মৃত্যুর পরিচয় কি

        প্রিয় পাঠক- পাঠিকা! জেনে রাখ যে, মৃত্যু সম্বন্ধে নানাজনের নানা মত রয়েছে। অনেক ব্যক্তি। মৃত্যু সম্বন্ধে নানারূপ অলীক ধারণা এবং ভ্রান্ত মত পোষণ করে। কেউ মনে করে যে, মৃত্যুই সব কিছু ধ্বংস এবং শেষ করে দেয়। কিয়ামত ও পুনরুত্থান কোন কিছুই নেই। ভাল ও মন্দের কোন পরিণাম ফলও নেই; বরং মানুষের মৃত্যু ঠিক পশুর মৃত্যুর ন্যায় এবং তরু-লতা ও উদ্ভিদের মৃত্যুরে ন্যায়। এটা নাস্তিক কাফিরদের মত। যারা আল্লাহতায়ালাকেও আখেরাতকে বিশ্বাস করে না তারাই একথা বলে। আর একদল লোক ধারণা করে যে, মৃত্যু দ্বারা মানুষ বিনাশ হয়ে যায় এবং কবরে অবস্থান থেকে হাশরের দিন পুনরুত্থান পর্যন্ত তার কোন শাস্তি বা পুরস্কার হবে না। অন্য একদল লোক ধারণা করে যে, মানবাত্মা বাকী থাকে, মৃত্যুতে তার অবসান হয় না এবং যে শান্তি বা পুরস্কার হবে তা' সবই আত্মার উপর হবে। কোন কিছুই শরীরের উপর হবে না। শরীরের পুনর্গঠন বা পুনরুত্থান হবে না। এমন কি রোজ হাশরেও শরীরও আত্মা একত্র হবে না, জেনে রাখবে এসবই ভ্রান্ত মত এবং সত্য  থেকে বহু দূরবর্তী।

        মৃত্যুর অর্থঃ অভিজ্ঞতার আলোকে এবং কুরআন ও হাদীসের সাক্ষ্যে যা' জানা যায় তাহল, মৃত্যুর অর্থ অবস্থার পরিবর্তন মাত্র। আত্মা শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পর শাস্তি ও পুরস্কার পেয়ে থাকে। শরীর থেকে আত্মার পৃথক হওয়ার অর্থ শরীরের উপর থেকে আত্মার আধিপত্য চলে যাওয়া। শরীর আত্মার আধিপত্য থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হওয়া। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আত্মার হাতিয়ার। আত্মা নিজের কার্যে তা' ব্যবহার করে। এমন কি আত্মা হস্ত দ্বারা ধরে, কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করে, চক্ষু দ্বারা দেখে, হৃদয় দ্বারা সকল বস্তুর পরিচয় জ্ঞান লাভ করে। এখানে হৃদয়ের অর্থ রূহ। রূহ বা আত্মা কোন হাতিয়ার ব্যতীতই স্বয়ং সকল বস্তুর প্রকৃত তত্ত্ব জানতে পারে। এজন্যই আত্মা নিজেই নানাবিধ দুঃখ যন্ত্রণা ও কষ্ট ভোগ করে। এবং সকল প্রকার আনন্দ ও সুখ অনুভব করে। এসব সুখ ও দুঃখের সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক নেই। আত্মা যে সব গুণে গুণান্বিত শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পরও তার সে গুণগুলো বজায় থাকে, তবে যে বিষয়গুলো সাথে সম্পৃক্ত, শরীর থেকে মৃত্যুর সাথে তা' চলে যায় যে পর্যন্ত না পুনরায় শরীরের শরীরের সাথে মধ্যে চলে আসে।

        কবরের মধ্যে আত্মার শরীরে প্রে প্রবেশ করা কোন কষ্টকর ব্যাপার নয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাতে বিলম্ব করাও কষ্টকর নয়। তার এর কোন বান্দার উপর কি বিধান রয়েছে। রয়েছে তা' শুধু আল্লাহতায়ালাই ও অনুভূতি উত্তম অবগত। মৃত্যুর দ্বারা শরীর কর্মশূন্য ও অনুভূতি শূন্য হওয়া ঐ অঙ্গের কর্ম ও। শূন্য হওয়ার ন্যায় যা' কোন কঠিন রোগের কারণে কর্মশূন্য ও অনুভূতিশূন্য হয়ে যায়। এ য়। এতে আত্মা শরীরের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না; বরং আত্মার জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা শক্তি আত্মার মধ্যেই থেকে যায়। কোন কোন অঙ্গের দ্বারা আত্মা তার কার্য উদ্ধার করে এবং কোন কোন অঙ্গ কখনও আত্মার অবাধ্য হয়। মৃত্যুর অর্থ শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আত্মার নেয় অবাধ্য হওয়া। প্রত্যেক অঙ্গই এক একটি হাতিয়ার বিশেষ এবং আত্মা তদ্দ্বারা কার্যোদ্ধার করে। আমি রূহ বা আত্মা দ্বারা ঐ বস্তু বুঝি যা মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আনন্দ, দুঃখের যন্ত্রণা ও সুখের আনন্দ আস্বাদন করে। যখন আত্মার আধিপত্য অঙ্গ-প্রত 'সের উপর ব্যবহৃত হয়, তখন জ্ঞান এবং সুখ-দুঃখের অনুভূতি চলে যায় না; বরং তা' থেকে যায়। মানুষের প্রকৃত অর্থ ঐ আত্মা যা' জ্ঞান, সুখ ও দুঃখ অনুভব করে। তার মৃত্যু নেই। অর্থাৎ তার বিলোপ নেই। মৃত্যুর অর্থ শরীর থেকে আত্মার বিচ্ছেদ এবং শরীর আত্মার হাতিয়ার হওয়া থেকে বের হয়ে যাওয়া, যেরূপ হস্ত অবশ হওয়ার অর্থ হস্ত কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে বের হয়ে যাওয়া। মৃত্যুর অর্থ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবসন্নতা ও অবসাদগ্রস্ততা। মানুষের প্রকৃত পরিচায়ক তার আত্মা, মৃত্যুর পরেও তা থেকে যায়। 

        মৃত্যুতে অবস্থা পরিবর্তনের দুটো কারণঃ দুটো কারণে মৃত্যুতে অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রথম কারণ এই যে, তার নিকট থেকে তার চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, রসনা, হস্ত-পদ এবং অন্যান্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিনিয়ে নেয়া হয় (অর্থাৎ তাদের কার্যকরী শক্তি নষ্ট করে দেয়া হয়)। তার নিকট থেকে তার সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন এবং সমস্ত পরিচিত লোককে বলপূর্বক দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার নিকট থেকে তার অশ্ব, জীব-জন্তু, চাকর-বাকর, ধন-সম্পদ এবং অন্যান্য সমস্ত বস্তু অপহরণ করা বা এসব বস্তু থেকে মানুষকে অপহরণ করার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। এই অবস্থার অর্থ-বিচ্ছেদ এবং এই বিচ্ছেদ কখনও মানুষের সব কিছু অপহরণ বা লুণ্ঠন দ্বারা ঘটানো হয় এবং কখনও এসব থেকে মানুষকে অপহরণ করার মাধ্যমে ঘটানো হয়।

         মৃত্যুর অর্থ মানুষকে তার ধন-সম্পদ থেকে পৃথক করে অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়া। এমন দুনিয়া যার সাথে এই দুনিয়ার কোন তুলনা হয় না, যদি এই দুনিয়ায় তার কোন বস্তু থাকে, সেই বস্তুর সাথে তার প্রীতির বন্ধন থাকে, তা' পেয়ে সে আনন্দ লাভ করে। মৃত্যুর পর তার জন্য তার দুঃখ হয়, তার বিচ্ছেদে অত্যন্ত দুঃখ ও ক্লেশ পেতে হয়। তার মন তার প্রত্যেক ধন- সম্পদের দিকে, তার নাম-ধামের দিকে এবং তার অন্যান্য বিষয়-সম্পত্তির দিকে। এমন কি সে যে জামাটি ব্যবহার করেছিল, তার দিকেও সে লক্ষ্য করে তবে যদি সে আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অন্য কোন বস্তুতে আনন্দ না পেয়ে থাকে এবং আল্লাহর সাথে প্রীতি স্থাপন ব্যতীত সে অন্য কোন বস্তুর সাথে প্রীতি স্থাপন না করে থাকে, তবে তার সৌভাগ্য পূর্ণ হবে। কেননা তার অন্য বস্তুর দ্বারা কোন প্রয়োজন ছিল না, সেই অপ্রয়োজনীয় বস্তুর সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে, সে জানত যে, দুনিয়ার এসব বস্তু মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে। সুতরাং এরূপ ব্যক্তির মৃত্যু বা দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণে তার জন্য কোনরূপ দুঃখ-ক্লেশের কারণ নেই; বরং তা' তার জন্য আনন্দের বিষয়।

