হযরত আমেনা (রাঃ) এর নামকরণ

        স্বপ্নে দেখা দরবেশ ওয়াহাবকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, ওয়াহাব। তুমি জগতের বৃকে অদ্বিতীয় ভাগ্যবান। ভবিষ্যতে এমন একজন মহাপুরুষের সঙ্গে তোমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হবে, যিনি হবেন জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ এবং যিনি হবেন বিশ্বমানবকুলের জন্য আল্লাহর রহম স্বরূপ ও সাক্ষাৎ মুক্তিদূত। আরবের লোকগণ তাঁর গুণে মুগ্ধ হয়ে বাল্যকালেই তাঁকে 'আল-আমীন' উপাধিতে ভূষিত করবেন। মানবকুলের মুক্তি ও আমানতের দায়িত্ব কন্ধে নিরেট তিনি ধরাধামে আগমন করবেন। সে মহাপুরুষেরই গর্ভধারিণী হবেন তোমার ঔরসজাত ও তোমার পত্নীর গর্ভজাত দুহিতা। তুমি তোমার সে ভাবী কন্যার নাম রেখ আমেনা।

           স্বপ্ন দেখে ওয়াহাব যুহরীর মনে এক অভূতপূর্ব খুশি ও পুলকের হিল্লোল বইতে লাগল তিনি বুঝতে পারলেন, করুণাময় ও প্রভু তাঁর ওপর যারপর নাই প্রসন্ন হয়েছেন এবং অচিরেই তিনি তাঁকে এক সেরা ভাগ্যবতী কন্যা দান করবেন। বস্তুত ওয়াহাব যুহরী তাঁর কন্যা ভূমিষ্ঠ হলে স্বপ্নের এই নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর নাম রাখলেন 'আমেনা'। শৈশবকাল হতেই আমেনার চরিত্রে এমন কতগুলো আশ্চর্য ও অস্বাভাবিক গুণ পরিলক্ষিত হতে লাগল, যা দ্বারা অন্য যে কোন বালিকার চরিত্রের সাথে তাঁর প্রকাশ্য স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যাবলি মূর্ত হয়ে উঠল। অভ্যন্ত শান্ত-শিষ্ট, ধীর-স্থির, মিষ্টভাষিণী ও সত্যবাদিনী বালিকা আমেনার চরিত্রে নানারূপ শুভ লক্ষণসমূহ প্রত্যক্ষ করে আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশি সকলেই তাঁকে অতিশয় গ্রেহ করতে লাগল। তাঁর পিতা-মাতা ঐ লক্ষণসমূহ দেখেই অচিরেই বুঝতে পারলেন যে, তাঁদের এ ভাগ্যবর্তী কন্যাটি নিশ্চয়ই ভবিষ্যতকালে একজন মহীয়সী মহিলায় পরিণত হবে। ওয়াহাবের আর সুখগুত বাকী রইল না যে, তাঁর স্বপ্নে দেখা মহাপুরুষের কথাগুলো সম্পূর্ণই সত্যে পরিণত হবে। কথিত আছে, বিবি আমেনা যখন ছয় কি সাত বছরের বালিকা মাত্র, তখন একদা এক বান্ধবীর বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পথে বাঁদের গৃহের সন্নিকটে একটি অত্যুজ্জ্বল স্বর্ণমুদ্রা দেখতে পেলেন। আমেনা মুদ্রাটি তুলে নিলেন। কিন্তু পর মুহূর্তেই তিনি চিন্তা করলেন, কি জানি তা কার মুদ্রা। তা হাতে উঠিয়ে নেয়া তাঁর ঠিক হয় নি। পরের চিহিন, তা হারানোই হোক বা না চাই সাঁ কেন গ্রহণ করা অন্যায় ব্যাট। যে এটা হারিয়েছে নিন্দায় সে এই অনুসন্ধান অনুসন্ধান করতে করতে এখাসেও আগদে। তা যথাস্থানে নড়ে যাবার কোন একটি জিনিসটি তখন পেতে পারবে। এরূপ ভেসে সে রীগারটি যেখানে নড়েছিল, বেকার গেল, কিন্তু হঠাৎ আবার তার মনে গেয়াস হল যে, ডিসিগটি মূদ্রাব হয়ত উহা মালিকের হাতে না পড়ে অন্যের হাতের পড়ে যেতে পারে। ভাতন নারর উনার বা পড়ে থাকলে যে দেখবে সে-ই তুলে দিয়ে যাবে। অতএব, তা ওখানে ছেলে বাবা চিক না। তার চেয়ে এটা নিজের নিকট রেখে অনুসন্ধান করে দেখা উরুষ যে, জিরারটি হাতিদের তে? অতঃপর আমেনা দীনারটি হাতের মুঠোয় লিংগ্রই তার বান্ধবীর ঘরে লেচলন এব সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, যোন। তোমাদের গৃহে আসাই কালে আয়ি এনে এ জানার কুড়িয়ে পেয়েছি। বলত এখন এটা কি করা যায়। কিভাবে এর প্রকৃত প্রালিকাত বের করে এটা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি। আমেনার কথা শুনে তাঁর সহচরী বলল, জাি ব্যাপারে এত ব্যস্ত হয়েছ কেন, কতজনেরই তো কত সময় দ্রুত জিনিস হারিয়ে যায়। হারাগ জিনিস আবার কেউ কি কখনও ফেরত পায় নাকি।

