আশুরার বেদআত ও অযৌক্তিক কাজসমূহ

        মুহরম মাস ও আশুরার ফযীলত এবং গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের বাণী উদ্ধৃত করে এবং বুযুর্গাণে কেরামের আমলের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে উপরে যে সব বিবরণ বর্ণনা করা হল তা অপেক্ষা অধিক গুরুত্ব দেয়া। কিংবা আসল মাকসাদকে বাদ দিয়ে অন্য ব্যাপারে জোর দেয়াটা ধর্মের মধ্যে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। ।। অথচ আমরা আজকাল এ উপলক্ষে শরীয়ত সমর্থিত করণীয় কার্যাবলীকে বাদ দিয়ে অনেকগুলো বেদআত ও ভিত্তিহীন কাজ করে থাকি এবং সে কাজগুলোকেই মুহব্রম ও আশুরার গুরুত্বের প্রধান কারণ বলে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করে থাকি যে শুধুমাত্র কারবালার মর্মান্তিক ও শোকাবহ ঘটনাটি সবকিছু, আর তাকে উপলক্ষ করে আমরা শোক ও মাতমের নামে কত শরীয়ত পরিপন্থী ও বেদআত কাজই না করে থাকি।

        হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু পরিবারবর্গ ও সাথীদের নিয়ে এ তারিখে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়েছিলেন, এটা সত্যই দুঃখবহ ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্রের কথা তাঁর প্রতি যার ভালবাসা আছে, সে এ ঘটনা স্মরণ করে মর্মব্যথা অনুভব করে। কারবালার করুন স্মৃতি যার অন্তরে শোক-দুঃখের ঝড় প্রবাহিত করে না, সে নিঃসন্দেহে নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসাহীন পাষাণ হৃদয়। কিন্তু কারবালার ঘটনাকে উপলক্ষ করে নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসার দাবী করে আজ আমরা দলবিশেষের অনুকরণে শোক ও মাতমের নামে যে সব বেদআত কাজ করে চলেছি, তা এ কথাই প্রামাণ করে যে, প্রকৃতপক্ষে নবী পরিবারের প্রতি এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠিত মহান আদর্শের প্রতি আমাদের এতটুকু শ্রদ্ধা ও আস্থা নেই। যে নীতি ও আদর্শ প্রচারের জন্য হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হয়েছেন, তার শাহাদাতের ঘটনাকে স্মরণ করতে গিয়ে আমরা কি সে আদর্শের কথা একটিবারও স্মরণ করে থাকি?

        যে মহান পুরুষ নিজ গৃহে স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল না করে মরুভূমিতে নির্মমভাবে শহীদ হলেন এ কথাটিকেই আমরা বিরাট করে দেখি। কিন্তু কেন এবং কোন মহান উদ্দেশ্যে তিনি এত বড় বিপদে পড়লেন, সে কথা আমরা চিন্তা করে দেখি না, অথচ সে কথাটি স্মরণ করার জন্যই প্রতি বছর ১০ই মহরম আমাদের দুয়ারে এসে থাকে। সুতরাং নিঃসংকোচে বলা যায় যে, শত্রুরা তো তাঁকে শহীদ করেছেই আর আমরা তাঁর বন্ধুত্বের দাবীদার হয়েও তাঁর আত্মকুরবানীর প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা ভুলে গিয়ে তাঁর প্রতি জুলুম করছি। আশ্চর্য বন্ধু ও শত্রু কেউই তাঁর আত্মকুরবানীর মূল্য বুঝল না।