        যা' মানুষের নিকট পার্থিব জীবনে প্রকাশ পায়নি, মৃত্যু ঘটনা দ্বারা তা' তার নিকট প্রকাশ পায়, যেরূপ নিদ্রিত ব্যক্তির নিকট যা' প্রকাশ পায় না। জাগ্রত ব্যক্তির নিকট তা' প্রকাশ পায়। মানুষ সবই নিদ্রিত, মৃত্যুতে তারা জাগ্রত হয়। প্রথমেই তার নিকট তার অনিষ্টকারী বস্তু পাপ বা তার উপকারী বস্তু পুণ্য প্রকাশ পায়, তার আমলনামায় সে সব লিপিবদ্ধ থাকে, তা' তার আত্মার গুপ্ততত্ত্বের মধ্যে অবস্থিত থাকে। দুনিয়ার কর্মব্যস্ততা তার অনুসন্ধানে তাকে বিমুখ করে রাখে। যখন এসব কর্মব্যস্ততা কর্তিত হয়ে যায়, তার সমস্ত আমল তার নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন তার পাপের দিকে লক্ষ্য করে তার এত দুঃখ হয় যে, তা' থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে অস্থির হয়ে যায়। এই অবস্থায় তাকে বলা হতে পারে যে, অদ্য তোমার আত্মাই তোমার হিসাব- নিকাশের পক্ষে যথেষ্ট। যেমন কুরআনে পাকে রয়েছেঃ 'কাফা বিনাফসিকাল ইয়াওমু আলাইকা হাসীবা'। আত্মা পৃথক হওয়ার সময় এবং দাফনের পূর্বে তা' প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন বিচ্ছেদের অগ্নি তাকে ব্যস্ত রাখে অর্থাৎ এই অস্থায়ী দুনিয়ায় যে সব বস্তু তার প্রিয় ছিল তা' থেকে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা উপস্থিত হয়। তবে এ দুনিয়ায় থাকাকালে সে যে প্রয়োজনীয় সম্বল মঞ্জিলে মকছুদে পৌছার জন্য সংগ্রহের ইচ্ছা করেছিল সে যন্ত্রণা ভোগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি মঞ্জিলে মকছুদে পৌছার জন্য আবশ্যকীয় অন্বেষণ করে এবং যখন সে মঞ্জিলে মকছুদে পৌঁছে যায়, সে অবশিষ্ট সম্বল থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার সময় আনন্দিত হয়, কেননা সে কেবল সম্বলের জন্যই সম্বল অন্বেষণ করেনি। যে অতি প্রয়োজনীয় পরিমাণ বস্তু ব্যতীত দুনিয়া থেকে অন্য কিছু গ্রহণ করে না। সে চায় যে, এই প্রয়োজনও যেন তার না থাকে, যেন সে অভাব বোধ না করতে পারে। সে যা' চেয়েছে তাই সে পেয়েছে এবং যা' তার প্রয়োজন ছিল না তা' সে চায়নি। এই প্রকার অতিরিক্ত বস্তু থেকেও নানাবিধ শাস্তি এবং ভীষণ যন্ত্রণা দাফনের পূর্বে তাকে আক্রমণ করে।

         তারপর দাফনের পর তার আত্মাকে শরীরের মধ্যে ফিরিয়ে দেয়া হয়, যেন অন্য প্রকার শাস্তি সে ভোগ করতে পারে। কোন কোন সময় তা' ক্ষমাও করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি দুনিয়ার সুখ-শান্তি সম্বন্ধে ব্যস্ত থাকে তার অবস্থা ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে কোন সম্রাটের বিশাল রাজ্যে চলে যাওয়ার সময় তার গৃহে আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকে এবং আশা করে যে, তার রাজত্ব তার নিকট ফিরে আসবে অথবা সে যে মন্দ কাজে লিপ্ত আছে তা' কেউ জানবে না। কিন্তু সম্রাট তাকে অকস্মাৎ ধরে ফেলে এবং তার অসৎকার্যের তালিকা তার নিকট উপস্থিত করে। উক্ত তালিকায় তার সমস্ত অসৎকার্য পুংখানুপুংখভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। সম্রাট তজ্জন্য তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। যে ব্যক্তিই তার রাজ্যের মধ্যে অপরাধ করে সে তার শাস্তি বিধানে তৎপর ও কঠোর হয়। এই অপরাধের দণ্ড মওকুফে সে কারও সুপারিশ গ্রহণ করে না।