        আর পথের উপরে পাওয়া জিনিস ফেরতই বা কে ভবে দেয় ওসি। ভূষি একটি সাববোকা। আমেনা। আমার কথা শুন বোন, চলো আমরা দোকানে বিয়ে এর দ্বারা আন কিন্তু ভিদিন জিয়া খাই আর মনের মত কতগুলো সখের খেলনা কিনি। আমেলা দেখলেন, তাঁর বান্ধবীর প্রত মোটেই ভাল নয়। তিনি তার কথায় মোটেই রাজি হলেও যা। যরং তাকে বললেন, না বোন, দীনারটির মালিককে খুঁজে বের করে তাকে এটা ফিরিয়ে দেয়া সরকার। তিনি দলে দলে ছিন করলেন, বাড়ি গিয়ে পিতা-মাতায় কাছে নীলায়টির কথা বলবেন এবং তাঁদের দ্বারা এই মালিকের খোঁজ করিয়ে দীনারটি তার হাতে ফিরিয়ে দিবেন। আজ আয়েসার সনে বড় প্রতি লেগেছিল। তিনি আর বিলম্ব না করে নিজেদের বাড়ি অভিমুখে চললেন। পথে দের হয়ে কিছু দূর চলেই দেখলেন, জনৈক বৃদ্ধ লাঠি ভর দিয়ে ধীরে ধীরে এদিকে এগিয়ে আসছে জার লে চোখের দৃষ্টি নিচু করে পথের উপরে কি যেন খুঁজতে খুঁজতে অগ্রসর হচ্ছে। বৃদ্ধের গতি দিছি এ চোখ-মুখের অবস্থা দেখে আমেনার আর বুঝতে বাকী রইল না যে, এ বৃদ্ধ লোকটিস্থ প্রিনারটি হারিয়েছে। তিনি বৃদ্ধের নিকটবর্তী হয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, চাচাজী। এ নদে আপনি কি কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। বৃদ্ধ লোকটি উত্তর করল, দীনার এ রাস্তার ওপরই কোনখানে যেন পড়ে নিয়েছে। সীমারটি বড় কষ্টে আহি গভর করেছিলাম। পর পর তিনদিন অনাহারে কাটিয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে আজ সে গভির ঘুমাটি নিয়ে কিছু খাবার কিনে আনতে বাজারের দিকে যাচ্ছিলায়। কিন্তু মা। আমার এখনি ঘূর্ণান্য, রাস্তায় চলাকালে না জানি কোথায় কেমন ভাবে নীনারটি পড়ে দিয়েছে এখন আমার গৃহে এমন আর কোন সম্বলই নেই যদ্বারা একটি দিনেরও মাত্র খোরাক জোগাড় করতে পারি। এখন নিশ্চয় আমাকে গৃহের সকলকে নিয়ে অনাহারে মরতে হবে। 