        আমাদের জানা দরকার যে, মুহররম মাস এবং আশুরার দিনটি কি শোকের ছায়া বিস্তার করার জন্যই আমাদের নিকট উপস্থিত হয়? আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী ন্যায়পন্থী প্রতিটি চিন্তাশীল মুসলমানই এ প্রশ্নের উত্তরে বলবেন যে, না এ উদ্দেশ্যে মুহররমের আগমন হয়নি বা হয় না। কারণ কোরআন কিংবা হাদীস শরীফের কোথায়ও কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের জীবনে মহররমের চাঁদে বা আশুরার দিনে কেউ শোক প্রকাশ করেছেন বলে কোনই প্রমাণ নেই। বরং কোরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার সারকথা হল এই যে, মুহররম মাসে নামায রোযা ইত্যাদি এবাদত করলে বিপুল সওয়াব পাওয়া যায় এবং বিশেষ করে আশুরার দিনে পরিবারবর্গের খাওয়া দাওয়ার খাতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছু বেশী অর্থ ব্যয় করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার জীবিকায় বরকত দান করেন।

        এ দ্বারা শোক করার কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং পরোক্ষভাবে একথাই প্রমাণ হয় যে, ইহা একটি আনন্দের দিন। কারণ এ দিনে মহান আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে ফেরাউনের গোষ্ঠির কবল হতে মুক্তি দান করেছিলেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে সে দিনের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সাধ্য পরিমাণ ধুমধাম করার যে কথা আছে তাও এ কথাই প্রমাণ করে যে, ১০ই মুহররম মাতম করার দিন নয়, বরং একটি খুশীর এবং শোকর আদায় করার দিন।

        কেউ হয়ত বলবেন যে, কারবালার ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের বহুদিন পর ঘটেছে এ জন্য হাদীসে এ দিনে শোক করার কোন কথাই উল্লেখ নেই। আবার কেউ হয়ত এ প্রশ্নের অবতারণা না করে একথা বলবেন যে, কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে স্মরণ করে শহীদানের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করাটাও কি অন্যায় হবে?

        প্রথম কথার উত্তরে আমাদের প্রথম প্রমাণ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীয়ত অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত পালনকারিণী স্ত্রী ব্যতীত আর কারও পক্ষে কোন মৃতের জন্য তিন দিনের বেশী সময় ধরে শোক পালন করা দুরস্ত নেই, সে মৃত ব্যক্তি যত ঘনিষ্ট আত্মীয়-পরিজনই হোক না কেন।

        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম পত্নী হযরত উম্মে হাবীবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা তাঁর পিতা আবু সুফিয়ানের মৃত্যুর পর তৃতীয় দিনে ভাল ভাল পোশাক পরিধান করে খুব সাজলেন এবং শরীরে সুগন্ধি মাখলেন। সাধারণতঃ মহিলাগণ পিতার মৃত্যুর পর কতই না শোকাতুর হয়ে পড়ে। অনেকে তো পিতার শোকে মাসের পর মাস বিলাপ করে অতিবাহিত করে। অথচ পিতার মৃত্যুর তৃতীয় দিনেই হযরত উম্মে হাবীবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে এভাবে হাসি খুশী এবং চিন্তা মুক্ত হয়ে উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করতে দেখে সকলেই বিস্মিত হলেন। তিনি তখন বললেন, সাজার ও সুগন্ধি মাখার আমার কোন প্রয়োজন ছিল না। তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, স্বামী ব্যতীত আর কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশী শোক করা দুরুস্ত নেই। এ জন্যই আজ আমি এ বেশ ধারণ করেছি, যেন আমার মধ্যে শোকের কোন চিহ্ন প্রকাশ না পায়।

        উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার এ ঘটনার মর্ম অনুধাবন করলে সহজেই অনুমেয় হয় যে, কারবালার ঘটনা যদি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায়ই ঘটত, তাহলে শহীদানে কারবালার জন্য তিন দিনের বেশী সময় শোক করার অনুমতি পাওয়া যেত না।

        দ্বিতীয় কথা হল এই যে, সুখের একটি দিনকে আমরা নিজেদের খেয়াল খুশীমত শোকের দিনরূপে উদ্যাপিত করতে পারি না। কেননা, এরূপ করলে হাদীসের বরখেলাপ করা হয়। তাছাড়া মূল বৃক্ষকে বাদ দিয়ে বহু পরে গজানো একটি শাখাকেই আমরা সর্বস্ব মনে করতে পারি না। দুঃখের বিষয় আমরা আর সব কথাকে বাদ দিয়ে শুধু কারবালার দুর্ঘটনাকেই মহরমের গুরুত্বের একমাত্র কারণ বলে মনে করছি।