        এখন এই ধৃত ব্যক্তির অবস্থার দিকে লক্ষ্য কর। তার উপর শান্তি আসার পূর্বেই সে কিরূপ ভয়, অপমান, অনুতাপ ও দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে। যে ব্যক্তি পাপী ছিল, দুনিয়ায় সুখ-সম্পদে মন্ড ছিল, কবরে তার শান্তি পাওয়ার পূর্বে বরং তার মৃত্যুর সময় তারও এই অবস্থা হয়। আমরা তা' থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। কেননা অপমান, লজ্জা, শরীরের উপর প্রহার, তা' কর্তিত হওয়া ইত্যাদি সমস্ত শান্তি থেকে অধিক। মৃত্যুর সময় মুমূর্ষু ব্যক্তি যা' দেখতে পায় তার অবস্থার এটা ইঙ্গিত মাত্র। অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি তার অন্তরের অবস্থা যা' দর্শন করে তা' তার চক্ষুর দৃষ্টি থেকে অধিক তীব্র। তা' কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে। সত্য বটে যে, মৃত্যুর প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণরূপে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। কেননা যে জীবনের অর্থ বুঝে না দে মৃত্যুর অর্থও বুঝতে পারে না।

        জীবনের অর্থ বুঝতে হলে আত্মার নিজস্ব প্রকৃতি পরিচয় জানতে হবে এবং তার গুণাগুণও সম্যক উপলব্ধি করতে হবে। হুযুরে পাক (দঃ) আত্মা সম্বন্ধে আলোচনা করতে অনুমতি দেননি। নিম্নোক্ত বাক্যের অতিরিক্ত কোন বাক্যোচ্চারণের নির্দেশ দেননি। ঐ বাক্য হল, "আর রুহু মিন আমরি রাব্বী" অর্থাৎ আত্মা আমার প্রভুর আদেশ। ধর্মের আলিমদের প্রতিও অনুমতি ছিল না যে, তারা আত্মার গুপ্ততত্ত্ব প্রকাশ করে দেয় বা তার অনুসন্ধান করে। মৃত্যুর পর 'আত্মার কি অবস্থা হবে তার আলোচনা করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। এতে জানা যায় যে, মৃত্যুর অর্থ এই নয় যে, শরীরের সাথে আত্মা নষ্ট হয়ে যাবে তা' যে নষ্ট হবে না তার সম্বন্ধে বহু আয়াত ও হাদীস আছে।

        আত্মা নষ্ট না হওয়ার প্রমাণঃ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "অলাতাহসাবান্নাল্লাযীনা কুতিলু, ফী সাবীলিল্লাহি আমওয়াতাম বাল আহইয়াউন ইন্দা রাব্বিহিম ইউরযাকুন" অর্থাৎ যারা আল্লাহর পথে শাহাদত বরণ করে তাদেরকে মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের প্রভুর নিকট জীবিত,তাদেরকে জীবিকা দেয়া হয়। 

        যখন বদরে কুরায়েশদের নেতৃবৃন্দ নিহত হল, হুযুরে পাক (দঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে অমুক! হে অমুক! আমার প্রভু আমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন তা' আমি সত্য পেয়েছি।