        বৃদ্ধের এ করুণ উক্তি শুনে ও তার বিষণ্ণ যদন দেখে কিশোরী আমেনার পোষন অনন্ত ব্যথিত হয়ে উঠল। তিনি বৃদ্ধের হাত ধরে তাকে বাড়ি নিয়ে আসলেন এবং তার জলগীর ভাবে বলে সযত্নে তাকে পেট ভরে আহার করালেন। তার একণ যত্ন লাভ এবং তুৰি সহভারে ক্ষুন্নিবৃত্তি তাকে দীনারের কথা একরূপ ভুলে নিয়েছিল। তাছাড়া কোন কিছু হারিয়ে গেলে তা আর পুনরায় পাওয়া যায় না, এরূপ ধারণা করেই বৃদ্ধ বিদায় হওয়ার উদ্যোগ করল এবং বিদায় গ্রহণকালে তার প্রতি আমেনার এরূপ সদাশয়তার বিনিময়ে তাকে বৃদ্ধ প্রাণ ভরে দোয়া করল। অতঃপর সে উঠে দাঁড়িয়ে পা বাড়িয়ে ঠিক এমনি সময় আমেনা বললেন, চাচাজী। আমি আপনাকে যেজন্য এখানে ডেকে এনেছি তা তো বলা হয় নি। দেখুন তো, এ দীনারটি আপনার কি না? এ কথা বলে আমেনা দীনারটি তার হাতে দিলেন। বৃদ্ধ দীনারটি হাতে নিয়ে সানন্দে বলে উঠল, হ্যাঁ মা, এ দীনারটিই হারিয়ে গিয়েছিল। এ তো বহুদিন ঘরে রাখার ফলে তার কোণায় যে দাগটি পড়েছিল, তা দেখা যাচ্ছে। আমেনা বললেন, বেশ তো চাচাজী, এব্যর আপনার দীনারটি আপনি নিয়ে যান।

        আমি যে এ বস্তুটি আপনার হাতে তুলে দিতে পারলাম এজন্য আমি আনন্দ লাভ করেছি, যা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। বৃদ্ধের নেত্রযুগল হতে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সে বলল, মা। তুমি দীর্ঘজীবী হও। এতটুকু বয়সেই তুমি যে সততা অর্জন করেছ, তা তোমাকে সৌভাগ্যবর্তী করে তুলবে। মা। আমি প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করছি, তুমি বিশ্ব মানবকুলে অমর লাভ কর। জগদ্বাসী যেন সদা-সর্বদা তোমার নামটি স্মরণ করে। বৃদ্ধ আনন্দাপুত মনে আমেনার মাথায় হাত রেখে এরূপ আশীর্বাদ করে বিদায় হয়ে গেল। এ ঘটনায় আমেনাকে আশীর্বাদ শুধু বৃদ্ধ লোকটি একাই করল না, আমেনার পিতা-মাতা কন্যার এ সততা এবং মহত্ত্ব গুণটি প্রত্যক্ষ করে মনে মনে গর্ব অনুভব করলেন এবং তারা উভয়ে তাদের প্রাণ ভরে কন্যার জন্য প্রভুর দরবারে দোয়া করলেন।