        বাকী রইল শহীদানের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা। এ ব্যাপারে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, দলবিশেষের রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণে আমরা যেভাবে শহীদানে কারবালার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি তা প্রকৃতপক্ষে তাঁদের প্রতি অশ্রদ্ধারই নামান্তর। যে কাজ তারা নিজেরা অপছন্দ করতেন সে কাজ করেই আমরা তাঁদের প্রতি ভালবাসার প্রমাণ দিতে চাই। এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর কি হতে পারে?

        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের কয়েক দিন পূর্বে তাঁর মনে পড়ল শহীদানে ওহুদের কথা। তাঁদের আল্লাহ প্রীতি নবী প্রীতি এবং ইসলামের জন্য আত্মত্যাগের ও অসীম বীরত্বের স্মৃতি নতুন করে তাঁর হৃদয় পটে জাগরিত হল। শহীদানের প্রতি মমতায় তার প্রাণ ভরে উঠল। তিনি তৎক্ষণাৎ শহীদানের মাজারের পার্শ্বে তশরীফ নিলেন এবং আবেগভরা হৃদয় নিয়ে মুনাজাত করলেন এবং তাঁদের মাজারসমূহের উপর পুনরায় জানাযার নামায আদায় করলেন। পিতা যেমন ছোট ছোট সন্তানদের আদর আহলাদ করে পরে তাদের নিকট হতেই বিদায় গ্রহণ করেন, তেমনি তিনিও শহীদানের মাজারে স্নেহ মমতার পরশ বুলিয়ে সেখান হতে বিদায় গ্রহণ করলেন।

        শহীদানে কারবালার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ব্যাপারে আমাদের উচিত ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নীতি অনুসরণ করা। আমরা নফল নামায আদায় করে, নফল রোযা রেখে, কোরআন তেলাওয়াত করে, তাসবীহ তাহলীল ও দোয়া দরূদ পাঠ করে তার সাওয়াব তাঁদের নামে বখশায়ে দিয়ে এবং সর্বোপরি যে আদর্শকে পুণর্জীবিত করার জন্য তারা অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সে আদর্শকে মজবুতভাবে আঁকড়িয়ে ধরে তাঁদের প্রতি ভালবাসার প্রমাণ করতে পারতাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সে কার্যকরী পথে আমরা চলছি না। আমরা চলছি সেই নাছারাদের পথে যারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে ভক্তি করতে গিয়ে ভক্তির নির্ধারিত সীমা লংঘন করে তাঁকে ইবনুল্লাহ বা আল্লাহর পুত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যেমন স্বীয় ভক্তদের এ ভ্রান্ত আকীদা দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তেমনি যদি আজ হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জীবিত থাকতেন এবং ভক্তদের এসব কান্ড কারবার দেখতে পেতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন। এমন কি প্রয়োজন হলে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতেন। যদি কেউ বলে যে, প্রতি বছর ১০ই মুহরম আমাদের নিকট অশ্রুর দাবী নিয়ে আসে, তবে তাকে আমাদের বলে দেয়া উচিৎ যে, বিগত তের শত বছরে এ ব্যাপারে তেরশটি অশ্রুর প্লাবন প্রবাহিত হয়েছে। তাই এখন আর মুহরমের অশ্রুর পিপাসা নেই। এখন তার দাবী হল, যদি কাঁদতে চাও তবে অন্তরকে কাঁদাও। কৃত্রিম অশ্রুজলে বুক ভাসালে তোমার নিজেরও উপকার হবে না, শহীদানে কারবালারও কোন উপকার হবে না। সুতরাং এ উপলক্ষে বেদআত ও বে-শরীয়তী কাজের অনুষ্ঠান করে শহীদানের পূণ্যস্মৃতিকে অপমাণিত কর না।