        তোমাদের প্রভু যা' ওয়াদা করেছিল তা' কি তোমরা সত্য পেয়েছ? হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আরজ করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (দঃ)! আপনি কি মৃত ব্যক্তিদেরকে সম্বোধন করছেন? তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, তারা নিশ্চয়ই আমার এ কথা শুনছে, কিন্তু তারা এর উত্তর দিতে পারছে না। দুর্ভাগ্যশীল আত্মার দায়িত্ব ও জ্ঞান সম্বন্ধে এটাই শরীয়তের প্রমাণ। আর শহীদদের আত্মা সম্বন্ধে কুরআনে পাকে উল্লিখিত আয়াতই প্রমাণ। কোন মৃত ব্যক্তিই সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য থেকে মুক্ত নয়। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, কবর দোযখের একটি গর্ত অথবা বেহেশতের একটি উদ্যান। এটাই শরীয়তের প্রকাশ্য প্রমাণ যে, মৃত্যুর অর্থ শুধু অবস্থার পরিবর্তন এবং মৃত ব্যক্তির দুর্ভাগ্যে বা সৌভাগ্যে প্রবেশ করণ। মৃত্যুর সময় তা' বিলম্ব না করে হঠাৎ চলে আসে। কোন কোন প্রকার শাস্তি ও পুরস্কার কিছু বিলম্বে আসে। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দ্রঃ) এরশাদ করেছেন, মৃত্যু একটি কিয়ামত। যে ব্যক্তির মৃত্যু হয় তার কিয়ামত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেছেন, সবদ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয় তার স্থান সকাল ও সন্ধ্যায় তার নিকট উপস্থিত করা হয়। যদি সে বেহেশতী হয়, বেহেশতবাসীদের অন্তর্গত হয়। আর যদি সে দোসর্থী হয়, দোযখবাসীদের অন্তর্গত হয়। তাকে বলা হয়, এই-ই তোমার স্থান যে পর্যন্ত তোমাকে রোজ কিয়ামতে উত্থান না করা হবে। এই দু'স্থান দেখলে শান্তি ও সুখ তার নিকট গুপ্ত থাকে না।

        হযরত আবু কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা আলকামার সাবে এক জানাজাত উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, লক্ষ্য কর। তার কিয়ামত হয়ে গেছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি বেহেশতবাসী কি দোযখবাসী তা' তার না জানা পর্যন্ত দুনিয়া থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সফরে মৃত্যু বরণ করে সে শহীদ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। তার কবরের শান্তি ক্ষমা করা হয় এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তার জীবিকা বেহেশত থেকে আসে। হযরত মায়রুক (রহঃ) বলেছেন, যে মু'মিন ব্যক্তি সংসারের দুঃখ-কষ্ট থেকে কবরে গিয়ে মুক্তি পায় এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ হয় তার চেয়ে অধিক আর কাউকে আমি ঈর্ষা করি না।

         হযরত ইয়ালা ইবনে অলীদ (রাঃ) বলেছেন, একদা আমি হযরত আবু দারদা (রাঃ)এর সাথে ভ্রমণ করতেছিলাম। আমি তাকে বললাম, আপনি যে ব্যক্তিকে ভালবাসেন তার জন্য আপনি কি বস্তু পছন্দ করেন? তিনি বললেন, তার জন্য আমি মৃত্যু পছন্দ করি। আমি বললাম, যদি তার মৃত্যু না হয়? তিনি বললেন, তাহলে যেন তার ধনও সন্তান কম হয়, তা-ই পছন্দ করি। তবে আমি নিশ্চয়ই মৃত্যুকে ভালবাসি। কেননা মু'মিন ব্যক্তি ব্যতীত কেউই মৃত্যুকে ভালবাসে না। মৃত্যু কারাগার থেকে মু'মিনকে মুক্তি দেয়। আমি স্বল্প ধন ও সন্তানকে ভালবাসি, কেননা, তারা পরীক্ষাস্বরূপ এবং সংসারাসক্তির কারণ। যে বস্তুকে ত্যাগ করতে হবে তাকে ভালবাসাই চরম দুর্ভাগ্যের হেতু। আল্লাহ-ভিন্ন অন্য বস্তুকে স্মরণ এবং তার সাথে প্রীতি ও ভালবাসা করলে মৃত্যুর সময় তা' থেকে নিশ্চয়ই বিচ্ছিন্ন হতে হবে।

