মসআলা - বালেগা অর্থাৎ প্রাপ্তা-বয়স্কা স্ত্রীলোকের রেহেম জরায়ু হইতে মাসে মাসে বিনা পীড়ায় যে রক্ত নির্গত হয় তাহাকে হায়েজ বলে হায়েজের রক্তের পরিচয় যে লাল-কাল, সাদা-মিশ্রিত কাল, কাল মিশ্রিত লাল, কিন্তু কেবল সাদা রংয়ের কিছু বাহির হইলে তাহা হায়েজে নহে।
মসআলা - স্ত্রীলোক নয় বৎসরের হইলে বয়ঃপ্রাপ্তা হইতে পারে সুতরাং নয় বৎসবের কম ছোট বালিকার যে রক্ত আসে তাহা হায়েজ নয় বরং রোগ। আবার বয়স্কা স্ত্রীলোকের পঞ্চান্ন বৎসর বয়স পর্যন্ত হায়েজ হইয়া থাকে ইহাই ফতওয়াগ্রাহ্য মত। যদি পঞ্চায় বৎসর পরে লাল বা কাল রংয়ের রক্ত আসে, তাহা হইলে উহা হায়েজ হইবে, কিন্তু যদি হলুদ, সবুজ বা মাটি রঙের রক্ত আসে, তবে উহা হায়েজ নহে বরং রোগ।
মসআলা- হায়েজের নিদ্দিষ্ট সংখ্যা কম পক্ষে তিন দিন তিন রাত ও বেশী দশ দিন দশ রাত। তিন দিন তিন রাতের অর্থ তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার মধ্যে যে রাত পড়ে তাহা।
মসআলা- হায়েজের নিদ্দিষ্ট সংখ্যা কম পক্ষে তিন দিন তিন রাত ও বেশী দশ দিন দশ রাত। তিন দিন তিন রাতের অর্থ তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার মধ্যে যে রাত পড়ে তাহা।
মসআলা-দশ দিনের অধিক অথবা তিন দিবা রাত্রির কম রক্ত দেখিলে তাহা হায়েজ নহে বরং উহা রোগ আর ঐ রোগের সময় নামায রোজা বন্ধ থাকিবে না।
মসআলা- দুই হায়েজের মধ্যকালকে তোহর অর্থাৎ পাককাল বলে। তোহরের সময় পনর দিনের কম হইবে না এবং বেশীর কোন সীমা নাই।
মসআলা- হায়েজ ওয়ালী স্ত্রীলোকের পক্ষে নামায পড়া, রোজা রাখা, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত অথবা স্পর্শ করা, কা'বা শরীফ তওয়াফ করা এবং মসজিদে যাওয়া ইত্যাদি নিষেধ। তবে হায়েজের জন্য যে কয়েকদিন রোজা বন্ধ থাকিবে পাক হইবার পর তাহা আদায় করিতে হইবে। আর নামাজের কাজা আদায় করিতে হইবে না।
মসআলা- হায়েজ ওয়ালী স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা হারাম। যদি কেহ না জানিয়া বা লোভের বশবর্তী হইয়া সহবাস করে তবে তওবা করিবে ও এক দিনার ও অর্থ দিনার সদকা করিবে।
মসআলা-কোন স্ত্রীলোকের সর্ব্বদা তিনদিন বা চারিদিন রক্ত আসিত কিন্তু কোন সময় বেশী দিন রক্ত আসিল ও তাহা দশ দিনের চেয়ে বেশী হইল না। তবে উহা সমস্তই হায়েজ ধরিতে হইবে। যদি দশ দিনের বেশী হয় তবে উহা পূর্বে যে কয়দিন হায়েজের অভ্যাস ছিল সেই কয়দিন হায়েজ ও বাকী ক'দিন রোগ ধরিতে হইবে। ইহার উদাহরণ এই যে, কাহারো সর্বদা তিনদিন হায়েজ আসার অভ্যাস ছিল কিন্তু কোন মাসে নয়দিন অথবা দশদিন রাত্রি রক্ত দেখা দিল তবে এইগুলি হায়েজ হইবে। যদি দশ দিবা রাত্রির চেয়ে এক মূহুর্তও বেশী রক্ত নির্গত হয় তবে পূর্ব্বোক্ত তিনদিন হায়েজ ও বাকী দিনগুলি রোগ ধরিতে হইবে। উক্ত দিনগুলির নামায় কাজা পড়া ওয়াজেব।