        এবার আসুন, আমরা শরীয়তের কষ্টি পাথরে মুহরম উপলক্ষে করণীয় কার্যসমূহকে যাচাই-বাচাই করি যেন অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও বেদআত ও গুনাহের কাজকে নেক কাজ মনে করে বিভ্রান্ত না হই এবং যারা শুধু মুর্খতার কারণে এসব বে-শরীয়তী কাজ করে থাকে তাদেরও যেন জ্ঞানচক্ষু ফুটিয়ে তুলতে পারি।

        অতঃপর মুহরম উপলক্ষে যে সব কাজ করা হয়, আমরা তাদের সে সব কাজের বর্ণনা আপনাদের সম্মুখে পেশ করতেছি এবং সাথে সাথে প্রতিটি কাজের অযৌক্তিকতা আলোচনা করছি। এ ব্যাপারে আমাদের পথ প্রদর্শক হচ্ছে যাহেরী ও বাতেনী ইলমের অকুল সমুদ্র ওলীয়ে কামেল হক্কানী আলেম হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির কতিপয় অমূল্য বাণী।

কৃত্রিম কবর জিয়ারত

        হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কৃত্রিম কবর জিয়ারত করা বেদআতীদের মুহরমের অন্যতম প্রধান করণীয় কাজ বলে বিবেচিত। আপনারা স্বচক্ষেই দেখে থাকবেন যে, অসংখ্য নারী-পুরুষ এ সব কৃত্রিম কবরকে সেজদা করতে পর্যন্ত কুণ্ঠিত হয় না। উপরন্তু কৃত্রিম কবরকে সেজদা করে নিজেদেরকে ধন্য মনে করে। প্রকৃতপক্ষে ইহা কবর পূজারই নামান্তর। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পূর্ব মুহুর্তেও এ সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।

         হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পাঁচদিন পূর্বে তাঁর শরীরে ভীষণ জ্বর দেখা দেয়। তাঁর শরীরের তাপমাত্রা তখন এত উর্দ্ধে উঠে যে, তাঁর শয্যাপার্শ্বে যাঁরা বসেছিলেন তাঁরা সকলেই সে তাপ অনুভব করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবানে তখন বরাবর উচ্চারিত হচ্ছিল-

اللهُمَّ اغْفِرْ لِي وَالْحِقْنِي بِالرِّفِيقِ الْأَعْلَى *

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলী ওয়াল হিকুনী বিবৃরাফীক্কিল আ'লা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধুর সান্নিধ্য দান কর।

        এ রোগ যন্ত্রণার ভিতর থেকেই তিনি উপস্থিত সাহাবীদেরকে বললেন, হে মুসলমানগণ। তোমাদের পূর্বে একটি জাতি গত হয়ে গেছে, যারা তাদের পয়গাম্বর এবং ধর্মপরায়ণ লোকদের কবর পূজা করার কারণে ধ্বংশ প্রাপ্ত হয়েছে। সাবধান! তোমরা আমার কবরকে পূজার স্থানে পরিণত কর না। কিছু সময় পর তিনি পুনরায় বললেন, আমি আবার তোমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি তোমরা আমার কবরকে পূজা কর না। আমি তোমাদেরকে একথা জানিয়ে দিয়ে আমার কর্তব্য পালন করলাম। হে আল্লাহ! তুমি এ কথার সাক্ষী থাক। (যাদুল মাআ'দ)

হাদীস শরীফে এরশাদ হচ্ছে-

اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَجْلِسُوا عَلَى قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىتصلوا اليها 

    উচ্চারণ : কালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা লা-তাজলিস্ আ'লাল কুবুরি ওয়ালা তুছাল্লু ইলাইহা।

    অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা কবরের উপর বসিও না, আবার নামাযের কেবলার মতও তাকে মনে করিও না। (অর্থাৎ এমন কোন কাজ করবে না, যাতে কবরের মুরদার অমর্যাদা হয়, আবার কবরকে এমন ভক্তিও করবে না, যাতে কবর পূজার পর্যায়ে গিয়ে পড়ে)।