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)ও এরূপই বলেছেন। মু'মিনের আত্মা বা প্রাণ যখন বের হয়ে যায়, তা' ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে কারাগারে রাত্রি যাপন করে তা' থেকে বের হয়ে যায় এবং সারা দুনিয়ায় ভ্রমণ ও ঘুরাফেরা করে। এই অবস্থা তিনি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন, যে দুনিয়া থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং আল্লাহতায়ালার স্মরণ ব্যতীত আর তার কোন ভালবাসার বস্তু ছিল না। সাংসারিক কাজ-কর্ম তাকে তার প্রিয়জন থেকে আবদ্ধ করে রাখে এবং লোভের অভিলাষ তাকে কষ্ট দিতে থাকে; সুতরাং সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মৃত্যুই তাকে মুক্তি দেয় এবং তার প্রিয়জনের সাথে নির্জনে মিলিয়ে দেয়, যার সাথে তার প্রেম ও প্রীতি ছিল। সুখ-সম্পাদের শেষ সীমায় মৃত্যু তাকে পৌছে দেয়। 

        শহীদের জন্য পূর্ণ সুখ ও আনন্দঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হয়, তার জন্য সুখ ও আনন্দের সীমা নেই। কেননা সে দুনিয়ার সকল সম্বন্ধ কর্তন করে এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে তাঁর সন্তুষ্টিকল্পে শাহাদতের সম্মুখীন হয়ে জিহাদের জন্য অগ্রসর হয়েছে। যদি সে দুনিয়ার দিকে লক্ষ্য করে সে তার আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়া ক্রয় করে লয়। বিক্রেতার বিক্রিত বস্তুর দিকে থাকে না। যদি সে আখেরাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে, দে তা' খরিদ করে লয় এবং তার প্রতি তার আসক্তি জন্মে। যা' সে খরিদ করে তা' দেখে সে কত আনন্দিত হয় এবং যা' সে বিক্রি করে তার দিকে তার লক্ষ্য কত কম থাকে, যখন সে তা' থেকে পৃথক হয়। শুধু আল্লাহর প্রেমে মন নিমগ্ন থাকা কোন কোন অবস্থায় স্বভাবতঃই হয়ে থাকে কিন্তু তার উপর তাকে আক্রমণ করে না এবং তাতেই পরিবর্তন হয় না। যুদ্ধই মৃত্যুর কারণ। এই অবস্থার ন্যায় হলে তা' মৃত্যুকে বরণ করার কারণ হয়ে থাকে। এজন্যই সুখ ও আনন্দ অধিক হয়ে থাকে, কেননা সুখ ও সম্পদের অর্থ মানুষ যা' চায় তা' পাওয়া।

আল্লাহতায়ালা   বলেন, "অলাহুম মা ইয়াশতায়ুন" অর্থাৎ তারা যা' আকাঙক্ষা করে  তাই তারা পাবে  এই আয়াতের মধ্যে সমস্ত সুখের ব্যাখ্যা রয়েছে। মানুষ যা' চায় তা' তাকে না দেয়াই সর্বাপেক্ষা বড় শাস্তি। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "অহীলা বাইনাহুম অবাইনা মা ইয়াশতায়ুন" অর্থাৎ তারা যা আকাঙক্ষা করে তাদের ও তার মধ্যে এটা প্রতিবন্ধক হয়। দোযখীদের শাস্তি সম্বন্ধে এই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা আছে।

        শহীদের পুরষ্কারঃ এই সুখ ও সম্পদ শহীদ ব্যক্তি পেয়ে তার নিজ প্রাণকে উৎসর্গ করে দেয়। নিশ্চিত বিশ্বাসের সাহায্যে কলবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিকট এই ব্যাপার প্রকাশ হয়ে পড়ে। যদি শ্রুত সাক্ষ্য এর সমর্থনে মেনে নাও তাহলে শহীদের সব হাদীস থেকেই তা' জানা যায়। প্রত্যেক হাদীসেই শহীদগণের জন্য এই অসীম সুখ-সম্পদের কথা অন্য শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত জাবেরের পিতা ওহোদে শহীদ হলেন। হুযুরে পাক (দঃ) হযরত জাবের (রাঃ) কে বলেছিলেন, 'হে জাবের! আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন, হাঁ সুসংবাদ দিন। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, আল্লাহ তোমাকে মঙ্গলের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি আরও বললেন, আল্লাহ তোমার পিতাকে জীবিত করেছেন এবং তাঁর সম্মুখে তাকে বসিয়ে রেখে বলছেন, হে আমার বান্দা যা' ইচ্ছা তা' চাও, আমি তাই তোমাকে দেব। তিনি বললেন, হে প্রভু! আমি তোমার উপযুক্ত ইবাদাত করতে পারিনি অতএব আমি তোমার নিকট এই আশা করি যে, তুমি আমাকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দাও, এবং আমি তোমার নবীর সাথে মিলে আবার যুদ্ধ করি এবং তোমার সন্তুষ্টিকল্পে আমি আবার শহীদ হই। তার কথা শুনে আল্লাহ তাকে বললেন, ওহে বান্দা! আমার বিধান এই যে, তুমি দুনিয়ায় আর ফিরে যেতে পারবে না।

