সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ্ ও বিবি আমেনার দাম্পত্য জীবন ও সুখী সংসারের পরিচয় আমরা ইতোপূর্বে জ্ঞাত হয়েছি। পরম শান্তি ও সুখের মধ্যে এ নব দম্পতি যুগলের দিনাতিবাহিত হচ্ছিল। কিছু দিনের মধ্যে সৃষ্টির স্বাভাবিক রীতি অনুসারে আমেনা অন্তঃসত্তা হলেন। আবদুল মুত্তালিব যখন জানতে পারলেন যে, তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রবধূ অন্তঃসত্তা হয়েছে, ৩৭৭ আর তাঁর আনন্দের সীমা রইল না। নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) আবদুল্লাহর ললাট হতে আসল ও বাস্তবরূপে এবার বিবি আমেনার উদরে স্থান লাভ করলেন। এ ঘটনার পর একটি বিষয় সকলেরই চোখে ধরা পড়ে যেতে লাগল তা হচ্ছে যে, দেখা গেল বিবি আমেনার গর্ভধারণ করা হতেই আবদুল্লাহর চেহারার পূর্বের সে দীপ্তি তিরোহিত হয়ে গেল। পক্ষান্তরে, এ সময়ে বিবি আমেনার দৈহিক সৌন্দর্যরাশি শতগুণে বৃদ্ধি পেল এবং দিন দিন যেন আরও বেড়ে যেতে লাগল। বলা বাহুল্য যে, নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) এর প্রভাব শুধু তাঁর আশ্রয় স্থলের বাহ্যিক রূপ বর্ধনেই সীমিত নয়। তার শক্তি ও প্রভাব সারা বিশ্ব জুড়ে, তার ক্ষমতা ব্যাপক, সুদূর প্রসারী ও অপূর্ব-অদ্ভুত। সারা জগতের অন্ধকার রাশি তার দ্বারাই দূরীভূত হয়েছিল। জগৎ জুড়িয়ে ধর্মারোক, ন্যায়-নীতিজ্ঞান ও শাস্তির বন্যা ঐ অপূর্ব নূরের দ্বারাই প্রবাহিত হয়েছিল। বস্তুত এ নূরে মোহাম্মদীই ছিল অশান্ত জগৎকে শাস্তির পথ প্রদর্শক এবং নিরাশায় ঘেরা সৃষ্টিকুলের মনে উজ্জ্বল আশার আলোক। সুতরাং এর প্রভাব অসীম, জঙ্গামান্য ও অবর্ণনীয়। এ নূর যখন তার বাস্তব রূপ নিয়ে ধরিত্রীবক্ষে আত্মপ্রকাশের উদ্যোগ নিল ও তন্নিমিত্ত বিবি আমেনার গর্তে আশ্রয় গ্রহণ করল, তখন হতে নানা ধরনের নিদর্শনাদি বা সুলক্ষণসমূহ বিবি আমেনার চোখে ভেসে উঠতে লাগল। অনেক লক্ষণ তিনি অনুভব করলেন এবং বহু নিদর্শন তিনি উপলব্ধি করলেন। তা এত বেশি সংখ্যক যে সবগুলো বর্ণনা করা সম্ভব নয়। শুধু কয়েকটি বিশেষ সুলক্ষণের ঘটনা এখানে উল্লেখ করতেছি।
এ সমস্ত সুলক্ষণ, সুসংবাদ বা ইঙ্গিতের কোন কোনগুলো তিনি লাভ করেছিলেন স্বপ্নের মাধ্যমে এবং কোন কোনগুলো সম্পূর্ণ জাগ্রতাবস্থায়। বিবি আমেনা গর্ভ ধারণ করে প্রায়ই আশ্চর্য ধরনের স্বপ্ন দেখতেন এবং স্বপ্নের মাধ্যমে তাঁকে সুসংবাদ দান ও বিভিন্ন বিষয়ে সাবধান ও সতর্ক করা হত। যে আরব মরুতে বৃষ্টি বাদল নেই, বৃক্ষলতা তৃণ-ঘাসের একান্ত অভাব। চারদিকে শুধু বালুকারাশির খেলা, মরুদ্যানগুলোতে যে সামান্য তৃণ ও ও গুলা বিদ্যমান, তার অবস্থা বড়ই করুণ, যেন রৌদ্র ও আগুনের উত্তাপের বিরুদ্ধে লড়াই করে ঢলিয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এরূপ আরবে হঠাৎ কি এমন কারণটি ঘটল, যার ফলে তথাকার প্রকৃতিগত রূপ বহাল থাকতেই বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তন দেখা গেল। মরুভূমিই রইল অথচ তার বাগানগুলোতে তৃণ-গুচ্ছগুলো তরতাজা দেখা গেল। তার মাঝে ফুল ফুটিয়ে উঠল। গোচারণ ভূমিগুলো খাসে পূর্ণ হল। শীর্ণ পশুগুলো হৃষ্ট-পুষ্ট হল। মেষগুলো বেশি দুধ দিতে শুরু করল। বায়ুর স্পর্শ স্নিগ্ধতাসহ বইতে লাগল। চারদিকে এক নতুন আনন্দ ও উত্তেজনার রেশ দেখা গেল। বিবি আমেনার চোখে এ সব দৃশ্য ভেসে উঠলে, তিনি অনেকটা অনুভব করতেন যে, নিশ্চয় এ লক্ষণসমূহের কারণ অনেকটা কল্যাণে তা সম্ভব হল, কোন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির আবির্ভাবের পূর্ব লক্ষণরূপে এগুলো ঘটছে। একরাতে বিবি আমেনা স্বপ্নে দেখলেন যে, কে যেন তাঁর প্রতি সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলতেছে, হে আমেনা। তুমি হুঁশিয়ার থেক। তোমার গর্তে যে মহামানব সন্তান আশ্রয় নিয়েছেন তিনি সারা জাহানের শ্রেষ্ঠ মানব। সে আবার তাঁকে বলল যে, হে আমেনা! সাবধান। নবীকুল শিরোমণি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া তোমার উদরে স্থান লাভ করতেছেন, তাঁর অবমাননা ঘটতে পারে, এ ধরনের কোন কাজ তুমি কস্মিনকালেও কর না। আর এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, একটি বৃক্ষছায়ায় তিনি অবস্থান করছেন।
এমন সময় তাঁর উরুদেশ হতে একটি নূরের ঝলক উত্থিত হয়ে চারদিকে পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়ল এবং তার আলোকে সমগ্র বিশ্ব জগৎ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আর এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আকাশে একটি অত্যুজ্জ্বল আলোক রশ্মি ছড়িয়ে রয়েছে। এর আলোক ছটায় চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্যতা অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্রমে সে আলোক রশ্মি পূর্ণশশীর রূপ ধারণ করে তাঁর কোলে নেমে আসল এবং তিনি তাঁকে চুম্বন করলেন। গর্ভাবস্থায় বিবি আমেনা যখন একাকিনী গৃহে শায়িত থাকতেন তখন জাগ্রতাবস্থায়ই কখনও কখনও তিনি হঠাৎ এরূপ আওয়াজ শুনতেন, হে জগতের শ্রেষ্ঠ জননী। হে মহানবীর জননী। সালাম গ্রহণ করুন।
হঠাৎ একবার মাত্র এরূপ আওয়াজ শুনে যখন আমেনা ঐ আওয়াজের দিকে পূর্ণ মনোযোগের সাথে কর্ণনিয়োগ করতেন তখন আর তিনি ঐরূপ আওয়াজ শ্রবণ করতেন না। বিবি আমেনার গর্ভসঞ্চার হওয়ার পর আল্লাহ্ তাঁর পবিত্র অঙ্গে এমন এক খোশবু প্রদান করেছিলেন যে, তিনি যখন কোথাও বসতেন, হাঁটতেন, শায়িত থাকতেন সব সময়ই তাঁর অঙ্গ হতে এক অনুপম সুঘ্রাণ বিচ্ছুরিত হতে থাকত। এমনকি আমেনা নিজেও নিজের অঙ্গ হতে এরূপ সুঘ্রাণ লাভ করতেন। বিবি আমেনা নিজেই বলেছেন, আমার পুত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে একদা রাতে আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, জনৈক সৌম্যদর্শন বোযর্গ পুরুষ আমাকে সম্বোধন করে বললেন, হে আমেনা খাতুন! তোমাকে শুভ সংবাদ প্রদান করা হচ্ছে যে, তোমার গর্ভে যে সন্তান অবস্থান করছেন, তিনি হবেন রাসূলদিগের সরদার, আম্বিয়াদের শেষজন এবং সারা দুনিয়ার রহমত স্বরূপ। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তুমি তাঁর নাম রাখবে মুহাম্মদ। তৌরাতে এবং ইন্জিল কিতাবে তাঁকেই আহমদ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিবি আমেনা বলেন, আমার পুত্র মুহাম্মদ (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বরাত্রে আমি স্বপ্নে দেখলাম, আসমান হতে একটি উজ্জ্বল তারকা নেমে এসে আমার গৃহের ভিতরে প্রবেশ করল। অতঃপর তা সেখান হতে বের হয়ে আসলে তার আলোকে আমি দেখতে পেলাম বাদশাহ নওশেওয়ার সিঙ্গাসন এবং চৌদ্দ বুরুজ চূর্ণ হয়ে গেল। হাজার বছর পূর্বের পারস্যের অগ্নিপূজকগণ যে অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জ্বলিত করে রাখছিল তা নিভিয়ে গেল। পবিত্র কা'বা গৃহে রক্ষিত ৩৬০টি দেবমূর্তি উপুড় হয়ে পড়ে গেল। বিবি আমেনা বলেন যে, আমি এরূপ স্বপ্ন দেখে বুঝতে পারলাম যে, আমার পুত্রের জন্মের ফলে ভবিষ্যতে সারা দুনিয়ার একটা বিরাট পরিবর্তন সাধিত হবে।
অন্য এক রাত্রিতে তিনি আর একটি স্বপ্ন দেখলেন, ফারান পর্বত হতে একটি উজ্জ্বল আলোক শিখা বের হয়ে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল আর তার তীব্র আলোকে সুদূর সিরিয়া ও রোম সাম্রাজ্যের প্রাসাদসমূহ তাঁর চোখের সম্মুখে ভাসিয়ে উঠল। বিবি আমেনা তাঁর গর্ভকালীন সময়ে প্রায় প্রতি রাতেই এরূপ একটা না একটা অদ্ভুত ও আশ্চর্য স্বপ্ন দর্শন করে নিতান্ত ব্যাকুল এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন। তিনি তাঁর প্রতিবেশিনী স্ত্রীলোকদের নিকট এসব স্বপ্নের বিবরণ খুলে বলতেন। শুনে তারা তাঁকে ভয়ভীতি দেখাতে লাগল এবং নিজেদের অজ্ঞতা সুলভ সংস্কার বলে এসব ঘটনাকে জ্বিন-ভূতের উপদ্রব বলে তাঁকে তাবীজ গ্রহণ করতে উপদেশ দিল।
একদিন জনৈকা প্রৌঢ়া মহিলা বিবি আমেনার মুখে তাঁর স্বপ্ন বিবরণ শুনে বললেন, মা গো। তোমার উপরে জ্বিনের আছর হয়েছে। তুমি যদি লৌহ নির্মিত বাল্য এবং গলায় লৌহের হাঁসুলী ব্যবহার কর তা হলে আর জ্বিন বা ভূত-প্রেতে কখনও তোমার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এ সমস্ত ধারণাগুলো ছিল তখনকার আরবের লোকদের কুসংস্কার। কোন অস্বাভাবিক বা অসাধারণ কোন কিছু দেখলেই তারা ঐ সমস্তকে জ্বিন-পরীদের কাণ্ড