মসআলা -কোন স্ত্রীলোকের হায়েজের কোন নিঝিষ্টি সময় নাই। কখনো চারি দিন, কখনো সাতদিন আবার কখনো বা দশদিন আসে। এইরূপ পরিবর্তন হইতে থাকে, ইহা সমস্তই হায়েজ ধরিতে হইবে। কিন্তু ঐ স্ত্রীলোকের যদি কোন সময়ে দশ দিবা রাত্রির বেশী রক্ত নির্গত হন তবে লক্ষ করিতে হইবে গতমাসে তাহার কতদিন হায়েজ হইয়াছিল। এই মাসেও সেই কয়দিন হায়েজ গণ্য করিয়া বাকী দিন রোগ ধরিতে হইবে।
মসআলা- কাহারো একদিন অথবা দুই দিন রক্ত আসার পর সে পনর দিন পাক রহিল। তৎপর আবার এক অথবা দুই দিন রক্ত আসিল। তবে মধ্যবর্তী পনর দিন পাক থাকিবেই তাছাড়া আগেও পরের রক্ত নির্গত হওয়ার দিনগুলি হায়েজ গণ্য হইবে না বরং উহা রোগ ধরিতে হইবে।
মসআলা- একদিন অথবা কয়েকদিন রক্ত আসার পর পনর দিনের কম পাক থাকিলে ইহা ধর্তব্য নয়। বরং ইহাই বুঝিতে হইবে, প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত বরাবর রক্ত আসিতে থাকিল তাহা হইলে যতদিন হায়েজ আসার অভ্যাস ততদিন হায়েজ ও বাকী দিন রোগ ধরিবে। ইহার উদাহরণ এই যে, কোন স্ত্রীলোকের কোন মাসের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন হায়েজ আসার অভ্যাস ছিল। কোন মাসে এমন হইল যে প্রথম তারিখে রক্ত আসিল। তৎপর চৌদ্দ দিন পাক রহিল পুনরায় একদিন রক্ত আসিল। তবে এইরূপ বুঝিলে যে যোল দিনের সবদিন বরাবর যেন রক্ত আসিল। এমতাবস্থায় প্রথম হইতে তিনদিন হায়েজ ধরিবে, ও বাকী তেরদিন রোগ ধরিবে। আর যদি চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তারিখে হায়েজের অভ্যাস হয় তবে এই তারিখ গুলিকেই হায়েজ ধরিবে। আর ইহার পূর্ব্বের তিনদিনও পরের দশদিন রোগ ধরিবে। আর যদি তাহার কোন অভ্যাস না থাকে বরং প্রথম প্রথম রক্ত আসিল তবে দশদিন হায়েজ ও বাকী ছয়দিন রোগ ধরিবে।
মসআলা -সন্তান জন্মের সময় অথবা সন্তান হওয়ার পূর্ব্বে রক্ত আসে তাহাও রোগ। এমন কি সন্তানের শরীরের অর্দ্ধেকের বেশী বাহির না হওয়া পর্য্যন্ত যে রক্ত বাহির হয় তাহাও রোগ বলা যাইবে।
মসআলা- যদি ফরয নামায পড়িবার সময় হায়েজ আসে তবে ঐ ওয়াক্তের নামায মাফ হইবে। পাক হওয়ার পর কাজা পড়িতে হইবে না। আর যদি নফল বা সুন্নত নামায পড়ার সময় হায়েজ আসে তবে পাক হওয়ার পর উহা কাজা পড়িতে হইবে। রোজার অর্ধেক দিনের পর হায়েজ আসিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। পাক হওয়ার পর উহার কাজা আদায় করিতে হইবে। নফল রোজার মধ্যে হায়েজ আসিলেও কাজা আদায় করিবে।
মসআলা- গর্বাবস্থায় রক্ত দেখা দিলে তাহাও রোগের মধ্যে গণ্য হইবে।
মসআলা- যদি এক কিম্বা দুইদিন রক্ত আসার পর বন্ধ হইয়া যায় তবে গোসল করা ওয়াজেব নহে, অযু করিয়া নামায আদায় করিবে। কিন্তু এই সময়ে সহবাস দুরস্ত হইবে না। পরদিন অতিবাহিত হইবার পূর্ব্বে রক্ত আসিলে বুঝিতে হইবে যে উহা হায়েজের সময় ছিল। হিসাব মত যতদিন হায়েজে থাকে ততদিন হায়েজ ধরিবে। গোসল করিয়া নামায আদায় করিবে। যদি পর দিন অতিবাহিত হয় আর রক্ত দেখা না দেয় তবে বুঝিতে হইবে সমস্তই দিনগুলিই রোগ ছিল। একদিন বা দুইদিন রক্ত বাহির হওয়ার যে নামাযগুলি আদায় করে নাই তাহার কাজা আদায় করিবে।
