মৃত ব্যক্তির অবস্থা সপ্নে প্রকাশ

        হুযুরে পাক (দঃ) দঃ) এর কবর যিয়ারাত তাঁর বাস্তনে স্তবে দেখার অন্তর্গত। তিনি বলেছেন, "ফা মান রায়ানী ফিল মান মানাসি ফাক্বাদ রায়ানী হাজ্বান। ফাইন্নাশ শাইত্বানা লাইয়ামাছছালু রী।" অর্থাৎ স্বপ্নে দেখে সে সে আমাকে সত্যই দেখে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি যে ব্যক্তি ক্তি আমা মাকে স্বপ্নে ধারণ করতে পারে না।

        হযরত ওমর (রাঃ) বলে বলেছেন, আ আমি স্বপ্নে হুযুরে পাক (দঃ)কে দেখলাম। তিনি আমার দিকে লক্ষ্য করছেন না বলে দেখলাম। আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)। আমার অবস্থা কি? তারপর তিনি আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, তুমি রোযার অবস্থায় চুম্বন করনি কি? তিনি বললেন, যার হাতে আমার মার প্রাণ তাঁর শপথ। আমি রোযা থাকাকালীন কখনও কোন স্ত্রীলোককে চুম্বন করব না। হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমি ওমরকে ভালবাসতাম এবং তাকে স্বপ্নে দেখতে আগ্রহান্বিত ছিলাম। প্রায় একবছর অতিক্রমের পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি তাঁর ললাট' মণ্ডল থেকে ঘর্ম মুছতেছেন এবং বলছেন, এখন আমার অবসর সময়। আমি যদি করুণাময় ও দয়ালুর সাথে সাক্ষাৎ না করতাম আমার ক্ষমতার আসন ঝুঁকে পড়ত।

         হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) বলেছেন, আমাকে আমার পিতা বললেন, হুযুরে পাক (দঃ) আমাকে স্বপ্নে সাক্ষাত দান করলে এবং তিনি আমার নিকট আগমন করলে আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উম্মতের হাতে আমার মঙ্গল হল না। তিনি বললেন, তাদের জন্য দোয়া কর। আমি বললাম, হে মাবুদ! তাদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকে এসব অসৎ লোকের পরিবর্তে ক্ষমতা দাও। অতঃপর তিনি শয্যা থেকে উঠে বের হলে ইবনে মূলজেম তাঁকে ছুরিকাঘাত করল। কোন বৃদ্ধ লোক বলেছেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ) কে স্বপ্নে দেখে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি আমার নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। সুফিয়ান ইবনে আইনিয়া, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, কখনও কিছু চেও না। আমি বললাম, চাইব না। তখন হুযুরে পাক (দঃ) আমার নিকট অগ্রসর হয়ে বললেন, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন।

        হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমি আবু লাহাবের ভ্রাতা ও সঙ্গী ছিলাম। যখন তার মৃত্যু হল এবং আল্লাহ তার বিষয় সংবাদ দিলেন, তার জন্য আমি দুঃখিত হলাম এবং তার ব্যাপার আমার নিকট কঠিন বোধ হল। আমি একবছর পর্যন্ত তাকে স্বপ্নে দেখাতে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলাম। তৎপর আমি তাকে দোযখে অগ্নি দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হতে দেখলাম। আমি তাকে তার অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে, সে বলল, আমি দোযখের অগ্নিদ্বারা শাস্তি পাচ্ছি। তার হৃাস নেই, সোমবার রাত্রি ব্যতীত তার বিরাম নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা কেন? সে বলল, সোমবার রাত্রে মুহাম্মদ (দঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উমাইমাহ আমার নিকট এসে আমেনা কর্তৃক তার সন্তান প্রসবের কথা আমাকে জানালে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম এবং আমার একটি দাসীকে মুক্তি দিয়েছিলাম। তার ফলে আল্লাহ আমাকে এই পুরস্কার দিয়েছেন। প্রত্যেক সোমবার রাত্রে আমার নিকট থেকে সাস্তি তুলে নেয়া হয়।