বলে মনে করত এবং তাবীজ-তদবীর ও মন্ত্র-তন্ত্র দ্বারা তা সংশোধন করার প্রয়াস পেত। শুধু মেয়েলোকেরাই নয় আরবের পুরুষ এমনকি শিক্ষিত পুরুষেরা পর্যন্ত এ ধরনের কু-সংস্কারসমূহে আবদ্ধ ছিল। বিবি আমেনা সে যুগের রমণী হিসেবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনিও কম-বেশি ঐসব কুসংস্কারে বিশ্বাসিনী ছিলেন। সুতরাং উল্লিখিত পৌঢ়া মহিলার পরামর্শ মত হাতের বাজুতে লোহার বালা ও গলায় লোহার হাঁসুলী পরিধান করলেন। ঐদিন রাতে বিবি আমেনা স্বপ্নে দেখলেন, শ্বেত বস্ত্র পরিহিত এক বয়স্ক বোযর্গ ব্যাক্তি তাঁকে সম্বোধন করে বললেন, হে আমেনা। তোমাকে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও তুমি সে প্রাচীন কুসংস্কারসমূহ মেনে চলেছ যেগুলো সমূলে উৎপাটিত করার জন্যই তোমার সন্তান মহানবীরূপে দুনিয়ায় আসছেন।
তুমি নিশ্চয় অবগত নও, তোমার উদরে যিনি অবস্থান করছেন। তিনি হবেন সারা দুনিয়ায় সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তুমি কত বড় সৌভাগ্যশালিন মহিলা যে, অচিরেই তুমি সে মহামানবের জননী হতে চলেছ। বিশ্ব মানব অদূর ভবিষ্যতেই তোমাকে বিশ্ব নবীর জননী বলে সম্বোধন করবে। তিনি জগতে এসে সব অনাচার-কদাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, জিহাদ ঘোষণা করবেন। আর তুমি কিনা তাঁর জননী হয়ে সে সব কদাচারে লিপ্ত রয়েছে। তোমাকে সাবধান করছি, আজই তুমি তোমার অঙ্গের ঐ বালা ও হাঁসুলী খুলে ফেলবে এবং কস্মিনকালেও এসব কুসংস্কারসমূহে বিশ্বাস করবে না। এ কথা বলে বুযুর্গ ব্যক্তি বিবি আমেনার হাতের লোহার বালা ও গলার হাঁসুলীর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে খান খান হয়ে অঙ্গ হতে খুলে পড়ল। অতঃপর ঐ বুযুর্গ ব্যক্তি অদৃশ্য হয়ে গেলেন এবং বিবি আমেনার নিদ্রা ভেঙে গেল। তিনি জেগে দেখলেন যে, সত্যই তার বালা ও হাঁসুলী অঙ্গ হতে খুলে বিছানার উপরে পড়ে রয়েছে। সাথে সাথে তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, জীবনে কখনও আর ঐসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করবেন না।
গর্ভাবস্থায় হযরত আমিনার স্বপ্ন
হযরত আমিনার পেটে তার স্বামী খাজা আবদুল্লাহর পক্ষ হতে নূরে মুহাম্মদী (সাঃ) স্থান নেয়ার পর তিনি স্বপ্নে দেখতে পেলেন কে যেন তাকে বলতেছে হে আমিনা। আপনি গর্ভবতী হয়েছেন। সমস্ত বিশ্ব জগতের নেতা, সমস্ত সৃষ্টির সেরা, তামামা দুনিয়ার সর্বোত্তম মহামানর আপনার পবিত্র গর্ভে তাশরীফ আনবেন। তিনি জন্মগ্রহণ করার পর তার পবিত্র নাম মুহাম্মদ রাখবেন।
আব্দুল্লাহর পরলোক গমন