        ভেবে দেখুন! সত্যিকার কবর হলেও তাকে মাত্রাতিরিক্ত ভক্তি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য অন্যায় কাজ। এ অবস্থায় যে কবরে আদৌ কোন মৃত্যু ব্যক্তির লাশ নেই এবং যা আসলে কবরই নয় তাকে জিয়ারত করা, ভক্তি করা, সিজদা করা, তাতে শিরনী দেয়া ইত্যাদি কাজ যে কিরূপ জঘন্য অন্যায় তা সহজেই অনুমেয়।

তাজিয়া প্রস্তুত করা

        তাজিয়া প্রস্তুত করা এবং তা নিয়ে মিছিল করার ফলে অনেক সময় ফাছেকী এবং শেরেকী কাজ পর্যন্ত হয়ে যায়। অনেক মুর্খ লোক বিশ্বাস করেন যে হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সে তাজিয়ায় আগমণ করেন এবং এ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তাঁর মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে তাজিয়ার মধ্যে নজর নেয়ায ইত্যাদি রেখে দেয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা একটি শেরেকী কাজ এবং গায়রুল্লাহর নামে প্রদত্ত বলে এ সব নেয়াষের জিনিস খাওয়া অবৈধ। অনেকে তাজিয়ার সম্মানার্থে তার সম্মুখে করজোড় করে দাঁড়ায়, বেয়াদবীর ভয়ে তার দিকে পিঠ দেয় না, নিজেদের অভাব অভিযোগের প্রতিকারের জন্য নানা ধরনের আরজি তার সাথে লাগিয়ে দেয় এবং তা দেখাকে জিয়ারত নামে অভিহিত করে এ সব কাজ প্রকাশ্য শিরক। নিজেদেরই হাতে গড়া তাজিয়াকে নিয়ে এত কান্ড-কীর্তন।

        ইসলাম পূর্ব জাহিলিয়াতের যুগে লোকেরা নিজেদের হাতে গড়া মূর্তিসমূহকে দেবতা বলে মানত এবং তাদের পূজা করত। তাদের এ কাজে বিস্ময় প্রকাশ করে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-
اتَعْبُدُونَ مَا تَنْحِتُونَ 

        উচ্চারণঃ আতা'বুদুনা মা তানহিতুন।

        অর্থঃ তোমরা কি তারই উপাসনা কর, যাকে তোমরা নিজেরাই তৈরী করেছ?

        অর্থাৎ যা তোমাদেরই সৃষ্ট বস্তু তা আবার কিরূপে উপাস্য হতে পারে? মুহররম উপলক্ষে তাজিয়ার প্রতি যেরূপ ভক্তিপ্রদর্শন করা হয় তা মুশরিকদের মূর্তিপূজার সাথে অনেক দিক হতেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। সবচেয়ে মজার কথা হল যে তাজিয়াকে কয়েক দিন ধরে অসীম ভক্তি করা হয়, তাকেই আবার একদিন কোন জঙ্গলে নিয়ে ভেঙ্গে চুরমার করে অথবা পুকুর কিংবা ডোবার পানিতে চুবিয়ে তছনচ করে দেয়া হয়। এভাবে একটি ভক্তি ভাজন বস্তুকে অশ্রদ্ধা ও অবমাননার লক্ষ্যে পরিণত করাটাই তাজিয়া তৈরির অযৌক্তিকতা ও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অন্তঃসার শুণ্যতা প্রমাণ করে।

        কোন কোন মুর্খ বলে থাকে যে, হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে এ তাজিয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলেই একে তাযীম করা হয়। এ কথার প্রথম উত্তর এই যে, হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সােেথ তাজিয়ার এ সম্পর্কটাইতো সম্পূর্ণরূপে কল্পনাপ্রসূত এবং অবাস্তব। সত্যই যদি হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিংবা শহীদানে কারবালার কারও জামা কাপড় বা অন্য কোন বস্তু তাবারুক স্বরূপ তাজিয়ায় থাকত, তবে বিনা দ্বিধায় তাকে সম্মান করা কর্তব্য বলে মনে হত। অথচ প্রকৃতপক্ষে তাঁদের কোন জিনিস তাতে থাকে না, বরং নিজেদেরই দেয়া জিনিসের সাথে হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পবিত্র নাম জড়িত করা হয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে ইহা একটি কাল্পনিক বিষয়। 

