প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, যখন কোন একদল মুমিনের দোযখে প্রবেশ সাব্যস্ত হয়ে যায়, তখন আল্লাহতায়ালা তাদের ব্যাপারে নবী-রাসূল ও ছিদ্দীকগণের শাফায়াত স্বীয় করুণায় গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া খাঁটি আলিম এবং ধার্মিকগণের সাফায়াতও তিনি গ্রহণ করতে পারেন। আল্লাহর নিকট যারা প্রিয় ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন তাদের শাফায়াতও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য বটে। তারা তাঁদের পরিজনবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত ও সম্পর্কিত লোকদের জন্য শাফায়াত করবেন; সুতরাং তুমি তোমার নিজের জন্য তাদের নিকট শাফায়াত লাভের যোগ্যতা অর্জনের জন্য চেষ্টা কর। মানুষকে ঘৃণা করো না। কেননা আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাগণের মধ্যে তাঁর বেলায়েতের কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন। হয়ত তোমার দৃষ্টি যার দিকে পতিত হয়নি, তিনিই আল্লাহর বন্ধু এবং অলী। কোন পাপকেই ক্ষুদ্র মনে করো না। কেননা আল্লাহতায়ালা তাঁর অবাধ্যতার মধ্যে তাঁর ক্রোধ নিহিত রেখেছেন। তারই মধ্যে তাঁর ঘৃণা রয়েছে। পক্ষান্তরে কোন ইবাদাতকেই ক্ষুদ্র মনে করো না, কেননা আল্লাহতায়ালা ইবাদাতের মধ্যেই তাঁর সন্তুষ্টি নিহিত রেখেছেন যদিও তা' একটি উত্তম বাক্য বা একটি খাদ্যের গ্রাস দান করা হয় বা একটি উত্তম নিয়ত বা এই শ্রেণীর কোন কাজ হয়। শাফায়াতের প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে অনেক। আল্লাহ বলেন, তোমার প্রভু শীঘ্রই তোমাকে দেবেন এবং তাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে।
হযরত আমর ইবনে আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুরে পাক (দঃ) হযরত ইব্রাহীম (আঃ)এর বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, হে প্রভু! তারা অনেক লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। যে আমার অনুসরণ করে, সে আমার দলভুক্ত। যে আমাকে অমান্য করে, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। হযরত ঈসা (আঃ)-এর বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তারা তোমার দাস মাত্র। তারপর তিনি তাঁর হস্ত উত্তোলন করে আমার উম্মত, আমার উম্মত বলে রোদন করতে লাগলেন। আল্লাহতায়ালা বললেন, হে জিব্রাইল। মুহাম্মদের নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস কর, সে কেন রোদন করছে? জিব্রাইল এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা তা' উত্তম জ্ঞাত আছেন। আল্লাহতায়ালা বললেন, হে জিব্রাইল। তুমি আবার মুহাম্মদের নিকট গিয়ে তাকে বল, আমি তাকে তার উম্মত সম্বন্ধে সন্তুষ্ট করব এবং তাকে ভুলব না।
হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমাকে পাঁচটি বস্তু দেয়া হয়েছে। তা' আমার পূর্বে অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। (১) একমাস দূরের পথ থেকে ভয় দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, (২) যুদ্ধলব্ধ সামগ্রী আমার জন্য হালাল করা হয়েছে এবং আমার পূর্বে অন্য কারও জন্য তা' হালাল করা হয়নি, (৩) সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠকে আমার জন্য নামাযের স্থান করা হয়েছে, তার মাটি পবিত্র সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে কোন ব্যক্তির নিকট যদি নামাযের সময় উপস্থিত হয় সে যেন নামায পড়ে, (৪) আমাকে শাফায়াতের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, (৫) প্রত্যেক নবীকে যার যার উম্মতের জন্য খাছ করে প্রেরণ করা হয়েছে কিন্তু আমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে্।
হযুরে পাক (সঃ) এরশাদ করেছেন, রোজ কিয়ামতে আমি নবীদের নেতা, তাঁদের মুখপাত্র এবং তাঁদের শাফায়াতের অধিকারী হব। এতে কোনই অহংকার নেই। তিনি আরও বলেছেন, আমি আদম সন্তানদের নেতা। তাতে কোনই অহংকার নেই। আমি-ই সর্বপ্রথম যমিন থেকে উত্থিত হব। আমি-ই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হব। আমার হস্তে প্রংশসার ফাজা থাকবে, তার নিচে আদম ও অন্যান্য নবীগণ থাকবেন। তিনি আরও বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই গৃহীত দোয়া থাকে। আমি ইচ্ছা করি রোজ কিয়ামতে আমার উম্মতের জন্য শাফায়াত আমার দোয়ার বিষয় হবে। তিনি আরও বলেছেন, নবীদের জন্য স্বর্ণ নির্মিত সিংহাসন থাকবে। তাঁরা তাতে উপবেশন করবেন। কিন্তু আমার সিংহাসন শূন্য থাকবে। আমি তাতে উপবেশন করব না। কেননা আমার প্রভুর নিকট এই ভয়ে আমি দণ্ডায়মান থাকব যে, তিনি আমাকে বেহেশতে পাঠিয়ে আমার পরে আমার উম্মতকে তথায় নাও পাঠাতে পারেন। তখন আমি বলব, হে প্রভু! উষ্মতী উষ্মতী। তখন মহান আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ। তোমার উম্মত সম্বন্ধে আমি কি করব বলে তুমি ইচ্ছা কর? আমি বলব, হে প্রভু! তাদের হিসাব তরান্বিত কর। আমি শাফায়াত করতে থাকব যে পর্যন্ত যাদের দোযখে পাঠানো হয়েছে তাদেরকে আমি মুক্ত না করতে পারি। দোযখের খাজাঞ্চী বলবে, হে মুহাম্মদ। আল্লাহর ক্রোধের জন্য আপনার উন্মতের মধ্যে কোন লোককে আপনি দোযখের মধ্যে রাখেননি।
হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, রোজ কিয়ামতে দুনিয়ার অধিকাংশ প্রস্তর ও টিলার জন্য আমি সুপারিশ করব। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ)- এর নিকট কিছু মাংস আনা হলে, তাঁকে বকরীর রান দেয়া হল। এতে তিনি পরম সন্তুষ্ট হয়ে তা' থেকে কিছু কর্তন করে নিয়ে বললেন; আমি রোজ কিয়ামতে নবীদের নেতা হব। তোমরা কি জান এটা কি জন্য হবে? আল্লাহতায়ালা পূর্বাপর সবাকেই একটি বিস্তৃত ময়দানে একত্র করবেন। তিনি ঘোষণাকারীর ঘোষণা তাদেরকে শুনিয়ে দেবেন। দৃষ্টি তাদের দিকে নিবন্ধ রাখবেন, সূর্য নিকটবর্তী হবে, লোকদের এত দুঃখ ও কষ্ট হবে যে, তা' তাদের সহ্যের সীমার বাইরে যাবে। তারা পরস্পরকে বলতে থাকবে। তোমাদের কি বিপদ উপস্থিত হয়েছে তা' কি তোমরা দেখ না? তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর নিকট কে সুপারিশ করবে, তাকি তোমরা লক্ষ্য করছ না?