বিবাহের বার মাস পরে আব্দুল্লাহ ব্যবসায় উপলক্ষে সিরিয়া গমন করলেন। ঐ সময় বিবি আমেনা ছিলেন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সিরিয়া হতে প্রত্যাবর্তন কালে আব্দুল্লাহ মদিনায় কয়েক দিনের জন্য বিশ্রাম করেছিলেন। মদিনা তখন 'ইয়াসরিব' নামে পরিচিত। এ ইয়াসরিবই ছিল আব্দুল্লাহর শ্বশুরালয় অর্থাৎ আমেনার পিতা ওয়াহাব যুহরীর বাসস্থান। আব্দুল্লাহর মাতুলালয়ও ছিল এই ইয়াসরেবেই অবস্থিত। আব্দুল্লাহ তাঁর মাতুলালয়েই গিয়ে উঠেছিলেন। ঘটনাবশত সেখানে তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হলেন। মামা ও শ্বশুর তাঁর চিকিৎসায় কোন ত্রুটি করলেন না, কিন্তু জ্বর আরোগ্য হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে লাগল। রোগের অবস্থা কঠিন দেখে আব্দুল্লাহর রোগের অবস্থা উল্লেখ করে মক্কায় আব্দুল মুত্তালিবের নিকট সংবাদ পাঠানো হল।
এ সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে আব্দুল মুত্তালিব ও বিবি আমেনা অত্যন্ত চিন্তাকুল হয়ে পড়লেন। আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হারিসকে মদিনায় পাঠিয়ে দিলেন, মক্কায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আব্দুল্লাহ প্রায় মাসাধিককাল রোগ ভোগ করে এতই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তদবস্থায় তাঁকে উষ্ট্রের পিঠে উঠাইয়ে মক্কায় নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না।
কাজেই সকলেই অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, শরীরটা একটু সুস্থ এবং সবল হলে তাঁর মক্কা যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু হায়! কে জানত যে, আব্দুল্লাহ তাঁর পিতৃ ভূমি হতে এবার চির বিদায় নিয়ে এসে ছিলেন। যদিও মাতুলের গৃহে তাঁর সেবা-যত্নের কোন ত্রুটি হতে ছিল না, তথাপি তিনি মক্কায় আসার জন্য নিতান্ত ব্যাকুল হয়ে পড়ে ছিলেন। কারণ মক্কায় তাঁর বৃদ্ধ পিতা ও স্ত্রী আমেনার জন্য তাঁর চিন্তার অন্ত ছিল না। মাতুল, মাতুলানী ও শ্বশুর-শাশুড়ী প্রমুখের আপ্রাণ সেবা-শুশ্রূষা ও যত্ন-চেষ্টা সকলই বিফল হল। কিছুতেই তাঁকে বেঁধে রাখতে পারল না। মামার গৃহেই তিনি সকালেই মায়া কাটায় ইহকাল হতে চির বিদায় গ্রহণ করলেন।
বৃদ্ধ পিতা আব্দুল মুত্তালিব তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হারিসকে মদিনায় পাঠাইয়া দিয়ে ছিলেন আব্দুল্লাহকে মক্কায় নিয়া আসার জন্য। কিন্তু আফসোস। হারিস আব্দুল্লাহকে নিয়ে আসার বদলে পিতার নিকট বহন করে আনলেন কনিষ্ঠ ভ্রাতার কঠিন মৃত্যুর সংবাদ। বৃদ্ধ পিতা আব্দুল মুত্তালিব ও স্ত্রী আমেনার হৃদয় এ দুঃখজনক সংবাদে একেবারে ভেঙে গেল। আব্দুল্লাহর এ অকাল মৃত্যুতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মাতৃগর্ভে অবস্থান কালেই পিতৃহীন অর্থাৎ জন্ম ইয়াতীম হয়ে পড়লেন।
0 Comments