         হযরত আবদুল ওয়াহেদ ইবনে যায়েদ বলেছেন, একদা আমি সালে একটি লোক নিয়ে হজ্জের লক্ষরে রওয়ানা হলাম। লোকটি উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে সর্বদা হুযুরে পাক (সঃ)এর উপর দস্তুদ পাঠ করত। এ বিষয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে, সে বলল, আমি তোমাকে এ বিষয়টি বলছি। আমি প্রথমবারে আমার পিতাসহ মক্কাশরীফ যাত্রা করেছিলাম। আমরা কয়েক মনজিল অতিক্রম করে এক মসজিদে গিয়ে নিদ্রা গেলাম। যখন আমি নিদ্রাভিভূত হলাম, কেউ আমার নিকট এসে বলল, উঠ, আল্লাহ তোমার পিতার মৃত্যু দিয়েছেন এবং তার মুখমণ্ডলকে কৃষ্ণবর্ণ করেছেন। আমি ইচ্ছা করলাম যে, তার মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে তা' দেখি। সত্যি-ই আমি তার মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে দেখলাম যে, তার মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ। তা' দেখে আমার অত্যন্ত ভয় হল, আমি যখন এ বিষয় নিয়ে চিন্তামগ্নছিলাম আমার চোখে আবার তন্দ্রা এল, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। নিদ্রার মধ্যে আমি স্বপ্নযোগে দেখলাম যে, আমার পিতার মস্তকের নিকট চারজন কৃষ্ণকায় ফিরেশতা লৌহমুদার হস্তে দণ্ডায়মান। ইতোমধ্যে সৌম্য প্রশান্ত মূর্তি বিশিষ্ট শ্বেত বস্ত্র পরিহিত এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে ফিরেশতাদেরকে বললেন, তোমরা দূরে সরে যাও। অতঃপর তিনি তাঁর হস্তদ্বারা আমার পিতার মুখমণ্ডল মুছে দিলেন, তারপর আমার নিকট এসে বললেন, ওঠ, আল্লাহ তোমার পিতার মুখ উজ্জ্বল করুন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে মহাত্মন? আমার পিতা মাতা আপনার উপর উৎসর্গ হোক। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মদ। আমি উঠে আমার পিতার মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে ফেললাম। এবার দেখলাম যে, তার চেহারা অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে গেছে। এরপর থেকে আমি কখনই হুযুরে পাক (দঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করতে ভুলিনি।

        হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রহঃ) বলেছেন, আমি একদা স্বপ্নে দেখলাম যে, হুযুরে পাক (সঃ) এর নিকট হযরত আবুবকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) উপবিষ্ট আছেন। আমিও তাঁদের নিকট উপবিষ্ট হলাম। আমার উপস্থিতিতেই হযরত আলী (রাঃ) এবং হযরত মুআবিয়া (রাঃ)কে তথায় আনা হল এবং একগৃহ মধ্যে রাখা হল। তারপর গৃহের দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। আমি দেখলাম যে, হযরত আলী (রাঃ) দ্রুত গৃহ থেকে বের হয়ে এলেন এবং বললেন আমার বিচার করুন। কা'বার প্রভুর শপথ। তার কিছুক্ষণ পর হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বের হয়ে এসে বললেন, কা'বার প্রভুর শপথ, তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) একদা নিদ্রার মধ্যে থেকে বলে উঠলেন, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বললেন, হোসায়েন শহীদ হয়েছে আল্লাহর কসম, এটা তার হত্যার পূর্বেই হয়েছিল। তাঁর সাথীগণ তা' অস্বীকার করলে তিনি বললেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ)কে দেখলাম, তাঁর সাথে এক ফোটা শোনিত। তিনি বললেন, তোমরা কি জান না যে, আমার উম্মতগণ কি করেছে? তারা আমার দৌহিত্র হোসায়েনকে হত্যা করেছে। এই তাঁর ও তাঁর সহচরদের রক্ত। তা' আল্লাহর নিকট উত্তোলন করা হয়েছে। এর চকিাশ দিন পর তার হত্যার সংবাদ এমনি দিনে এল, যে দিন তিনি সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন। হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) কে একবার স্বপ্নে দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আপনি আপনার রসনায় বরাবর যে কথা বলতেছিলেন, তা' সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি বললেন, আমি বললাম যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তারপই আল্লাহ আমাকে বেহেশতে নিয়ে গেলেন।

Post a Comment

0 Comments