        দ্বিতীয় উত্তর এই যে, নিজেদের দেয়া জামা কাপড় ইত্যাদির সাথে হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নামের ছাপ লাগিয়ে দিলে যখন তা সম্মানের পাত্র হয়ে যায়, এ অবস্থায় কেউ স্বয়ং ইমাম হোসাইন হওয়ার দাবী করে বসলে তার তো আরও বেশী তাযীম পাওয়ার কথা। যেহেতু হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নাম নিজের সাথে জড়িত করেছে, সুতরাং কেন সে শ্রদ্ধা পাবে না? অতএব জিজ্ঞাসা করি, কেউ কি ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করতে ঢোল-তবলা বাজাতে রাজী হবে? ঢোল-তবলা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজনো শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং বিবেক বিরোধীও বটে। কারণ এসব জিনিষ সাধারণত হাসি খুশী ও আনন্দ উৎসবের উপকরণ বলে বিবেচিত হয়। শোকের দিনে এসব জিনিষের ব্যবহার আনন্দ প্রকাশেরই নামান্তর।

সামাজিক অনাচার

        মুহররম উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বেশরয়া সভা-সমিতি, শোভাযাত্রা ও মেলা ইত্যাদিতে ফাসেক-ফাজের, ভাল-মন্দ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল প্রকারের মানুষ একত্রিত হয় বিধায় অনেক সময় অনেক ধরনের সামাজিক অনাচার ও অসামাজিক কাজ অনুষ্ঠিত হতে দেখা দেয়।

বিলাপ করা

        মুহররম উপলক্ষে হায় হোসাইন হায় হোসাইন করে বুক চাপড়িয়ে চাপড়িয়ে মাতমের যে দৃশ্য সৃষ্টি করা হয়, তাই হল মুহররমের সবচেয়ে বেশী আকর্ষণীয় ও দর্শকমন্ডলীর মন গলানো দৃশ্য। কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে এ কর্ম একটি বিদআত। আবু দাউদ শরীফে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাপ ও মাতমকারীদের এবং যারা ভক্তি বা আগ্রহ নিয়ে তা শ্রবণ করে, তাদের উপর লানত করেছেন।

মর্সিয়া পাঠ করা

        শহীদানের স্মরণে (বা যে কোন মৃতব্যক্তির জন্য) শোকগাথা আবৃত্তি করা হয়। হাদীস শরীফে ইহাও নিষেধ করা হয়েছে। (ইবনে মাজা)

মউযু রেওয়ায়েত বর্ণনা ঃ

        শহীদানের উপলক্ষে শুধু মাতম সৃষ্টি করার উদ্ধেশ্যে এমন বহু ঘটনা করা হয়, যে ঘটনাগুলোকে ইতিহাসের কষ্টিপাথরে ঘষলে তাদের বিশুদ্ধতা প্রমাণ হয় না। হাদীস শরীফে এরূপ করার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

শোক করা

        এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস ইতিপূর্বে বর্ণনা করেছি, যার কথা হল, মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক সময় ধরে শোক করা অবৈধ হারাম। কেবল স্বামীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী (গর্ভবতী না হলে) চারমাস দশদিন আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত শোক করতে হবে।

        আশ্চর্যের বিষয়, গত তের শত বছরেও হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জন্য শোক করা শেষ হল না। কিন্তু ইহা যে শরীয়তের ছরীহ হুকুম বা কঠোর নির্দেশের বরখেলাফ একটি মহা অন্যায় কাজ, তা আমরা ভেবে দেখি না। ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল اعتدال )এ'তেদাল) এবং افراط و تفریط )ইফরাত ও তফরীত) হতে মুক্ত থাকা অর্থাৎ কোন ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি না করা। ভক্তি যেখানে প্রদর্শন করতে হবে, কিন্তু যে ব্যক্তি নির্ধারিত সীমারেখা ছাড়িয়ে ভক্তিকে পূজার পর্যায়ে টেনে নিবে, তার সাথে ইসলামের আপোষ নেই, পুরস্কারের পরিবর্তে তিরস্কারই হবে তার প্রাপ্য।

