যেসব কারণে পর্দার বিধান বিঘ্নিত হচ্ছে

        পর্দা পালন করা মুসলমানের জন্য মহান আল্লাহর নিকট থেকে এক অবধারিত ফরয হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যারা মু'মিন তারা অবশ্যই মহান আল্লাহর এ আদেশের প্রতি যত্নবান হবে। কারণ মু'মিনের পরম লক্ষ্যই হচ্ছে, আল্লাহর বিধান পালন করে তার সন্তোষ অর্জন করা। অমুসলিমদের জন্যে পর্দার বিধান নাযিল হয়নি। তাই তারা বাধাহীনভাবে যত্রতত্র চলাফেরা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে-এ আধুনিক যুগে এসে পর্দা করা যুক্তি যুক্ত মনে করি না। গেয়ো ভূতরাই পর্দা পালন করে। এ এক শ্রেণীর কারণে পর্দার বিধান লংঘন করা হচ্ছে।

        আরেক শ্রেণীর লোক আছে এমন, যারা দ্বীনের অধিকাংশ বিধান পালন করে। কিন্তু পর্দা অস্বীকার না করলেও তা পালন করার ব্যাপারে উদাসীন। যেমন ফ্রি স্টাইলে চলাফেরা করা বা সন্তান-সন্ততি কলেজ-ভার্সিটিতে পড়াশুনা করা মেয়ের একজন ক্লাশমেট বা ছেলে বন্ধু তার বাসায় আসল, তখন অভিভাবকরা বলে থাকেন বাবা তোমরা কথা বলো আমি তোমাদের জন্যে নাশতার আয়োজন করছি। এ ফ্রি স্টাইলের সুযোগ দেয়ার কারণে পর্দার বিধান উপেক্ষিত হচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে ছেলে মেয়েদের চরিত্র।

        আবার কোন একস্থানে মা-মেয়ে অথবা দাদী-নাতীন একসাথে বের হলো। দেখা গেল ঐ দাদী, যার ওপর পর্দার বিধান শিথিল হওয়া সত্ত্বেও সে বোরকা পরল। কিন্তু তার সাথে ভরা যৌবনের অধিকারী নাতীনকে বোরকা পরিধান করাল না। কি অদ্ভুত বিষয়। যে কারণে যার ওপর পর্দার বিধান নাযিল করা হলো, তারা পর্দা করছে না তাহলে পর্দা কিসের জন্য? মূলতঃ এ এক শ্রেণীর জন্যেও পর্দার বিধান বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর এক শ্রেণীর মানুষ যারা সংস্কৃতিমনা। মডেলিং এর নামে টিভি, ভিডিও, ডিস এনটিনার নামে যৌনতাকে সহায়তা দিচ্ছে। ফলে দর্শক শ্রোতা তা দেখে তাদের অনুসরণ করতে গিয়ে পর্দার বিধান বাস্তবায়নে বিঘ্নিত হচ্ছে। এরা সবাই ইসলামের শত্রু না হলেও কল্যাণকামী বলা যায় না। সমাজের সকল অপকর্মের ভার তাদের ওপরই অর্পিত হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে পর্দা পালনের তৌফিক দান করুন।

ইসলামে নারীর মর্যাদা

        ইসলাম নারীকে যথার্থ মর্যাদায় আসীন করেছে। ইতিহাসে যার দৃষ্টান্ত বিরল। ইসলাম নারীকে প্রথমে কন্যা সন্তানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ বস্তু হিসেবে মর্যাদা দান। তৃতীয়তঃ মা রূপে মর্যাদা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। চতুর্থতঃ সমাজ সংস্থার সমান গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরূপে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। 

        কন্যারূপে মর্যাদা হয়েছে সে সময় যখন জাহেলী যুগে কন্যারা ছিলো বড়ই লাঞ্ছিত। যেখানে কন্যাদেরকে মারাত্মকভাবে ঘৃণা করা হত। সর্বস্তরে তারা ছিল ভিকৃত। তাদের জীবিত কবর দেয়া হত। কন্যারা মুখ দর্শন করতেও রাজি ছিল না স্বয়ং কন্যার পিতা। কুরআনুল কারীম এ নারী অপমানের চিত্র চিত্রায়িত করেছে এভাবে-