        কিশোরী আমেনা যুবতীতে পরিণত হয়েছেন। তাঁর বিবাহের বয়স দ্বারস্থ হয়েছে। সুতরাং বিবি আমেনা এখন পূর্ণ বিবাহযোগ্য। আরবের সে বর্বর বা পাশব যুগের ঘটনা ইতোপূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি। সে যুগে তথায় কোন গৃহে বিবাহযোগ্য কন্যা থাকা যে কত বড় সমস্যার কথা ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তদুপরি যদি কন্যা সুন্দরী হত তবে তো আর কথাই ছিল না। ঐ কন্যার পিতা-মাতার উপরে নেমে আসত ভীষণ অশান্তি ও দুশ্চিন্তার অভিশাপ। ভয়-ভীতি ও শত দুর্যোগ-দুর্বিপাকের ঝামেলা এসে উপস্থিত হত তাদের উপরে। সে যুগে এ ধরনের কন্যাদের ইজ্জত বা সতীত্ব টিকিয়ে রাখা ছিল কল্পনারও অতীত। যে যুগের বর্বর পুরুষগুলো শুধুমাত্র জননীকে বাদ দিয়ে কন্যা, ভগ্নি প্রভৃতি প্রায় প্রতিটি নারীর সাথে অবাধে যৌন মিলন ঘটাতে পারত, সে যুগে অন্য নারীরা কেমন করে সে পশু প্রকৃতির পুরুষদের হাত হতে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে? কিন্তু তখনকার আরবের অবস্থা এ দিক দিয়ে যতই শোচনীয় হোক না কেন, আল্লাহর সেরা সৃষ্টি নবী-রাসূলের সরদার হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যিনি মাতা হবেন, তাঁর ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার ভার স্বয়ং আল্লাহ্ তা'য়ালাই গ্রহণ করেছিলেন।

        আর এ কারণেই হয়ত আল্লাহ তাঁকে আরবের অভিজাত কুরাইশ বংশে প্রেরণ করেছিলেন। এতে ফায়েদা ছিল যে, আরবে ব্যাপক ব্যভিচার থাকা সত্ত্বেও কোন অভিজাত বংশের নারীদের প্রতি অন্যান্য বংশের পুরুষ কিংবা স্ববংশীয় পুরুষেরাও সহজে কুদৃষ্টি প্রদানে সাহসী হত না। বিশেষত বিবি আমেনা তো ছিলেন মদিনার অতি উচ্চ বংশীয়া নারী। তদুপরি তাঁর জনক ওয়াহাব যুহরী কুরাইশ সমাজে যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তিশালী লোক ছিলেন। তাই তাঁর কন্যা আমেনা বিবি যে অতি সহজেই স্বীয় সম্মান রক্ষা করে চলতে পারবেন তাতে আর বিচিত্র কি? অধিকন্তু বিবি আমেনা শৈশব হতেই নিজে তো ছিলেন পূতঃ চরিত্র। পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে চেষ্টা ও যত্নের দিক দিয়ে তাঁর মত মহিলা সে যুগে দ্বিতীয়টি ছিল না বলে অত্যুক্তি হবে না। আল্লাহ নিজের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা এবং তাঁকে নিখুঁত করার উদ্দেশ্যেই বিবি আমেনাকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র এবং নিষ্পাপ রেখেছিলেন।

        আমেনা যৌবনে পৌছা মাত্র পিতা ওয়াহাব যুহরী তাঁকে পাত্রস্থ করার জন্য চেষ্টিত হলেন। এ জন্য তাঁর আত্মীয়-স্বজনগণ দেশ-বিদেশে সৎ পাত্র খুঁজতে শুরু করলেন। বহু পাত্রই পাওয়া গেল; অনেক কৰিলা হতে সুযোগ্য, উত্তম ও ধন-সম্পদশালী পাত্রের পক্ষ হতে প্রস্তাব জুটল, ওয়াহাব যুহরীর ন্যায় প্রভাবশালী পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করল, কিন্তু কোন প্রস্তাবেই যেন কেন কি জানি ওহাব মুহরীর মন ঝুঁকল না। কোন পাত্রেরই ধন-মান-গৌরবে তিনি আকৃষ্ট হলেন না। কোন কোন পাত্রের সপক্ষে ওয়াহাব যুহরীর নিজ আত্মীয়গণ তাঁকে চাপ দিল, সুপারিশ করল কিন্তু তাদের কথাও তিনি মানলেন না।