তখন একজন অন্যজনকে বলবে, চল, আমরা হযরত আদম (আঃ) এর নিকট যাই। তারা সব একত্র হয়ে হযরত আদম (আঃ)এর নিকট এসে বলবে, আপনি আমাদের আদি পিতা। আল্লাহতায়ালা আপনাকে তাঁর নিজ হস্ত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে তাঁর রূহ থেকে ফুৎকার দিয়েছেন। তাঁরই আদেশে ফিরেশতাগণ আপনাকে সিজদাহ করেছে। অতএব আপনি আপনার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি আমাদের দুরবস্থা দেখতে পাচ্ছেন না? তাদের এ কথার জবাবে হযরত আদম (আঃ) তাদেরকে বলবেন, অদ্য আমার প্রভু এত বেশী ক্রোধান্বিত যে, এর পূর্বে কখনও তিনি এত ক্রোধান্বিত হননি এবং পরেও তিনি কখনও এত ক্রোধান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে বেহেশতে একটি বৃক্ষের নিকট যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর সে আদেশ অমান্য করেছি; সুতরাং আমি এখন নাফসী নাফসী অর্থাৎ আমার নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত আছি।
তারপর তারা সবে মিলে হযরত নূহ (আঃ)এর নিকট এসে বলবে, হে নবী! আপনিই দুনিয়ায় রাসূলদের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা যাকে কৃতজ্ঞ বান্দা বলে নাম দিয়েছেন। অনুগ্রহ করে আপনি আপনার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা যে কি বিপদের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি, অপনি কি তা' প্রত্যক্ষ করছেন না? তখন তিনি বলবেন, অদ্য আমার প্রভুর এত ক্রোধ হয়েছে যে, এর পূর্বে কোনদিন তাঁর এত অধিক ক্রোধ হয়নি। পরেও আর কোনদিন তাঁর এত অধিক ক্রোধ হবে না। আমার উপর তিনি ধর্ম প্রচারের ভার দিয়েছিলেন। আমি তাঁর বান্দাদের বিরুদ্ধে বদ-দোয়া করেছিলাম। সুতরাং আজ আমি ঐ ত্রুটির জন্য অত্যন্ত ভীত আছি এবং নাফসী নাফসী করছি অর্থাৎ আমি নিজেকে নিয়েই এমন ব্যস্ত আছি যে, অন্য কোন কিছু করা আমার জন্য যেমন শোভনীয় নয় তদ্রূপ সম্ভবও নয়। অতএব তোমরা অন্য কারও নিকট চলে যাও; বরং আল্লাহর খাছ বন্ধু ইব্রাহীমের নিকট যেতে পার।
-তখন আল্লাহর বান্দাগণ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, হে আল্লাহর খাছ বন্ধু! আপনি দুনিয়ায় আল্লাহর এক প্রধান নবী এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। আপনি আপনার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখেছেন না যে, আমরা কি কঠিন বিপদে জর্জরিত আছি? তখন তিনি তাদেরকে বলবেন, আজ আমার প্রভু যেরূপ ক্রোধান্বিত আছেন তদ্রূপ ক্রোধান্বিত তাঁকে কেউ কোনদিন দেখেনি এবং কোনদিন দেখবেও না। আমি আমার জীবনে তিনটি মিথ্যা কথা বলেছি; সুতরাং সেই ভয়েই আমি অত্যন্ত সন্ত্রস্ত। আমি আল্লাহর নিকট মুক্তি পাব কি না সেই ভাবনায় অস্থির আছি। এমতাবস্থায় আমার পক্ষে তোমাদের জন্য কিছু করা সম্ভব নয়। তোমরা বরং হযরত মূসার নিকট চলে যাও।
তখন তারা হযরত মূসা (আঃ) এর নিকট গমন করে তাঁকে বলবে, হে মুসা! আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আপনাকে তাঁর রেসালাত এবং সম্মানিত কিতাব দিয়ে মর্যাদাশালী করেছেন। আপনি আপনার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা যে কি কঠিন বিপদাপন্ন তা' আপনি স্বচক্ষেই দেখছেন। তাদের কথার জবাবে হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আল্লাহতায়ালা আজ অত্যধিক ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন। তাঁর সেই ক্রোধের অবস্থা কল্পনা করা যায় না। সম্ভবতঃ কোন দিনই তিনি এরূপ ক্রোধান্বিত হননি আর কোন দিন হবেন কিনা তাও বলা যায় না। তারপর আমি আমার পার্থিব জীবনে একটি লোককে হত্যা করেছি। অথচ তাকে হত্যা করার জন্য আমার প্রতি নির্দেশ ছিল না। এ কারণে আমি নিজেই আজ নাফসী নাফসী করছি। আমি নিজেই আজ এই ঘোর বিপদের দিনে আল্লাহর নিকট মুক্তি পাব কিনা তা' নিয়ে চিন্তায় আছি; সুতরাং আমার দ্বারা তোমাদের জন্য কিছু করা সম্ভব হবে না। তোমরা বরং হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিকট চলে যাও।
