কাদের সামনে কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, কেয়ামত খারাপ ও দুষ্ট লোকদের বর্তমানে সংঘটিত হবে। তিনি আরো বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতখন পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহ বলার মত কোন লোক বর্তমান থাকবে। তিনি আরো বলেছেন, এমন কোন মানুষের জীবদ্দশায় কেয়ামত হবে না, যে আল্লাহ আল্লাহ বলে।

                                                                                            (সূত্র: মুসলিম, মেশকাত শরীফ)

        এক হাদীসে আছে, যেহেতু মুসলমানের বর্তমানে কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না, সেহেতু কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে কোন একদিন আল্লাহ তাআ'লা এমন এক বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা মুসলমানদের বগলে লেগে প্রত্যেক মুসলমানের প্রাণহানি ঘটবে। তখন দুনিয়ায় শুধু খারাপ ও দুষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। যারা (জনসম্মুখে প্রকাশ্যভাবে) নিলজ্জভাবে গাধার ন্যায় নারীদের সাথে ব্যভিচারি করবে।

(সূত্র: তিরমিযী; মেশকাত শরীফ)

 কেয়ামতের দিন স্বীয় পিতার নাম ধরে ডাকা হবে

        হযরত আবি দারদা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামসহ তোমাদের নাম ধরে ডাকা হবে। (অর্থাৎ হে খালেদের পুত্র আবদুল্লাহ বলে ডাকা হবে।) সুতরাং তোমরা ভাল নাম রাখবে।

                                                                                                        (সূত্র: আবু দাউদ, আহমদ শরীফ)

        সমাজে কথিত আছে যে, কেয়ামতের দিন মাতার নাম উল্লেখসহ ডাকা হবে। একথা ঠিক নয় বরং মনগড়া কথা। ইমাম বোখারী (র:) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে 'পিতার নামে ডাকা হবে' এ শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করে বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, কেয়ামতের দিন পিতার নাম উল্লেখ করেই ডাকা হবে। মুয়ালিমুত তানযীল' গ্রন্থে মাতার নাম উল্লেখ করে ডাকার তিনটি কারণ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এসব কথা তার নিজস্ব ও মনগড়া, শুধু সমাজে প্রচলিত থাকার কারণে লেখা হয়েছে। গ্রন্থকার তিনটি কারণ উল্লেখের পর লিখেছেন যে, এ কথার বিপরীতে বিশুদ্ধ হাদীস বর্তমান। সুতরাং হাদীসের বিপরীত এবং ভিত্তিহীন কথা গ্রহণ করা যায় না।

কেয়ামতের দিনখন কাউকেউ জানান হয়নি

         কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে, তা একমাত্র আল্লাহ তাআ'লাই জানেন। তিনি ছাড়া কোন প্রাণীই তা অবগত নয়। কোরআন মজীদে শুধু বলা হয়েছে যে, কেয়ামত হঠাৎ সংঘটিত হবে। কিন্তু তার নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে অবগত করান হয়নি। কোন এক সময় হযরত জিবরীল (আ) মানবরূপে আগমন করে সমবেত লোকজনের সম্মুখে নবী করীম (স:)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে। প্রত্যুত্তরে নবী করীম (স:) বললেন, এ ব্যাপারে যার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকর্তার তুলনায় বেশী কিছু অবগত নয়। অর্থাৎ এ ব্যাপারে আমি এবং তুমি উভয়ই সমান। তা সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে আমার যেমন কোন ধারণা নেই, তেমনি তোমারও নেই।

        একবার লোকেরা যখন নবী করীম (স:)-এর নিকট কেয়ামত কখন হবে জিজ্ঞেস করলো, তখন আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে আদেশ এল: "আপনি ঘোষণা করে দিন, এ বিষয়ে একমাত্র আমার প্রতিপালকই জানেন। তার সময় আল্লাহ তাআ'লা ছাড়া কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। তখন আকাশ ও পৃথিবীতে বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হবে। তা তোমাদের কাছে হঠাৎ উপস্থিত হবে। তারা কেয়ামত সম্পর্কে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে, মনে হয় যেন আপনি সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করেছেন। আপনি বলুন, কেয়ামত হওয়ার সময় সম্পর্কে একমাত্রা আল্লাহ তাআ'লাই জ্ঞাত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।"

(সূত্র: সূরা আরাফ ২৩ রুকু)

কেয়ামত হঠাৎ অনুষ্ঠিত হবে

            কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন: "বরং কেয়ামত তাদের কাছে হঠাৎ উপস্থিত হবে এবং তাদেরকে জ্ঞানহারা করবে। তখন তা প্রতিহত করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না। এবং তাদেরকে (ঈমান আনার জন্য) কোন অবকাশও দেয়া হবে না।"

(সূত্র: সূরা আম্বিয়া-৩য় রুকু)

        এ আয়াত এবং এর পূর্ববর্তী আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে, কেয়ামত হবে হঠাৎ। রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, কেয়ামত এমন অবস্থায় সংঘটিত হবে যে, তখন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য কাপড় খুলে দেখাশুনা করতে থাকবে। তখনো তা ক্রয় বিক্রয়ের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করে কাপড় ভাঁজ করতে পারেনি। ইতিমধ্যে হঠাৎ কেয়ামত সংঘটিত হবে। অতঃপর নবী করীম (স:) বলেন, কেয়ামত অবশ্যই এমন অবস্থায় হবে যে, এক লোক তার উটের দুধ দোহন করে ফিরতে থাকবে, কিন্তু এখনও তা পান করেনি। কেয়ামত এমন অবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে যে, মানুষ তার হাউজ মেরামত করতে থাকবে, কিন্তু এখনো পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারেনি। এমন অবস্থায় হঠাৎ কেয়ামত সংঘটিত হবে যে, মানুষ আহারের জন্য গ্রাস তুলবে কিন্তু তখনও তা মুখে নিতে পারেনি।         (সূত্র: বোখারী মুসলিম, মেশকাত শরীফ)

        অর্থাৎ বর্তমান যুগে মানুষ কাজ-কারবারে খুবই ব্যস্ত থাকে। এমনিভাবে কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিনেও মানুষ দৈনন্দিন কাজ-কারবারের মধ্যে খুব ব্যস্ত থাকবে, তখন হঠাৎ কেয়ামত সংঘটিত হবে।

        যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিনটি হবে শুক্রবার। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমআ'র দিন। এ দিনেই হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ দিনই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান হয়েছে, এ দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। আর এ জুমআ'র দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে।

(সূত্র: মুসলিম, মেশকাত শরীফ)

        আর এক হাদীসে আছে; রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, জুমআ'র দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। আল্লাহ তাআ'লার নিকটবর্তী প্রত্যেক ফেরেশতা এবং নভমণ্ডল ভূমণ্ডল, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র এরা সবই জুমআ'র দিনকে ভয় করে। কারণ তারা মনে করে, হয়ত আজই কেয়ামত হয় নাকি।     (সূত্র: ইবনে মাজাহ শরীফ)

Post a Comment

0 Comments