মসআলা যদি নামাজের শেষ ওয়াক্ত হায়েজ আসে এবং তখন পর্য্যন্ত নামায না পড়িলে সে ওয়াক্তের নামায মাফ হইয়া যাইবে।
মসআলা- কাহারোও হায়েজের অভ্যাস পাঁচদিন বা নয়দিন ছিল। যে কয় দিনের অভ্যাস ছিল ততদিন রক্ত আসার পর বন্ধ হইয়া গেল, যতক্ষণ পাক হওয়ার গোসল না করিবে ততক্ষণ পর্যন্ত সহবাস দুরস্ত নয়। যদি গোসল না করা অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাযের সময় অতিবাহিত হয় ও এক ওয়াক্ত নামাযের কাজা পড়া তাহার প্রতি ওয়াজেব হয় তখন সহবাস দুরস্ত হইবে।
মসআলা পাঁচদিনের অভ্যাস ছিল। কিন্তু চারিদিন রক্ত আসার পর হায়েজ বন্ধ হইল, গোসল করিয়া নামায পড়া ওয়াজেব। কিন্তু পাঁচদিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত সহবাস দুরস্ত নয়। হয়ত পুনঃ রক্ত আসিতে পারে।
মসআলা- যদি পূর্ণ দশদিন ও দশ রাত্রি হায়েজ আসে তবে যখনই রক্ত বন্ধ হইবে তখন হইতেই সহবাস দুরস্ত হইবে, গোসল করুক বা না করুক।
মসআলা- তিনদিন হায়েজ আসার অভ্যাস থাকা সত্ত্বেও যদি কোন মাসে তিনদিন পূর্ণ হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হয় তাহা হইলে গোসল করিবে না এবং নামায ও পড়িতে হইবে না। এই দুই অবস্থায় নামায় মাফ হইবে, কোন কাজা পড়িতে হইবে না। এই ধারণা করিবে যে অভ্যাস পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে, এই জন্য এই সব দিনগুলিই হায়েজ হইবে। আর যদি এগারই দিনে রক্ত আসে তবে শুধু তিনদিন হায়েজ বাকী দিনগুলি রোগ মনে করিবে, অতঃপর এগারই তারিখে গোসল করিবে ও-সাত দিনের নামায কাজা পড়িবে।
মসআলা- যদি পূর্ণ দশদিন দশ রাত রক্ত আসে এবং এমন সময় রক্ত বন্ধ হয় যে, একবার আল্লাহু আকবার ছাড়। আর বেশী কিছু বলিতে না পারে এবং গোসলেরও সময় না থাকে তাহা হইলে নামায় ওয়াজেব হইয়া যাইবে গোসল করার পর ইহার কাজা পড়িতে হইবে।
মসআলা- যদি রমযান মাসে, দিনে পাক হয় তবে পাক হওয়ার পর কিছু খাওয়া ও পান করা দুরস্ত নয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজদারের ন্যায় থাকা ওয়াজেব কিন্তু এই দিনগুলি, রোজার মধ্যে গণ্য হইবে না। বরং ইহারও কাজা রাখিতে হইবে।
মসআলা যদি পূর্ণ দশদিন দশ রাত হায়েজ আসার পর রাত্রে পাক হয় ও এতটুকু রাত্রি বাকী থাকে যাহাতে একবারও "আল্লাহু আকবার বলিতে না পারে তবুও সকাল বেলায় রোজা ওয়াজেব হইবে। যদি দশদিনের কম হায়েজ আসে এবং রাত্রির এতটা সময় বাকী থাকিতে পাক হয় যাহার মধ্যে যথাশীঘ্র গোসল করার পর একবারও 'আল্লাহু আকবার' বলার সময় না পায়, তবুও সকাল বেলায় রোজা ওয়াজেব হয়। যদি অতটা রাত্রি ছিল কিন্তু গোসল করে নাই তবুও রোজা ভাঙ্গিবে না, বরং রোজার নিয়ত করতঃ সকাল বেলা গোসল করিয়া লইবে। আর যদি রাত্রি কম হয় যাহাতে গোসল করা যায় না তবে সকাল বেলার রোজা জায়েজ নহে। কিন্তু দিনে কোন কিছু খাওয়া ও পান করা দুরস্ত নয়। বরং রোযাদারের মত কাটাইবে, পরে ইহার কাজা আদায় করিবে।
0 Comments