হযরত ইস্রাফীল (আ)-এর শিংগায় ফুঁকের দ্বারা কেয়ামতের সূচনা হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, সূর হচ্ছে একটি শিংগা, যাতে ফুঁক দেয়া হবে।
(সূত্র: তিরমিযী শরীফ)
নবী করীম (স:) আরও বলেছেন, শিংগায় ফুঁক দানকারী ফেরেশতা যখন শিংগায় ফুঁক দেয়ার জন্য তা মুখে নিয়ে অপেক্ষমাণ, তখন আমি মৃত্যুর পর কিভাবে জীবন অতিবাহিত করব? ফেরেশতা তো শিংগায় মুখ লাগিয়ে এবং কান পেতে ও মাথা অবনত করে অপেক্ষায় রয়েছে যে, কখন ফুঁকের নির্দেশ দেয়া হয়?
(সূত্র: তিরমিযী, মেশকাত শরীফ)
কোরআন মজীদে শিংগাকে নাকুর নামে অভিহিত করে বলা হয়েছে:
"অতএব যখন নাকুরে (শিংগায়) ফুঁক দেয়া হবে, তখন সেদিনটি হবে কাফেরদের জন্য খুবই কঠিন। সেদিনটি তাদের জন্য কিছু মাত্রও সহজ ও আরামপ্রদ হবে না।"
(সূত্র: সূরা মুদ্দাসসির ১ম রুকু)
কোরআন মাজীদের অন্য এক সূরায় আল্লাহ তাআ'লা বলেন: "শিংগায় ফুঁক দেয়া হলে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যত প্রাণী রয়েছে তারা সবাই অচেতন হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে চান (সে হবে না)। অত:পর দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুঁক দেয়া হলে, সমস্ত মানুষ হঠাৎ উঠে দাঁড়াবে এবং দেখতে থাকবে।"
(সূত্র: সূরা যুমার, ৭ম রুকু)
কোরআন মাজীদ ও হাদীসে দু'বার শিংগায় ফুঁক দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথমবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হলে সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে চান সে বেহুঁশ হবে না। তারপর জীবিত সবার মৃত্যু হবে। আর পূর্বে যারা মারা গেছে, তাদের আত্মা অচেতন হয়ে পড়বে। এরপর দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুঁক দেয়া হলে মৃতদের দেহে প্রাণের সঞ্চার হবে এবং যার বেহুঁশ ছিল তাদের বেহুঁশী দূর হয়ে চেতনা ফিরে আসবে।
(সূত্র: বয়ানুল কোরআন)
এ সময় সমস্ত মানুষ বিস্ময়কর ও অলৌকিক অবস্থা দেখে কিংকর্তব্য বিমূর হয়ে তাকিয়ে থাকবে। আর আল্লাহ তাআ'লার দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য খুব দ্রুত চলতে থাকবে। আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন: "আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন সহসা তারা কবর হতে উঠে স্বীয় প্রতিপালকের দিকে দ্রুত পথ চলতে থাকবে। তখন তারা বলবে, হায়। আমাদের দুর্ভাগ্য। কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠাল। প্রত্যুত্তরে বলা হবে, যা কিছু ঘটেছে তা পরম দয়ালু সত্তার প্রতিশ্রুতি, আর নবী-রাসূলগণ সত্য সংবাদই দিয়েছিলেন। অত:পর হঠাৎ এক ভয়ংকার আওয়াজ হবে, এমনি সময়ে তাদের সকলকে আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে।"
(সূত্র: সূরা ইয়াসীন, ৪র্থ রুকু)
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স:) প্রথম এবং দ্বিতীয়বারের ফুঁকের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যাপারে চল্লিশ সংখ্যার কথা বলেছেন। সমবেতগণ আবু হোরায়রা (র)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, চল্লিশ দ্বারা কি চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর বুঝানো হয়েছে। প্রত্যুত্তরে হযরত আবু হোরায়রা (রা) নিজের অজ্ঞতার কথা প্রকাশ করে বলেন, আমি জানি না (স্মরণ নেই) যে, নবী করীম (সঃ) চল্লিশ দিন বলেছেন, না চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বছর বলেছেন?
দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুঁক দেয়ার পর আল্লাহ তাআ'লা আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করবেন। যার ফলে মানুষ কবর থেকে অনুরূপভাবে উত্থিত হবে যেমন মাটি হতে শাক-সবজী গজিয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, মানব দেহের প্রতিটি অংশও যদি বিগলিত হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়, কিন্তু একটি হাড়ও অবশিষ্ট থাকে, তবে কেয়ামতের দিন এ হাড়কে ভিত্তি করেই মানব দেহ গঠিত হবে। সে হাড়টি হচ্ছে মেরুদণ্ডের হাড়। (সূত্র: বোখারী, মুসলিম শরীফ)
কোরআন মাজীদের সূরা যুমারের এক আয়াতে বলা হয়েছে যে, শিংগায় ফুঁক দেয়ার কারণে সমস্ত প্রাণী বেহুশ হয়ে পড়বে, কিন্তু যাকে আল্লাহ চান সে হবে না। এ প্রসঙ্গে তাফসীরকারকদের কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়।
কেউ বলেছেন, শহীদগণের বেহুঁশ না হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছেন। কেউ বলেছেন, হযরত জিবরাঈল, মিকাঈল, ইস্রাফীল ও আজরাঈল (আ)-এর বেহুঁশ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ আরশবাহী ফেরেশতাগণকে এর অন্তভূক্ত করেছেন। কুরআন মজীদের আয়াত:
অর্থাৎ- "আজ কার রাজত্ব। আজ রাজত্ব তো একক ও পরাক্রমশালী আল্লাহর।"
(সূত্র: সূরা মুমিন- আয়াত- ১৬)
আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মুয়ালেমুত তানযীল গ্রন্থকার লিখেছেন, সমস্ত প্রাণী ধ্বংস হওয়ার পর যখন আল্লাহ তাআ'লা বলবেন, আজ রাজত্ব কার? তখন এর উত্তর দেয়ার কেউ-ই থাকবে না। তখন আল্লাহ তাআ'লা নিজেই উত্তর দেবেন যে, আজকের রাজত্ব হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর, যিনি একক ও পরাক্রমশালী। অর্থাৎ আজ একমাত্র সে মহান আল্লাহ তাআ'লারই রাজত্ব ও শাসন বিদ্যমান। যার সম্মুখে সমস্ত শক্তি আজ পরাভূত, পার্থিব সমস্ত রাজত্ব ও সাম্রাজ্য তখন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন, নবী করীম (স:) বলেছেন, নি:সন্দেহে কেয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তাদের সাথে আমিও হুঁশহারা হব। অনন্তর সর্বাগ্রে আমারই বেহুঁশী দূর হবে। তখন হঠাৎ আমি দেখতে পাব যে, হযরত মুসা (আ) আল্লাহ তাআ'লার আরশ ধরে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না তিনি কি বেহুঁশ হয়ে আমার পূর্বেই জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন, না আদৌ জ্ঞান হারান নি। যেমন আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন, যাদের বেলায় অল্লাহ চান, তারা বেহুশ হবে না।" (সূত্র: বোখারী, মুসলিম শরীফ)
সৃষ্টিকূল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়া
হযরত ইস্রাফীল (আ)-এর শিংগা ফুঁকের কারণে শুধু জীবিতগণই প্রাণ হারাবে না বরং সৃষ্টিকুলের সমস্ত ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে তা ধ্বংসে পরিণত হবে। আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হবে, তারকারাজি খসে এবং আলোহীন হয়ে পড়বে। আর চন্দ্র সূর্যের আলোও বিলুপ্ত হবে। সমস্ত পৃথিবী সমতল ভূমিতে পরিণত হবে এবং পাহাড়গুলো নিজ নিজ স্থান হতে উড়ে গিয়ে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে। কোরআন ও হাদীসের নিম্নলিখিত বর্ণনাসমূহ দ্বারা এটাই প্রতিভাত হয়।
0 Comments