        মোটকথা, কন্যা বিবাহ দানের ব্যাপারে কোন এক অজানা পাত্রের দিকে যেন তাঁকে এক অদৃশ্য শক্তি হাতছানি দিচ্ছিল। সুতরাং সে সুনির্দিষ্ট পাত্র ব্যতীত অন্য যে কোন পাত্র তাঁর পছন্দই বা হবে কেন, আর তার সাথে নিজের কন্যা বিবাহ দিবেনই বা কিরূপে? জনশ্রুতি রয়েছে যে, বিবি আমেনা তাঁর পিতাকে বলেছিলেন, পিতঃ। আমি যখন কোন নির্জন স্থানে যাই তখন অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পাই কে যেন আমাকে বলে, হে রাসূল জননী। তোমাকে সালাম। আবার কখনও বা বলে, হে নবীদের সরদারের জননী। তোমাকে সুসংবাদ।

        সম্প্রতি একটি নতুন কথা শুনতে পেলাম। ঠিক একইরূপে কে যেন আমাকে বলল, হে আবদুল্লাহর সহধর্মিনী। ধন্যবাদ নাও। বিবি আমেনার এ কথাগুলো পিতা ওয়াহাব যুহরী মনোযোগ সহকারে শুনলেন বটে, কিন্তু এর কোনই গুরুত্ব না দিয়ে আরবের তৎকালীন কুসংস্কার অনুযায়ী একে জ্বিন ও ভূত-প্রেতের কাণ্ডকারখানা মনে করলেন। তাই আর ভবিষ্যতে যাতে এরূপ না হয় তজ্জন্য তিনি অনেক তন্ত্র-মন্ত্র জানা ওঝা-ফকীরদের শরণাপন্ন হলেন। কিন্তু এ সব ব্যবস্থা ও তদবীরাদিতে কোন ফলোদয় হল না; বরং বিবি আমেনাকে কেন্দ্র করে ওয়াহাব যুহরীর গৃহে নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটতে লাগল। অবশেষে ওয়াহব যুহরী একদা গভীর রাতে স্বপ্ন দেখলেন যে, এক সম্মানিত পুরুষ তাঁকে বললেন, হে ওয়াহাব। তুমি সাবধান হও। তোমার কন্যার উপরে তুমি আর কোন মন্ত্র-তন্ত্র প্রয়োগ করো না।

        স্বয়ং আল্লাহ যার তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তার ভার গ্রহণ করেছেন, তুমি তাকে এমন এক উত্তম ও সদ্বংশবান পাত্রের নিকটে সমর্পণ কর, যাকে কোরবানী করার জন্য তাঁর পিতা সংকল্প করেছে এবং আল্লাহ্ও তাঁর কোরবানী মঞ্জুর করেছেন। স্বপ্ন দেখে আবদুল ওয়াহাব যুহরী বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, তা নিশ্চয় স্বপ্ন নয়; বরং স্বপ্নের মাধ্যমে কোন এক সুপ্ত শক্তির কঠোর নির্দেশ। যেভাবে হোক এটা তাঁকে পালন করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল যে, যার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, সে পাত্রটি কে এবং কোথায়। আর এমন পাত্রকে খুঁজে বের করেই কি লাভ হবে যাকে অবশ্যই কোরবানী করা হবে। তাঁর নিকট কন্যা বিবাহ দিয়ে কন্যার জীবনটাই তো ব্যর্থ করে দেয়া হবে। এরূপ ভাবনা-চিন্তা করে কোন কিছু স্থির করতে না পেরে ওয়াহাব যুহরী বিশেষ চিন্তিত অবস্থায়ই কাল কাটাতে লাগলেন।

Post a Comment

0 Comments