মুখলিস ব্যক্তি কে? আল্লাহর বিশেষ বান্দার পরিচয়

    ইখলাস বা নিষ্ঠাঃ

        হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন: হে লোক সকল। ছোট শিরক সম্পর্কে তোমাদের ব্যাপারে আমি ভীত। সাহাবায়ে কেরামগণ (রা) জিজ্ঞেস করলেন (ইয়া রাসূলাল্লাহ। (সা) ছোট শিরক কী? জবাবে হযরত মুহাম্মদ (সা) বললেন: রিয়া বা লোক দেখানো কাজ।

        কিয়ামতের ময়দানে রিয়াকারীদেরকে বলা হবে: যাও, যাদের উদ্দেশে পার্থিব জীবনে আমল করেছিলে, যদি তাদের নিকট হতে নেওয়ার মতো কিছু থাকে, তবে তাদের নিকট হতে নিজ আমলের বদলা-বিনিময় নিয়ে নাও।

    রিয়াকারের উপমা

        জনৈক বিজ্ঞ লোকের উক্তি: রিয়াকার ঐ ব্যক্তির সমতুল্য, যে স্বীয় খলে পয়সার পরিবর্তে পাথর কণা দ্বারা পূর্ণ করল। এতে মানুষ তাকে সম্পদশালী মনে করলেও তাতে তার কোন কিছু লাভ হবে না এবং এর দ্বারা তার কোন প্রয়োজনও মিটাতে পারবে না। অনুরূপ রিয়াকারকে দর্শকগণ সৎ ও খোদাভীরু মনে করলেও আল্লাহ তা'আলার দরবারে তার এসমস্ত আমলের কোন সওয়াব বা বিনিময় মিলবে না।

    সাতটি বস্তু সাতটি ব্যতীত অর্থহীনঃ

           জনৈক বুযুর্গের উক্তি: যে ব্যক্তি সাতটি বিষয়ের ওপর আমল করবে কিন্তু অন্য সাতটির ওপর আমল করবে না, তবে তার আমল অর্থহীন।

    ১. খোদাভীরুতার দাবী করবে কিন্তু গুনাহ থেকে বিরত থাকবে না, তবে তার দাবী মিথ্যা ও অর্থহীন।

    ২. আল্লাহ তা'আলার নিকট সওয়াবের আশা রাখবে, অথচ সৎ কাজ করবে না। (যদিও আল্লাহ তা'আলা সৎ কাজ ছাড়াও সওয়াব দান করতে পারেন। কিন্তু সাধারণত তার কানুন বা নিয়ম এই যে, সৎ কর্ম সম্পাদনকারীরাই একমাত্র সওয়াব পেয়ে থাকেন।)

    ৩. সৎ কাজের ইচ্ছা আছে কিন্তু সুদৃঢ় সংকল্প নেই।

    ৪. মেহনত ব্যতীত দু'আ করা, তাহলে সে শুধু বঞ্চিতই থাকবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শুধু দু'আ চেয়েই ক্ষান্ত হবে কিন্তু সৎ হওয়ার প্রচেষ্টা করবে না, সে শুধুই বঞ্চিত থাকবে। কবুলিয়্যাতের তাওফীক শুধু প্রচেষ্টাকারীগণের ভাগ্যেই জুটবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন: যারা আমার জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করবে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথ দেখাব।

    ৫. লজ্জিত না হয়েই ইসতিগফার করা। অর্থাৎ শুধুমাত্র মুখে মুখে আসতাগফিরুল্লাহ বলবে। কিন্তু আন্তরিকভাবে লজ্জিত বা অনুতপ্ত হবে না। মূলত এরূপ ক্ষমা প্রার্থনায় কোন উপকার নেই।

    ৬. আত্মসংশোধন ব্যতীত বাহ্যিক ও লৌকিক সৎ কর্ম অর্থহীন।

    ৭. ইখলাস ব্যতীত প্রচেষ্টা। কেননা, ইখলাসবিহীন বড় বড় সৎ কর্ম ও ধর্মীয় মেহনতন্ত্র অর্থহীন।

        আমল প্রকাশ হওয়ার ফলে দ্বিগুণ সওয়াবঃ

        জনৈক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অত্যন্ন গোপনীয়ভাবে আমল করি, কিন্তু অন্য লোকেরা তা জেনে ফেলে। এতে আমি আনন্দ অনুভদ করি। এরূপ আমল করে কি আমি কোন সওয়াব পাব? কারণ, বাহ্যিকভাবে তো এটা ইখলাসের পরিপন্থী।

        হযরত মুহাম্মদ (সা) বললেন: দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। একটি তো গোপন করার, আর বিষয়কে তোমরা অন্য পাঁচটির পূর্বে গনীমত মনে করো। যা দ্বিতীয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার।

        মুখলিস ব্যক্তি কে?

        জনৈক ব্যক্তি কোন এক বুযুর্গকে জিজ্ঞেস করলো হুযূর। মুখলিস কে? জবাবে তিনি বললেন: মুখলিস তো সেই, যে স্বীয় সৎকর্মসমূহ এমনভাবে গোপন রাখে, যেমন সে গোপন রাখে নিজের গুনাহগুলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো ইখলাসের শেষ সীমারেখা কী? জবাবে বললেন: মানুষের পক্ষ হতে কৃত প্রশংসাকে অপছন্দ করবে।

আল্লাহর বিশেষ বান্দার পরিচয়ঃ

        জনৈক ব্যক্তি হযরত যুন্নুন মিসরী (রহ) কে জিজ্ঞেস করলো হুযূর! আল্লাহপাকের পছন্দনীয় ও বিশেষ বান্দার পরিচয় কী? জবাবে তিনি বললেন তার পরিচয়ের চারটি নিদর্শন রয়েছে। যথা:

    ১. আল্লাহ পাকের বিশেষ বান্দা আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে।

    ২. তার কাছে কম হোক বেশি হোক যা কিছু আছে, তন্মধ্য হতে কিছু অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে।

    ৩. পার্থিব জীবনের মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলে আনন্দ উপভোগ করে।

    ৪. তার দৃষ্টিতে প্রশংসা ও তিরস্কার উভয়ই সমান।

Post a Comment

0 Comments