শোকের চিহ্ন ধারণ

শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো পোশাক, কালো ব্যাজ ইত্যাদি ধারণ করা হয়। শহীদানে কারবালার স্মরণে যারা মহরমের মাসে শোক পালন করে তাদেরকে কয়েকদিন যাবত কালো রং এর জামা পড়তে, কালো রুমাল মাথায় কিংবা হাতে রাখতে এবং খালি পায়ে চলতে দেখা যায়। এ সবই তারা শোকের চিহ্ন প্রকাশ করার উদ্দেশ্যেই করে থাকে। শরীয়ত মতে এসব করা নিষিদ্ধ।

        একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির জানাযা পড়তে গিয়ে কতকগুলো লোককে এ অবস্থায় দেখতে পেলেন যে, তারা (নিজেদের সামাজিক প্রথানুসারে শোকের চিহ্ন স্বরূপ) শরীরের চাদর খুলে ফেলে শুধু জামা পরিধান করে রয়েছে। এ অবস্থা দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে বললেন, তোমরা এখনও জাহেলিয়াত যুগের আচার অনুষ্ঠান মেনে চলছ? এ অবস্থা দেখে আমার অন্তরে ইচ্ছা জেগেছিল যে, তোমাদের উপর আমি বদদোয়া করি, যেন তোমাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ মন্তব্য শ্রবণ করা মাত্রই তারা নিজেদের চাদরগুলো তাদের শরীরে জড়িয়ে নিল। অতঃপর আর কখনও তারা এ কাজের পুনরাবৃত্তি করে নি। (ইবনে মাজা)

        উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, শোক প্রকাশের জন্য কোন বিশেষ পোশাক ব্যবহার করা বা বিশেষ কোন বেশ ধারণ করা জায়েয নেই বরং হারাম।

ফকীর সাজান

        কিছু সংখ্যক লোক ১০ই মহরম উপলক্ষে নিজেদের ছেলে- মেয়েদেরকে হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নামে ফকীর সাজিয়ে দেয় এবং তাদের দ্বারা দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করায়। উপরন্তু একে তারা তাদের সে ছেলে মেয়েদের জীবন পথের অমূল্য সম্পদ বলে বিশ্বাস করে। আকীদার দিক হতে এ ভিক্ষাবৃত্তি যেমন ভ্রান্তিমূলক, তেমনি মস্তবড় গোনাহের কাজও বটে। কারণ, পরিস্থিতির চাপে বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত ভিক্ষা করা হারাম।

দুর্ঘটনার চর্চা

বিষয়টি অত্যন্ত করুণ এবং দুঃখজনক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আওলাদের প্রতি যে অমানুষিক ব্যবহার দুশমনেরা কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত করেছিল, ভালবাসার দাবীদারগণ সে সব কথাই তেরশত বছর পর্যন্ত সভা-সমিতি ইত্যাদিতে প্রচার করে তাঁদেরকে বে-ইজ্জতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দৈব দুর্বিপাকে দুর্যোগ মুহুর্তে কোনও সম্ভ্রান্ত পরিবারের পর্দানশীন মহিলাদের কোনরূপ অবমাননা হলে সাধ্যমত তাকে গোপন রাখার

        চেষ্টা করাই সত্যিকার বন্ধুত্বের পরিচয়, অথচ আওলাদে রাসূলের তথাকথিত ভক্তেরা কারবালার ঘটনাবলী চর্চার মাধ্যমে তাঁদের লাঞ্চনার কথাটি অধিক ফলাও প্রচার করছে। সুতরাং এ মর্মান্তিক ঘটনা অধিক চর্চা না করাই হবে আহলে বাইতের প্রতি প্রকৃত ভালবাসার পরিচয়।