তারপর আল্লাহর বান্দাগণ নিরাশ হয়ে হযরত ঈসা (আঃ) এর নিকট গিয়ে উপস্থিত হবে এবং বলবে: হে ঈসা (আঃ)! আপনি আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর বাক্য। 'তিনি তা' হযরত মরিয়মের উদরে নিক্ষেপ করেছেন। আপনি আল্লাহর রূহ। আপনি শৈশবেই মানুষের সাথে জ্ঞানী ব্যক্তির ন্যায় কথা বলে গেছেন। আজ আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ কর আপনি কি আমাদের এই চরম দুর্যোগ ও কঠিন বিপদ প্রত্যক্ষ করছেন না? তখন হজরত ঈসা (আঃ) বলবেন, অদ্য আমি আমারক্রোধান্বি বান্বিত প্রভুর সম্মুখে নিয়ে কোন কথা বলে বলতে পারব না। তাঁর কথা শুনে বান্দাগণ বলবে, দেখুন, হে রাসূল। আল্লাহ আপনাকে তাঁর রেসালাত এবং পবিত্র কিতাব দ্বারা সম্মানিত করেছেন। তদুপরি আপনার এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে; কেননা আল্লাহ আপ পিনার। মাতাকে কোন পুরুষের সংস্পর্শ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র রেখে এক বিশেষ বিধানে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আপনার এই বৈশিষ্ট্যের কারণে নবী-রাসুলদের মন্ত্রের আপনার একটি খাছ মর্যাদা আছে। অতএব আপনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করতঃ আল্লাহর দরবারে আমাদের মুক্তির জন্য একটু চেষ্টা করুন। হযরত ঈসা (আঃ) তাদের কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলে উঠবেন, নাফসী নাফসী। অর্থাৎ হে মাবুদ। আমাকে বাঁচাও হে মাবুদ! আমাকে বাঁচাও। তারপর তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, আজ এ কঠিন দুর্দিনে আমার দ্বারা তোমাদের কোন উপকার হবে না বরং তোমরা হযরত মুহাম্মদ(দঃ)এর নিকট চলে যাও।
এভাবে একজন একজন করে প্রায় সমস্ত প্রধান নবী-রাসুলদের নিকট থেকে নিজেদের মুক্তির জন্য সুপারিশের ব্যাপারে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে অবশেষে তারা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর নিকট গিয়ে দণ্ডায়মান হবে এবং বলবে, হে আখেরী নবী। আপনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাদের দুরবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। সুতরাং আপনার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তাদের অবস্থা দেখে ও কথা শুনে দয়ালু নবীর কোমল হৃদয় আকুল হয়ে উঠবে। সুতরাং তিনি আর কালবিলম্ব না করে তখনই আল্লাহতায়ালার আরশের পাদদেশে পৌঁছে তার প্রভুর দরবারে সিজদায় পতিত হবেন। এবং আল্লাহতায়ালার দুর্দশাগ্রস্ত বান্দাদের জন্য আকুলভাবে ক্রন্দন করতে থাকবেন। তখন আল্লাহতায়ালা তাঁকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে মুহাম্মদ। তুমি তোমার মস্তক উত্তোলন কর এবং আমার নিকট প্রার্থনা কর। তোমার প্রার্থনা কবুল করা হবে।
হুযুরে পাক (দঃ) বলেন, তখন আমি আমার মস্তক উত্তোলন করে বলব, উম্মাতী উন্মাতী অর্থাৎ হে প্রভু! আমার উম্মত, হে প্রভু! আমার উম্মত। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে মুহাম্মদ। তোমার উন্মতের মধ্যে যাদের হিসাব দেয়া লাগবে না তাদেরকে বেহেশতের দক্ষিণ দরজা দিয়ে নিয়ে যাও। তারপর হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, বেহেশতের দুই দরজার দূরত্ব এমন হবে, যেমন মক্কা থেকে হামির বা মক্কা থেকে বছরার দূরত্ব। হাদীস শরীফে আছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর যে, দোষ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, তার প্রথম দোষ তারকা সম্বন্ধে, তাঁর এই কথা যে, এই-ই আমার প্রভু। তাঁর অন্য দোষ তাঁর এই কথা যে, বরং তাদের (মূর্তির) মধ্যে বড়টাকে জিজ্ঞেস কর। অন্য দোষ এই কথা যে, আমি পীড়িত আছি।