         হযরত কা'ব (রাঃ) বলেছেন, বেহেশতের মধ্যে এক ব্যক্তিকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখা যাবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কেন ক্রন্দন করছ? তুমিত বেহেশতের মধ্যে রয়েছ? তিনি বলবেন, আমার ক্রন্দনের কারণ এই যে, আমি আল্লাহর পথে শুধুমাত্র একবার শহীদ হয়েছি। আমার মনের আকাঙক্ষা এই যে, দুনিয়ায় বার বার গিয়ে আমি বার বার শহীদ হয়ে আসি। 

        প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! জেনে রাখ যে, মানুষের মৃত্যু হলেই মু'মিনের নিকট আল্লাহর অনন্ত গৌরব যা' প্রকাশ পায় তার সামনে দুনিয়া একটি সংকীর্ণ কারাগারের ন্যায় বোধ হয় এবং তার একটি অন্ধকার গৃহে আবদ্ধ থাকার ন্যায় মনে হয়। তার একটি দরজা এমন এবং বিস্তৃত উদ্যানের দিকে উন্মুক্ত করা হবে যে, চক্ষু তার দূরত্ব ধরতে পারবে না। তার মধ্যে থাকবে নানাবিধ বৃক্ষ, ফল-ফুল এবং পক্ষীকুল। সে তখন অন্ধকারপূর্ণ কারাগারে ফিরে আসতে ইচ্ছা করবে না। হুযুরে পাক (দঃ) একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন যথাঃ একটি লোকের মৃত্যু হলে তিনি তাকে বললেন, এই ব্যক্তি দুনিয়া থেকে চলে গেছে এবং পরিবারবর্গ রেখে গেছে। যদি সে তথায় গিয়ে সন্তুষ্ট হয় আর সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে না, যেরূপ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি তার মাতৃগর্ভে ফিরে যেতে চায় না। এতে তুমি বুঝতে পারবে যে, পরকালের প্রশস্ততার তুলনায় দুনিয়ার বিশালত্ব সঙ্কীর্ণ মাতৃগর্ভের ন্যায়।

        হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, দুনিয়ায় মু'মিন ব্যক্তি মাতৃগর্ভের ভ্রূণের ন্যায় থাকে। যখন সেই ভ্রূণ তার মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে, সে তখনই ক্রন্দন করতে থাকে। এমন কি যখন সে আলো দেখতে পায় তখন আর সে তার পূর্বস্থানে যেতে চায় না, তদ্রূপ মু'মিনদের অবস্থা। যখন তার মৃত্যু হয় এবং সে তার প্রভুর নিকট চলে যায়, তখন আর সে দুনিয়ায় আসতে চায় না, যেরূপ শিশু তার মাতৃগর্ভে ফিরে যেতে চায় না। হুযুরে পাক (দঃ)কে বলা হল, অমুক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি বললেন, সে মুক্তি পেয়েছে অথবা তার নিকট থেকে লোকগণ মুক্তি পেয়েছে। প্রথম অবস্থায় তিনি মু'মিনের কথা বলেছেন এবং দ্বিতীয় অবস্থায় তিনি পাপীর কথা বলেছেন, কেননা দুনিয়াবাসী তা' থেকে মুক্তি পায়। হযরত আবু আমর (রাঃ) বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) ও আমরা কয়েকজন একটি কবরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করাকালে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর একটি কবরের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলেন যে, কবরটির এক পার্শ্ব উন্মুক্ত রয়েছে। তিনি তা' এক ব্যক্তিকে বললে সে তার উপর মাটি ফেলে দিল। তারপর তিনি বললেন যে, এই মাটির আঘাত তার কোনই অনিষ্ট করবে না। কেননা আত্মাই কিয়ামত পর্যন্ত শাস্তি ও পুরস্কার ভোগ করবে।

