কর্মক্ষেত্রে নারীর পর্দা কেমন হতে হবে

        বর্তমান নারীরা যদিও মানতে নারাজ যে, নারীদের প্রকৃত কর্মস্থান হচ্ছে তাদের ঘর। আর সে কারণেই নারীদেরকে গৃহের রাণী বলা হয়। অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব স্বামীর এবং স্বামীর সে অর্জিত অর্থের বিনিময়ে গৃহকে শোভামণ্ডিত করা নারীর কাজ। কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন 

        , নারী স্বামী গৃহের পরিচালিকা এবং এ শাসন পরিচালনার জন্যে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। (বুখারী)

        গৃহের বাইরের কার্যাবলি থেকে নারীদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। যেমন পুরুষের ওপর জুমুয়ার নামায ওয়াজিব কিন্তু নারীদের ওপর ওয়াজিব নয়। তাদের ওপর জিহাদও ফরয নয়, তবে প্রয়োজন বোধে মুজাহিদদের সেবায় যোগ দিতে পারে। জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ থেকে মহিলাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

        তাদের ওপর জামায়াতে নামায পড়ার এবং মসজিদে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক করা হয় নি। যদিও কিছু কিছু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

        নারীদেরকে মুহাররাম পুরুষ ভিন্ন কোথাও গমন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (তিরমিযী)

        সারকথা, বাইরের সকল কার্যাবলি থেকে নারীদের মুক্তি দিয়ে গৃহের কার্যাবলি সুচারুরূপে পালন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলামের বিধান হলো নারীরা গৃহে অবস্থান করুক। وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُن - এ আয়াত দ্বারা গৃহে অবস্থানটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

        কিন্তু এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয় নি। কারণ কোন কোন সময় নারীদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। যেমন কোন নারীর স্বামী নেই যে তার বাইরের কাজটা করে দেবে। এও হতে পারে যে, পরিবারের কর্তার আর্থিক দুর্বলতা, অসুস্থতা, অক্ষমতা অথবা এরূপ আরো অনেক কারণে নারীদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। এ ব্যাপারে ইসলাম নারীদের সুযোগ দিয়েছে। হাদীসে

 قَدْ أَذِنَ اللَّهُ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَوَائِجِكُنَّ -

        অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন যে, তোমরা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে পার।

        কিন্তু নারীর কর্মক্ষেত্র যে, তার গৃহ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনের খাতিরে এ ধরনের অনুমতি কোন সংশোধনী আনয়ন করছে না। ইহা একটি অবস্থা বিশেষ অনুমতি এবং ইহাকে এ অবস্থায়ই রাখা উচিত। বালেগ নারীকে তার নিজস্ব ব্যাপারে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু একজন বালেগ পুরুষকে যে পরিমাণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, ততটুকু দেয়া হয় নি। পুরুষ ইচ্ছে মত যেখানে খুশি যেতে পারে। কিন্তু নারী-সে কুমারী হোক; কিংবা বিধবা হোক, সকল অবস্থায় ভ্রমণকালে তার সাথে একজন মুহাররম পুরুষ অবশ্যই থাকতে হবে। যে নারী পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য ইহা বৈধ নয় যে, সে তিনদিন অথবা তার বেশি দিন ভ্রমণ করে অথচ তার সাথে পুরুষ নেই। 

        নারী পুরুষ উভয়ই মানুষ। কিন্তু মানুষ বললেই এদের আসল পরিচয় শেষ হয় না। পুরুষরা মানুষই নয়, তারা পুরুষ মানুষ। অনুরূপ মেয়েরাও মানুষ নয়, তারা মেয়ে মানুষ। মানুষের এ শ্রেণী বিভাগই তাদের কর্তব্য ও কাজকে স্বভাবতই পৃথক করে দেয়। একটি পর্যায়ের কাজ হচ্ছে গৃহে, পারিবারিক সীমার মধ্যে, আর এক প্রকারের কাজ হলো বাইরের। এ উভয় প্রকারের কাজে স্বভাবও ধরনের কোন মিল নেই। তাই পুরুষকে দেয়া হয়েছে বাইরের কাজ সম্পাদন করার জন্যে। অন্যটি হচ্ছে গৃহের। যার জন্যে একমাত্র মহিলারাই উপযুক্ত। যেমন গৃহের অঙ্গন সাজিয়ে রাখা, মানববংশের কুসম উত্তম সন্তানদের গর্ভে ধারণ করা ও লালন-পালন করার ক্ষেত্রে একমাত্র নারীই অপরিহার্য। এক্ষেত্রে পুরুষ হচ্ছে বাইরের কর্মক্ষেত্রের কর্তা আর নারীরা হচ্ছে, ঘরের যাবতীয় ব্যাপারের কর্ত্রী।

        নারীদেরকে বাইরের কোন কাজ চাপিয়ে দেয়া হয়নি। কিন্তু তারা যদি নিজেদের পর্দা রক্ষা করে পারিবারিক স্বাভাবিক দায়িত্বসমূহ পালন করার পরও সামাজিক কাজ কর্ম করতে সমর্থ হয় তবে তা নিষেধ নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে পূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন কাজ। নারীদের প্রধান দায়িত্ব গৃহে। তাই বলে সে গৃহের চারদেয়ালের ভেতর বন্দী হয়ে থাকবে, ইসলাম তা চায় না। নারীদের ওপর বাইরের সামাজিক কাজের দায়িত্ব দেয় নি বলে যদি কেউ তা পর্দা রক্ষা করে নিজেদের প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের পর সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে, তাহলে ইসলাম সেক্ষেত্রে বাধ সাধবে না। এভাবে উভয়দিকের সঙ্গে পূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই ইসলামের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমানে এ ভারসাম্য ভেঙ্গে গেছে। নারীরা বাইরের কাজের দিকে অধিক মনোযোগী হবার কারণে তাদের প্রকৃত কর্ম নির্মূল হয়ে গেছে। সকল নারীর ক্ষেত্রে বাইরের কর্মক্ষেত্র বেছে নেয়ার কী দরকার? আসুন আমরা সবাই নিজের কর্মক্ষেত্রের প্রতি সহনশীল হই।

Post a Comment

0 Comments