হুযুরে পাক (দঃ)এর উম্মতের মধ্যে আলিম এবং সৎলোকগণও শাফায়াত করবেন। এমনকি হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে এক ব্যক্তির শাফায়াতের দরুন রবী এবং মুজার গোত্রের ন্যায় অধিকসংখ্যক লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে। তিনি আরও বলেছেন যে,কোন লোককে বলা হবে যে, হে অমুক ব্যক্তি; উঠ এবং শাফায়াত কর। তখন লোকটি উঠে তার আমল অনুসারে একটি সম্প্রদায়ের জন্য সুপারিশ করবে বা একটি দলের জন্য বা একটি লোকের জন্য সুপারিশ করবে।
হযরত আনাস (বাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যখন পুনরুত্থান হবে, আমিই সর্বপ্রথম (কবর থেকে) বের হব। যখন তাদেরকে উপস্থিত করা হবে, আমিই তাদের মুখপাত্র হব, যখন তারা নিরাশ হবে, আমিই তাদেরকে সুসংবাদ দেব। সেদিন আল্লাহর প্রশংসার নিশান আমারই হাতে থাকবে। আমার প্রভুর নিকট আমিই আদম সন্তানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত হব। এতে কোন অহঙ্কার নেই। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমি মহান ও গৌরবান্বিত আল্লাহর নিকট দণ্ডায়মান থাকব। বেহেশতের একটি পরিচ্ছদ আমাকে পরিধান করানো হবে। আমি আরশের দক্ষিণ দিকে দণ্ডায়মান থাকব। তথায় অন্য কোন লোক থাকবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা হুযুরে পাক (দঃ) এর কতিপয় ছাহাবী বসে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতেছিলেন। অতঃপর তিনি বের হয়ে তাদের নিকটবর্তী হয়ে দেখলেন যে, তারা পরস্পর কথাবার্তা বলছে। তিনি তাদের কিছু কথা শুনলেন। তারা কেউ বললেন যে, বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, মহান প্রভু তাঁর সৃষ্ট জীব থেকে একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু গ্রহণ করেছেন। তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। আর একজন বললেন, হযরত মুসা (আঃ) এর একটা কথা থেকে তা' অধিক আশ্চর্যজনক নয়। আর একজন বললেন, হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর কালেমা ও রূহ। অন্য একজন বললেন, আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আঃ) কে পছন্দ করেছেন। এমন সময় হুযুরে পাক (দঃ) তাঁদের নিকটবর্তী হয়ে বললেন, আমি তোমাদের কথাবার্তা শুনেছি এবং তোমরা যে বিভিন্ন বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করছ তাও শুনেছি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহতায়ালার অন্তরঙ্গ বন্ধু, সত্যিই তিনি তদ্রূপ। হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহর মুক্তি প্রাপ্ত, সত্যিই তিনি তদ্রূপ। হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর কালেমা ও রূই, তিনিও তদ্রূপ। হযরত আদম (আঃ)কে আল্লাহ পছন্দ করেছেন, হাঁ, তিনিও তদ্রূপ। তোমরা লক্ষ্য কর, আমি আল্লাহর হাবীব বা প্রেমাস্পদ। এতে কোন অহঙ্কার নেই। আমিই রোজ কিয়ামতে প্রথম শাফায়াত করব এবং প্রথমেই আমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে, এতে কোন অহঙ্কার নেই। আমিই সর্বপ্রথম বেহেশতের দরজায় খটখটি দেব এবং বেহেশতে প্রবেশ করব। আর আমার সাথে দরিদ্র মুমিনগণ থাকবে। এতে কোন অহঙ্কার নেই। আমিই পূর্বাপর সর্বাপেক্ষা সম্মানিত হব, এতে কোন অহঙ্কার নেই।
0 Comments