        হযরত আমর ইবনে দীনার (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তার মৃত্যুর পর তার পরিবারবর্গের কি অবস্থা হয়, তা' সে জানে। যখন তারা তাকে গোসল করায় এবং তাকে কাফন পরায়, সে তাহা লক্ষ্য করতে থাকে। হযরত মালেক ইবনে আনাস বলেছেন যে, আমি শুনেছি যে, মু'মিনদের আত্মা যথায় ইচ্ছা তথায় বিচরণ করে। হযরত নো'মান ইবনে বশীর (রাঃ) বলেছেন যে, আমি হুযুরে পাক (দঃ) কে মিম্বরে উঠে বলতে শুনেছি, সতর্ক হও, মক্ষিকার শূন্যে বিচরণের ন্যায় ব্যতীত দুনিয়ায় আর কিছুই বাকী থাকবে না। কবরে তোমাদের মৃত ভ্রাতাদের জন্য আল্লাহকে ভয় কর, কেননা তোমাদের আমল তাদের নিকট উপস্থিত করা হবে। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের মন্দকার্য দ্বারা তোমাদের মৃত ব্যক্তিগণকে অপমান করো না, কেননা তা' তোমাদের কবরবাসী আপনজনদের নিকট উপস্থিত করা হয়। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন, হে মাবুদ! আমার কার্যের দরুন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা যেন অপদস্থ না হয়, তা' থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই। তিনি তাঁর মাতুল ছিলেন এবং মৃত্যু বরণ করেছিলেন।

        হযরত ইবনে আমেরকে মু'মিনদের আত্মা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তারা যখন মৃত্যু বরণ করে, তাদের আত্মা কোথায় থাকে? তিনি বললেন, আল্লাহর আরশের নিম্নে একটি শ্বেত বর্ণের পাখীর উদরের মধ্যে। আর কাফিরদের আত্মা তাদের মৃত্যুর পর যমিনের সপ্তস্তরের নিম্নে থাকে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ)কে বলতে শুনেছি, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করায়, কে বহন করে, কে তাকে কবরে স্থাপন করে, তা' সবই সে দেখতে পায়। হযরত ছালেহ মারী (রহঃ) বলেছেন, আমি শুনেছি যে, মৃত্যুর সময়ে আত্মাসমূহ পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করে। মৃত ব্যক্তিদের আত্মা ঐ আত্মাকে বলে, যে সদ্য তাদের নিকট উপস্থিত হয়, তোমার স্থান কোথায়, পবিত্র শরীর, না অপবিত্র শরীরের মধ্যে? হযরত ওবায়েদ ইবনে আমীর বলেছেন, কবরবাসীগণ সংবাদের প্রতীক্ষায় থাকে, যখন তাদের নিকট কোন মৃত ব্যক্তি আসে, তারা বলে, অমুক ব্যক্তি কি কাজ করেছে? সে বলে, আমি তোমাদের নিকট সৎকর্ম নিয়ে আসিনি। তারা বলে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং তারই নিকট আমাদের । সে আমাদের পথে আসেনি।

         হযরত জাফর ইবনে সাঈদ (রহঃ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তার সন্তানগণ তাকে অভ্যর্থনা করার জন্য আসে যেরূপ কোন লোক প্রবাস থেকে ফিরে আসলে তাকে অভ্যর্থনা করা হয়। হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তির সন্তান ধার্মিক তার সন্তানের ধার্মিকতার সংবাদ তাকে কবরে পৌছানো হয়।

        হযরত আইয়ুব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যখন মু'মিনের আত্মা বের হয়ে যায়, তা' আল্লাহর নিকটবর্তী অধিবাসীদের সাথে সাক্ষাত করে, যেরূপ দুনিয়ায় সুসংবাদ দাতা কারও নিকট এসে সাক্ষাত করে। তারা বলে, তোমাদের ভ্রাতার দিকে লক্ষ্য কর, সে শান্তিতে আছে। এই ব্যক্তি খুবই কষ্টের মধ্যে ছিল। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, অমুক ব্যক্তি কি কাজ করেছে? অমুক স্ত্রীলোক কি কাজ করেছে? অমুক রমণীর বিবাহ হয়েছে? তখন তারা তাকে এ ব্যক্তির কথা জিজ্ঞেস করে যে, তাদের পূর্বে মুত্যুবরণ করেছে। সে বলে যে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। তার আমল তাকে দোযখে নিয়ে গেছে।

Post a Comment

0 Comments