চোগলখোরী ও কান কথা শাস্তি কী

         রসনার ষষ্ঠদশ বিপদঃ চোগলখোরী ও কান কথাঃ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যারা চোগলখোরী করে, কানকথা বলে বেড়ায়। তারপর তিনি বলেছেন, দুশ্চরিত্র তদুপরি অবৈধজাত। 

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) বলেছেন, আয়াতের "ধানীস" শব্দের অর্থ অবৈধজাত বা জারজ সন্তান, যে কথা গোপন করে না। এতে দেখা যায়, যে ব্যক্তি কথা গোপন করে না এবং কানকথা লাগিয়ে বেড়ায়, তাকে জারজ সন্তান বলে বুঝা যায়। এটা আল্লাহতায়ালার উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ বলেন, "প্রত্যেক অপবাদকারী নিন্দুকের জন্য আক্ষেপ (ওয়াইলুল্লিকুল্লি হুমাযাতিন) হুমাযাতিন এর অর্থ করা হয়, যে কানকথা লাগায় বা কূটনামী করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, "হাম্মালাতাল হাতাব" অর্থাৎ অগ্নির ইন্ধন বহনকারিণী, কূটনামীকারী কথা নিয়ে বেড়ায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, "ফা খানাতা হুমা ফালাম ইয়ুগনিয়া আনহুমা মিনাল্লাহি শাইয়া" অর্থাৎ তারা তাদের উভয়ের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিল। সুতরাং আল্লাহর সমীপে তাদের নিকট থেকে তারা কোনই উপকার পায়নি। এ আয়াত হযরত লুত (আঃ) এর স্ত্রী এবং হযরত নূহ (আঃ) এর স্ত্রী সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। হযরত লূত (আঃ) এর নিকট যখনই কোন অতিথি আসত, তখনই তার স্ত্রী লোকদেরকে এই সংবাদ দিত তারা এ সংবাদ পেয়ে ঐ অতিথির সঙ্গে কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করত। হযরত নূহ (আঃ) এর স্ত্রী লোকদের নিকট বলত যে, নূহ (আঃ) বিকারগ্রস্ত পাগল। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, কুটনামীকারী চোগলখোর বেহেশতে যাবে না। অন্য হাদীসে আছে, চোগলখোর বেহেশতে যাবে না।

        তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ঐ ব্যক্তিগণ যারা তোমাদের মধ্যে স্বভাবে চরিত্রে সর্বাপেক্ষা উত্তম। যাদের পার্শ্ব কোমল, যারা ভালবাসে এবং ভালবাসা পায়। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ঐ লোকগণ, যারা কানকথা নিয়ে এদিক-ওদিক বেড়ায়। তারা বন্ধুদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে, যারা ধার্মিক লোকদের দোষ অন্বেষণ করে বেড়ায়। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট লোকদের সংবাদ বলে দেব না? ছাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। তা' বলে দিন। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, যারা কূটনামী করে বেড়ায়, যারা বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং যারা সৎলোকের দোষের সাথে মিথ্যা সংযোগ  করে বেড়ায়।

         হুযুরে পাক(দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে অপমান করার জন্য কোন কথার ইশারা করে, আল্লাহতায়ালা রোজ কিয়ামতে তজ্জন্য তাকে দোযখের অগ্নির মধ্যে অপমান করবেন। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে দুনিয়ায় অপমান করার জন্য কোন বাক্য ব্যবহার করে, তাকে রোজ কিয়ামতে তজ্জন্য লোভলাক্সিতে সন্ত কথা আল্লাহতায়ালার কর্তব্য হয়ে পড়বে।


         তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমানের বিরুদ্ধে এমন সাক্ষ্য দেয় যা সত্য নয় তবে সে যেন  তার স্থান দোযখে তালাস করে। বুযর্গগণ বলেছেন যে, এই কূটনীতির  জন্যই কবরের তিন ভাগের একভাগ শাস্তি হবে। তিনি আরও বলেছেন, যখন আল্লাহতায়ালা বেহেশত সৃষ্টি করলেন, তিনি তাকে বললেন, আমার সাথে কথা বল। তখন বেহেশত বলল, যে আমার মধ্য প্রবেশ করবে সে সৌভাগ্যবান। তখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বললেন, আমার গৌরবের ও মাহাত্ম্যের কসম, তোমার মধ্যে আট শ্রেণীর লোক স্থান পাবে না। যথাঃ (১)  মাতাল (২) জীবনভর ব্যভিচারী (৩) কূটনামীকারী, যে একের কথা অন্যের কাছে লাগায় (৪) দাইয়ুস যে স্বীয় স্ত্রী ও কন্যার ব্যভিচারে বাধা দেয় না (৫) অত্যাচারী (৬) ব্যভিচারী হিজরা বা নপুংসক (৭) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী এবং (৮) যে ব্যক্তি আল্লাহর শপথ করে বলে, অমুক কাজ করব, অথচ সময়ের কালে সে তা' করে না। অর্থাৎ ওয়াদা খেলাপকারী।

         হযরত কা'ব আহবার (রহঃ) বলেছেন, বনুইস্রাইলদের মধ্যে একবার ভীষণ মুর্ভিক্ষ ও হয়েছিল। তখন হযরত মুসা (আঃ) বহুবার আল্লাহর নিকট বৃষ্টিপাতের জন্য প্রার্থনা করলেন কিন্তু বৃষ্টিপাত হল না। তারপর আল্লাহতায়ালা তাঁর নিকট অহী পাঠালেন, তোমাদের মধ্যে কূটনামীকারী এক ব্যক্তি রয়েছে। সে সর্বদা একের কথা অন্যের কানে লাগায়। এজন্য তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব না। তখন হযরত মুসা (আঃ) বলদে বলেন, হে ব্য আমি হ প্রভু! সে ব্যাজ আমাকে দেখিয়ে দাও। তাকে আমি আমাদের মধ্য থেকে বের করে দেবে। আল্লাহতায়ালা বললেন, হে মুসা। আমি তোমাদেরকে চোগলী করতে নিষেধ করছি। আমি নিজে। ফিরাপে চোগলী করব। তখন হযরত মুসা (আঃ) তাঁর দলের সবাইকে নিয়ে তাওবাহ করলেন, তারপর আল্লাহর রহমতে তাদের উপর বারিপাত হল। 

        আল্লাহ কথিত আছে যে, এক ব্যক্তি এক বুযর্গ দরবেশের সন্ধানে সাতশ ক্রোশ অতিক্রমের। পর তাঁকে পেয়ে তাঁর নিকট সাতটি প্রশ্ন করেছিল। সে তাঁর নিকট এসে বলল, দেখুন, আপনাকে বহু জ্ঞান দান করেছেন, বলুন ত (১) কোন বস্তু আকাশের চেয়ে ভারী? (২) কোন বস্তু দুনিয়ার চেয়ে অধিক প্রশস্ত। (৩) কোন বস্তু প্রস্তর অপেক্ষা। 'কঠিন? (৪) কোন বস্তু আগুন অপেক্ষা উত্তপ্ত? (৫) কোন বস্তু বরফ। অপেক্ষা শীতল? (৬) কোন ব্যাক্ত সমুদ্র অপেক্ষা ধনী? (৭) কোন ব্যক্তি ইয়াতীম অপেক্ষাহীন।

         তখন উক্ত দরবেশ তাঁকে বললেন, (১) নির্দোষ লোকের অপবাদ  আকাশ অপেক্ষা ভারী।(২)  সত্য দুনিয়া অপেক্ষা প্রশস্ত (৩) সন্তুষ্ট চিত্ত সমুদ্র অপেক্ষা  ধনী  (৪)   লোভ ও ঈর্ষা অগ্নি  অপেক্ষাও উত্তপ্ত (৫) আত্মীয় স্বজনের অভাব যে মোচন করেনা তার হৃদয় বরফ অপেক্ষাও শীতল। (৬) কাফিরের হৃদয় প্রস্তর অপেক্ষা কঠিন। (৭)    ঠগবাজের কার্য যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন সে  ইয়াতীম অপেক্ষাও হীন হয়ে যায়।

Post a Comment

0 Comments