পথে-ঘাটে পর্দা
পর্দার হুকুম পালন করা সর্বদাই ফরয। এটা কোন স্থান বা সময় সাপেক্ষে ফরয নয়। একজন মু'মিন যখন রাস্তায় হাঁটে, তখন তা উচিত রাস্তার ডান দিক ধরে হাঁটা এবং চোখ নিচু রাখা। অনুরূপ রাস্তায় বসতে হলেও পর্দা করতে হয়ে অর্থাৎ নিজের দৃষ্টিকে নিচু রাখতে হবে। রাস্তায় বসলে তার হক আদায় করতে হবে। পরপুরুষ বা নারীর দিকে যাতে চোখ না পড়ে, সে দিকটিতে লক্ষ্য রাখা জরুরি। মহান আল্লাহ বলেন-
হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের রক্ষা করে।
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবায়ে কিরামগণ বললেন, সাবধান। তোমরা রাস্তার ওপর বসো না। সাহাবীগণ বললেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তো রাস্তায় বসে আলোচনা করি। এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলনে, যদি তোমাদের রাস্তায় একান্তই বসতে হয়, তবে তোমরা এর হক আদায় কর। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার হক কী? জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলন, দৃষ্টি সংযত রাখবে, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে, সালামের উত্তর দেবে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে জনগণকে বিরত রাখা।
আলোচ্য হাদীসে বলা হয়েছে-অপরিচিত নারী-পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক যুবক বলেন, নারীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি পড়ে যায়। তাছাড়া নারীরা কেন রাস্তায় বের হয়? তারা বের হলে আমরা তাকাতে বাধ্য হই। আমি বলব এসব যুক্তি নোংরামীর পরিচয়। নারীদেরকে বাস্তব প্রয়োজনে রাস্তায় বের হতে হয়। তারা বেপর্দায় চলার কারণে নিশ্চয়ই পাপী হবে। আর আপনার প্রতি নির্দেশ হলো, পরনারীর প্রতি না তাকানো। অর্থাৎ দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। আবার অনেকে বলেন, প্রত্যেকেরই মা-বোন আছে তাদের দিকে তাকালে পাপ হবে কেন? জবাব হলো তাদের বিবাহ করা আপনাদের জন্যে অনুমতি আছে কিন্তু আপনার মা-বোনকে বিয়ে করা আপনার জন্যে অনুমতি আছে কি? আপনার মায়ের দিকে তাকালে একটি কবুল হজ্জের সওয়াব হয়। আর ঐ সকল নারীর দিকে তাকালে পাপী হতে হয়। সুতরাং কোন। যুক্তির বাহানা খোঁজ না করে আমাদের জরুরি হলো পরনারীর দিকে তাকানো হতে বিরত থাকা।
নারী থেকে নারীর পর্দা
নারী হলেই যে এক নারী অন্যজনের সাথে কথা বলতে পারবে, নির্বিঘ্নে দেখা করতে পারবে, একত্রে অবস্থান করতে পারবে; এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ ইসলাম এমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করতে বলেছে যে হাঁটা-চলায়, কথা-বার্তায়, কাজ-কারবারে সত্যবাদী। প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ .
অর্থাৎ, হে মু'মিনগণ! তোমরা সত্যবাদীর সাথী হও।
এ আয়াতে বুঝা গেল যে, যারা সত্যবাদী নয়, যার চরিত্রে কলঙ্ক রয়েছে এমন, ব্যক্তি মু'মিন নর-নারীর বন্ধু হতে পারে না।
যেমন সৌন্দর্য প্রদর্শন সম্পর্কে বলা হয়েছে, সব সময় মেলামেশা হয় এরূপ মেয়েদের সামনে মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করা বৈধ। পবিত্র কুরআনে সকল নারীগণ শব্দের পরিবর্তে আপন নারীগণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর দ্বারা সম্ভ্রান্ত মহিলাগণকেই বুঝানো হয়েছে। এমন নারী যাদের চালচলন সন্দেহযুক্ত অথবা যাদের চরিত্রে কলঙ্ক ও লাম্পট্যের ছাপ আছে, এ ধরনের নারীদের সামনে আলোচ্য নারীর সৌন্দর্য প্রকাশের অনুমতি নেই। কারণ এরাও অকল্যাণের কারণ হতে পারে।
শামদেশে মুসলমানদের যাওয়ার পর মুসলমান মহিলাগণ ইহুদী ও খ্রিস্টান নারীদের সাথে মেলামেশা শুরু করলে হযরত ওমর (রা) শামের শাসনকর্তা হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনে জাররাহ (রা)-কে লিখিত ফরমান জারি করেন যে, মুসলমান মহিলাগণ যেন আহলে কিতাব মহিলাদের সঙ্গে হাম্মামে প্রবেশ না করে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন যে, মুসলমান মহিলাগণ কাফির ও যিম্মী নারীদের সামনে ততটুকু প্রকাশ করতে পারে, যতটুকু অপরিচিত পুরুষের সামনে প্রকাশ করতে পারে।
কোন নারীর নাভী হতে হাঁটুর মধ্যবর্তী অংগগুলো অন্য নারীর জন্যে দেখা হারাম।
ডাক্তারের কাছে মানুষ প্রয়োজনে গমন করে, এতে কোন যৌনলিপ্সা বা প্রদর্শনীর কিছু থাকে না। তাই ডাক্তারের কাছে প্রয়োজনে গোপনাঙ্গ দেখানো বৈধ।
মোটকথা হলো যথাসম্ভব অপরিচিত বা নির্লজ্জ নারীর সাথে মেলামেশা করা থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল এবং এটাই ইসলামের শিক্ষা।
0 Comments