অর্থ: সমাজে কাউকে তার কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার সংবাদ দেয়া হলে সারাদিন তার মুখ মলিন হয়ে থাকত। সে ক্ষুদ্ধ হত এবং মনে-প্রাণে ব্যথা অনুভব করত। এ সংবাদের লজ্জার দরুন সে অপর লোকদের থেকে মুখ লুকিয়ে রাখত। সে চিন্তা করত, অপমান সহ্য করে মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখবে, না তাকে মাটির নিচে প্রথিত করবে। কতই না খারাপ সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করত। (সূরা নাহল: ৫৭, ৫৮)

        ইসলাম মানবতা বিরোধী ভাবধারায় তার প্রতিবাদ করেছে। এ ধরনের খারাপ কাজকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মেয়ে সন্তান ছেলে সন্তানের মতই জীবন যাপনে অধিকার নিশ্চিত করেছে। আর কন্যা সন্তান জীবিত কবর দেয়া হলে কিয়ামতের দিন যে তার পিতাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কঠোরভাবে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে-


وَإِذَا المَودَةُ سُئِلَتْ - بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ .

অর্থঃ জীবন্ত প্রথিত কন্যা-সন্তানকে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে। কোন অপরাধের কারণে তোমাকে হত্যা করা হয়েছে। (সূরা তাকবীর: ৮,৯)

        এ কারণে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোকের কোন কন্যা সন্তান রয়েছে এবং সে তাকে জীবন্ত প্রথিত করে নি এবং তাকে অবহেলার চোখেও দেখে নি, তার ওপর নিজের পুত্র সন্তানকে অগ্রাধিকারও দেয়নি। তাকে আল্লাহ তায়ালা বেহেশত দান করবেন। (আবু দাউদ কিতাবুল আদব)

        আরব জাহেলিয়াতে কন্যাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখা হত। তাকে অধিকার দেয়া হত না, আধুনিক যুগে নারীরা যে প্রগতি চায় তা আসলে প্রগতির নামে দুর্গতি। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হয়েছে শুধু এ অপরাধে যে, তারা কেবল কন্যা সন্তানই প্রসব করেছে। স্বামীকে কোন পুত্র সন্তান উপহার দিতে পার নি। কিন্তু এ মানবতা বিরোধী প্রথা চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

        ইসলাম নারীকে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দান করেছে। তদানীন্তন আরব সমাজে স্ত্রী হিসেবেও নারীদের চরম অমর্যাদা ও অপমান ভোগ করতে হত। তাদের স্বামীদের ঘরে যথাযথ মর্যাদা বা অধিকার দেয়া হতো না। তাদের হীন, নগণ্য ও দয়ার পাত্রী মনে করা হত। নিতান্ত বাদী-দাসীর মত আচরণ তাদের সাথে করা হত। ইসলাম নারীদের স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে নারী বলে মৌল অধিকারের দিক দিয়ে পুরুষদের তুলনায় কোনভাবে কম নয়। যেমন বলা হয়েছে-

وَلَهُنَّ مَثَلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ .

        অর্থঃ স্ত্রীদেরও তেমন অধিকার রয়েছে স্বামীদের রয়েছে যেমন তাদের ওপর এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। অন্যকথায় স্ত্রী ও স্বামী উভয়ই আল্লাহর নিকট সমান। মৌল অধিকারের দিক থেকে কেউ কম নয়।

        ইসলাম মা রূপে নারীদের অধিকারকে সমুন্নত করেছে। দুনিয়ার অপর কোন সম্মানের সাথেই তার তুলনা চলেনা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন-

الْجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَامِ الْأمهات 

        অর্থাৎ, বেহেশত মায়ের পদতলে। মাকে যথাযথ সম্মান দিলে, তার উপযুক্ত খিদমত করলে এবং তার হক আদায় করলে বেহেশত লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। (বুখারী, মুসলিম)

        সুতরাং ইসলামে মা হিসেবে নারীর মর্যাদা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম সমাজ সংস্থার সদস্যা হিসেবেও তাকে অধিকার দিয়েছে। নারী শুধু কন্যা-বধূ এবং মা-ই নয়, ইসলামের সমাজ সংস্থার সে সমান মর্যাদাসম্পন্ন একজন সদস্যও বটে। ইসলামে পুরুষের মর্যাদা যেমন স্বীকৃত তেমনি নারীকে সামাজিক ক্ষেত্রে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন-পুরুষ বা স্ত্রীলোকই নেক আমল করবে ঈমানদার হয়ে, সে-ই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে এবং এদের কারো ওপর কোন জুলুম করা হবে না। এক কথায় ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা পরিপূর্ণ নিশ্চিত করেছে।

Post a Comment

0 Comments