খিচুড়ী পাকানো

         খিচুড়ী ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করা এবং তার সওয়াব হযরত হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং কারবালার অন্যান্য শহীদানের নামে বখশায়ে দেয়া। কাজ হিসেবে ইহা না জায়েয বা হারাম নয়। আশুরার দিন খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে নিজের সামর্থ্য অনুসারে কিছুটা বেশী খরচ করার উপকারিতার কথা ইতিপূর্বে একটি হাদীসের উদ্ধৃতিসহ বর্ণনা করা হয়েছে। তদুপরি তার সওয়াব শহীদানের নামে বখশায়ে দেয়া আরও ভাল কথা। কিন্তু যেহেতু লোকেরা ইহাকে একটি রুসম অর্থাৎ প্রথা বা সামাজিক অনুষ্ঠান এবং মহররম উপলক্ষে করণীয় কর্তব্যসমূহের অন্যতম বলে মনে করছে, সে জন্য ইহা বর্জন করাই উত্তম। কোনরূপ পাবন্দী বা বাধ্যবাধকতায় না জড়িয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী খানাপিনায় কিছুটা আড়ম্বর করায় ক্ষতি নেই।

শরবত পান করান

কাজ হিসেবে এটাও একটি উত্তম কাজ। শুধু পানি পান করিয়ে আল্লাহর কোন মখলুকের পিপাসা নিবৃত্ত করালে যখন সওয়াব হয়, তখন শরবত পান করালে তো আরও বেশী সওয়াব হওয়ারই কথা কিন্তু এটাও একটি রেওয়াজে পরিণত হওয়ায় বর্জন করাই শ্রেয়। তাছাড়া কিছু সংখ্যক মুর্খ লোক এ আকীদা পোষণ করে যে, শহীদানে কারবালা পানির অভাবে ছটফট করতে করতে প্রাণ ত্যাগ করেছেন এবং পিপাসা নিয়েই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। এ অবস্থায় ১০ই মুহরম তারিখে মানুষকে শরবত পান করানো হলে তার অসিলায় তাঁদের সে পিপাসা নিবৃত্ত হবে। এটাও একটি ভুল আকীদা। এ আকীদা নিয়ে শরবত পান করালে গুনাহ হবে। তবে হাঁ শুধু সওয়ার লাভের উদ্দেশ্যে কাউকে শরবত পান করালে এবং সেই সওয়াব শহীদানের নামে বখশায়ে দিলে কোন ক্ষতি নেই।

কয়েকটি বদ আকীদা

    (ক) মুহররম মাসে সন্তান জন্মগ্রহণ করলে কেউ কেউ সেই সন্তানকে মনহুছ বা অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে। এটা একটি ভ্রান্ত আকীদা। 
    (খ) কিছু সংখ্যক লোক মুহররম মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে, এ মাসে ছেলে-মেয়েদের বিবাহ দেয়াকে অমঙ্গলজনক মনে করে। এটা তাদের একটি অবাস্তব এবং অন্যায় বিশ্বাস।

        (গ) মুহরম উপলক্ষে কোন কোন স্থানে ঘরের ছাদ অথবা কোন উচ্চ স্থান হতে জনসাধারণের দিকে রুটি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য নিক্ষেপ করা হয়, আর নীচের সমবেত জনতা হুড়াহুড়ি ও কাড়াকাড়ি করে তা ধরে ভক্ষণ করে, আর অধিকাংশই হুড়াহুড়ি, ধাক্কা-ধাক্কির মধ্যে পায়ের নিচে পড়ে নিষ্পেষিত হয়। এটা আল্লাহর নিয়ামত ও রিযিকের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। হাদীস শরীফে রিযিকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার হুকুম রয়েছে এবং যে ব্যক্তি অবমাননা করে, তার রিযিক ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

চেহলাম উদযাপন

        ১০ই মুহরমের চল্লিশ দিন পর চেহলাম উপদযাপন করা হয়। সেদিনও উক্ত বেদআত ও বেশরা কার্যকলাপসমূহেরও পুনরাবৃত্তি করা হয়। কাজেই ঐ সমস্ত বেদআত বর্জন করা আবশ্যক।

Post a Comment

0 Comments