ্রীষ্মকালে ইহার বিপরীত করিবে। কিন্তু স্ত্রীলোকেরা উভয় কালেই সম্মুখ হইতে পশ্চাৎ দিক মুছিবে।
মসআলা- মাটি, পাথর, বালু, তুলা ইত্যাদি দ্বারা কুলুখ লইবে। কিন্তু হাড়, খাপড়া, কয়লা, কাগজ, পাকা ইট, ঘাস দ্বারা এবং খাদ্য দ্রব্য, আর যে বস্তু নাপাক যেমন গোবর প্রভৃতি এই সমস্ত দ্বারা কুলুখ লওয়া দুরস্ত নহে।
মসআলা- শস্য মাড়াইবার সময় যদি গরু শস্যের মধ্যে প্রস্রাব করিয়া দেয় তবে জরুরাতের জন্য উহা মাফ হইবে অর্থাৎ উহাতে শস্য নাপাক হইবে না। আর উক্ত সময় ব্যতীত প্রস্রাব করিলে জরুরী না হওয়ার কারণে নাপাক হইয়া যাইবে।
মসআলা -অমুসলমানের তৈয়ারী খাদ্য, তাহাদের বরতন, কাপড় প্রভৃতি নাপাক বলা যাইবে না। উহা নাপাক হওয়ার কোন প্রমাণ নাই যতক্ষণ উহার নাপাকীর স্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া যায়। তবে পরহেজগারী হিসাবে উহা হইতে পরহেজ করা ভাল।
মসআলা কতক লোক বাঘের চর্বি ব্যবহার করে ও উহাকে পাক জানে, কিন্তু ইহা দুরস্ত নহে, তবে যদি অভিজ্ঞ দ্বীনদার চিকিৎসকের এই অভিমত হয় যে, এই রোগের প্রতিকার উক্ত চর্বি ছাড়া আর কোন উপায় নাই তবে কতক আলেমের মতে দুরস্ত। কিন্তু নামায়ের সময় তাহা পাক করা জরুরী হইবে।
মসআলা- নাপাকী দ্রব্য জ্বালাইলে উহার ঘুম পাক। উহা জমিয়া গেলে ও উহা দ্বারা কোন বস্তু তৈয়ার করিলে তাহাও পাক হইবে, যেমন নিশাদল (উহা নাপাকীয় ধুম হইতে তৈয়ার হয়)।
মসআলা- নাপাকী হইতে যে ভাপ উঠে তাহা পাক। ফল প্রভৃতির পোকা পাক, কিন্তু উহা খাওয়া দুরস্ত নহে।
মসআলা- খাবার জিনিষ পচিয়া গন্ধ বাহির হইলেও উহা নাপাক নহে। যেমন গোস্ত, হালুয়া প্রভৃতি। কিন্তু শরীরের ক্ষতি করিলে খাওয়া দুরস্ত নহে।
মসআলা- নিদ্রিত ব্যক্তির মুখ দিয়া যে লালা বাহির হয় তাহা পাক। মুর্দা ব্যক্তির মুখের লালা নাপাক।
মসআলা- হালাল পক্ষীর আণ্ডা ভাঙ্গা না হইলে পাক হইবে।
মসআলা সাপের খোলস পাক।
মসআলা মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়া পানি নাপাক।
মসআলা দুগ্ধ দোহন কালে যদি বকরীর দুই একটি লাদি অথবা গরুর সামান্য গোবর যাহা বকরীর (দুই একটি) লাদির পরিমাণ হয়, দুধে পড়িয়া যায় তাহা মাফ হইবে, তবে পড়া মাত্রই উঠাইয়া ফেলিতে হইবে নচেৎ মাফ হইবে না।
0 Comments